রিয়ানার ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রার পাকিস্তানে গুপ্তচরবৃত্তির একগুচ্ছ তথ্য এবার প্রকাশ্যে। পাকিস্তানের আইএসআই-এর সদস্য আলি হাসানের সঙ্গে জ্যোতি হোয়াটসঅ্যাপে কথা তদন্তকারীদের হাতে। আলির কাছে জ্যোতি বিয়ের ইচ্ছে প্রকাশ করে জানিয়েছিলেন, পাকিস্তানে বিয়ে করতে চান। এর থেকেই স্পষ্ট, পাকিস্তানেই আজীবন কাটাতে চেয়েছিলেন জ্যোতি। জ্যোতি ও আলির হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট ফাঁস। তদন্তকারীরা জানান, দু’জনের কথোপকথনে ইসলামাবাদের প্রতি জ্যোতির ভালবাসার প্রসঙ্গ একাধিকবার উঠে এসেছে। আলিকে জ্যোতি বলেছিলেন, ‘পাকিস্তানে বিয়ে করতে চাই’। দু’জনে সাংকেতিক বার্তাও আদানপ্রদান করেন। ভারতীয় সামরিক বাহিনীর নানা পরিকল্পনার তথ্য আলিকে জানিয়েছিলেন জ্যোতি। গত সপ্তাহে জ্যোতিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পাকিস্তানে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে তদন্ত চালাচ্ছে এনআইএ ও আইবি। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, জ্যোতির চারটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিশ পাওয়া গিয়েছে। সূত্রের খবর, জেরায় জ্যোতি স্বীকার করেছেন, পাকিস্তানের আইএসআই এজেন্টদের সঙ্গে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। দেশ-বিরোধী তথ্য তিনি পাচার করেছিলেন। হোয়াটসঅ্যাপ, স্ন্যাপচ্যাট, টেলিগ্রামের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখতেন তিনি। জ্যোতি আরও জানিয়েছেন, দিল্লিতে পাকিস্তান হাইকমিশনের আধিকারিক দানিশের সঙ্গে বহুবার দেখা করেছেন এবং ফোনে যোগাযোগ ছিল। দানিশ আলির সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন। আলিই জ্যোতিকে পাকিস্তানে থাকার ও ঘোরার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর আধিকারিকদের সঙ্গেও জ্যোতিকে আলাপ করিয়েছিলেন আলি। ইউটিউবার থেকে পাকিস্তানের গুপ্তচর। হরিয়ানার মেয়ে জ্যোতি মালহোত্রার কাহিনী আধুনিক যুদ্ধশাস্ত্রের সংজ্ঞাই পাল্টে দিচ্ছে। গুপ্তচরবৃত্তির জন্য বিভিন্ন সংস্থা অন্য দেশের ইনফ্লুয়েন্সারদের ফাঁদে ফেলে তাঁদের দিয়ে নিজেদের পছন্দসই প্রচার চালাতে পারছে। টাকা এবং বিলাসবহুল জীবনযাপনের লোভে পড়ে দেশের বিরুদ্ধে যেতে দু’বার ভাবছেনও না কেউ।
কোভিড অতিমারির পর থেকে কন্টেন্ট তৈরির জগৎ ক্রমশ বিখ্যাত। প্রতিযোগিতাও বেড়েছে। যত বেশি সংখ্যক মানুষ ইনফ্লুয়েন্সার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে কন্টেন্ট তৈরির দিকে ঝুঁকছে, ততই তারা লাইক এবং ভিউ পাওয়ার এক অবিরাম প্রতিযোগিতার গতি বজায় রাখার জন্য ধারাবাহিকভাবে নতুন কন্টেন্ট তৈরি। প্রয়োজন যোগাযোগ এবং উদ্ভাবনী উপায়। জ্যোতির ‘ট্র্যাভেল উইথ জো’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রায় ৩,৭৭,০০০ অনুগামী। পুলিশ জানিয়েছে, প্রায় আটটি দেশে ভ্রমণ করেছেন জ্যোতি। চীন এবং পাকিস্তানও রয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জ্যোতি পাকিস্তানি গুপ্তচরদের সংস্পর্শে আসেন। এরপরেই তালিম দেওয়া শুরু। হিসারের পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট শশাঙ্ক কুমার সাওয়ান জানিয়েছেন, জ্যোতি মালহোত্রার সামরিক বা প্রতিরক্ষা অভিযান সম্পর্কিত কোনও তথ্যে সরাসরি প্রবেশাধিকার ছিল না যা তিনি ভাগ করে নিতে পারতেন। পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন। শশাঙ্ক বলেন, ‘‘অবশ্যই তারা জ্যোতিকে তাদের এক কর্মী হিসেবে গড়ে তুলছিল। তিনি অন্যান্য ইউটিউব ইনফ্লুয়েন্সারদের সঙ্গেও যোগাযোগ রেখেছিলেন। তাঁরা পাকিস্তানের পিআইও-এর সঙ্গেও যোগাযোগ রেখেছিলেন। এটিও একরকম যুদ্ধেরই শামিল। ইনফ্লুয়েন্সারদের দিয়ে নিজেদের কর্মসূচির প্রচার করানো।’’
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, পহেলগাঁও হামলা এবং অপারেশন সিঁদুরের সময় নিউ দিল্লিতে পাকিস্তান হাই কমিশনের আধিকারিক দানিশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন জ্যোতি। বারবার তাঁর পাকিস্তান ভ্রমণ তাঁকে সন্দেহের তালিকায় ফেলে দেয়। তদন্তের অংশ হিসেবে পুলিশ তাঁর ফোন এবং অন্যান্য গ্যাজেটগুলিও জব্দ করেছে। গত বছরের মার্চ মাসে, পাকিস্তানি দূতাবাসে গিয়ে একটি ভিডিও আপলোড করেছিলেন। শশাঙ্ক বলেন, “তাঁদের উদ্দেশ্য বোঝা উচিত। পাকিস্তান আমাদের জন্য একটি স্বাভাবিক দেশ নয়। সংঘাতের সময় একাধিক সফর, সামাজিকীকরণ এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা এবং অনুগ্রহ রক্ষা দেশের ঐক্য ও সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করে।” জ্যোতি পুলিশকে জানিয়েছেন যে দানিশ তাঁদের প্রথম সাক্ষাতেই তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব পেতে ফেলে। পরে তাঁরা ফোনে কথা বলতে শুরু করেন। ২০২৩ সালে পাকিস্তান ভ্রমণের জন্য ১০ দিনের ভিসা পান জ্যোতি। দানিশ তাঁকে আলি আহওয়ান নামে একজনের সঙ্গে দেখা করতে বলেন। আলিই তাঁর ঘোরাফেরা এবং থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন।পুলিশ জানতে পেরেছে, পাকিস্তানে জ্যোতি বেশ কয়েকটি হাই-প্রোফাইল পার্টিতে যোগ। জ্যোতি পুলিশকে আরও জানিয়েছে, আলি পাকিস্তানি নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি বৈঠকেরও ব্যবস্থা করেছিল। সেখানে শাকির এবং রানা শাহবাজের সঙ্গে দেখা করেন জ্যোতি। সন্দেহ এড়াতে শাকিরের মোবাইল নম্বরটি ‘জাট রানধাওয়া’ নামে ফোনে সেভ করে রেখেছিলেন। ভারতে ফিরে হোয়াটসঅ্যাপ, স্ন্যাপচ্যাট এবং টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সকলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখথে শুরু করেন এবং তথ্য পাঠাতে শুরু করেন। বর্তমানে জ্যোতি মালহোত্রাকে জিজ্ঞাসাবাদে বলেন, “আমরা তাঁর আর্থিক লেনদেন, ভ্রমণের বিবরণ, কোথায় গিয়েছিলেন এবং কাদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন তা খতিয়ে দেখছি।“ এই বিষয়ে হরিয়ানা পুলিশ কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির সঙ্গেও সমন্বয় রেখে চলছে। পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, জ্যোতির জীবনযাত্রা তাঁর আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তিনি সর্বদা বিমানে ফার্স্ট ক্লাসে ভ্রমণ করতেন, বিলাসবহুল হোটেলে থাকতেন এবং দামী রেস্তোরাঁয় খেতেন। পুলিশ জানিয়েছে, পাকিস্তানে ভ্রমণের টাকাও তাঁকে দেওয়া হয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ওই ইউটিউবার একটি বড় ষড়যন্ত্র চক্রের অংশ। হরিয়ানা এবং পাঞ্জাব জুড়ে এই চক্রের অনেকেই ছড়িয়ে আছে। জ্যোতির বাবা হ্যারিস মালহোত্রা জানিয়েছেন, তিনি ইউটিউব ভিডিও শ্যুট করার জন্য পাকিস্তানে গিয়েছিলেন এবং প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়েই সেখানে যেতেন। ইউটিউবের জন্য ভিডিও শ্যুট করার জন্য পাকিস্তান এবং অন্যান্য জায়গায় যেত জ্যোতি। পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল এমন অভিযোগ যদি তাঁর সেখানে কিছু বন্ধু থাকে, তাহলে কি সে তাঁদের ফোন করতে পারবেন না? আমার কোনও দাবি নেই, তবে আমাদের ফোন দিন। আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।” ইউটিউবারের বিরুদ্ধে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট এবং ভারতীয় ন্যায় সংহিতার প্রাসঙ্গিক ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
সুন্দরী ‘দেশদ্রোহী’ জ্যোতি মালহোত্রা এবং আলি হাসান নামে একজন আইএসআই চরের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট তদন্তকারীদের হাতে এসেছে। আপাতত সেটাই খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে। আর তাতেই দেখা যাচ্ছে, ওই আইএসআইয়ের চরকে বিয়ের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন জ্যোতি। বিয়ের পর পাকিস্তানে চলে যাওয়ার কথাও বলছেন তিনি। যা থেকে তদন্তকারীদের দাবি, হাসানের সঙ্গে রীতিমতো প্রেমের সম্পর্কেই জড়িয়ে পড়েছিলেন জ্যোতি।পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন সুন্দরী ‘দেশদ্রোহী’ জ্যোতি মালহোত্রা। ২০২৩ সালে, ভারতে পাক দূতাবাস কর্মী এহসান উর রহিম ওরফে দানিশের সঙ্গে জো-র (এই নামেই নিজেরকে পরিচয় দেন জ্যোতি) আলাপ। ক্রমে ঘনিষ্ঠতা। এই দানিশকে ইতিমধ্যেই পাক দূতাবাসে থেকে বের করে দিয়েছে নয়াদিল্লি। তাকে ‘পার্সোনা নন গ্রাটা’ অর্থাৎ অবাঞ্ছিত ব্যক্তি বলে বিতাড়িত করেছে ভারত সরকার। দানিশ সম্পর্কে তদন্ত করতে গিয়েই প্রথমে জ্যোতির নাম পান তদন্তকারীরা। এরপর হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটকে কেন্দ্র করে নানা তথ্য হাতে এসেছে। দাবি, জ্যোতির মাধ্যমে আইএসআই-এর হাতে চলে যেত ভারতীয় এজেন্টদের তথ্য। সেটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে চ্যাট থেকেই। পুলিশের হাতে এল হরিয়ানার ইউটিউবারের ডায়রি। সেই ডায়রিতে আরও স্পষ্ট হয়েছে তাঁর পাক-যোগ। পুলিশ সূত্রের দাবি, জ্যোতির যে ডায়রিটি পাওয়া গিয়েছে তাতে লেখা রয়েছে ১০-১১ পাতা। এর মধ্যে ৮ পাতা ধরে রয়েছে ইংরেজিতে লেখা পাক ভ্রমণের সাধারণ নোটস। আর তিনপাতা জুড়ে হিন্দিতে পাকিস্তান সংক্রান্ত নিজের অনুভবের কথা লিখেছেন জ্যোতি। এক জায়গায় জ্যোতিকে লিখতে দেখা গিয়েছে, ‘পাকিস্তানে ১০ দিন কাটানোর পর আজ আমার দেশে ফিরলাম। ভারতে। আমরা জানি না সীমান্তের এই দূরত্ব কতদিন থাকবে, কিন্তু হৃদয়ের দুঃখ-কষ্ট দূর হোক। আমরা সবাই একই ভূমির, একই মাটির।’ জানা যাচ্ছে, ডায়রিতে পাকিস্তানের আতিথেয়তা নিয়ে নিজের মুগ্ধতার কথা জানিয়েছেন জ্যোতি।
আইএসআই চর জ্যোতির বাংলাদেশ যোগ সামনে। সম্প্রতি বাংলাদেশ-পাক সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে। পাক গুপ্তচর অভিযোগে গ্রেফতার ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রা বাংলাদেশ সামনে এল। হরিয়ানা পুলিশ আপাতত তদন্ত করছে জ্যোতির গুপ্তচরবৃত্তিতে। ভারত-পাক সংঘাতের আবহে এই জ্যোতি নাকি আইএসআই-কে সংবেদনশীল তথ্য ভাগ করেছিল। সোশ্যাল মিডিয়াতেও পাকিস্তানের হয়ে ইতিবাচক কনটেন্ট বানাত জ্যোতি। পাকিস্তানে একাধিকবার গিয়েছিল জ্যোতি। রিপোর্টে দাবি, জ্যোতির বাংলাদেশে ভ্রমণ করতে যাওয়ার কথা ছিল। জ্যোতির ভিসা আবেদন সংক্রান্ত নথি থেকেই সেই তথ্য জানা গিয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে রিপোর্টে। জ্যোতি মালহোত্রার নাম সহ একটি ভিসা আবেদনপত্র সামনে এসেছে। সেই ফর্মে আবার ‘অস্থায়ী ঠিকানা’ অপশনে লেখা ছিল উত্তরা, ঢাকা। সম্প্রতি বাংলাদেশ-পাক সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে। এমনকী আইএসআই কর্তারা গিয়েও সেখানে গিয়েছিলেন বলে দাবি করা হয়েছিল বিভিন্ন রিপোর্টে। এই আবহে জ্যোতির বাংলাদেশ সফরের পরিকল্পনার খবরটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। ২০২৪ সালের ২২ মে নিজের ইউটিউব অ্যাকাউন্টে ট্রাভেল উইথ জো একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছিল জ্যোতি। তাতে দাবি, নয়াদিল্লি-হাওড়া রাজধানী এক্সপ্রেস ধরে হাওড়ায় এসেছিল। হাওড়ায় নামার পরে হলুদ ট্যাক্সিতে চেপে কলেজ স্ট্রিট হয়ে শিয়ালদা স্টেশনে যাওয়ার ভিডিয়ো দেখিয়েছিল। শিয়ালদা স্টেশনে এসি ডরমেটরি বুক করার দৃশ্য দেখিয়েছিল। দু’দিন পরে আরও একটি ভিডিয়ো আপলোড করেছিল জ্যোতি। ২৪ মে’র সেই ভিডিয়োর প্রথমটা শুরু হয়েছিল শিয়ালদা স্টেশনের ঠিক বাইরে থেকে। এক যুবকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে দাবি করেছিল যে তিনি নাকি পশ্চিমবঙ্গেরই ছেলে। তাঁর সঙ্গে ট্যাক্সিতে করে পার্ক পার্কাসের একটি জনপ্রিয় বিরিয়ানি দোকানে যাওয়ার ভিডিয়ো করেছিল জ্যোতি। ভিডিয়োয় জ্যোতি দাবি করেছিল যে শিয়ালদা থেকে বিকানের দুরন্ত এক্সপ্রেস ধরেছে। তবে দুরন্ত এক্সপ্রেসের টিকিট কনফার্ম হয়নি বলে দাবি করেছিল। আরএসিতে গিয়েছিল। আর শিয়ালদা থেকে ট্রেন ছাড়ার পরে নিজের ভিডিয়োয় বিধাননগর স্টেশন, দমদম স্টেশন, দক্ষিণেশ্বর স্টেশনের মতো জায়গার ছবি দেখিয়েছিল। দক্ষিণেশ্বর স্টেশন পেরিয়ে যে ব্রিজ পড়ে, সেটাও দেখিয়েছিল জ্যোতি।
ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রেরা গুপ্তচরবৃত্তি অবাক করে দিয়েছে গোটা দেশকে। পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে দেশের সংবেদনশীল তথ্য পাকিস্তানে পাচার করার অভিযোগে। এই ঘটনা মনে করিয়ে দিয়েছে মাধুরী গুপ্তার কথা। একজন সিনিয়র ভারতীয় কূটনীতিক ধরা পড়েছিলেন পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচপবৃত্তির অভিযোগে। মাধুরী গুপ্তা ছিলেন একজন পেশাগত কূটনীতিক। ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনে দ্বিতীয় সচিব প্রেস অ্যান্ড ইনফরমেশন হিসেবে নিযুক্ত একজন ভারতীয় পররাষ্ট্র পরিষেবা আইএফএস কর্মকর্তার প্রধান কাজ ছিল স্থানীয় গণমাধ্যম বিশ্লেষণ করা এবং নয়াদিল্লিতে রিপোর্ট করা। দেশের হয়ে ২৭ বছর ধরে সেবা করার পর, কেউ কল্পনাও করতে পারেননি যে একদিন তাঁকে তাঁর দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হবে। ২৬/১১ মুম্বই হামলার প্রায় দেড় বছর পর সত্যি সামনে আসে। রাজীব মাথুর, যিনি সেই সময় ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর পরিচালক ছিলেন, তিনি উদ্বেগজনক তথ্য পান যে ইসলামাবাদে ভারতীয় দূতাবাসের কেউ পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর কাছে গুরুত্বপূর্ণ গোপন তথ্য ফাঁস করছেন। তদন্তে জানা যায়, সেই ব্যক্তি আর কেউ নন, তিনি মাধুরী গুপ্তা। ২০১০ সালের গোড়ার দিকে, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি তাঁর কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করা শুরু করে। তাদের সন্দেহ নিশ্চিত করার জন্য একটি গোপন অভিযান চালানো যেখানে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে মাধুরীকে মিথ্যে তথ্য সরবরাহ করতে থাকেন। এরপরেই তাদের সন্দেহ নিশ্চিত বলে প্রমাণিত হয়। তদন্তকারীদের মতে, মাধুরী ভালবাসার খাতিরে এই কাজ করেছিলেন। জামশেদ বা জিম নামক এক পাকিস্তানির প্রেমে পড়েছিলেন মাধুরী। তিনি জানতেন না অথবা সম্ভবত উপেক্ষা করেছিলেন যে জিম আসলে পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা, আইএসআই-এর হয়ে কাজ করতেন। মাধুরীর আবেগকে কাজে লাগিয়ে তাঁর থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বার করে নিতেন জিম। তদন্তকারীরা সিদ্ধান্তে পৌঁছন যে মাধুরী হানিট্র্যাপের শিকার হয়েছিলেন। মাধুরী কেবল গোপন নথিই ফাঁস করেননি, তিনি পাকিস্তানে কর্মরত ভারতীয় গোয়েন্দা কর্তাদের নাম এবং ইমেল পাসওয়ার্ড শেয়ার করেছেন বলেও জানা গিয়েছিল। পর্যাপ্ত প্রমাণ সংগ্রহের পর, কর্মকর্তারা তাকে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের প্রস্তুতির অজুহাতে দিল্লিতে ডেকে পাঠান। সেখানে তাঁকে আটক করা হয় এবং জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ২০১০ সালের ২২ এপ্রিল তাঁকে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের অধীনে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালত বলে যে, তিনি যে তথ্য দিয়েছেন তা ভারতের শত্রুর জন্য অত্যন্ত কার্যকর হতে পারত। পাকিস্তানের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিদেশনীতির বিবরণ ফাঁস করার জন্য তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। মাধুরীকে প্রথম ২০১২ সালে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের ৩ এবং ৫ ধারায় অভিযুক্ত করা হয়। যার সর্বোচ্চ সাজা ছিল ১৪ বছর। ২১ মাস তিহার জেলে কাটিয়ে জামিন পান। ২০১৮ সালে আদালত তাঁকে পাকিস্তানের জন্য গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে। মাধুরী ২০২১ সালে ৬৪ বছর বয়সে মারা যান। জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রী এবং একজন সফল ইউপিএসসি পরীক্ষার্থী। মাধুরী ভারতের জন্য বিভিন্ন মিশনে কাজ করেছিলেন। যার মধ্যে ইরাক, লাইবেরিয়া, মালয়েশিয়া এবং ক্রোয়েশিয়াও রয়েছে। উর্দুতে তাঁর সাবলীলতার কারণে ২০০৭ সালে ইসলামাবাদে তাঁকে পোস্টিং দেওয়া হয়েছিল। যা পাকিস্তানি মিডিয়া পর্যবেক্ষণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।