বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বিশাল চাপে। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামি লিগ ফের বাংলাদেশে ফিরবে বলে দাবি। ইউনুস পদত্যাগের ভাবনাচিন্তাও শুরু। একদা হাসিনা ঘনিষ্ঠ ওবায়দুল কাদেরের বিবৃতিতে ইউনুসকে আক্রমণ। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত চরিত্র ওবায়দুল কাদের আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক ও প্রাক্তন সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ছিলেন। শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ত্যাগ করার পর থেকে ওবায়দুর কাদেরেরও নিখোঁজ। বাংলাদেশি মিডিয়ায় নানান দাবি ছিল, কলকাতাতেও আছেন, আবার সম্প্রতি দাবি, সিঙ্গাপুরে নাকি মারা গিয়েছেন। ওবায়দুল কাদেরের নামে আওয়ামি লিগের অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডেল থেকে দীর্ঘ বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জঙ্গি গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষক ইউনুসের নেতৃত্বাধীন তথাকথিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অসাংবিধানিক ও অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা রাজনৈতিক দল আওয়ামি লিগের সকল কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করেছে। এই পদক্ষেপ কেবল অসাংবিধানিক, অবৈধ এবং অন্যায্যই নয়, বরং জনগণের ইচ্ছার স্পষ্ট ‘অস্বীকৃতি’ জাতিকে হতবাক করে দিয়েছে। প্রতিটি দেশপ্রেমিক নাগরিক এই বর্বর কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ, যার নিন্দা করার মতো জোরালো ভাষা নেই। স্বাধীনতা অর্জন থেকে আজ পর্যন্ত, বাংলাদেশের অগ্রগতির সকল গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক আওয়ামী লীগের হাত ধরেই বাস্তবায়িত হয়েছে। স্বাধীনতার পর, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে সার্বভৌম জাতির জন্য একটি সময়োপযোগী সংবিধান প্রণয়ন করেন। ৩০ লক্ষ শহিদের রক্তে লেখা এই সংবিধানের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশকে একটি প্রকৃত কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। তাঁর নেতৃত্বে, মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে, বাংলাদেশ মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সম্ভাবনাময় অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছিল। বাংলাদেশকে একটি টেকসই রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করার জন্য, বঙ্গবন্ধুর সরকার ভারতের সাথে ২৫ বছরের মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর অনুরোধে, স্বাধীনতার মাত্র তিন মাসের মধ্যেই ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী প্রত্যাহার, যুদ্ধের ইতিহাসে এক অসাধারণ ঘটনা। জাতীয় সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করার জন্য, তার সরকার ভারতের সাথে স্থল সীমান্ত চুক্তিও স্বাক্ষর করে। তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সহায়তায়, বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থে এই স্থল সীমান্ত চুক্তি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হয়েছিল। ২০২৪ সালের ৫ অগস্ট বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ধ্বংসের ষড়যন্ত্র চালানো হয়। বিদেশি এজেন্ট ইউনুসকে অসাংবিধানিক ও অবৈধ উপায়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসানো হয়েছিল। তারপর থেকে, দেশটিকে ধ্বংস করার জন্য সম্ভাব্য সকল পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ৫ অগস্ট এবং তার পরে সারা দেশে গণহত্যা চালানো হয়েছে। পুলিশ বাহিনীর সদস্য, আওয়ামী লীগ নেতা, কর্মী, সমর্থক, স্বাধীনতাপন্থী রাজনৈতিক দল এবং তাদের নেতারা, সেইসাথে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা। বিশেষ করে হিন্দুরা অবর্ণনীয় নিপীড়ন, নির্যাতন এবং গণহত্যার মুখোমুখি হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের রক্তকরবী থেকে একজন ভ্রান্ত রাজার মতো, অবৈধ, ফ্যাসিবাদী দখলদার ইউনুস আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে অত্যাচারের শ্বাসরোধে বন্দি করে রেখেছে। সাংবিধানিক সংস্কারের নামে, ৩০ লক্ষ শহিদের রক্তে লেখা সংবিধান বাতিল করার চেষ্টা করা হচ্ছে, কার্যকরভাবে দেশের সার্বভৌমত্ব বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। ১৯৭৫-পরবর্তী ষড়যন্ত্রকারীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে, বঙ্গবন্ধুর নাম নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দেশের কষ্টার্জিত সকল অর্জন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তথাকথিত করিডোরের আড়ালে বিস্তৃত ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে দেশের ভূখণ্ড বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা অনেক আগেই এই বিদেশি চক্রান্ত সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন। ইউনুস, একজন বিদেশি এজেন্ট হিসেবে কাজ করে, ক্রমাগত দেশকে বিক্রি করার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর দেশপ্রেমিক সদস্যরা এবং অন্যান্যরা ইতিমধ্যেই জনসাধারণকে সতর্ক করেছেন। ইউনুস এবং তার জঙ্গি মিত্ররা চট্টগ্রাম বন্দর এবং বিমান ঘাঁটি সহ গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় স্থাপনাগুলি বিদেশি শক্তির কাছে হস্তান্তর করছে। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পর থেকে ইউনুস ধর্মীয় উগ্রপন্থী এবং সন্ত্রাসীদের এমনভাবে আশ্রয় দিয়ে আসছেন যা কেবল বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তাকেই হুমকির মুখে ফেলে না, বরং আমাদের বন্ধু ভারতের নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকেও বিপন্ন করে তোলে। আমাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র ভারতকে ক্রমাগত বিরোধিতা করে আসছে ইউনুসের জঙ্গি সরকার মুক্তিযুদ্ধে। একই সাথে পাকিস্তানের সাথে ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখেছে – যে দেশটি ১৯৭১ সালে গণহত্যা চালিয়েছিল। এটি গভীর জাতীয় লজ্জার বিষয়। এই নয় মাসে, জাতি বুঝতে পেরেছে কারা তাদের প্রকৃত বন্ধু, কারা দেশপ্রেমিক এবং কারা বাইরের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নকারী বিদেশি এজেন্ট। বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকা পাখির মতো জনগণ এখন বিধ্বস্ত। আহত এবং রক্তাক্ত বাংলাদেশকে পুনর্গঠনের জন্য রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় রয়েছে তারা। সেই আশাই মানুষকে বাঁচিয়ে রেখেছে। আমরা বিশ্বাস করি যে আমাদের নেত্রী, জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা, দেশকে রক্ষা করার এবং এর হারানো সম্মান ও মর্যাদা পুনরুদ্ধারের এই বিশাল দায়িত্ব পালন করবেন।’
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ ছাড়ার ইচ্ছাপ্রকাশ। শোরগোলের নায়ক নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস। ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে দেশের রাজনৈতিক মহলে ধোঁয়াশা। পরিস্থিতিতে শনি সন্ধ্যায় সরকারি বাসভবন যমুনায় বিএনপি এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জামাত নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক। সে দেশের সংবাদপত্র প্রথম আলোর প্রতিবেদনে এমনটাই জানানো হয়েছে। খালেদা জিয়ার দল বিএনপিকে নেতৃত্বকে দেখা করার সময় দিয়েছেন ইউনূস। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ার পর বাংলাদেশের সাংগঠনিক শক্তি এবং দেশজোড়া প্রভাবের বিচারে সর্ববৃহৎ দল বিএনপি-ই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর খালেদার দল অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন জানিয়েছিল। স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “আমরা তো ওঁর (প্রধান উপদেষ্টা) পদত্যাগ চাই না। আমরা নির্বাচনের রোডম্যাপ চেয়েছি। তিনি কেন সে দিকে যাচ্ছেন না, সেটা আমরা জানি না। তার পরও তিনি যদি দায়িত্ব পালন করতে না-পারেন, তা হলে জাতি নিশ্চয়ই বিকল্প বেছে নেবে। কারণ এটা কোনও ব্যক্তিগত বিষয় নয়, রাষ্ট্রীয় ব্যাপার।” বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘‘আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় সংসদের নির্বাচন হওয়া উচিত।’’
মহম্মদ ইউনুস পালিয়ে যেতে চাইছেন বাংলাদেশ ছেড়ে? হাসিনা বিরোধী আন্দোলনের পর প্যারিস থেকে এসে বাংলাদেশের সরকারের মাথায় বসেছিলে মহম্মদ ইউনুস। বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার বার্তা দিলেও নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা জারি। সম্প্রতি বাংলাদেশি সেনার প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান নির্বাচনের জন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন সরকারের জন্য। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের গদি টলমল। বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই স্পষ্ট। শেখ হাসিনা পরবর্তী সময়ে এই নোবেলজয়ীর ওপর ভরসা রেখেছিলেন গণঅভ্যুত্থানকারী ছাত্র নেতারা। রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে আজ সেই সব অভ্যুত্থানকারীরাও চাপে। এই পরিস্থিতিতে মহম্মদ ইউনুস পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ। মহম্মদ ইউনুস নিজের সরকারি বাসবভনে উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠকে পদত্যাগ নিয়ে কথাবার্তা বলেন বলে দাবি তিনজন উপদেষ্টা সহ প্রধান উপদেষ্টার দফতরের দুই আধিকারিকের। এনসিপি প্রধান তথা বাংলাদেশের প্রাক্তন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামও ইউনুসের সঙ্গে দেখা করে এসে দাবি করেছিলেন, প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগের কথা ভাবছেন। বৈঠকেই ইউনুস বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো সরকারকে অবিশ্বাস করছে। তাতে আমি হতাশ। নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, এমন বিষয়কেও নির্বাচনী ইস্যু করে তোলা হচ্ছে। ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে, এটা বারবার বলেছি। জুনের পর এক দিনও থাকবেন না। কিন্তু কোথাও যেন অবিশ্বাস রয়ে গেছে। এখন এই নির্বাচন ঘিরে বিতর্ক হলে নোবেলজয়ী হিসেবে সারাজীবনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে। এই দায় আমি নিতে চাই না। গণঅভ্যুত্থানের পর শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক দলের অনুরোধেই আমি সরকারের দায়িত্ব নিয়েছিলাম। দলগুলো সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সেই সময়। কথা দিয়েছিল – আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন। কিন্তু এখন অস্থিরতা তৈরি করেছে সেই রাজনৈতিক দলগুলিই। মানুষের আশা পূরণ করতে দিচ্ছে না তারা। সাধারণ মানুষের জীবনে দুর্ভোগ তৈরি করছে। যে কোনও ইস্যুতেই রাস্তা অবরোধ করছে।’
শুধু বাংলাদেশ কেন, সেভেন সিস্টারেরও বন্দর চট্টগ্রাম। বাংলাদেশ উত্তরপূর্ব ভারতের জন্য সাগরের গার্ডিয়ান। বিগত বেশ কয়েক মাস ধরে এই কথা বলে আসছে বাংলাদেশ। এই কথা প্রথম বলেছিলেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস। গার্ডিয়ান বাংলাদেশেরই চোখে জল। কারণ, ভারতের সঙ্গে ব্যবসা করতে এবার সোজা সড়ক পথের বদলে সমুদ্রে নামতে হবে। এতে খরচ বাড়বে, লোকসান হবে, ব্যবসা ধাক্কা খাবে। আর তাই গার্ডিয়ান বাংলাদেশের হুঙ্কার পরিণত হয়েছে মিনমিনে আকুতিতে। বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর শুধু চট্টগ্রামের নয় শুধু বাংলাদেশের নয়, এটা গোটা দক্ষিণ এশিয়ার। এটা সেভেন সিস্টার, নেপাল, ভুটানেরও বন্দর।’ স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি রফতানির ওপর ভারত বিধিনিষেধ আরোপ করতেই মাতব্বরির ফল পেয়েছে বাংলাদেশ। এতদিন ধরে ভারতের বিরুদ্ধে হম্বিতম্বি করা ঢাকা এবার দিল্লির কাছে চিঠি লিখে কাতর আকুতি শুরু করেছে। বাংলাদেশের দাবি, স্থলবন্দর দিয়ে তৈরি পোশাক আমদানিতে ভারত যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, সমস্যার সমাধান করতে দুই দেশের সচিব পর্যায়ের বৈঠক হওয়া উচিত। বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের মাধ্যমে ভারতের কাছে বৈঠকের আবেদন জানিয়ে চিঠি দিয়েছে সেই দেশের বাণিজ্য মন্ত্রক। এই নিয়ে বাংলাদেশের বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ভারতের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে পালটা কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হবে না। আমরা ভারতকে বলব, আপনারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, আসুন সমাধানের পথ বের করি।’ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়, ভারতের কোনও স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি রেডিমেড পোশাক ঢুকবে না। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, শুধুমাত্র কলকাতা এবং মুম্বইয়ের নভশেবা সমুদ্র বন্দর দিয়ে ভারতে ঢুকতে পারবে বাংলাদেশি রেডিমেড পোশাক। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের আওতাধীন বৈদেশিক বাণিজ্য দফতরের ডিজিএফটি তরফে জানানো হয়েছে, অসম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামের কোনও স্থলবন্দর বা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট এবং পশ্চিমবঙ্গের ফুলবাড়ি ও চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ফল, কার্বোনেটেড ড্রিঙ্কস, কাঠের আসবাবপত্র, প্রক্রিয়াজাত খাবার বেকড খাবার, স্ন্যাকস, চিপস, সুতোর মতো কোনও জিনিস ঢুকতে দেওয়া হবে না। ইউনুসের সরকারের পদক্ষেপের জবাবেই দিল্লির এই পদক্ষেপ। এর জেরে যশোরের বেনাপোল বন্দর থেকে লালমনিরহাট, শিলেটের স্থলন্দরগুলিতে সেভাবে ট্রাকের দেখা নেই। নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকলে ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নামতে পারে। স্থলবন্দর দিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের কয়েকটি পণ্য প্রবেশের উপরে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছিল মহম্মদ ইউনুসের সরকার। হিলি এবং বেনাপোল দিয়ে ভারতীয় চাল প্রবেশের উপরেও নিষেধাজ্ঞা চাপায় বাংলাদেশ। পালটা পদক্ষেপে এবার বাংলাদেশকে কাঁদিয়ে ছাড়ছে ভারত। এখন পরিস্থিতি অনুযায়ী, ইউনুসের হম্বিতম্বির জেরে মাথায় হাত পড়বে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের।
বাংলাদেশের রেডিমেড পোশাক স্থলবন্দর দিয়ে আর ভারতে প্রবেশ করতে পারবে না, স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে নয়াদিল্লি। ভারত সরকারকে এই বিধিনিষেধ স্থগিতের জন্য অনুরোধ করুক অন্তর্বর্তী সরকার। চিঠি দিয়ে এমনটাই আবেদন জানাল বাংলাদেশের রেডিমেড পোশাক নির্মাতাদের সংগঠন বিকেএমইএ বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, ভারতের এই নিষেধাজ্ঞার ফলে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বাংলাদেশি রফতানিকারকেরা। তিন মাসের জন্য যেন বিধিনিষেধ স্থগিত করা হয়, মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার বন্দোবস্ত করুক। কূটনৈতিক হস্তক্ষেপের আবেদনও জানিয়েছে বিকেএমইএ। বিকেএমইএ সভাপতি মহম্মদ হাতেম অন্তর্বর্তী সরকারকে একটি চিঠি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রকে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘‘ভারতের বিধিনিষেধের কথা জানার পর বাংলাদেশের রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর উদ্যোগে এবং বাণিজ্যসচিবের নেতৃত্বে পর পর দু’টি বৈঠক হয়েছে। তাতে সকলেই একটি বিষয়ে একমত হয়েছেন যে, সচিব পর্যায়ে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে অবিলম্বে আলোচনা প্রয়োজন। কারণ, ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে স্থলবন্দরগুলির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্থলপথে বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যে অনেক পণ্য সীমান্তে আটকে গিয়েছে। স্থগিত হয়ে গিয়েছে উৎপাদন। এতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রায় ৮০ শতাংশ রফতানি পণ্য বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। এর মধ্যে অধিকাংশই পোশাক। গত ১০ মাসে স্থলপথে ১২ হাজার কোটি টাকার পণ্য বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়েছে। ভারতের নিষেধাজ্ঞার ফলে বাংলাদেশি পোশাক নির্মাতারা বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। ভারত সরকারের কাছে অন্তত তিন মাস সময় চাইতে হবে। তাদের অনুরোধ করতে হবে। বর্তমানে যে পণ্য প্রক্রিয়ারত অবস্থায় আছে, তা-ও যেন এই নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে রাখা হয়।’’
৭১ মুছে নতুন বাংলাদেশে পাকিস্তান প্রেমের জোয়ার বইয়ে দিতে চাইছে মৌলবাদীরা। সেই ষড়যন্ত্রে প্রত্যক্ষ মদত রয়েছে উপদেষ্টা সরকার মহম্মদ ইউনুসের। দেশের অতীত ইতিহাস সুকৌশলে মুছতে এবার বাংলাদেশের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২টি স্থাপনার নাম বদল করল কর্তৃপক্ষ। ২২ মে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩৯তম সিন্ডিকেট সভায় এসব ভবনের নাম পরিবর্তন করাআর ঘটনায় বিতর্ক চরম আকারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার ইফতিখারুল আলম মাসুদ জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২টি স্থাপনার নাম বদল করা হয়েছে। পাশাপাশি নির্মীয়মাণ শেখ হাসিনা হল, শহিদ কামারুজ্জামান হলের নাম চালু হওয়ার আগেই তা পরিবর্তন করা হবে। সিন্ডিকেটের তরফে জানা যাচ্ছে, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িত এই সমস্ত নাম বদলে, ২৪-এর জুলাই আন্দোলনের নামে করা হচ্ছে। যেমন, শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম বদলে করা হচ্ছে ‘বিজয় ২৪ হল’। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের পরিবর্তে ‘জুলাই-৩৬ হল’, সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের পরিবর্তে ‘প্রশাসন ভবন-১’, মনসুর আলি প্রশাসন ভবনের পরিবর্তে ‘প্রশাসন ভবন-২’, শহিদ তাজউদ্দিন আহমদ সিনেট ভবনের পরিবর্তে ‘সিনেট ভবন’ নামকরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া শেখ কামাল স্টেডিয়াম, ড. কুদরত-ই-খুদা একাডেমিক ভবন, ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া একাডেমিক ভবন, কৃষি অনুষদ ভবন, শেখ রাসেল মডেল স্কুলের নাম বদল করা হচ্ছে। ৫ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি আবাসিক হল ও একটি স্কুলের নামফলক ভেঙে নতুন নামকরণ করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। জানা যায়, শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের এইসব নামফলক, গ্রাফিতি ও দেয়াললিখন মুছে দেওয়া হয়। এবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রশাসনের উদ্যোগে শুরু হল নাম বদলের আড়ালে ইতিহাস মোছার ষড়যন্ত্র। ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই সোশাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন বহু শিক্ষার্থী ও নেটিজেনরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রাক্তন সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার সোশাল মিডিয়ায় এর বিরুদ্ধে সরব হন। তিনি লেখেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উন্নয়ননামা। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ভবন, স্থাপনার নাম পরিবর্তন করবেন এটা কাদের সাথে পরামর্শ করে করেছেন? শিক্ষার্থীদের মতামত দেওয়ার অধিকার ছিলো কিনা? আল্টিমেটলি যে সিদ্ধান্তগুলো নিল প্রশাসন, তারা কি স্বাভাবিক অবস্থায় মিটিংয়ে বসেছিলো? নাকি সুযোগে ৭১ এর ওপর দিয়ে ২৪-এর ন্যারেটিভ বয়ান দাঁড় করাতে চাইছে? ৭১ আমাদের ভিত্তি, ৭১ এর প্রতি এত বিদ্বেষ ভালো বার্তা দিচ্ছে না।’।
ইউনুসের বিদায়বেলা আসন্ন। দিল্লির বিরুদ্ধে বিস্ফোরক বাংলাদেশি উপদেষ্টা। সরকার চালাতে ব্যর্থ তারা। বাংলাদেশি রাজনৈতিক দলগুলির আস্থা হারিয়েছে তারা। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ম নিজেরাই ত্যাগ করার পরিকল্পনা করছে। মহম্মদ ইউনুস পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। এই আবহে বাংলাদেশি তরুণ উপদেষ্টা আসিফ মাহমু সজীব ভুঁইয়ার গলায় দিল্লির প্রতি বিদ্বেষ। ফেসবুকে এক পোস্টে আসিফ লেখেন, আওয়ামি লিগ, নর্থ ও দিল্লী জোটভুক্ত হয়ে যে কুমির ডেকে আনছেন তা আপনাদেরকেই খাবে। যদিও এই ‘নর্থ’ দ্বারা তিনি কি বুঝিয়েছেন তা স্পষ্ট নয়। আসিফ নিজের পোস্টে লেখেন, ‘আমাদের না আছে মরার ভয় না আছে হারাবার কিছু। একমাত্র আফসোস, গণতান্ত্রিক রুপান্তর আর এদেশের মানুষের ভাগ্য কোনওটাই ইতিবাচক পথে যাবে না আরকি। স্বপ্ন দেখে স্বপ্নভঙ্গের কষ্টই বোধহয় এদেশের ভাগ্য।’ এনসিপি প্রধান তথা বাংলাদেশের প্রাক্তন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামও ইউনুসের সঙ্গে দেখা করে এসে দাবি করেছিলেন, প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগের কথা ভাবছেন।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান নোবেলজয়ী প্রফেসর মহম্মদ ইউনুসের পদত্যাগের হুমকি। বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনী সংস্কারের বিষয়ে একমত হতে ব্যর্থ। নির্বাচন নিয়ে চাপ বাড়ছে ইউনুসের ওপর। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে ইউনুসের সরকার আপস করেছে বলে অভিযোগ। কক্সবাজারে মার্কিন সেনার উপস্থিতি কিংবা মায়ানমার দিয়ে মানবিক করিডোর নিয়ে জোর বিতর্ক। সেন্ট মার্টিন দ্বীপ নিয়েও জল্পনার শেষ নেই। হাসিনা অভিযোগ করেছিলেন, এই দ্বীপে নাকি আমেরিকা ঘাঁটি গড়তে চায়। বাংলাদেশি সেনা প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান এই নিয়ে ডেডলাইন নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এই আবহে বাংলাদেশে ফের একবার রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন নিয়ে জল্পনা-কল্পনাও আরও তীব্র। ইউনুসের গ্রামীণ ব্যাঙ্ক এবং এর সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য সংস্থাকে বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে নোবেলজয়ী অধ্যাপকের বিরুদ্ধে। ২০২৪ সালের আগস্টে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছিল। সরকারি চাকরি ও শিক্ষা ক্ষেত্রে সংরক্ষণ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ছাত্রদের প্রতিবাদের আয়োজন হিংসাত্মক সংঘর্ষে রূপ নেয়। আন্দোলনে কয়েকশো মানুষ মারা যান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় নিতে হয়। এরপর সেনাবাহিনী একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে এবং ইউনুসকে প্রধান উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর সমপর্যায়ে নিয়োগ।। একবছর যেতে না যেতেই ইউনূস সরকারও অসহযোগিতা, চাপ ও বিরোধিতার সম্মুখীন। এখন কার্যত সেনার সঙ্গেই তাঁর সংঘাতপূর্ণ সম্পর্ক বলে অনুমান করা হচ্ছে। এই নিয়ে সম্প্রতি বিবিসিকে ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির এনসিপি নেতা তথা প্রাক্তন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, মহম্মদ ইউনুসকে বিচলিত ও হতাশ দেখাচ্ছিল। রাজনৈতিক সমর্থন না পেলে কাজ করতে পারবেন না বলে জানান তিনি। জনগণ শুধু সরকার পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন করেনি, বরং সিস্টেম পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন করেছে। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন করার কোনও মানে হয় না।’ ইউনুসের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র নির্বাচন করানো বা সার্বভৌত্ব ক্ষুণ্ণ করাই নয়, ইউুসের বিরুদ্ধে তাঁর নিজের প্রতিষ্ঠানকে সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ।
২০২৪ সালের ৮ অগস্ট বাংলাদেশের মসনদে বসেছিলেন ইউনুস। এরপর থেকে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক এবং এর সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলি অন্যায্য সুবিধা পেয়েছে বলে অভিযোগ। ইউনুসের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা অস্বচ্ছ ভাবে দফারফা করা হয়েছিল। ঢাকায় ‘গ্রামীণ ইউনিভার্সিটি’ নামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দিয়েছেন ইউনুস। অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে এটাই প্রথম অনুমোদন প্রাপ্ত নয়া বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া গ্রামীণ ব্যাঙ্কের কর মাফ করা হয়েছে ও সরকারিভাবে ব্যাঙ্কে শেয়ারের পরিমাণ ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। ইউনুসের প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেড লাভজনক জনশক্তি রফতানির লাইসেন্স পায়। গ্রামীণ টেলিকমের সাবসিডিয়ারি ‘সমাধান সার্ভিসেস লিমিটেড’ পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে কাজ করার জন্য অনুমোদন পায়। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে জোর চর্চা, সমালোচনা।