পাঞ্জাব কিংস: ২১৯/৫ (নেহাল ৭০, শশাঙ্ক ৫৯, তুষার ৩৭/২)
রাজস্থান রয়্যালস: ২০৯/৭ (ধ্রুব ৫৩, যশস্বী ৫০, হরপ্রীত ২২/৩)
১০ রানে জয়ী পাঞ্জাব কিংস।
আইপিএলের দ্বিতীয় দফার প্রথম ম্যাচ আরসিবি-কেকেআর খেলা ভেস্তে যায় বৃষ্টির জন্য। রবিবার ডবল হেডারের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি রাজস্থান-পাঞ্জাব। দেদার বাজছে ডিজে। চিয়ারলিডারদের নাচও। গাভাসকরের অনুরোধ পাত্তাই দেয়নি বোর্ড। আইপিএলে চিয়ারলিডারদের নাচ ও ডিজেদের উল্লাস বন্ধ হয় নি। রাজস্থানের সোয়াই মানসিং স্টেডিয়ামে চার-ছয় মারলে বা উইকেট পড়লে তারস্বরে ডিজে বাজছে। চিয়ারলিডারদের নাচ। রাজস্থান-পাঞ্জাব ম্যাচের শুরুতে জাতীয় সঙ্গীতের পর সম্মান জানানো হয় সেনাবাহিনীকেও। তারপরই ডিজে-চিয়ারলিডারদের গান-নাচেই ফিরল আইপিএল। আইপিএল ক্রমশ এগোচ্ছে প্লে অফের দিকে। কোন দল যোগ্যতা অর্জন করবে প্লে অফে, বলা কঠিন। বিরতি সেরে আইপিএল প্রথম ম্যাচে পাঞ্জাব প্লে অফের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাওয়ার কাজে সফল। শ্রেয়স আইয়ারের দল একধাপ এগিয়ে যশস্বী-বৈভব-ধ্রুবদের দাপট থামিয়ে। শ্রেয়সদের ১০ রানে ম্যাচ জয়ের নেপথ্যে হরপ্রীত ব্রারের ‘ইমপ্যাক্ট’ বোলিং। সোয়াই মানসিং স্টেডিয়ামে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় পাঞ্জাব। গোটা টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুণ ফর্মে থাকা দুই ওপেনার প্রিয়াংশ আর্য ও প্রভসিমরান সিং হতাশ করলেন। ব্যর্থ নতুন বদলি প্লেয়ার মিচেল আওয়েন। হাল ধরেন নেহাল ওয়াধেরা। আঙুলের চোট নিয়ে অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ার ৩০ রান। নেহাল ও শশাঙ্ক সিং ঝড় তুললেন। নেহাল ৩৭ বলে ৭০ রানে আউট। শশাঙ্ক সিং অপরাজিত ৫৯ রানে। আজমাতুল্লা ওমরজাই ৯ বলে ২১ রান করেন। পাঞ্জাবের রান ২১৯। জবাবে দুই তরুণ তুর্কি যশস্বী জয়সওয়াল ও বৈভব সূর্যবংশী বিদ্যুৎগতিতে রান করা শুরু করেন। পাঁচ ওভারে ৭০-এর বেশি রান। অর্শদীপের এক ওভারে নেন ২২ রান। ১৪ বছরের বৈভবের কাণ্ডকারখানা দেখে মনে হচ্ছিল, এদিনও ফের কোনও রেকর্ড ভাঙবে। যশস্বী প্রয়োজনে বিস্ফোরক, সময়মতো ধৈর্য্যশীল। ইমপ্যাক্ট হিসেবে নামা পাঞ্জাব স্পিনার হরপ্রীত ব্রা প্রথমে নিলেন ১৫ বলে ৪০ করা বৈভবের উইকেট। হাফসেঞ্চুরি করার পরই থামালেন যশস্বীকে। রিয়ান পরাগও হরপ্রীতের শিকার। চোট সারিয়ে ফেরা রাজস্থান অধিনায়ক সঞ্জু স্যামসনের উইকেট নেন ওমরজাই। হেটমায়ারের উইকেটও নেন। ধ্রুব জুড়েল হাফসেঞ্চুরি করে রাজস্থানকে জেতাতে পারলেন না। শেষ ওভারে পরপর দুই উইকেট তুলে নেন মার্কো জানসেন। ১০ রানে জেতে পাঞ্জাব কিংস। ব্যর্থতা কাটিয়ে রানে ফিরল বৈভব সূর্যবংশী। কিন্তু দলকে জেতাতে ব্যর্থ। ১৫ বলে ৪০ রানের ইনিংস কাজে এল না। শুরুটা ভাল করেও সেই হারতে হল রাজস্থান রয়্যালসকে। জিতে আইপিএলের প্লে-অফের দিকে এক পা এগিয়ে গেল পঞ্জাব কিংস। প্রথমে ব্যাট করে ২১৯/৫ তুলেছিল পাঞ্জাব। রাজস্থান আটকে গেল ২০৯/৭ স্কোরে। ১২ ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে পাঞ্জাব। এক পয়েন্ট পেলেই প্লে অফে যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে কিংসরা।

দিল্লি ক্যাপিটালস: ১৯৯/৩ (রাহুল ১১২, অভিষেক ৩০, অক্ষর ২৫, স্টাবস ২১ প্রসিধ ৪০/১)
গুজরাট টাইটান্স: ২০৫ (সাই ১০৮, গিল ৯৩)
১০ উইকেটে জয়ী গুজরাট টাইটান্স
শতরানের মাধ্যমে রানে ফিরলেন লোকেশ রাহুল। গুজরাট টাইটান্সের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে মরণ-বাঁচন ম্যাচে রাহুলই টানলেন দিল্লি ক্যাপিটালসসে। বিরাট কোহলির স্মৃতি ফেরালেন রাহুল। ৬০ বলে শতরান চলতি মরসুমে এটি রাহুলের প্রথম শতরান। গুজরাতের বিরুদ্ধে ওপেন করতে নেমে শেষ পর্যন্ত খেললেন রাহুল। ২০ ওভার শেষে ১১২ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়লেন রাহুল। গুজরাতের সামনে ২০০ রানের লক্ষ্য দেওয়া দিল্লির ওপেনার ওপেনিং জুটিতে বার বার বদল। ফাফ ডু’প্লেসি, অভিষেক পোড়েল, করুণ নায়ার থেকে জেক ফ্রেজ়ার ম্যাকগার্ক। রাহুলও ওপেন করেছেন। অক্ষর পটেলরা গুজরাতের বিরুদ্ধে অভিষেক দলে থাকলেও ডু’প্লেসির সঙ্গে ওপেন করতে পাঠান রাহুলকে। ক্রিকেটের ধ্রুপদী ঘরানার ব্যাটার রাহুলে টেকনিক দেখা গেল অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে। ডু’প্লেসি রান পাননি। অভিষেক শুরুতে সমস্যায়। রাহুলকে দেখে হাত খোলা শুরু করেন অভিষেকও। বাংলার ব্যাটার ৩০ রান করেন। অধিনায়ক অক্ষর করেন ২৫ রান।
অপর প্রান্তে উইকেট পড়লেও রাহুল ১১২ রানের ইনিংসে ১৪টি চার ও চারটি ছক্কা মারেন রাহুল। নজর কাড়া দু’টি ছক্কা। শর্ট বলে পিছনের পায়ে দাঁড়িয়ে সোজা ছক্কা মারলেন রাহুল। স্মৃতি ফিরল কোহলির। ২০২২ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের হ্যারিস রউফের বলে পিছনের পায়ে শর্ট বলে ছক্কা মেরেছিলেন কোহলি। মেলবোর্নের সেই ছবি ধরা পড়ল অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে। সাই সুদর্শন ১০৮ ও শুভমানের গিলের ৯৩ রানের ইনিংসই হারিয়ে দিল দিল্লিকে। একটি উইকেটও ফেলতে পারল না দিল্লি। ১০ উইকেটে জয়ী গুজরাট। দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়াম ম্যাচের প্রথম পর্বে সাক্ষী হয়েছিল কেএল রাহুলের দুরন্ত ব্যাটিংয়ের। ৬০ বলে শতরান। ৫৬ বলে ১১২ রানের ইনিংস সাজানো ছিল ১৪টি চার ও চারটি ছক্কায়। স্ট্রাইক রেট ১৭২.২৯। দ্বিতীয় পর্বে ডিসির বোলারদের খুঁজেই পাওয়া গেল না। গুজরাটের দুই ওপেনার শুভমন ও সাই সুদর্শন প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত দাপটে খেললেন। ৬১ বলে ১০৮ রান করলেন সাই, ৫৩ বলে ৯৩ করলেন শুভমন।

প্লে অফ নিশ্চিত করল শুভমন গিলের দল। আরসিবি ও পাঞ্জাবও প্লে অফ নিশ্চিত করে ফেলল। এক ম্যাচে প্লে-অফ পাকা হয়ে গেল তিন দলের। আইপিএলের প্রথম দল হিসাবে প্লে-অফে উঠেছে গুজরাত টাইটান্স। দিল্লিকে হারানোর পরে ১২ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট গুজরাটের। নেট রানরেট ০.৭৯৫। প্রথম দুই দলের মধ্যে থাকার সবচেয়ে ভাল সুযোগ গুজরাটের আরও দু’টি ম্যাচ বাকি। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেঙ্গালুরুর পয়েন্ট ১২ ম্যাচে ১৭। তৃতীয় স্থানে থাকা পাঞ্জাবের পয়েন্টও ১২ ম্যাচে ১৭। বিরাট কোহলিদের নেট রানরেট ০.৪৮২ বেশি শ্রেয়স আয়ারদের ০.৩৮৯ থেকে। প্লে-অফের বাকি একটি জায়গার জন্য লড়াই তিন দলের। মুম্বইয়ের পয়েন্ট ১২ ম্যাচে ১৪। হার্দিক পাণ্ডিয়াদের নেট রানরেট সবচেয়ে বেশি ১.১৫৬। দিল্লির পয়েন্ট ১২ ম্যাচে ১৩। নেট রানরেট ০.২৬০। লখনউ সুপার জায়ান্টসের পয়েন্ট ১১ ম্যাচে ১০। নেট রানরেট এই তিন দলের মধ্যে সবচেয়ে কম -০.৪৬৯। তিন দলের মধ্যে প্লে-অফে ওঠার দৌড়ে মুম্বই এগিয়ে।

অধিনায়ক হিসেবে আইপিএল-এ ইতিহাস গড়লেন শ্রেয়স আইয়ার। পরিসংখ্যান বলছে আইপিএলের সব থেকে সফল ক্যাপ্টেন মহেন্দ্র সিং ধোনি চেন্নাই সুপার কিংসকে ৫ বার চ্যাম্পিয়ন করানো ছাড়াও সব থেকে বেশিবার দলকে ফাইনালে তুলেছেন। দ্বিতীয় স্থানে রোহিত শর্মা দলনায়ক হিসেবে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে ৫ বার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন করিয়েছেন। ক্যাপ্টেন হিসেবে শ্রেয়স আইয়ার আইপিএলে কৃতিত্ব অর্জন করেন। পাঞ্জাব কিংসের প্লে-অফের টিকিট নিশ্চিত হওয়া মাত্রই ইতিহাসে জায়গা করে নেন শ্রেয়স আইয়ার। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়র লিগের ইতিহাসে প্রথম ও এখনও পর্যন্ত একমাত্র ক্যাপ্টেন হিসেবে ৩টি আলাদা দলকে প্লে-অফে পৌঁছে দেন। ২০১৯ ও ২০২০ সালে শ্রেয়স আইয়ারের নেতৃত্বে দিল্লি ক্যাপিটালস আইপিএলের প্লে-অফে ওঠে। ২০১৯-এর দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে চেন্নাই সুপার কিংসের কাছে হেরে যায় দিল্লি। ২০২০ আইপিএলের ফাইনালে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের কাছে পরাজিত হয় ক্যাপিটালস। ২০২৪ সালে ক্যাপ্টেন হিসেবে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে আইপিএল চ্যাম্পিয়ন করান শ্রেয়স আইয়ার। এবার ক্যাপ্টেন হিসেবে পাঞ্জাব কিংসকে ২০২৫ আইপিএলের প্লে-অফে তোলেন আইয়ার। শ্রেয়স আইয়ার ক্যাপ্টেন্সির দায়িত্ব নিয়েই দীর্ঘ ১১ বছর পরে পাঞ্জাব কিংসকে আইপিএলের প্লে-অফে তোলেন। পাঞ্জাব তৃতীয়বার আইপিএলের প্লে-অফের যোগ্যতা অর্জন করে। ২০০৮ সালের উদ্বোধনী মরশুমের সেমিফাইনালে হার। পাঞ্জাবের ক্যাপ্টেন ছিলেন যুবরাজ সিং। ২০১৪ সালে আইপিএলের ফাইনালে পরাজিত হয় পাঞ্জাব দলনায়ক ছিলেন জর্জ বেইলি। এবার শ্রেয়সের নেতৃত্বে ২০২৫ আইপিএলের প্লে-অফের যোগ্যতা অর্জন করে পাঞ্জাব।
শেষ চারে, প্লে-অফের চতুর্থ স্থানের জন্য মুম্বই-দিল্লি-লখনউয়ের ত্রিমুখী লড়াই। তিনটি দলের প্লে-অফের যোগ্যতা অর্জন নিশ্চিত। টাইটানসের সঙ্গে শেষ চারের বৃত্তে পাঞ্জাব কিংস ও আরসিবি। চেন্নাই সুপার কিংস, সানরাইজার্স হায়দরাবাদ, রাজস্থান রয়্যালস ও গতবারের চ্যাম্পিয়ন কলকাতা নাইট রাইডার্সের লিগ পর্ব থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে। চতুর্থ দল হিসেবে আইপিএল ২০২৫-এর প্লে-অফে যাওয়ার লড়াইয়ে তিন দল। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স, দিল্লি ক্যাপিটালস এবং লখনউ সুপার জায়ান্টসের মধ্যে একটি দল প্লে-অফের টিকিট হাতে পাবে। প্লে-অফে যাওয়ার জন্য মুম্বই, দিল্লি ও লখনউয়ের লক্ষ। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ১২ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট। মুম্বইয়ের ম্যাচ বাকি দিল্লি ও পঞ্জাবের বিরুদ্ধে। হার্দিক পান্ডিয়ার নেতৃত্বাধীন মুম্বই প্লে-অফের লড়াইয়ে থাকা তিন দলের মধ্যে সেরা অবস্থানে রয়েছে। তারা যদি তাদের বাকি দুটি ম্যাচেই জিতে যায়, তাহলে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে প্লে-অফের যোগ্যতা অর্জন করবে। প্রকৃতপক্ষে, মুম্বই তাদের যোগ্যতা অর্জন নিশ্চিত করতে পারে যদি তারা দিল্লিকে তাদের ঘরের মাঠে হারিয়ে দেয়। লখনউ তাদের শেষ তিনটি ম্যাচের মধ্যে একটিতে হারলে সুবিধা হবে মুম্বইয়ের। তবে মুম্বই যদি দিল্লির বিপক্ষে হেরে যায়, তাহলে তাদের শেষ ম্যাচে পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে জয়ও যোগ্যতা অর্জনের জন্য যথেষ্ট হবে না। সেক্ষেত্রে যদি দিল্লি তাদের বাকি দুটি ম্যাচেই জিতে যায়, মুম্বইকে ছিটকে যেতে হবে লড়াই থেকে। দিল্লি ক্যাপিটালস ১২ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট। দিল্লির ম্যাচ বাকি মুম্বই ও পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে। দিল্লিকে তাদের শেষ দুটি ম্যাচেই জিততে হবে। যে কোনও একটি ম্যাচ হারলেই তাদের মরশুম শেষ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। লখনউ ও মুম্বই তাদের ২টি করে ম্যাচে হারলে ১টি ম্যাচ জিতেও প্লে-অফে যেতে পারে ক্যাপিটালস। লখনউ সুপার জায়ান্টস ১১ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট। লখনউয়ের ম্যাচ বাকি হায়দরাবাদ, গুজরাট ও আরসিবির বিরুদ্ধে। তিন দলের মধ্যে সব থেকে বেশি সংখ্যক ম্যাচ বাকি থাকা সত্ত্বেও লখনউয়ের যোগ্যতা অর্জনের সম্ভাবনা সব থেকে কম। যদি তারা তাদের বাকি সব ম্যাচ জেতে তাহলে লখনউ ১৬ পয়েন্টে শেষ করবে। সেক্ষেত্রে মুম্বই যদি ২টি ও দিল্লি ১টি ম্যাচে হারে, একমাত্র তখনই প্লে-অফে যাবে লখনউ।