হামলার ছ’দিন আগে পহেলগাঁওয়ে ডিউটিতে ছিল! ধৃত পাক চর। খোদ সিআরপিএফ জওয়ান। রহস্য চরম। দু’বছর ধরে চরবৃত্তি। পাকিস্তানের হয়ে চরবৃত্তি। অভিযোগ সিআরপিএফ জওয়ানের বিরুদ্ধে! দেশের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত একাধিক গোপন তথ্য পাক গোয়েন্দাদের পাচার করত জওয়ান। দু’বছর ধরে চরবৃত্তি চালিয়েছে। দিল্লি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে এনআইএ। সূত্রের খবর, পহেলগাঁও এলাকাতেই মোতায়েন ছিল। ২২ এপ্রিল বৈসরনে হামলার মাত্র ছ’দিন আগে ওই জওয়ানকে অন্যত্র পাঠানো হয়। কাশ্মীর উপত্যকার নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্য সে পাকিস্তানকে পাচার করেছিল? খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেটিং এজেন্সির তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, ২০২৩ সাল থেকে পাকিস্তানের হয়ে চরবৃত্তি চালিয়ে গিয়েছে সিআরপিএফ জওয়ান মোতি রাম জাট। দেশের নিরাপত্তা সংক্রান্ত গোপন তথ্য পাচার করত পাকিস্তানের গোয়েন্দা আধিকারিকদের। পাক গোয়েন্দাদের তরফে নানাভাবে অর্থও পাঠানো হত অভিযুক্ত সিআরপিএফ জওয়ানকে।এনআইএ’র হাতে ধরা পড়েছে মোতি রাম। পাটিয়ালা হাউস কোর্টের বিশেষ আদালত আপাতত ৬ জুন পর্যন্ত এনআইএ হেফাজতে রাখার নির্দেশ। মোতি রামকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন এনআইএ কর্তারা। অপারেশন সিঁদুরের পর গোয়েন্দারা জানতে পারেন বেশ কয়েকজন গদ্দার দেশের নিরাপত্তা সংক্রান্ত একাধিক তথ্য পাকিস্তানের হাতে তুলে দিচ্ছে। এরপরই গ্রেপ্তার করে সুন্দরী ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে একাধিক বিস্ফোরক তথ্য হাতে আসে গোয়েন্দাদের। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বেশ ক’জনকে পাকিস্তানের হয়ে চরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী ও একাধিক পেশায় যুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার পাকচর সন্দেহে। তালিকায় যুক্ত হল সিআরপিএফ জওয়ানের নাম। প্রশ্ন, দেশের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্তরাই শত্রুপক্ষের হয়ে কাজ করলে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হবে কী করে? দীর্ঘ ২ বছর ধরে পাক চর হিসাবে কাজ করে গেল। মোতি রামকে এতোদিন ধরা গেল না কেন?
পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ধৃত মতিরাম জাট সিআরপিএফের অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টর পদে কর্মরত। পহেলগাঁওয়ে বাহিনীর ১১৬ নম্বর ব্যাটেলিয়নে থাকা জাট জঙ্গিহানার কিছু দিন আগে বদলি হয়। অভিযুক্ত ওই জওয়ানকে ইতিমধ্যে বাহিনী থেকে বহিষ্কার করেছে আধাসেনা। ১৭ এপ্রিল পহেলগাঁও থেকে অন্যত্র বদলি করা হয়। ঘটনাচক্রে, মতিরামের বদলির কয়েক দিন পরেই ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় হামলা চালায় জঙ্গিরা। জঙ্গিদের হত্যালীলায় মৃত্যু হয় ২৬ জনের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন পর্যটক। অভিযোগ, ২০২৩ সাল থেকেই নিরাপত্তা বিষয়ক বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাক গোয়েন্দাদের হাতে তুলে দিতেন মতিরাম। এই কাজ করে পাকিস্তানের গোয়েন্দা আধিকারিকদের থেকে মিলত মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিকও। দিল্লি থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করানো হয়। আদালত মতিরামের ১৫ দিনের এনআইএ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। ঘটনাচক্রে, পহেলগাঁও কাণ্ডের তদন্ত চালাচ্ছে এনআইএ। আদালতের পর্যবেক্ষণ, “মতিরামের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ শুধুমাত্র দেশের নিরাপত্তা জন্যই নয়, বরং ভারতে আসা বিদেশি পর্যটক এবং সাধারণ নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তাতেও গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। সশস্ত্রবাহিনী দেশের অন্যতম স্তম্ভ। তাদের বিরুদ্ধে এমন কাজ করার অর্থ দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা। অবিলম্বে তদন্ত করে কড়া পদক্ষেপ করা উচিত।” পহেলগাঁও কাণ্ড এবং অপারেশন সিঁদুর পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে বেশিরভাগই পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। পাক গুপ্তচরযোগের অভিযোগে ধৃত নেটমাধ্যম প্রভাবী জ্যোতি মলহোত্রার ভূমিকাও তদন্তকারীদের নজরে রয়েছে। সিআরপিএফ জওয়ানের গ্রেফতারি পাক গুপ্তচরযোগের তদন্তে আরও নতুন তথ্যের সন্ধানে দেশ।
অমৃতসর বাইপাসে বিস্ফোরণ! অমৃতসরের মাজিতা রোড বাইপাসের ধারে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। বিস্ফোরণের পরই বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে। পাঞ্জাব পুলিশের ডিআইজি সতিন্দর সিং ঘটনাস্থলে পৌঁছে বলেন, “বিস্ফোরণে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। সে জঙ্গি সংগঠনের সদস্য। নাশকতার জন্য এই এলাকায় বোমা রাখতে এসেছিল। তখনই বোমা বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় তার।” পুলিশ প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে মৃত ব্যক্তি, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ‘বব্বর খালসা’র সক্রিয় সদস্য। ভারতের কাছে পর্যুদস্ত হয়ে একাধিকবার অনুপ্রবেশ, হামলার চেষ্টা করেছে পাকিস্তানের আশ্রয়ে থাকা জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি। মেঘের আড়ালে থেকে ভারতে একাধিক নাশকতার চেষ্টা করছে তারা। এরই মধ্যে অমৃতসরে নাশকতার চেষ্টা করল পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর মদতপুষ্ঠ ‘বব্বর খালসা’ জঙ্গিরা। বোমা রাখতে গিয়ে বিস্ফোরণ হয়ে মৃত্যু হল এক জঙ্গিরই। অপারেশন সিঁদুরের সাফল্য নিয়ে বক্তৃতা দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্পষ্ট বলেন, ‘এবার সব ক্যামেরার সামনে করেছি যেন কেউ প্রমাণ চাইতে না পারে’। গুজরাটের গান্ধীনগরে জনসভায় বক্তৃতা দেন প্রধানমন্ত্রী। অপারেশন সিঁদুরের পর প্রথমবার গুজরাটে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। নিজের রাজ্যের একাধিক এলাকায় কর্মসূচি। মোদি বলেন, “ভারত হল সাহসীদের জন্মভূমি। এতদিন ধরে যেটাকে ছায়াযুদ্ধ বলে ধরা হত, ৬ মে’র পর থেকে সেটা আর বলা যাবে না। কারণ পাকিস্তানে যেসব জঙ্গি নিকেশ হয়েছিল তাদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য হয়। কফিনের উপর পাক পতাকা রেখে স্যালুট করেছিল সেনা। তাই ছায়াযুদ্ধ নয়, এটা পুরোপুরি পরিকল্পিত হামলা। মাত্র ২২ মিনিটের মধ্যে জঙ্গিদের ৯টি ডেরা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আর এবার পুরোটাই ঘটেছে ক্যামেরার সামনে, যেন ঘরে ফিরে আসার পর আর কেউ প্রমাণ চাইতে না পারে।”
সন্ত্রাসবাদ নিয়ে পাকিস্তানকে সতর্ক করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদের অবসান ঘটাতে সে দেশের জনগণকেই এগিয়ে আসতে হবে! পাকিস্তানকে হয় শান্তি বেছে নিতে হবে, নয়তো তাঁর ‘গুলি’ প্রস্তুত রয়েছে। পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদের রোগ থেকে মুক্ত করতে নাগরিকদেরই এগিয়ে আসতে হবে। সুখে-শান্তিতে দিন কাটাও, রুটি খাবার খাও, নয়তো আমার গুলি তো আছেই! ভারত পর্যটনে বিশ্বাস করে। কিন্তু পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদকেই পর্যটন হিসাবে বিবেচনা করে, যা বিশ্বের জন্য খুবই বিপজ্জনক। আমি পাকিস্তানের জনগণের কাছে জানতে চাই, কী অর্জন করেছে তাঁদের দেশ? আজ ভারত বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। সেখানে আপনাদের (পাকিস্তান) অবস্থা কোথায়?’’ পাক নাগরিকদের উদ্দেশে মোদীর বার্তা, ‘‘যারা সন্ত্রাসবাদকে উৎসাহ দিচ্ছে, তারাই আপনাদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দিয়েছে! পহেলগাঁওয়ে হামলার পর আমি ১৫ দিন অপেক্ষা করেছিলাম। আমি আশা করেছিলাম, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে পাকিস্তান। কিন্তু সব দেখে মনে হচ্ছে, সন্ত্রাসই তাদের রুটিরুজি। ‘অপারেশন সিঁদুর’ ছিল সন্ত্রাসবাদের অবসান ঘটাতেই। ৯ মে রাতে পাকিস্তান যখন ভারতের নাগরিকদের লক্ষ্য করে হামলার চেষ্টা চালিয়েছিল, তখন আমাদের সেনাবাহিনী দ্বিগুণ শক্তি দিয়ে তার জবাব দেয়। ধ্বংস করে ওদের (পাকিস্তান) বিমানঘাঁটি। যারা সিঁদুর মুছে দিতে আসবে, তাদেরও মুছে যেতে হবে, এটা নিশ্চিত। যারা সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করে, তারা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি, মোদীর সঙ্গে মোকাবিলা করা কতটা কঠিন!’’ মোদী সর্বত্রই সন্ত্রাসবাদ, ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে সুর চড়াচ্ছেন। ‘অপারেশন সিঁদুর’কে ভারতীয়দের ‘সংস্কার’ এবং ‘ভাবনার অভিব্যক্তি’ বলেও উল্লেখ করেছেন মোদী।
পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর থেকে পাকিস্তান ও তার সন্ত্রাসীদের ঘুম উড়িয়ে দিয়েছে ভারত। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যে ভারত জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করবে তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আগামী দিনে পহেলগাঁওয়ের মতো যে কোনও ধরনের কাপুরুষোচিত জঙ্গি হামলার উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি ভারতের। ভারতের সামনে কাকুতি মিনতি পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেছেন, কাশ্মীর, সন্ত্রাসবাদ, জল ও বাণিজ্যের মতো সব সমস্যা সমাধানে ভারতের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্পষ্ট করে দিয়েছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে এখন আলোচনা হবে তো শুধুমাত্র সন্ত্রাসবাদ এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে। জল চুক্তি স্থগিত রাখার বিষয়টি এখনই পুনর্বিবেচনা করবে না ভারত। বর্তমানে ইরানে আছেন শেহবাজ শরিফ। সোমবার সাদাবাদ প্রাসাদে স্বাগত জানান ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। পেজেশকিয়ানের সঙ্গে এক সাংবাদিক সম্মেলনে শরিফ বলেন, শান্তির জন্য তিনি ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘আমরা আলোচনার মাধ্যমে কাশ্মীর ইস্যুসহ সব বিরোধ নিষ্পত্তি করতে চাই। এবং বাণিজ্য ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তুত আছি। তবে তারা যদি আগ্রাসী থাকতে চায়, আমরা আমাদের দেশকে রক্ষা করব। যেমনটা আমরা কয়েকদিন আগেও করেছিলাম। কিন্তু তারা যদি শান্তি প্রস্তাব গ্রহণ করে, তাহলে আমরা দেখিয়ে দেব যে আমরা আসলেই শান্তি চাই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জাতির উদ্দেশে ভাষণে পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, পাকিস্তানের সাথে কেবল পাক অধিকৃত কাশ্মীর এবং সন্ত্রাসবাদ নিয়েই আলোচনা করা হবে। সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত রাখার পর ভারত বলেছে, জল ও রক্ত একসঙ্গে প্রবাহিত হতে পারে না।