আইপিএলের সমাপ্তি অনুষ্ঠান। ভারতীয় সেনাকে সম্মান জানাবে বোর্ড। নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে থাকবেন তিন বাহিনীর প্রধান। পহেলগাঁও হামলার জবাবে ভারতীয় সেনার ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর জন্য সেনাবাহিনীকে সম্মান জানাবে ক্রিকেট বোর্ড। ৩ জুন অহমদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে আইপিএলের ফাইনালের আগে সমাপ্তি অনুষ্ঠানে ভারতীয় সেনাকে সম্মান জানানো হবে। উপস্থিত থাকবেন তিন বাহিনীর প্রধান। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সচিব দেবজিৎ শইকীয়া এই কথা জানিয়ে বলেন, “দেশকে রক্ষা করার জন্য আমাদের সেনাবাহিনী অপারেশন সিঁদুর-এর মাধ্যমে যে সাহসিকতা ও আত্মত্যাগ দেখিয়েছে তাকে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড কুর্নিশ করে। তাই আমরা ঠিক করেছি আইপিএলের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে ভারতীয় সেনাকে সম্মান জানাব। ক্রিকেটের প্রতি ভারতীয়দের আবেগ খুব বেশি। কিন্তু যখন দেশের সার্বভৌমত্ব, ঐক্য ও সুরক্ষার প্রসঙ্গ আসে তখন তার থেকে বড় কিছু হতে পারে না।” শইকীয়া জানান, ফাইনালে তিন বাহিনির প্রধান ছাড়াও ভারতীয় সেনার অনেক আধিকারিক উপস্থিত থাকবেন। ফাইনালের অনুষ্ঠানে বিনোদন জগতের কোনও তারকাকে দেখা যাবে কিনা সে বিষয়ে কিছু জানাননি বোর্ড সচিব। আইপিএলের ফাইনাল। প্রথমে ঠিক ছিল, কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে ফাইনাল হবে। পরে তা সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অহমদাবাদে। নতুন করে আইপিএল শুরু হওয়ার পর প্রত্যেকটা ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হচ্ছে মাঠে। প্রতি মাঠে সেনাবাহিনিকে ধন্যবাদ জানানো হচ্ছে। ফাইনালেও একই ছবি।

চলতি আইপিএলএ দুঃস্বপ্নের মরসুম। শতরানে শেষ পন্থের। কোহলিদের বিরুদ্ধে মাঠেই ডিগবাজি খেলেন লখনউয়ের অধিনায়ক। মরসুমের শেষ ম্যাচে নিজের সেরা ব্যাটিং ঋষভ পন্থের। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে শতরান করলেন লখনউ সুপার জায়ান্টসের অধিনায়ককে। ব্যর্থতা সঙ্গী ছিল প্রথম থেকে। চাপ কমে গেলে যে স্বাভাবিক খেলা বেরিয়ে আসে তা আরও এক বার দেখা গেল। নিয়মরক্ষার ম্যাচ উপভোগ করলেন পন্থ। চার মেরে শতরানের পর পন্থের উল্লাসে নতুনত্ব। হেলমেট, গ্লাভস খুলে মাঠেই ডিগবাজি। নন স্ট্রাইকিং প্রান্তে দাঁড়িয়ে হাততালি সতীর্থ নিকোলাস পুরানের। লখনউয়ের স্টেডিয়াম দলের অধিনায়কের ইনিংসে মুগ্ধ। স্টেডিয়ামেই থমথমে মুখে বসেছিলেন অনুষ্কা শর্মা। প্রথম দুই দলের মধ্যে কোহলিদের শেষ করার সম্ভাবনা যে অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে পন্থের এই ইনিংস,বুঝতে পারছিলেন কোহলি-পত্নী। আইপিএলের শেষ কয়েকটি ম্যাচে প্লে-অফ থেকে বিদায় নেওয়া দলগুলো প্লে-অফে কোয়ালিফাই করা দলগুলোকে হারিয়েছে। পাঞ্জাব কিংস, গুজরাত টাইটান্স, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু সবার ক্ষেত্রেই এক ছবি। বিদায় নেওয়া দলগুলোর হারানোর কিছু নেই, চাপমুক্ত। গুজরাট, পাঞ্জাব, বেঙ্গালুরুরা চাপ নিয়ে ফেলেছে। লখনউ ম্যাচে ছন্নছাড়া বোলিং বেঙ্গালুরুর। খারাপ ফিল্ডিং। পরিকল্পনাহীন কোহলিরা। পন্থ এই ম্যাচেও তিন নম্বরে নেমে প্রথম থেকেই হাত খুলে খেললেন। সেই পুরনো ব্যাটিংএ ক্রিকেটীয় ব্যকরণ। উইকেটের চার দিকে শট খেললেন। উইকেটের পিছনে শট মারতে গিয়ে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে পড়েও গেলেন পন্থ। সঙ্গ দিল ভাগ্যও। কয়েকটি বল ব্যাটের কানায় লেগে উপরে উঠলেও পৌঁছতে পারলেন না ফিল্ডারেরা। কয়েকটা বল ব্যাটের কানায় লেগে বাউন্ডারিতে গেল। ভুবনেশ্বর কুমারকে কভারের উপর দিয়ে ছক্কা মেরে ৫৫ বলে নিজের শতরান পূর্ণ করলেন পন্থ। তার পরেই দেখা গেল বিখ্যাত ডিগবাজি। ৬১ বলে ১১৮ রান করে অপরাজিত থাকলেন। ১১টা চার ও ৮টা ছক্কা। পন্থের পাশাপাশি মিচেল মার্শ ৩৭ বলে ৬৭ রান করলেন। আইপিএলে লখনউয়ের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটার মার্শ। ৬০০-র বেশি রান করলেন অস্ট্রেলিয় ব্যাটার। ২০ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ২২৭ রান করল লখনউ।

রান তাড়া করতে নেমে ইতিহাস গড়লেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর মহাতারকা বিরাট কোহলি। ২৪ রান করলেই নতুন রেকর্ড গড়লেন তারকা ব্যাটার। পাশাপাশি অর্ধশতরান করে নজির গড়লেন বিরাট কোহলি। লখনউতে লখনউ সুপার জায়ান্টসের বিরুদ্ধে আইপিএলের লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে ৫৪ রান করেন ৩০ বল খেলে ১০টি বাইন্ডারির সাহায্যে। প্রথম ব্যাটার হিসাবে একক ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে ৯,০০০ টি-টোয়েন্টি রান পূর্ণ করেন। আরসিবির ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক বিরাট। বিরাট কোহলিই রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর ইতিহাসে সর্বাধিক রান সংগ্রাহক। আইপিএল এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি-টোয়েন্টির পরিসংখ্যান একত্রিত করলে, ২৭৯ ম্যাচে ৮,৯৭৬ রান করেছেন ১৩৩.৪৯ স্ট্রাইক রেটে এবং ৩৯.৫৪ গড়। ৮টি শতরান ও ৬৪টি অর্ধশতরান। সেরা ইনিংস অপরাজিত ১১৩ রান। আইপিএলে, বিরাট কোহলি ৮,৫৫২ রান করেছেন ২৬৪ ম্যাচে, গড় ৩৯.৫৯ এবং স্ট্রাইক রেট ১৩১। আইপিএল-এর সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক আরসিবির হয়ে ১৫টি ম্যাচ খেলে তার সংগ্রহ ৪২৪ রান, ৩৮.৫৪ গড় এবং ১৫০.৩৫ স্ট্রাইক রেট। সর্বোচ্চ স্কোর ৮৪। চলতি আইপিএলে মরশুমে বিরাট কোহলি দুর্দান্ত ছন্দে। ১২ ইনিংসে করেন ৫৪৮ রান, গড় ৬০.৮৮ এবং স্ট্রাইক রেট ১৪৫.৩৫। সাতটি হাফ সেঞ্চুরি, সেরা ইনিংস ৭৩। বর্তমানে টুর্নামেন্টের ষষ্ঠ সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। আইপিএলে সর্বাধিক অর্ধশতরানের তালিকায় ডেভিড ওয়ার্নারকে ছাড়িয়ে যেতে পারেন বিরাট কোহলি আইপিএলে সবচেয়ে বেশি অর্ধশতরানের তালিকায় বিরাট কোহলি আর ডেভিড ওয়ার্নার এখন একসাথে শীর্ষে রয়েছেন। দুজনেরই ৬২টি করে ফিফটি রয়েছে। আর মাত্র একটি হাফ-সেঞ্চুরি করলেই কোহলি এককভাবে এই রেকর্ডের অধিকারী এবং ব্যাটারদের মধ্যে সর্বাধিক অর্ধশতরানের মালিক। রোহিত শর্মা রয়েছেন কোহলির ঠিক পরেই ৪৬টি অর্ধশতরান নিয়ে। চলতি মরসুমে কোহলি ইতিমধ্যেই ৭টি হাফ-সেঞ্চুরি যা আইপিএল ইতিহাসে তৃতীয় সেরা পারফরম্যান্স। ২০১৬য় করেছিলেন ১১টি এবং ২০২৩-এ ৮টি।
শীর্ষে পাঞ্জাব। দুইয়ে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। প্লে-অফ নিশ্চিত ছিল আগেই। ১৪ ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট। লখনওউয়ের বিরুদ্ধে জয়লাভ করে এবং নেট রান রেটে পাঞ্জাব কিংসকে টপকে শীর্ষ স্থান দখল। শীর্ষ দুইয়ে থেকে প্লে-অফে প্রবেশ এবং কোয়ালিফায়ার ১-এ পাঞ্জাব কিংসের মুখোমুখি।ফাইনালে পৌঁছনোর জন্য বিরাট কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর দুটি সুযোগ থাকছে। শীর্ষে পাঞ্জাব কিংস। দ্বিতীয় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। পিছিয়ে পড়ল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। পাঞ্জাব প্রথম দুইয়ে থাকাও নিশ্চিত করে নিল। অর্থাৎ, তারা খেলবে প্রথম কোয়ালিফায়ার। সেই ম্যাচ জিতলে ১১ বছর পর উঠবে ফাইনালে। শ্রেয়স হবে প্রথম অধিনায়ক, যিনি পর পর দু’বছর দু’টি আলাদা দলকে ফাইনালে তুলবেন। আইপিএলের ৬৯তম ম্যাচে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের ১৮৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৯ বল বাকি থাকতে ৭ উইকেটে সহজ জয়ী পাঞ্জাব পৌঁছে গেল আইপিএল ২০২৫-এর পয়েন্ট টেবলের শীর্ষে। হার্দিক পান্ডিয়ার মুম্বই লিগ পর্ব শেষ করল চারে থেকেই। পজিশন বদলানোর কোনও সম্ভাবনা নেই। চতুর্থ টিম হিসেবেই প্লে-অফের কোয়ালিফায়ার টু খেলতে নামবে। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু শীর্ষে ওঠায়, দুইয়ে নেমে গেল পাঞ্জাব। তিনে গুজরাট টাইটান্স। ২৬ মে লখনউ সুপার জায়ান্টসের বিরুদ্ধে বেঙ্গালুরু জিততেই তিনে নেমে গেল গুজরাট টাইটান্স। আরসিবি ও পিবিকেএসএর রানরেটের শীর্ষে বিরাটরা। পাঞ্জাবের দুইয়ের মধ্যে থাকা নিশ্চিত। প্লে-অফের কোয়ালিফায়ার ওয়ান খেলবে। পাঞ্জাবের পয়েন্ট ১৪ ম্যাচে এখন ১৯। শ্রেয়স আইয়ারের দলের রানরেটও বেশ ভালো। তাদের নেট রানরেট ০.৩৭২। এদিকে ১৪ ম্যাচে টাইটান্সের পয়েন্ট ১৮। তাদের নেট রানরেট ০.২৫৪। তিনে থাকা রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর পয়েন্ট ১৩ ম্যাচে ১৭। তাদের নেট রানরেট আবার ০.২৫৫। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের ১৪ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট হলেও, তাদের নেট রানরেট সবচেয়ে ভালো ছিল। তাদের রানরেট ১.১৪২। মুম্বই পাঞ্জাবকে হারাতে পারত, তাদের দুইয়ের মধ্যে থাকা নিশ্চিত ছিল। আরসিবি যদি লখনউয়ের কাছে হেরে যেত, মুম্বই পয়েন্ট টেবলের শীর্ষেও থাকতে পারত। সেই সম্ভাবনা শেষ। ঋষভ পন্তরা দুইয়ের মধ্যে শেষ করলে লাভ। লখনউয়ের বিরুদ্ধে বড় জয় আরসিবির। পাঞ্জাবের শীর্ষস্থান দখল।
আইপিএল ২০২৫-এর পয়েন্ট টেবলের সর্বশেষ আপডেট:
১) পাঞ্জাব কিংস ১৪ ম্যাচে ৯ জয়, ৪ হার, রেজাল্ট হয়নি ১ ম্যাচে, ১৯ পয়েন্ট, নেট রানরেট +০.৩৭২
২) গুজরাট টাইটান্স ১৪ ম্যাচে ৯ জয়, ৫ হার, ১৮ পয়েন্ট, নেট রানরেট +০.২৫৪
৩) রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ১৪ ম্যাচে ৯ জয়, ৪ হার, রেজাল্ট হয়নি ১ ম্যাচে, ১৯ পয়েন্ট, নেট রানরেট +০.৫৫
৪) মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ১৪ ম্যাচে ৮ জয়, ৬ হার, ১৬ পয়েন্ট, নেট রানরেট +১.১৪২
৫) দিল্লি ক্যাপিটালস ১৪ ম্যাচে ৭ জয়, ৬টি হার, রেজাল্ট হয়নি ১ ম্যাচে, ১৫ পয়েন্ট, নেট রানরেট ০.০১১
৬) সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ১৪ ম্যাচে ৬ জয়, ৭ হার, রেজাল্ট হয়নি ১ ম্যাচে, ১৩ পয়েন্ট, নেট রানরেট -০.২৪১
৭) লখনউ সুপার জায়ান্টস ১৪ ম্যাচে ৬ জয়, ৭ হার, ১২ পয়েন্ট, নেট রানরেট -০.৩৩৭
৮) কলকাতা নাইট রাইডার্স ১৪ ম্যাচে ৫ জয়, ৭ হার, রেজাল্ট হয়নি ২ ম্যাচে, ১২ পয়েন্ট নেট রানরেট -০.৩০৫
৯) রাজস্থান রয়্যালস ১৪ ম্যাচে ৪ জয়, ১০ হার, ৮ পয়েন্ট, নেট রানরেট -০.৫৪৯
১০) চেন্নাই সুপার কিংস ১৪ ম্যাচে ৪টি জয়, ১০ হার, ৮ পয়েন্ট, নেট রানরেট -০.৬৪৭
বেঙ্গালুরু-লখনউ ম্যাচের পর পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে শেষ করল পাঞ্জাব। গত বার কেকেআরকে শীর্ষে তুলে নিয়ে আসা শ্রেয়স আয়ার পাঞ্জাবের হয়েও একই কীর্তি গড়লেন। দ্বিতীয় স্থানে শেষ করল বেঙ্গালুরু। তৃতীয় স্থানে গুজরাত। চার নম্বরে শেষ করল মুম্বই।
প্রথম কোয়ালিফায়ার— শীর্ষে থাকা পঞ্জাব ও দু’নম্বরে থাকা বেঙ্গালুরু খেলবে প্রথম কোয়ালিফায়ার। ২৯ মে, বৃহস্পতিবার পঞ্জাবের মুল্লানপুরে হবে সেই ম্যাচ। প্রথম কোয়ালিফায়ার যারা জিতবে তারা সরাসরি আইপিএলের ফাইনালে উঠবে। যারা হারবে তারা আরও একটি ম্যাচ পাবে।
এলিমিনেটর— তিন নম্বরে শেষ করা গুজরাত ও চার নম্বরে শেষ করা মুম্বই এই ম্যাচ খেলবে। ৩০ মে, শুক্রবার হবে সেই ম্যাচ। এলিমিনেটরও হবে মুল্লানপুরে। এই ম্যাচ যাকা হারবে তারা আইপিএল থেকে বিদায় নেবে। যারা জিতবে তাদের আরও একটা ম্যাচ খেলতে হবে।