ইডেন থেকে ফাইনাল সরে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ অরূপ বিশ্বাস। বিসিসিআইকে সরাসরি প্রশ্নবান নিক্ষেপ করলেন রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী। বিসিসিআই কবে থেকে আবহাওয়াবিদ হল? ইডেন থেকে সরে গিয়েছে আইপিএল ফাইনাল। ইডেন থেকে আইপিএল ফাইনাল সরে যাওয়ায় কেন্দ্রকে দায়ী করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। আসরে নেমে বিস্ফোরক ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস সাংবাদিক বৈঠকে পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মাকে সঙ্গে নিয়ে বলেন, “রাজনৈতিক কারণে আইপিএলের প্লে-অফ ও ফাইনাল ইডেন থেকে সরানো হয়েছে। প্লে-অফ ম্যাচের নির্ধারিত দিন ১ জুন ও ফাইনাল ৩ জুন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে রাজনীতি করছেন করুন। বাংলার ক্রীড়াপ্রেমীদের বঞ্চিত করা হল। সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাজনিত কারণে সরানো হয়েছে। উনি সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা বলছেন। কারণ, বিসিসিআই বলছে আবহাওয়ার কারণে খেলা সরানো হয়েছে। ইডেনে আইপিএলের সাতটা ম্যাচ হয়েছে। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। প্রতিটা ম্যাচে গড়ে ৬০-৬৫ হাজার দর্শক খেলা দেখেছেন। তা হলে আইনশৃঙ্খলার সমস্যার কোনও প্রশ্নই উঠছে না।”

যদিও, ইডেন থেকে আইপিএল ফাইনাল সরে যাওয়া রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে। সোশাল মিডিয়ায় রীতিমতো বাগযুদ্ধ। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার এক্স হ্যান্ডেলে ইডেন থেকে ফাইনাল সরে যাওয়া নিয়ে বিস্ফোরক পোস্ট করেন। পরে তড়িঘড়ি করে তা ডিলিটও করেন। সোশাল মিডিয়ায় সুকান্ত দীর্ঘ পোস্টে লেখেন, ‘ইডেন গার্ডেন থেকে আইপিএল ফাইনাল ম্যাচ সরিয়ে নেওয়া ব্যর্থ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অপশাসনের আরেকটা জ্বলন্ত প্রমাণ! আবহাওয়া শুধু একটি অজুহাত মাত্র, এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে আস এবং অন্যতম কারণ হলো বাংলার বেহাল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়া প্রশাসনিক কাঠামো এবং মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক অযোগ্যতা। রামনবমীর দিনে নাইট রাইডার্স এবং লখনউ সুপার জায়ান্টসের ম্যাচ সরানোর আবেদন করে মুখ্যমন্ত্রী নিজে বলেছিলেন, “আমরা নিরাপত্তা দিতে পারব না”। তখনই স্পষ্ট হয়ে যায়, এই সরকার একটি ক্রিকেট ম্যাচ চালাতে অক্ষম, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দিতে তো আরও অপারগ! আজ গুজরাটে সব হচ্ছে, কলকাতার ম্যাচ চলে যাচ্ছে গুজরাটে। কারণ সেই রাজ্যে রয়েছে সুশাসন এবং পরিকাঠামো। আর পশ্চিমবঙ্গে চলছে শুধু তোষণ, চাটুকারিত আর কাটমানি সর্বস্ব নোংরা রাজনীতি।’ কিছুক্ষণ পরেই দেখা যায়, সুকান্তর অ্যাকাউন্টে পোস্টটি আর নেই। তাহলে কী, বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের ধমক হজম করেই পোস্ট মুছে দিয়েছেন সুকান্ত। পোস্ট ডিলিট নিয়ে মুখে কুলুপ বিজেপি সাংসদের।

নতুন সূচি অনুযায়ী ফাইনাল হবে আহমেদাবাদে। প্লে অফও হবে পাঞ্জাবে। কলকাতায় ফাইনাল না হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে বিসিসিআই জানিয়েছিল, ওই সময়ে কলকাতায় বৃষ্টি হতে পারে। সেই আশঙ্কা করেই ফাইনাল সরিয়ে নেওয়া হয় ইডেন গার্ডেন্স থেকে। ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস জানান এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। ৩ জুন কলকাতায় বৃষ্টির সম্ভাবনা ৬৫ শতাংশ। বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এই খবরের উৎস আমেরিকার একটি বেসরকারি অ্যাপ। তাদের উপর ভিত্তি করেই বোর্ড কলকাতা থেকে আইপিএল ফাইনাল সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে বোর্ড। আবহাওয়ার এই পূর্বাভাস নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অরূপ। রাজ্য সরকারের তরফে বোঝানো হয়েছে, আবহাওয়া বা আইনশৃঙ্খলা সবই আসলে ছুতো। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়েই ‘দিদি’র রাজ্য থেকে মোদীর রাজ্য গুজরাতে আইপিএল ফাইনাল সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

বাংলার ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের প্রশ্ন, বোর্ডে কি এখন কোনও আবহওয়াবিদ কাজ করেন? অরূপের স্পষ্ট কথায়, “ইডেনের ড্রেনেজ সিস্টেম অর্থাৎ নিকাশি ব্যবস্থা দেশের মধ্যে সেরা। মুষলধারে বৃষ্টি হলেও, থামার এক ঘণ্টার মধ্যে খেলা শুরু করে দেওয়া যায়। আলিপুর আবহাওয়া দফতর ১২ মে জানিয়েছিল জুনের প্রথম সপ্তাহের কোনও পূর্বাভাস দেওয়া হয়নি। তার পরেও এই সিদ্ধান্ত। আহমদাবাদে যে বৃষ্টি হবে না, সেটা কে বলতে পারে? ২০২৩ সালের আইপিএল ফাইনালে বৃষ্টি হয়েছিল। সেখানে রিজ়ার্ভ ডে ছিল। পরের দিন খেলা হয়েছিল। তা হলে এ ক্ষেত্রেও তা হতে পারত। বিসিসিআই আমেরিকার আবহাওয়াবিদদের কথা বিশ্বাস করে ভারতীয় আবহাওয়াবিদ ও বিজ্ঞানীদের অপমান করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নকে আটকাতে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই এটা করা হয়েছে। ৯৩ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম ইডেন থেকে ম্যাচ সরানো হল। গত ৪ বছরে অহমদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে তিনটে ফাইনাল হয়েছে। কেন? সুকান্ত মজুমদার জবাব দেবেন?” নেপথ্যে রাজনীতি ছাড়া অন্য কিছু দেখছেন না ক্রীড়ামন্ত্রী।

রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কেন সরানো হল এই ফাইনাল। বাংলার ক্রিকেটপ্রেমী মানুষকে কেন বঞ্চিত করা হল? সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাজনিত কারণে সরানো হয়েছে। ক্রীড়ামন্ত্রী সরাসরি বলেন উনি সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা বলছেন। কারণ, বিসিসিআই বলছে আবহাওয়ার কারণে খেলা সরানো হয়েছে।” তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজাও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই-এর একটি বিবৃতি তুলে ধরে জানান, বোর্ড স্পষ্ট জানিয়েছে, খেলা সরানোর নেপথ্যে আবহাওয়া রয়েছে, বাংলার সরকারের কোনও ভূমিকা নেই। রাজনীতির স্বার্থে বিষয়টি ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন সুকান্ত। ক্রিকেট প্রেমীদের প্রতি ‘বঞ্চনা’কে ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনা, সড়ক যোজনায় কেন্দ্রের ‘বঞ্চনা’র সঙ্গে জুড়ে অরূপের অভিযোগ, “সব ক্ষেত্রেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনা, অন্যান্য খাতের ন্যায্য বকেয়া টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র। ১ লক্ষ ৮৭ কোটি টাকা কেন্দ্র আটকে রেখেছে। সব জায়গায় রাজনীতি হচ্ছে। এ বার ক্রিকেটপ্রেমীদেরও বঞ্চিত করা হল।”

ক্রীড়ামন্ত্রী প্রশ্ন, বিসিসিআই আর আইপিএলের গভর্নিং কমিটির বৈঠকের পরে জানা গিয়েছে আবহাওয়া জনিত কারণে কলকাতা থেকে আহমেদাবাদে সরে গিয়েছে ফাইনাল। কোনটা সত্যি তাহলে? দু’ পক্ষ দু’ধরনের কথা বলছে।” নতুন সূচিতে ‘বঞ্চিত’ কলকাতা। প্লে অফের দু’টি ম্যাচ পাঞ্জাবের মুলানপুর স্টেডিয়ামেই। ২৯ মে প্রথম কোয়ালিফায়ার ও ৩০ মে এলিমিনেটর হবে পাঞ্জাবের মুলানপুরে। ১ জুনের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচও হবে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। অর্থাৎ প্লে অফেরও কোনও ম্যাচ পায়নি ইডেন। এর সঙ্গে ২৩ মে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ বনাম রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ম্যাচটিরও ভেন্যু বদলাচ্ছে। ম্যাচটি হওয়ার কথা ছিল বেঙ্গালুরুতেই। পরিবর্তিত সূচিতে তা হবে লখনউয়ে। আইপিএলের প্লে অফের একটি ম্যাচ ও ফাইনাল হওয়ার কথা ছিল ইডেনে। নতুন সূচিতে ‘বঞ্চিত’ কলকাতা। বরং ফাইনাল আহমেদাবাদে। একটি প্লে অফের ম্যাচও চলে গেছে বাংলা থেকে। পেয়েছে পাঞ্জাবের মুল্লানপুর স্টেডিয়াম। নেপথ্যে এক প্রাক্তন ক্রিকেটার। সাধারণত আইপিএল জয়ী দলের মাঠেই উদ্বোধনী। প্লে অফের একটি ম্যাচ ও ফাইনাল। উদ্বোধনী ম্যাচ ইডেনে। বিরতির পর নতুন সূচিতে ইডেন বঞ্চিত। কারণ দেখানো হচ্ছে, ওই সময় কলকাতায় বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। ব্রডকাস্টাররা চান না, ম্যাচ বৃষ্টিতে আক্রান্ত হওয়ার সামান্যতম সম্ভাবনা থাকুক। আহমেদাবাদ আর পাঞ্জাবে বৃষ্টির সম্ভাবনা কম?

পাঞ্জাবের মুল্লানপুর স্টেডিয়ামকেই বেছে নেওয়া হল? নেপথ্যে আছেন ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার হরভজন সিং। সূত্র বলছে, “হরভজন এর জন্য অনেক খেটেছেন। যাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন। বুঝিয়েছেন যে চণ্ডীগড় পুরোপুরি তৈরি। সমস্ত পরিকাঠামো আছে। দর্শকরাও উৎসাহী। হরভজন নিজে স্টেডিয়ামে গিয়েছেন। পিচ পরিদর্শন করেছেন। সমস্ত কিছু পরিকল্পনা করেছেন।” হরভজন পাঞ্জাব ক্রিকেট সংস্থার প্রধান পরামর্শদাতা। অবসরের পর পাঞ্জাবের বিভিন্ন জায়গায় ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন কাজ করেছেন। মুল্লানপুরে আইপিএল ও আন্তর্জাতিক ম্যাচ করানোর ব্যাপারেও যথেষ্ট সক্রিয় ভূমিকা নেন। ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠিত মুল্লানপুর স্টেডিয়ামে প্লে অফের ম্যাচের ব্যবস্থা করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত ধরেই উঠে আসা তারকা ক্রিকেটার ভাজ্জি।

এদিকে, গুজরাট টাইটান্স, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু, পাঞ্জাব কিংস আগেই প্লে অফের টিকিট কেটে ফেলেছিল। চতুর্থ স্থানের জন্য লড়ছিল দিল্লি ও মুম্বই। দিল্লিকে হারিয়ে মুম্বই চলে গেল প্লে অফে। প্লে অফের দিল্লি বহু দূর লোকেশ রাহুলদের কাছে। ওয়াংখেড়েতে ৫৯ রানে জিতে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স পৌঁছে গেল আইপিএলের প্লে অফে। ওয়াংখেড়ের উইকেট ছিল মন্থর। ম্যাচ যত গড়াল পিচের মন্থরতা ততই প্রকাশ পেল। ওয়াংখেড়েতে ঝলমল করলেন সূর্য। তাঁর তেজেই মুম্বই ২০ ওভারে করল ৫ উইকেটে ১৮০ রান। দিল্লি থেমে গেল ১২১ রানে। ৪৩ বলে সূর্যকুমার যাদব খেললেন অপরাজিত ৭৩ রানের ইনিংস। ৭টি বাউন্ডারি ও ৪টি ওভার বাউন্ডারিতে সাজানো ছিল তাঁর ইনিংস। রোহিত শর্মা ব্যর্থ। মুস্তাফিজুর রহমানের শিকার হিটম্যান ৫। মুম্বইয়ের ইনিংসে নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট পড়ল। সূর্যকুমার যাদব একাই প্লে অফ দিল্লির হাত থেকে ছিনিয়ে নিলেন। মুম্বইয়ের সূর্যোদয় ঘটল ওয়াংখেড়েতে। তবে, ক্ষুব্ধ বাংলার ক্রিকেট প্রেমীরা। ক্ষুব্ধ বাংলার ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।