একশো জনের মধ্যে দশজন ভুগছেন হাঁপানিতে! শহর কলকাতা নিয়ে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিক্যাল রিসার্চের সমীক্ষা। বিশ্ব হাঁপানি দিবসে এই রিপোর্ট নিয়ে চিন্তিত ফুসফুস বিশেষজ্ঞরা। হাঁপানি হল ফুসফুসের অসুখ। প্রধান উপসর্গ, নিশ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট, বুকের মধ্যে সাঁই-সাঁই শব্দ, রাত্তিরে শ্বাসকষ্ট। ফুসফুস রোগ বিশেষজ্ঞদের কথায়, ফুসফুসে বাতাস বহনকারী সরু সরু টিউবের মতো অজস্র নালি আছে, কোনও অ্যালার্জির কারণে এই সূক্ষ্ম নালিগুলোর মাংসপেশি সংকুচিত হয়ে পড়ে। শরীর তখন প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পায় না। শুরু হয় শ্বাসের সমস্যা হাঁপানি। হাঁপানি সাধারণত বংশগত রোগ। বংশে হাঁপানি থাকলে ধূমপান এই রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। প্যাসিভ ও সেকেন্ড স্মোকিং থেকেও অ্যাজমার অ্যাটাক হতে পারে। চিন্তার বিষয়। জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বঙ্গের ৪৮.১ শতাংশ মানুষ তামাকে আাসক্ত। তার মধ্যে সিংহভাগই ধূমপান করেন। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বয়স মাত্র পনেয়ে পেরিয়েই সিগারেটে সুখটান দিচ্ছেন বহু। এর মধ্যে রয়েছেন তরুণীরাও। কলেজের কমিউনিটি মেডিসিনের অধ্যাপক ডা. অরূপ চক্রবর্তী একটি সমীক্ষা তুলে ধরেছেন। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিক্যাল রিসার্চ আর রিজিওনাল অকুপেশনাল হেলথ সেন্টার যৌথভাবে একটি সমীক্ষা করেছে। সেই সমীক্ষা তুলে ধরে ডা. অরূপ চক্রবর্তী জানিয়েছেন কলতকাতার ১০০ জনের মধ্যে ৩৮ জন প্যাসিভ স্মোকিংয়ে আক্রান্ত। অর্থাৎ এঁরা নিজেরা ধুমপান করেন না, কিন্তু পাশের ধূমপায়ীর দ্বারা আক্রান্ত। বস্তি এলাকায় ৭৫ শতাংশ বাড়িতে প্রান্নাঘরে ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা নেই। নানাবিধ কারণে বাড়ছে হাঁপানি। বাড়তে থাকা হাঁপানির জন্য বায়ু দূষণকে দায়ী করে চিকিৎসকরা জানান, “কোনও কিছুতে আলার্জি থাকলে, সেই উপাদানের সংস্পর্শে এলে দিতে পারে হাঁপানি। যাঁদের হাঁপানি রয়েছে তাঁরা ধুলো, ধোঁয়া, বাতাসে ভেসে বেড়ানো সূক্ষ্ম ধূলিকণা, ফুলের রেণু, পশুপাখির লোমের সংস্পর্শে এলে বেড়ে যেতে পারে শ্বাসকষ্ট। চিকিৎসক ধীমান গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, যাঁদের হাঁপানি রয়েছে, আবার সিগারেটও খান, তাঁদের ক্ষেত্রে চিকিৎসা করা কঠিন হয়ে যায়। অনেকসময় ইনহেলারও কাজ করে না ঠিক মতো।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা WHO র সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২ সালে বিশ্বজুড়ে নতুন করে প্রায় ২ কোটির বেশি মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যুর সংখ্যাও প্রায় ১ কোটির কাছাকাছি। ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ৭৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে সতর্কতা জারি করে হু। ভারতীয় কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ জানিয়েছে, ভারতে ২০১২ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা ৩৬ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি ৮ জনের মধ্যে একজন জীবনের কোনো এক পর্যায়ে ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। ২০৫০ সালে সংখ্যাটা দ্বিগুণ হবে। প্রতি ৪ জনে একজন ক্যানসারে আক্রান্ত হবে। বর্তমানে এদেশে প্রতি বছর প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। এদেশে কেরালা, মিজোরাম ও অসমে ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সর্বাধিক। বর্তমান জীবনযাপন সর্বাধিক দায়ী। কারণ, দেখা গিয়েছে ক্যানসারের সাথে অন্তত ৪০-৫০ শতাংশ সম্পর্ক রয়েছে জীবনযাপনের। তামাক সর্বপ্রধান ভিলেন। অন্যতম হল ধূমপান, জর্দা, খৈনি, পানমশলা অর্থাৎ তামাক দ্রব্য সেবন। ফুসফুস, মুখ, প্যাংক্রিয়াসের ক্যানসার, ব্লাডার ও মুত্রথলির ক্যানসার ডেকে আনে তামাক। তার পাশাপাশি রয়েছে অ্যালকোহল বা মদ্যপান। যা থেকে খাদ্যানালি, লিভার, স্তন ক্যানসার বাড়ছে। ফাস্টফুড, মিষ্টি, প্রসেসড খাবার, রেড মিট শরীরে ক্যানসার সেলকে বাড়তে সাহায্য করে। আজকের প্রজন্ম এগুলিই খেতে বেশি পছন্দ করে। জীবনে স্ট্রেস, শরীরে বিপদ। একটি বড় শত্রু মানসিক চাপ। অনেক গবেষণাও হচ্ছে। ক্যানসারের সঙ্গে সরাসরি প্রমাণ না পেলেও এর খারাপ প্রভাব শরীরে মারাত্মক কিছু ঘটাতে পারে, তার প্রমান মিলেছে। শরীরের ইমিউনিটি কমে যায়, ফলে ক্যানসার সেল ধ্বংস হতে পারে না। ঝুঁকি বাড়ে। ক্যানসার সেল এদের শরীরে অজান্তেই বাড়তে থাকে। বয়স্কদের মধ্যে ক্যানসারের হার অনেক বেড়েছে। এর পাশাপাশি মানুষের মধ্যে সচেতনা একটু হলেও বাড়ছে, নানা প্রকার টেস্ট বেরিয়েছে। সেগুলির সুবাদে আজকার ক্যানসার নির্ণয় হচ্ছে বেশি ও বৃদ্ধির পরিসংখ্যাও তাই ঊর্ধ্বমুখী। স্তন ক্যানসার, বৃহদান্ত্রের ক্যানসার, প্রস্টেট, ফুসফুস, কিডনি ক্যানসার ইত্যাদি। হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস, ভাইরাস ঘটিত ক্যানসারের মধ্যে অন্যতম। এটা সাধারণত যৌন মিলনের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়। যা থেকে জরায়ুর মুখের ক্যানসার হয়। এদেশে স্তন ক্যানসারের পর এই দ্বিতীয় অন্যতম ক্যানসার। এই ক্যানসার সেহেতু ভাইরাসঘটিত তাই ভ্যাকসিন দ্বারা প্রতিহত করা যায়। হেপাটাইটিস বি ও ই ভাইরাস থেকেও লিভার ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে। রোদ থেকে সাবধান। অতিরিক্ত রোদে থাকাও কিন্তু ক্যানসারের কারণ হতে পারে। বিশেষ করে ত্বকের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। যদিও পাশ্চাত্যে খুব ফর্সা যাঁরা তাঁদের ঝুঁকি বেশি। চায়ের কাপ থেকে খাবারের প্লেট সবেতেই প্লাস্টিকের পাল্লা ভারী। যখনই এতেই গরম পানীয় বা গরম খারাব দেওয়া হয় তখন প্লাস্টিক থেকে কার্সিনোজেনিক উপাদান শরীরে মেশে যা ক্যানসার বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের ব্যবহার মানব শরীরে পরোক্ষভাবে প্রভাব ফেলে।
দুই পায়ের পেশি মজবুত করতে হবে। কাফ মাস্লের প্রতি বিশেষ যত্নবান হওয়া প্রয়োজন। হাঁটু থেকে গোড়ালি পর্যন্ত পায়ের পিছনের পেশির গুরুত্ব আরও অনেক বেশি। কাফ মাস্লের ব্যায়াম করার লক্ষ্য কেবল পা সুগঠিত করা নয়। কাফ মাস্লকে ‘দ্বিতীয় হৃৎপিণ্ড’ বলা হয়। কাফ মাস্লের সঙ্গে হার্টের সম্পর্ক নিবেড়? কাফ মাস্লের যত্ন নিলে হার্টের রোগের ঝুঁকি কমতে পারে। হৃদ্রোগ চিকিৎসকের কথায়, কাফ মাস্লকে সত্যিই শরীরের ‘দ্বিতীয় হৃৎপিণ্ড’ বলা হয়। পায়ের পেশির যত্ন নিলে হার্টের রোগের ঝুঁকি কমতে পারে? চিকিৎসকের কথায়, ‘‘আপনি যখন হাঁটছেন বা দৌড়চ্ছেন, পায়ের কাফ মাস্লের সঙ্কোচন-প্রসারণ হতে থাকে। সেই সময়ে পায়ের ধমনীগুলিরও সঙ্কোচন-প্রসারণ ঘটছে। সেগুলি রক্তকে আবার হার্টের দিকে পাঠাচ্ছে। ফলে পায়ে রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যার সম্ভাবনা কমিয়ে দিচ্ছে। যেহেতু পায়ের পেশি রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে, যে ভাবে হার্টও রক্ত পাম্প করে, কখনও কখনও কাফ মাস্লকে ‘সেকেন্ড হার্ট’ বা ‘দ্বিতীয় হৃৎপিণ্ড’ বলা হয়ে থাকে।’’ হার্টের রোগের সঙ্গে পায়ের পেশির সরাসরি কোনও সম্পর্ক নেই বলেই দাবি চিকিৎসকের। পায়ের পেশি মজবুত, শক্তিশালী হলেই যে হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমবে, সেই ধারণা একেবারেই সঠিক নয়। পায়ের পেশি মজবুত মানে, সেই ব্যক্তি শারীরিক ভাবে সক্রিয় থাকেন। ডায়াবিটিস, স্থূলত্ব, উচ্চ রক্তচাপ এবং উচ্চ কোলেস্টেরলের মতো রোগের সম্ভাবনা কমা। কাফ মাস্লের যত্ন নিলে হার্টের স্বাস্থ্য ভাল থাকতে পারে।
কাফ মাস্ল শক্তিশালী করার জন্য উপযুক্ত ব্যায়াম?
কাফ মাস্লের ব্যায়াম করলে পায়ের নীচের দু’টি পেশি গ্যাস্ট্রোকনেমিয়াস এবং সোলিয়াস মজবুত হয়। এই পেশিগুলিই পাম্পের মতো কাজ করে। মাধ্যাকর্ষণের বিরুদ্ধে রক্তকে হার্টে পাঠায়। রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে।১. দাঁড়িয়ে কাফ উত্তোলন: সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে, কাঁধের সমান দূরত্বে রাখতে হবে পা দু’টি। ধীরে ধীরে আঙুলগুলির ভর দিয়ে উঠতে হবে। গোড়ালিগুলিকে যথাসম্ভব টানটান করে উপরে তুলতে হবে। কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে আবার পায়ের পাতা মাটিতে নামিয়ে দিতে হবে।
২. বসে কাফ উত্তোলন: দীর্ঘ ক্ষণ বসে কাজ করতে হলে এই ব্যায়ামটি অভ্যাস করা যেতে পারে। এমন একটি চেয়ারে বসতে হবে, যাতে পা দু’টি পুরোপুরি মেঝে ছুঁয়ে থাকে। দাঁড়িয়ে যে ভাবে পা তুলতে হয়, এখানেও সে ভাবেই পা দু’টি তুলতে হবে, আবার নামাতে হবে।
৩. হাঁটা বা জগিং: সহজ এবং কার্যকরী ব্যায়াম। ৩০ মিনিট দ্রুত গতিতে হাঁটা বা জগিং করলে পায়ের পেশির নমনীয়তা বাড়বে, শক্তিবৃদ্ধি হবে