Friday, May 23, 2025
spot_imgspot_img

Top 5 This Week

spot_img

Related Posts

আরজি কর-কাণ্ডে দোষী ‘ধর্ষক’সঞ্জয় জেলের বাগানে কাজে লিপ্ত!‌ একদা দাপুটে সিভিক ‘পুলিশ’ লেখা বাইক নিয়ে রাজ করতেন, এখন দৈনিক আয় আশি টাকা?‌

আরজি কর কাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত! ৪ মাস পর কেমন আছেন ‘ধর্ষক’ সঞ্জয়? জেলে কী কাজ করছেন? আরজি কর কাণ্ডের পর থেকে গোটা রাজ্য এই নামের সঙ্গে পরিচিত। নৃশংস এই ধর্ষণ খুনের ঘটনায় গত ২০ জানুয়ারি সঞ্জয় রায়ের সাজা ঘোষণা করেছে শিয়ালদহ আদালত। আজীবন কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া হয় কলকাতা পুলিশের এই প্রাক্তন সিভিক ভলেন্টিয়ারকে। একদা ‘পুলিশ’ লেখা বাইক নিয়ে শহরময় দাপিয়ে বেড়ানো সিভিকের বর্তমান ঠিকানা প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার। সাজা ঘোষণার ৪ মাস পর দিন যাপনের কাহিনি। জেলের বাগানে কর্মরত আরজি কর কাণ্ডের সঞ্জয়। আরজি কর কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়ার আগে অবধি পেশায় সিভিক ভলেন্টিয়ারের দাপট ছিল নজরকাড়া। আরজি কর সহ শহরের নানান সরকারি হাসপাতালে যাতায়াত ছিল অবাধ। নিয়মিত বক্সিং করতেন। অধিকাংশ সময় কাটত কলকাতা পুলিশের ৪ নং ব্যাটেলিয়নের বি ১৪ কে ব্যারাকে। জীবনযাত্রায় আমূল বদল এসেছে। জেলের চার দেওয়ালের মধ্যেই দিনযাপন করছেন আরজি কর দোষী।

প্রেসিডেন্সি জেল সূত্রে খবর, আজীবন কারাবাসের সাজা পাওয়ার পর জেলের মধ্যে প্রায়ই মনমরা হয়ে কাটানো সঞ্জয় কারোর সঙ্গে বিশেষ কথাবার্তায় ‘‌না’‌। খুব একটা কাজ করা নয়। বিগত চার মাসে সেই পরিস্থিতি বদল। আরজি কর দোষী আগের মতো চুপ থাকে না। টুকটাক কথাবার্তা ও সকাল-সন্ধ্যা বাগানে যেতে প্রস্তুত। প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের ৬ নং সেলে থাকা সঞ্জয় বাগান পরিচর্যার কাজে রত। দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় সেখানেই কাটে। আরজি কর দোষীর সঙ্গে আরও বেশ কয়েকজন কয়েদি এই কাজে নিযুক্ত। বর্তমানে ‘আনস্কিলড’ পর্যায়ে থাকা সঞ্জয়ের দৈনিক মজুরি ৮০ টাকা।

জেলের নিয়ম অনুসারে কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে কয়েদিদের তিন ভাগে ভাগ করা হয়, আনস্কিলড, সেমি স্কিলড ও স্কিলড। ভাগ ভেদে মজুরিও আলাদা। আনস্কিলডের ক্ষেত্রে রোজ ৮০ টাকা, সেমি স্কিলড ৯০ টাকা ও স্কিলড বিভাগের কয়েদিদের দৈনিক ১০০ টাকা করে মজুরি। আগামীদিনে সঞ্জয়ের ‘কর্মদক্ষতা’র দিকে নজর রেখে তাঁকে অন্য কাজে নিয়োগ করা হতে পারে বলে খবর। যে সকল কয়েদি লম্বা সময়ের জন্য সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিতদের এই কাজের সুযোগ দেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে ওই কয়েদিকে প্রথম তিন মাসে পর্যবেক্ষণ করে জেল কর্তৃপক্ষ। এরপর কাজ দেওয়া হয়। বর্তমানে বাগান পরিচর্যার পাশাপাশি নিজের সেল পরিষ্কার রাখার কাজেও লিপ্ত আরজি কর দোষী। কাজের ধরণ, সংশ্লিষ্ট কয়েদির আচরণের দিকে নজর রেখে সাজার মেয়াদ মাস প্রতি সর্বাধিক ৪ দিন অবধি হ্রাস পেতে পারে বলে খবর। বর্তমানে বাগান পরিচর্যার কাজ করে দৈনিক ৮০ টাকা করে মজুরি সঞ্জয়ের নির্দিষ্ট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকছে। নিয়ম অনুযায়ী, সম্পূর্ণ রোজগারের ৫০% অর্থ জেলবন্দি থাকাকালীন নিজের নানান প্রয়োজনে খরচ করতে পারে কয়েদিরা। বাকি অর্থ দরকার পরলে অনুমতি সাপেক্ষে তাঁদের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় কিংবা কারাবাসের মেয়াদ শেষে গোটা টাকা ওই কয়েদিকে দিয়ে দেওয়া হয়।

আরজি কর ধর্ষণ খুন কাণ্ডএখনও অবধি শুধুমাত্র সঞ্জয়কেই দোষী সাব্যস্ত করেছে শিয়ালদহ আদালত। সাজা ঘোষণার পর প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে দিন অতিবাহিত হচ্ছে। এখনও এই মামলার তদন্ত করছে সিবিআই। আরজি কর-কাণ্ডে সঞ্জয়কেই একমাত্র অভিযুক্ত হিসাবে চার্জশিটে উল্লেখ করেছিল সিবিআই। জানুয়ারিতে আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে। তার পর থেকে সঞ্জয়ের ঠিকানা প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের ৬ নম্বর সেল। নীল-কালো বাইকের উপর ইংরেজি হরফে বড় বড় করে লেখা ‘পুলিশ’। সেই বাইক নিয়ে শহরময় ঘুরে বেড়ানো ৫৫বি, শম্ভুনাথ পণ্ডিত স্ট্রিটের বাসিন্দা সঞ্জয় রায় পেশায় কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার। আরজি কর থেকে শুরু করে এনআরএস সরকারি হাসপাতালে ছিল অবাধ যাতায়াত, অশেষ দাপট। যে দাপটে ভর করে ৮ আগস্ট মধ্যরাতে আরজি কর হাসপাতালের চার তলায় উঠে সটান সেমিনার হলে। দিন রাতের ডিউটিতে কর্তব্যরত চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনা ঘটেছিল সেই হলেই। ঘটনায় সঞ্জয়ের দোষ আদালতে প্রমাণিত। দাপুটে সিভিক এখন গরাদে। আরজি কর-কাণ্ডে সঞ্জয়কেই একমাত্র অভিযুক্ত হিসাবে চার্জশিটে উল্লেখ করেছিল তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। মূল ঘটনার ১৬৪ দিনের মাথায় ২০ জানুয়ারি তাঁকে আজীবন কারাবাসের নির্দেশ দেওয়া হয়। যাবজ্জীবন কারাবাসের চার মাস অতিক্রান্ত। জানুয়ারির ২০ তারিখে শাস্তি দিয়েছিল আদালত। মঙ্গলে মে মাসের ২০ তারিখ। প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে সঞ্জয়কে জেলে আপাতত তাঁকে বাগান পরিচর্যার কাজে নিয়োগ করা হয়েছে। জেলের নিয়ম অনুযায়ী সঞ্জয়ের দৈনিক মজুরি এখন ৮০ টাকা।

প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের ৬ নম্বর সেল। জেলের খাতায় সঞ্জয় আপাতত ‘আনস্কিল্‌ড’। কাজের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কয়েদিদের আরও দু’টি পর্যায়। ‘সেমি স্কিল্‌ড’ এবং ‘স্কিল্‌ড’। তিন ক্ষেত্রে মজুরিও ভিন্ন। ‘সেমি স্কিল্‌ড’ কয়েদিরা দৈনিক ৯০ টাকা এবং ‘স্কিল্‌ড’ কয়েদিরা দৈনিক ১০০ টাকা মজুরি। কাজের ধরন, কয়েদির আচরণ বিবেচনা করে শাস্তির মেয়াদ মাস প্রতি সর্বোচ্চ চার দিন পর্যন্ত কমতে পারে। জেলের বাইরের জীবন যাপন, একটি রাতের ঘটনায় বদলে গিয়েছিল। ঘটনার পরদিন থেকেই সঞ্জয় পুলিশ হেফাজতে। তারপর জেলেই। শাস্তি ঘোষণার পর জেলের আজীবন আবাসিক। নিয়মিত বক্সিং করা সঞ্জয়ের বেশির ভাগ সময়েই কাটত কলকাতা পুলিশের ৪ নম্বর ব্যাটেলিয়নের বি১৪কে ব্যারাকে। বাইকটা ছিল কলকাতা পুলিশের ওয়েলফেয়ার সেলের বাইক। পদমর্যাদা অনুযায়ী ওই বাইক পাওয়ার কথা নয়। খাতায়কলমে ব্যারাকে থাকার অধিকারও ছিল না। সঞ্জয় ‘প্রভাবশালী’, যা চাই, প্রভাব খাটিয়ে আদায়।

জেলে কিছুটা স্বাভাবিক আরজি করের ধর্ষক-খুনি। কাজ করার পাশাপাশি টুকটাক কথাবার্তা বলা। সকাল-সন্ধ্যা বাগানে। শিয়ালদহ আদালতের রায়ের পর সঞ্জয়ের আইনজীবী উচ্চতর আদালতে আবেদন জানানোর কথা বলেছিলেন। ফের মোড় ঘুরতে চলেছে আরজি কর মামলার? আদালতে জমা পড়া নয়া ডিএনএ রিপোর্ট ঘিরে চাঞ্চল্য। আরজি করে তরুণী চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের মামলায় নয়া মোড়। কলকাতা হাইকোর্টে আরজি কর চিকিৎসক ধর্ষণ-খুন মামলায় আরও চাঞ্চল্যকর একটি রিপোর্ট জমা পড়ল। নির্যাতিতার পরিবারের পক্ষের ডিএন‌এ বিশেষজ্ঞ পার্থপ্রতিম মজুমদার এই রিপোর্ট জমা করেছন। সিবিআই-এর জমা দেওয়া সিএফ‌এস‌এল রিপোর্টকে কার্যত চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে পার্থপ্রতিম মজুমদারের রিপোর্টে। ডিএনএ বিশেষজ্ঞ পার্থপ্রতিম মজুমদারের রিপোর্টে বলা হয়েছে, সঞ্জয় রায় ছাড়াও ক্রাইম সিনে উপস্থিত থাকতে পারেব আর‌ও এক মহিলা। তিলোত্তমার দেহ সঞ্জয় ছাড়াও সেই মহিলা স্পর্শ করে থাকতে পারেন বলে দাবি সেই বিশেষজ্ঞ রিপোর্টে। ক্রাইম সিনে সঞ্জয় ছাড়াও অন্য পুরুষের উপস্থিতিও অসম্ভব নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে। মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট সিবিআইকে প্রশ্ন করেছিল, আরজি কর মামলায় কি নির্যাতিতা কি গণধর্ষণের শিকার?উল্লেখ্য, আরজি কর মামলায় যে সিবিআই তদন্তে পুরোপুরি সন্তুষ্ট না হওয়ায় ফের তদন্তের দাবিতে আদালতে দ্বারস্থ হয়েছিলেন খুন হওয়া চিকিৎসকের পরিবার। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, হাইকোর্টের এই মামলা শুনতে বাধা নেই। ২০২৫ সালেরই ২০ জানুয়ারি শিয়ালদা আদালতে আরজি কর মামলায় চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা সঞ্জয় রায়কে আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা শোনান বিচারক অনির্বাণ দাস। আমৃত্যু কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে সঞ্জয় রায়কে। ১৮ জানুয়ারি আদালতের তরফ থেকে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৩ ধর্ষণ, ৬৪ ধর্ষণের সময় এমন ভাবে আঘাত করা, যাতে মৃত্যু হয়, ১০৩ (১) নং (খুন) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। সঞ্জয়কে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ ধারার আওতায় সশ্রম যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০,০০০ টাকা জরিমানা, ৬৬ ধারায় আওতায় আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং ১০৩ (১) ধারার আওতায় সশ্রম যাবজ্জীবনের সাজা ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দেন বিচারক। বিচারক নির্দেশ দেন, নির্যাতিতার পরিবারকে ১৭ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে রাষ্ট্রকে। বিচারক বলেছিলেন, এই মামলা বিরলের থেকে বিরলতম নয়।

আর জি কর মেডিক্যালে ধর্ষণ-খুনকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয় রায়। রায় ঘোষণার পরই সঞ্জয়ের দাবি, ফাঁসানো হচ্ছে, কিছু করিনি! আর জি কর কাণ্ডের মামলা শেষ হয়ে গেল? কারণ, নির্যাতিতার পরিবারের মনে অনেক গুলি প্রশ্ন, যার উত্তর এখনও মেলেনি। আর জি আন্দোলনে আগাগোড়া যুক্তথাকা চিকিৎসকদেরও কারও কারও দাবি, একা সঞ্জয় নয়, আরও কেউ কেউ এই ঘৃণ্য অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কি আরজি মামলার মামলা বন্ধ হয়ে গেল? খুন ও ধর্ষণের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকার জন্য গ্রেফতার করা হয় সঞ্জয় রায়কে। সমস্ত , তথ্যপ্রমাণ, ডিজিট্যাল এভিডেন্স ও মেডিক্যাল এভিডেন্স দেখে সিবিআই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়, চিকিৎসক ধর্ষণকাণ্ডে অপরাধী সঞ্জয়ই। দীর্ঘ তদন্তের পর সিবিআই একমাত্র সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধেই চার্জগঠন করে। বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। তারপর সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। কিন্তু এখানেই আর জি কর কাণ্ডের খাতা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে না। ৯ই আগস্ট আর জি কর হাসপাতালের বুকে, ঘটে যাওয়া ভয়ঙ্কর নারকীয় ঘটনা, চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনে ১৪ সেপ্টেম্বর, তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগে গ্রেফতার প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষও!‌ ১৩ ডিসেম্বর সন্দীপ এবং অভিজিতের গ্রেফতারির ৯০ দিনের মাথায় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেওয়ার কথা ছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার। তা দিতে পারায় দুজনকেই জামিন দেন বিচারক। এই সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দিলে, তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগে, ওই দুইজনের বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। মামলাও এখানে শেষ নয়, তদন্তও এখানে শেষ হচ্ছে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles