শরীরকে সুস্থ রাখতে লিভার বা যকৃতের ভূমিকা অপরিহার্য। এই অঙ্গটি দেহ থেকে বর্জ্য পদার্থ দূর করা, খাদ্য হজমে সাহায্য করা এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান সঞ্চয় করার মতো অসংখ্য কাজ করে। কিন্তু নানা কারণে লিভারের কার্যক্ষমতা কমে গেলে বা লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হলে শরীরে ধীরে ধীরে দেখা দেয় একাধিক লক্ষণ। প্রাথমিক পর্যায়ে এই উপসর্গগুলিকে গুরুত্ব না দিলে পরবর্তীকালে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে, এমনকী প্রাণ সংশয়ও দেখা দিতে পারে। Liver Cirrhosis-এর ফলে লিভার তার স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলে। অনেক ক্ষেত্রেই লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত রোগী লিভারের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত ব্যক্তির তেমন কোনও উপসর্গ দেখা দেয় না। সমস্যা শুরু হয় যখন, এই রোগটি মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে যায়। শরীরের সমস্ত দূষিত বর্জ্য পদার্থ বের করে তাকে সুস্থ রাখাই যকৃৎ বা Liver-এর কাজ। শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গটির মারাত্মক একটি অসুখ। এই রোগে লিভার নিয়ে অবহেলা নয়! প্রয়োজন লিভারের বন্ধু, সুগারের যম! পেটের রোগ থেকে মুক্তি ৯ রোগ থেকে রক্ষা করবে এক গ্লাস বেলের শরবত পুরোপুরি অকেজো হয়ে পড়ে। লিভার নিয়ে অবহেলা নয়! প্রয়োজন লিভারের বন্ধু, সুগারের যম! পেটের রোগ থেকে মুক্তি ৯ রোগ থেকে রক্ষা করবে এক গ্লাস বেলের শরবত তার স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারানোর ফলে মৃত্যুঝুঁকি বাড়তে থাকে। প্রতি বছর প্রায় হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়। কিন্তু খুব সহজেই আমরা এই মারাত্মক রোগের হাত থেকে নিজেদের দূরে রাখতে পারি। সামান্য সতর্কতায় ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। চিকিৎসকদের মতে, কিছু লক্ষণ রয়েছে, যার সাহায্যে আপনি প্রথম দিকে সিরোসিস সনাক্ত করা প্রয়োজন। সেরে ওঠার সম্ভাবনা ক্ষীণ। মাত্র ২৫ শতাংশ রোগী পাঁচ বছরের বেশি সময় বেঁচে থাকার আশা করতে পারেন। সিরোসিস থেকে যকৃতের ক্যানসারেও রূপ নিতে পারে। তাই রোগ হওয়ার আগে প্রতিরোধ করাই ভালো। হেপাটাইটিস বি ও সি সংক্রমণ থেকে বাঁচতে ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ, যেমন শিরায় নেশাদ্রব্য ব্যবহার, অনিরাপদ রক্ত গ্রহণ বা ঝুঁকিপূর্ণ যৌন সম্পর্ক এড়িয়ে চলা দরকার।হঠাৎ রক্তে লিভার এনজাইমের অস্বাভাবিকতা বা আলট্রাসনোগ্রাফিতে যকৃতের আকার-আকৃতির পরিবর্তনের কারণ খুঁজতে গিয়ে লক্ষণ ধরা পড়ে। সাধারণত খাদ্যে অরুচি, ওজন হ্রাস, বমি ভাব বা বমি, বমি বা মলের সঙ্গে রক্তপাত ইত্যাদি হল মূল উপসর্গ। পরে যকৃতের সঙ্গে কিডনির কার্যকারিতা কমে যায়, রক্তবমি-সহ বিভিন্ন জটিলতাও দেখা যায়। জন্ডিস হলে ত্বকে ও চোখ হলুদ হয়ে যায়। তবে, লিভার নিয়ে অবহেলা নয়! প্রয়োজন লিভারের বন্ধু, সুগারের যম! পেটের রোগ থেকে মুক্তি ৯ রোগ থেকে রক্ষা করবে এক গ্লাস বেলের শরবত Cirrhosis হলে ত্বক এবং চোখ হলুদ পিত্তরসের কারণে শরীরের হলুদ রঙ হয়। যখন লিভার আহত হয়, তখন এটি শরীরে পিত্তের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম হয় এবং জন্ডিস হয়। সালফার সমৃদ্ধ খাবার খান ও ফ্যাট যুক্ত তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। যে খাবারগুলো সহজে হজম হবে এবং হজমশক্তি বাড়াতে বেশ কার্যকর সেই রকম খাবার খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করুন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্রকলি, সবুজ শাক, বাঁধাকপি এবং ফুলকপি লিভারের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করে। এ ছাড়া কাঁচা পেঁয়াজ এবং রসুন লিভারের ক্ষতিকর টক্সিনকে দূর করতে সাহায্য করে।চিকিৎসকদের মতে, নিয়মিত শরীর চর্চা করা ভালো। এতে লিভার সংক্রান্ত সমস্যায় আক্রান্তের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দিনে মাত্র ২০ মিনিটের শরীরচর্চা লিভারের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে, এবং আমাদের ইমিউন সিস্টেম উন্নত করতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়ামের মাধ্যমে লিভারের মারাত্মক সমস্যা থেকে দূরে থাকুন। প্রেসক্রিপশন বা চিকিত্সকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাবেন না। কিন্তু এই অভ্যাস লিভারের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। চিকিত্সকের পরামর্শ ছাড়া কোনও ওষুধ খাবেন না। বিশেষ করে কোনও ব্যথানাশক পেইন কিলার ওষুধ। ব্যথানাশক ওষুধে ব্যবহৃত এনজাইম লিভারের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে লিভার ক্ষতিগ্রস্থ করে দেয়। সুতরাং চিকিত্সকের পরামর্শ ছাড়া বা প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ওষুধ খাবেন না। নিয়মিত সঠিক পরিমাণে জল পানের অভ্যাস গড়ে তুলুন। জল আমাদের লিভারের জন্য ক্ষতিকর টক্সিন দূর করে লিভারকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। যারা জল কম পান করেন তাদের লিভারের নানা সমস্যায় পড়তে দেখা যায়। তাই জল বেশি করে খান। দিনে অন্তত ২-৩ লিটার জল পান ।
গরমে বাড়ে জন্ডিসের সমস্যা। এছাড়াও জন্ডিস কিন্তু লিভারের সমস্যার ইঙ্গিত। যেখানে চোখ আর ত্বক হলুদ হয়ে যায়। সেই সঙ্গে প্রস্রাবও কিন্তু হলুদ হয়। এতেই স্পষ্ট হয়ে যায় লিভারের কোনও সমস্যা হয়েছে। জন্ডিস তখনই হয় যখন যকৃৎ লোহিত রক্ত কণিকাকে ভেঙে ফেলে এবং তখন রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। এই বিলিরুবিন হল এক ধরণের পিগমেন্ট। লিভার বিলিরুবিন শোষণ করে এবং পিত্তে রূপান্তরিত করে, যা হজম প্রক্রিয়ায় অংশ নেয় এবং অবশিষ্টাংশ মলের মাধ্যমে বেরিয়ে আসে। লিভারের সমস্যা হলে কিন্তু প্রভাব পড়ে আমাদের ত্বকেও। ত্বকে যদি নিয়মিত ভাবে চুলকানির সমস্যা হয়, কোনও কারণ ছাড়াই যদি শরীরের বিভিন্ন অংশ চুলকোতে শুরু করে তাহলে বুঝতে হবে লিভারের সমস্যা হয়েছে। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়েই ত্বকের নীচে বেশি পরিমাণ পিত্ত লবণ জমে যায়। যেখান থেকে কিন্তু এই সমস্যা হয়। তবে এসব ছাড়াও থাকতে পারে অন্য লক্ষণ। লিভার থেকে যে পিত্তরস তৈরি হয় তার কাজ হল খাবার হজম করিয়ে দেওয়া। লিভার যখন ঠিকভাবে কাজ করে না তখন বোঝা যায় ক্ষুধামন্দার ইঙ্গিত দেখে। কোনও কিছুই খাওয়ার ইচ্ছে থাকে না। সেই সঙ্গে ওজন কমে যাওয়া পেটে ব্যথা, বমি ভাব, ওজন কমে যাওয়া এসবও কিন্তু থাকে। অনেক সময় কোথাও পড়ে লেগে লিভারেও আঘাত লাগে। কিন্তু আমরা বিষয়টির দিকে যথাযথ নজর দিই না। লিভারে আঘাত লাগলে হঠাৎ করে বোঝাও যায় না। লিভারে আভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয় এবং সেখান থেকে কিন্তু রক্ত প্রয়োজনে জমাটও বাঁধতে পারে না। রক্তবাঁধার জন্য যে নির্দিষ্ট প্রোটিনের দরকার হয় তার অভাবের জন্যই রক্তবমি, মলের মাধ্যমে রক্তক্ষরণ এসব একাধিক সমস্যা আসে।
লিভারের জন্য খুবই উপকারী বেলের শরবত। পাশাপাশি এটি রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা পালন করে। নয়টি রোগ ঠেকাতে নিয়মিত বেলের শরবত খান। হজমশক্তি বাড়ায় ও কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়। বেলের শরবত হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। অনেকেই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভোগেন। বেলের শরবত খেলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। বেল লিভারের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। লিভারের মধ্যে টক্সিন জমা হলে তা বার করে দিতে সাহায্য করে বেলের পুষ্টিগুণ। তাই নিয়মিত বেল খেলে লিভারের রোগ হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে বেলের শরবত। পাকা বেলে মেথানল নামক উপাদান রয়েছে যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এর ফলে ডায়াবিটিস ও ডায়াবিটিস সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ন্ত্রণে থাকে। পাইলস, অ্যানাল ফিস্টুলায় অনেকেই ভোগেন। মূলত খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের ধরন থেকেই এই রোগগুলি শরীরে দেখা দেয়। বেলের শরবত নিয়ম করে খেলে এই সমস্যা ঠেকানো সহজ। এমনকী রোগ হওয়ার পরেও উপশমে সাহায্য করে বেলের শরবত। চোখের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে: বেলের শরবতের সঙ্গে নিয়মিত মধু মিশিয়ে খেলে চোখের দৃষ্টিশক্তি উন্নত হয়। পাশাপাশি বেশি বয়সেও ছানি পড়ার আশঙ্কা কমে। তাই নিয়মিত বেলের শরবত খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন অনেক চিকিৎসক। বেলের শাঁস ত্বকের জন্য উপকারী। কারণ এর পুষ্টিগুণ ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি ত্বককে সতেজ রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত বেলের শরবত খেলে ত্বকের বার্ধক্যও ঠেকানো সম্ভব। বেলের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিপ্রোলিফেরেটিভ ও অ্যান্টি ম্যুটাজেন উপাদান। এগুলি বিভিন্ন ধরনের রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। বেল হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে হৃদরোগের ভয় থেকে অনেকটাই মুক্তি দেয় এই বিশেষ ফল। বেলের রসে ক্যালোরি কম কিন্তু এটি দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে। পেট ভরাট থাকে বলে বেল পরোক্ষভাবে ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। রোজকার ডায়েটে এই ফলের রস ভালো। লিভার ঠিকমতো কাজ করছে কিনা, তা বুঝতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণের দিকে নজর রাখা উচিত।
লিভারের সমস্যার অন্যতম প্রধান এবং পরিচিত লক্ষণ হল জন্ডিস। লিভার ঠিকমতো কাজ না করলে রক্তে বিলিরুবিন নামক একটি হলুদ রঞ্জক পদার্থের মাত্রা বেড়ে যায়। এর ফলেই ত্বক, চোখের সাদা অংশ এবং নখ হলুদ হয়ে যেতে দেখা যায়। প্রস্রাবের রঙও গাঢ় হলুদ হতে পারে। এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। লিভারের সমস্যা থাকলে পেটের উপরের ডানদিকে, অর্থাৎ যেখানে লিভার অবস্থিত, সেখানে চাপা ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে। অনেক সময় লিভারে জল জমার অ্যাসাইটিস কারণে পেট অস্বাভাবিকভাবে ফুলেও যায়। এই ফোলাভাব ক্রমশ বাড়তে থাকলে তা লিভার সিরোসিস বা অন্য কোনও জটিলতার ইঙ্গিত হতে পারে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার পরেও যদি শরীর জুড়ে দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তিভাব এবং দুর্বলতা অনুভূত হয়, তবে তা লিভারের সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। লিভার তার স্বাভাবিক কাজ, যেমন –শক্তি উৎপাদন এবং পুষ্টি প্রক্রিয়াকরণে বাধাগ্রস্ত হলে এই ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। দৈনন্দিন কাজে অনীহা এবং শক্তিহীনতা এক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষণীয়। লিভারের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেলে হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। এর ফলে খাবারে অরুচি, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেক সময় খাদ্য থেকে ফ্যাট বা চর্বি জাতীয় পদার্থ হজম করতে অসুবিধা হয়, যার ফলে পেটে অস্বস্তি বাড়ে। এই কারণে ওজনও কমে যেতে পারে। লিভার শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে। যখন লিভার সেই কাজটি সঠিকভাবে করতে পারে না, তখন ত্বকের উপর তার প্রভাব পড়ে। এর ফলে ত্বকে চুলকানি, লালচে ভাব, ফুসকুড়ি বা মাকড়সার জালের মতো রক্তনালীর বিস্তার স্পাইডার অ্যানজিওমা)দেখা দিতে পারে। দীর্ঘ দিন ধরে এই ধরনের ত্বকের সমস্যা থাকলে লিভার পরীক্ষা করানো উচিত।
অ্যাসিডিটিন ডায়ারিয়া বা বদহজম মানেই লিভারের অসুখ। ত্বকের সমস্যার নেপথ্যেও আছে লিভার খারাপ হওয়া। কিন্তু আদৌ তা নয়। লিভার নিয়ে আমবাঙালির মনে একটা ভীতি আছে। যে কোনও শারীরিক অসুস্থতার জন্য কথায় কথায় লিভারকে দায়ী করা মধ্যবিত্ত বাঙালির বৈশিষ্ট্য। কোনও কারণে চুল ঝরে যাক অথবা ত্বকে সাদা কালো দাগ পড়ুক কিংবা অ্যাসিডিটি হোক সবাই ভেবে নেন, নিশ্চয়ই লিভার খারাপ হয়েছে। কিন্তু এই ধারণা ঠিক নয়। অত্যাধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের অবদান আলট্রাসোনোগ্রাফি, সিটি স্ক্যান, এমআরআই ইত্যাদির সাহায্যে জানা গিয়েছে যে সব ধরনের ত্বকের সমস্যা, চুল ওঠা বা অ্যাসিডিটির সঙ্গে লিভার খারাপ হওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। ভাইরাল হেপাটাইটিস, জন্মগত কোনও ত্রুটি ও কিছু কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য লিভারের অসুখ হতে পারে। মদ্যপানের সঙ্গে লিভারের অসুখের সম্পর্ক ওতপ্রোত। ইদানীং মধ্যবিত্ত মানুষের মধ্যে মদ্যপানের হিড়িক বেড়েছে। মদ্যপানের পর মাথা ব্যথার হাত থেকে রেহাই পেতে ব্যথার ওষুধ খেলে লিভারের কাজকর্ম ব্যহত হতে শুরু করে। এ ছাড়া ভাইরাল হেপাটাইটিস, জন্মগত কোনও ত্রুটি ও কিছু কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য লিভারের অসুখ হতে পারে। তবে একটা কথা জেনে আশ্বস্ত হবেন যে লিভার আমাদের শরীরের এমনই এক অত্যাবশ্যক ও শক্তিশালী অংশ যে অল্পবিস্তর সমস্যা হলে তা নিজেই সারিয়ে নিতে পারে। অ্যাসিডিটি আর বদহজম ঘন ঘন হলে লিভার খারাপ হয়ে যায়। আর গ্যাস-অম্বল নিয়ে প্রায় প্রত্যেক বাঙালিই চিন্তিত। জেনে রাখুন, কিছু খাবার আছে যেগুলি হজম হওয়ার সময় শরীরের অভ্যন্তরে কিছু বায়বীয় পদার্থ নির্গত হয়। আর কথা বলার সময় সকলেই কিছুটা বাতাস গিলেও ফেলি। এর থেকেই পাকস্থলিতে কিছুটা বাতাস থেকে যায়। পেটে জমে থাকা এই বায়বীয় পদার্থ কার্বন ডাই অক্সাইড, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন ও হাইড্রোজেনের মিশ্রণ। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান ব্রণ, ফুসকুড়ি বা দাদ, হাজা চুলকুনি কোনও কিছুর জন্যই লিভার দায়ী নয়। আসল দোষী কিন্তু সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি। এর জন্যই ত্বকে কালো ছোপ পড়ে ও এজিং স্পট হয়। সুতরাং ত্বকের এই সব দাগ ছোপের জন্য লিভার কোনও ভাবেই দায়ী নয়। লিভারে হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি, ই ইত্যাদি ভাইরাসের সংক্রমণ করে। এর ফলে লিভারের প্রদাহ হয়। লিভার ফুলে গেলে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারে না। তবে এটা সাময়িক। কিন্তু যাদের ক্রনিক হেপাটাইটিস আছে তাঁদের লিভার ক্রমশ অকেজো হতে শুরু করে। অবশ্য ইদানীং বেশ কিছু ওষুধের সাহায্যে ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন করে লিভারকে কর্মক্ষম রাখা সম্ভব। নিয়মিত অপরিমিত মদ্যপান করলেও লিভারের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে। এর থেকে লিভারের টিসুতে ফাইব্রোসিস হয়ে স্টিফ হয়ে যায়। এর নাম ‘সিরোসিস অব লিভার’। হেপাটোসেলুলার কার্সিনোমা বা লিভারে ক্যানসার হলেও লিভার ধ্বংস হয়ে যায়। এ ছাড়া কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে এবং কয়েকটি জন্মগত অসুখের কারণেও লিভার সমস্যায় পড়তে পারে। যেমন উইলসন ডিজিজ, বিলিয়ারি অ্যাট্রিশিয়া ইত্যাদির কারণে অনেক শৈশবেই লিভার খারাপ হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া কোনও উপায় থাকে না। অল্পবিস্তর লিভারের অসুখের কোনও উপসর্গ থাকে না। আর নিঃশব্দে আসে বলে চট করে টেরও পাওয়া যায় না। লিভারের কাজ ব্যহত হলে এবং অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তখন কয়েকটি সাধারণ উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন বমিভাব, খিদে কমে যাওয়া, ক্লান্তিভাব ডায়ারিয়া, জন্ডিস, পেট ফুলে ওঠা, ঘুমের অসুবিধা ইত্যাদি। এই ধরণের সমস্যা হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার। লিভার নিয়ে বাতিক ভাল নয়। এর জন্যে অনেকেই অকারণে লিভার টনিক খান। লিভার ভাল রাখতে এর কোনও ভুমিকা নেই। তবে অসুখকেও অবহেলা করাও ঠিক নয়। কোনও সমস্যা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, লিভার টনিক বা ট্যাবলেট কিনে খেয়ে বিপদ বাড়াবেন সুতরাং লিভার নিয়ে অহেতুক দুশ্চিন্তা নয়।
ফলের রাজা আমের লোভ সামলানো বেশ কঠিন। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দ্রুত মুনাফা লাভের আশায় কৃত্রিমভাবে আম পাকাতে ক্যালসিয়াম কার্বাইড নামক এক রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করেন। এই ক্যালসিয়াম কার্বাইড মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং এর ব্যবহার লিভারের জন্য গুরুতর ঝুঁকির কারণ। শুধু তাই নয় বাণিজ্যিক ক্যালসিয়াম কার্বাইডে প্রায়শই আর্সেনিক এবং ফসফরাস হাইড্রাইডের মতো বিষাক্ত উপাদানের অপদ্রব্য মিশ্রিত থাকে। তাৎক্ষণিক প্রভাব বলতে কার্বাইড থেকে তৈরি অ্যাসিটিলিন গ্যাসের সংস্পর্শে এলে মুখ, নাক এবং গলায় জ্বালাপোড়া হতে পারে, এমনকি কফ ও শ্বাসকষ্টও দেখা দিতে পারে। কার্বাইড দিয়ে পাকানো আম খেলে পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া এবং হজমের অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। অ্যাসিটিলিন গ্যাস স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলে, যার ফলে মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, এমনকি দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে। কার্বাইডের সরাসরি সংস্পর্শে ত্বকে র্যাশ, চুলকানি বা জ্বালাপোড়া হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব বলতে দীর্ঘ সময় ধরে বা অধিক মাত্রায় অ্যাসিটিলিন গ্যাস এবং কার্বাইডে থাকা আর্সেনিক ও ফসফরাসের যৌগ শরীরে প্রবেশ করলে স্নায়ুতন্ত্রের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। এর ফলে স্মৃতিশক্তি লোপ, হাত-পা কাঁপা, মনোযোগের অভাব, এমনকী মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমে যাওয়ার মতো গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে। কার্বাইডে থাকা বিষাক্ত উপাদান, বিশেষত আর্সেনিক, লিভার ও কিডনির কার্যকারিতা নষ্ট করে দিতে পারে। আর্সেনিক একটি পরিচিত কার্সিনোজেন অর্থাৎ সৃষ্টিকারী পদার্থ। দীর্ঘমেয়াদী ভাবে আর্সেনিকের প্রভাবে ফুসফুস, ত্বক এবং অন্যান্য অঙ্গে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের ক্ষেত্রে ভ্রূণের ক্ষতি হতে পারে। শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় তাদের কার্বাইডের বিষক্রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।