এ বছর আইপিএলের আর কোনও ম্যাচ হবে না কলকাতায়। আইপিএল ফাইনালও হচ্ছে না ইডেন গার্ডেন্সে। ৩ জুন আইপিএল ফাইনালের বল গড়াতে চলেছে নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। প্লে অফের দুটি ম্যাচ মুল্লানপুরে। কোয়ালিফায়ার ওয়ান ও এলিমিনেটরের দিনক্ষণ যথাক্রমে ২৯ ও ৩০ মে। আশঙ্কাই সত্যি হল। কলকাতা থেকে সরল আইপিএল ফাইনাল। ১ জুন দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারও হবে অহমদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে। প্রথম কোয়ালিফায়ার এবং এলিমিনেটর হবে পাঞ্জাবের মুল্লানপুরের নতুন স্টেডিয়ামে ২৯ এবং ৩০ মে। মঙ্গলবার আইপিএল কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত। সমাজমাধ্যমে সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই। কলকাতায় বৃষ্টির অজুহাতে ইডেন থেকে সরে গেল ফাইনাল।
আইপিএলের উদ্বোধন হয়েছিল ইডেনে। ফাইনালও হওয়ার কথা ছিল ইডেনেই। সবার নজরে ছিল ক্রিকেটের নন্দনকানন। ভারত-পাক সংঘাতের আবহে আইপিএল স্থগিত হয়ে যায়। তার পরে নতুন সূচি যখন ঘোষিত হয়, তখন থেকেই ইঙ্গিত পাওয়া যায় ফাইনাল সরে যাচ্ছে ইডেন থেকে। কলকাতা বঞ্চিত হচ্ছে, এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পরে বিক্ষোভ মিছিলও দেখানো হয়। নতুন সূচিতে ইডেনকে ‘বঞ্চিত’ করার নেপথ্যে একটা যুক্তি, ওই সময় কলকাতায় বৃষ্টি হতে পারে। আইপিএলের নতুন সূচি অনুযায়ী ফাইনাল ৩ জুন। সে দিন কলকাতায় ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। সে দিন কলকাতায় বৃষ্টির সম্ভাবনা ৬৫ শতাংশ। বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এই খবরের উৎস আমেরিকার একটি বেসরকারি অ্যাপ। আলিপুর আবহাওয়া দফতর বা দিল্লির মৌসম ভবনের তরফে এমন কোনও পূর্ভাভাস দেওয়া হয়নি। কারণ, এক সপ্তাহ আগেই সঠিক পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব। ভারতবর্ষের যে কোনও মাঠের তুলনায় ইডেনের নিকাশি ব্যবস্থা অনেক উন্নত। অঝোর বৃষ্টি হলেও খেলা পঁয়তাল্লিশ মিনিটের মধ্যে শুরু করে দেওয়া সম্ভব। সিএবি’র তরফ থেকে এর আগেই বোর্ডকে চিঠি লিখে জানানো হয়, ৩ জুন ইডেন আইপিএল ফাইনাল আয়োজন করতে সব রকম ভাবে তৈরি। বোর্ডের ‘বঞ্চনা’র শিকার ইডেন।
ফাইনাল ম্যাচ যেন না সরে ইডেন থেকে, তার জন্য মাঠে নেমেছিলেন প্রাক্তন বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট। স্বয়ং সৌরভ গাঙ্গুলি আশ্বাস দিয়েছিলেন ‘‘না না, চেষ্টা চলছে। অত সহজে সরে যাওয়া যায়? বিক্ষোভ মিছিল করে কিছু হবে না। বিসিসিআইয়ের সঙ্গে কথা চলছে। বিসিসিআইয়ের সঙ্গে সিএবির সম্পর্ক খুব ভাল। সব ঠিক হবে। কলকাতায় শেষ হোম ম্যাচ ৭ মে হয়েছে। কলকাতার কোনও হোম গেম না থাকায় ইডেন তালিকায় নেই। কেকেআরের কয়েকটা ম্যাচ বাকি থাকলে ইডেনের নামও তালিকায় থাকত। লিগ পর্বে ইডেনকে রাখা হয়নি। ইডেনে প্লে অফ ছিল। আশা করছি সবকিছু ঠিকঠাক হবে। প্লে অফ এবং ফাইনাল ইডেনে হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী।’’ বিসিসিআইয়ের প্রাক্তন সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও গভীর আশা প্রকাশ করেছিলেন। বিসিসিআই-কে চিঠি পাঠিয়েও ৩ জুন ফাইনাল সরেই গেল সিএবির হাত থেকে।
বৃষ্টির ছুতো দেখিয়ে আইপিএলের ফাইনাল কলকাতা থেকে নিয়ে যাওয়া হল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমিত শাহদের রাজ্য গুজরাটে। আমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে হবে ২০২৫ আইপিএলের ফাইনাল। সিএসবি-র যাবতীয় প্রচেষ্টা, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের উদ্যোগ ব্যর্থ করে দিল বিসিসিআই। বিসিসিআই-এর সচিব দেবজিৎ সাইকিয়া নিশ্চিত করেন, প্লে-অফ পর্ব শুরু হবে ২৯ মে বৃহস্পতিবার থেকে। নিউ চণ্ডীগড়ের নিউ পিসিএ স্টেডিয়ামে কোয়ালিফায়ার ওয়ান দিয়ে, যেখানে লিগ পর্বের শীর্ষ দু’টি দল অংশগ্রহণ করবে। ৩০ মে, শুক্রবার এলিমিনেটর ম্যাচের সঙ্গে, একই ভেন্যুতে তৃতীয় এবং চতুর্থ স্থান অধিকারী দলগুলির মধ্যে ম্যাচ হবে। প্লে-অফের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার হবে আমেদাবাদে। সেই সঙ্গে ফাইনাল ম্যাচটিও নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে। কোয়ালিফায়ার ওয়ানের পরাজিত দল এবং এলিমিনেটরের বিজয়ীর দলের মধ্যে লড়াই ১ জুন রবিবার। সাইকিয়া বলেন, ‘শক্তিতে পরিপূর্ণ নাটকীয়তায় মোড়া, রোমাঞ্চে এবং বিনোদনে ভরা ৭০টি অ্যাকশন প্যাকড লিগ পর্বের ম্যাচের পর, স্পটলাইট প্লে-অফের দিকে চলে যাবে। বিশ্বের বৃহত্তম ক্রিকেট স্টেডিয়াম, আমেদাবাদ, আইপিএল ২০২৫-এর আকর্ষণীয় ক্লাইম্যাক্স আয়োজনের জন্য প্রস্তুত।’
আইপিএলের অলিখিত প্রথা হল, টুর্নামেন্ট ফাইনালে যে দু’টি টিম খেলে, পরের বছর সেই দুই ফ্র্যাঞ্চাইজির শহরে টুর্নামেন্টের ‘প্রাইজড’ ম্যাচগুলো ভাগাভাগি হয়। চ্যাম্পিয়ন টিমের শহর পায় পরের বছরের উদ্বোধনী ম্যাচ। সঙ্গে একটা কোয়ালিফায়ার এবং ফাইনাল। কেকেআর গত বারের আইপিএল চ্যাম্পিয়ন টিম। সেই অনুযায়ী ইডেন ম্যাচ পেয়েছিল। আমেদাবাদে ম্যাচ নিয়ে যাওয়ার তাগিদে যাবতীয় নিয়মে জল ঢেলে দিয়েছে বিসিসিআই এবং আইপিএল কর্তৃপক্ষ। এই সময়ে সর্বত্রই কম-বেশি বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। পরিসংখ্যান অনুসারে, জুনের প্রথম দিকে কলকাতা বৃষ্টিপাতের প্রভাব খুব কমই পড়ে এবং গত কয়েক বছরের হিসেব দেখলে দেখা যাবে, জুনের প্রথম ১০ দিন আবহাওয়া নিয়ে কোনও সমস্যা হয় না। ভারতবর্ষের যে কোনও মাঠের তুলনায় ইডেনের নিকাশি ব্যবস্থা অনেক উন্নত। অঝোর বৃষ্টি হলেও, তা থামার পর পঁয়তাল্লিশ মিনিটের মাঠ তৈরি করে খেলা শুরু করে দেওয়া সম্ভব। সিএবি-র তরফ থেকে এর আগে বোর্ডকে চিঠি লিখে সবটা জানানো হয়েছে। আগামী ৩ জুন ইডেন আইপিএল ফাইনাল আয়োজন করতে সব রকম ভাবে তৈরি বলেও জানিয়েছিল সিএবি কর্তারা। রাজনীতির ছোঁয়া আইপিএলে। গুজরাট হল বিজেপি-র দুই শীর্ষ নেতা নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহের রাজ্য। আইসিসি-র চেয়ারম্যান এখন অমিত পুত্র জয় শাহ। বিসিসিআইয়ের যাবতীয় সিদ্ধান্তই জয় শাহের অঙুলি হেলনেই হয়। রাজনীতির ময়দানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিজেপি-র সম্পর্ক সাপে-নেউলে। ইডেন থেকে আইপিএলের ফাইনাল সরিয়ে নিয়ে গিয়ে আমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে। ইডেনকে ‘বঞ্চিত’ করার নেপথ্যে সুপ্ত কারণ কারুরই অজানা নয়!
নতুন সূচি অনুযায়ী, ২৩ মে বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু বনাম সানরাইজার্স হায়দরাবাদের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে না। ম্যাচটি লখনউয়ের একানা স্টেডিয়ামে হবে। বেঙ্গালুরুর আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখেই সিদ্ধান্তে বিসিসিআই। ২-৩ দিনের মধ্যে দক্ষিণ ভারতে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে, যে কারণে আরসিবি এবং হায়দরাবাদের মধ্যের ম্যাচটি ভেস্তে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় আইপিএল আয়োজকদের এই বড় সিদ্ধান্ত। আরসিবি লিগ পর্বের শেষ ম্যাচ খেলবে লখনউ সুপার জায়ান্টসের বিরুদ্ধে। আইপিএলের এই সিদ্ধান্তের পর, আরসিবিকে তাদের বাকি দু’টি ম্যাচই অ্যাওয়ে খেলতে হবে। হোম ম্যাচও, চিন্নাস্বামীতে খেলতে পারবে না। ২৩ মে আরসিবি এবং এসআরএইচ মুখোমুখি একানাতে। ২৭ মে, এলএসজি-র বিরুদ্ধে খেলবে। বেঙ্গালুরুতে আরসিবি-র আর কোনও ম্যাচ নেই। ১৭ মে বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামীতে কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৃষ্টির জেরে টসও হয়নি। ম্যাচটি ভেস্তে যাওয়ায় দুই দলের মধ্যে এক এক করে পয়েন্ট ভাগাভাগি হয়েছে। তবে এর জেরে, কলকাতা নাইট রাইডার্স ছিটকে গিয়েছে প্লে-অফের লড়াই থেকে। ২৩ তারিখেও বেঙ্গালুরুতে বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় ঝুঁকি না নিয়ে ম্যাচটি আগেভাগে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এই ম্যাচ থেকে আরসিবি উপকৃত হবে। ম্যাচটি জিতলে পয়েন্ট টেবলের শীর্ষে পৌঁছতে পারবে।