কলকাতার হাত গলে বেরিয়ে গেল আইপিএল ফাইনাল। বঞ্চনার শিকার ইডেন গার্ডেন্স! ৩৪ শতাংশ বর্ষনের প্রাদুর্ভাবকে শ্রীখণ্ডী করে ইডেন থেকে ম্যাচ সরিয়ে নেওয়া হল। বিসিসিআইয়ের তরফে যুক্তি দর্শানো হয়েছে, ৩ জুন, আইপিএলে চূড়ান্ত লড়াইয়ের দিনে মৌসম ভবনের রিপোর্ট অনুযায়ী, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। রাজ্যের বেশ কিছু জেলায় ভারী থেকে মাঝারি বর্ষণ হতে পারে। সেই তালিকায় আছে কলকাতাও। ফলে বোর্ড ঝুঁকি নিতে চায়নি। বৃষ্টির জন্য ফাইনাল ভেস্তে যেতে পারে। এটা অনুমান করেই যুক্তি খাড়া করে, ম্যাচের আসর সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে গুজরাতে। যদিও আমদাবাদের স্টেডিয়ামই আইপিএল ফাইনাল আয়োজন করবে কি না, এই বিষয়ে সরকারিভাবে কিছু জানানো হয়নি। সূত্র বলছে, চূড়ান্ত লড়াইয়ের ভেন্যু ইতিমধ্যে ঠিক করে ফেলেছে বিসিসিআই। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার আয়োজনের সুযোগও কলকাতার হাত থেকে ফস্কে গিয়েছে। প্রথম কোয়ালিয়ারের মঞ্চ হিসেবে প্রথমে বাছা হয়েছিল হায়দরাবাদকে। কলকাতার মতো তাদেরও কপাল পুড়েছে। পুনর্বিন্যস্ত ছ’টি ভেন্যুতেই আয়োজিত দুটি কোয়ালিফায়ার ও এলিমিনিটারের লড়াই। কলকাতার হাত গলে বেরিয়ে যাওয়া সেকেন্ড কোয়ালিফায়ার বসবে আমদাবাদের মাঠে। বাকি আইপিএলের ম্যাচ আয়োজিত হয়ে চলেছে ছ’টি আলাদা শহরে। সেগুলি হল: লখনউ, দিল্লি, জয়পুর, আমদাবাদ, মুম্বই ও বেঙ্গালুরু। প্লে-অফের ভেন্যু আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি।

প্রশ্ন, কেন ফাইনাল আয়োজন থেকে ইডেনকে বঞ্চিত করা হল? এরই মধ্যে দানা বেঁধেছে বিতর্ক। কলকাতা পাক সীমান্তবর্তী শহর নয়। ফাইনালের সময় সব রাজ্যেই অল্পবিস্তর বৃষ্টি হয়ই। আইপিএলে ফাইনালের দিন মৌসম ভবনের রিপোর্ট অনুযায়ী, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টির পূর্বাভাস। রাজ্যের বেশ কিছু জেলায় ভারী থেকে মাঝারি বর্ষণ হতে পারে। সেই তালিকায় আছে কলকাতাও। তাছাড়া কলকাতায় বৃষ্টির পূর্বাভাস বলছে মাত্র ৩৪ শতাংশ। পুরো মাঠ ঢেকে দেওয়ার অত্যাধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে ইডেনে। তবুও কেন ফাইনাল আয়োজন থেকে ইডেনকে বঞ্চিত করা হল? কোন উদ্দেশ্যে আমদাবাদে সরানো হল গ্র্যান্ড ফিনালের আয়োজন? চলতি আইপিএলে সমর্থকদের চূড়ান্ত হতাশ করেছে কলকাতা নাইট রাইডার্সের পারফরম্যান্স। দল হিসেবে রাহানেরা প্লে-অফের দৌড় থেকে কার্যত বিদায় নিয়েছেন। যদিও অঙ্কের হিসেবে এখনও টিকে রয়েছে কলকাতা। এহেন পরিস্থিতিতে আইপিএল নিয়ে যতটুকু আশা বেঁচেছিল, সবই ইডেনকে ঘিরে। কারণ, পূর্বনির্ধারিত সূচি এবং আইপিএলের নিয়ম অনুযায়ী, গতবারের বিজয়ী দলকে পরের মরশুমের প্রথম ম্যাচ ও ফাইনাল আয়োজনের সুযোগ দেওয়া হয়। এবারও তার অন্যথা হয়নি। কেকেআর ফাইনালে উঠুক চায় না উঠুক, ফাইনাল আয়োজিত হত ইডেনেই। বদলে গেছে মঞ্চ, পাল্টে গিয়েছে সময়। ফাইনাল, আয়োজনের কথা ছিল ২৫ মে, আয়োজিত হতে চলেছে ৩ মে। ইডেনের কপালে গ্র্যান্ড আসর বসানোর বরাত থাকলেও সূত্রের খবর, আমদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামই আইপিএল ফাইনাল অনুষ্ঠিত করতে চলেছে। কিন্তূ কেন? কিসের জন্য এই বঞ্চনার শিকার ইডেন?

বোর্ড সচিব, আইপিএল চেয়ারম্যান, গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্যরা আলোচনা করেন দশটি ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে। সম্প্রচারকারী চ্যানেল ও স্পনসরদের সঙ্গেও দফায় দফায় আলোচনা। আন্তর্জাতিক ক্রীড়াসূচির কথা মাথায় রেখে দেরি করেনি বিসিসিআই। দিল্লি ও ধরমশালায় খেলা হওয়ার কার্যত সম্ভাবনা নেই। ওই দুই ভেন্যু থেকে ম্যাচ সম্প্রচারের জন্য যাবতীয় পরিকাঠামো সরানো হয়েছে। কলকাতায় প্রবল ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কার কারণ দর্শিয়ে ফাঁকতালে ফাইনাল পেয়ে যেতে চলেছে আমেদাবাদ। এসবই প্রাথমিক পরিকল্পনামাফিক। বোর্ডের তরফে সরকারিভাবে কিছু জানানো হয়নি এখনও। জল্পনা চলছেই। কোটিপতি লিগের ফাইনাল সরে যাওয়ার আশঙ্কায় হতাশ ক্রিকেটপ্রেমীরা। কলকাতা থেকে ম্যাচ দু’টি সরানোর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, জুনের শুরুতে কলকাতার আবহাওয়া নিয়ে সংশয়। স্পষ্টতই বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার খবর রয়েছে। যে কারণে ম্যাচ দু’টি সরানো হচ্ছে। এই সময়ে সর্বত্রই কম-বেশি বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। পরিসংখ্যান অনুসারে, জুনের প্রথম দিকে কলকাতা বৃষ্টিপাতের প্রভাব খুব কমই পড়ে এবং গত কয়েক বছরের হিসেব দেখলে দেখা যাবে, জুনের প্রথম ১০ দিন আবহাওয়া নিয়ে কোনও সমস্যা সেভাবে দেখা যায় না। এমনটা দাবি কলকাতার সাধারণ মানুষেরও।

তিন সপ্তাহ আগে থেকে আবহাওয়া কেমন থাকবে, সেই সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা অসম্ভব এবং কোনও আবহাওয়া বিভাগও এত তাড়াতাড়ি কোনও দৃঢ় উত্তর দিতে পারে না। এদিকে সিএবি কোনও ভাবেই এই ম্যাচ দু’টি হাতছাড়া করতে চাইছে না। ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল আইপিএলের সব ম্যাচই বেশ সাফল্যের সঙ্গে শেষ করেছে। সুতরাং এই ম্যাচ দু’টি সফল ভাবে সংগঠিত করতেই মরিয়া। আইপিএল ফাইনাল ভারতীয় ক্রিকেট ক্যালেন্ডারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলির মধ্যে একটি এবং কোনও সংস্থাই এটি ছেড়ে যেতে চায় না। মুম্বই এবং আমেদাবাদ নিয়ে বড় প্রতিযোগিতার ফাইনাল নিয়ে টানাপোড়েন থাকলেও, সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত হয়নি। আরও একটি রোমহর্ষক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ শেষ ওভার পর্যন্ত খেলায় থাকবে উত্তেজনার মূহুর্ত। সিএবি-র তরফে এক সূত্রের দাবি, ‘প্লে-অফ এবং ফাইনাল কলকাতা থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আমরা বোর্ডের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও তথ্য আসেনি। সিএবি সাধারনত এই হাই প্রোফাইল ম্যাচগুলি আয়োজনের ক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ করার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।’ অর্থাৎ সিএবি যে এই ম্যাচগুলি হাতছাড়া করতে চাইবে না, সেটা তো স্পষ্ট। সিএবি ম্যাচ দু’টি ইডেনে রেখে দিতেই শেষ পর্যন্ত লড়াই চালাবে, এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। এখন দেখার, ইডেনের ভাগ্যে আইপিএলের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ ফিরে আসে কিনা! সিএবি প্রেসিডেন্ট স্নেহাশিষ গঙ্গোপাধ্যায় অবশ্য জানিয়েছেন ভেন্যূ সম্পর্কে পুরোপুরি জানার পর আলোচনা বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রশ্ন আসছে। বোর্ডের কাছ থেকে এখনও পর্যন্ত সিএবির হাতে কোনওরকম নির্দেশ এসে পৌঁছায়নি বলেই জানা গেছে। পূর্ব সূচি অনুযায়ী ইডেনে একটি কোয়ালিফায়ার ম্যাচ ও ফাইনাল ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল। ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল হয়তো চেষ্টা করতে পারে আইপিএল ফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ন ম্যাচ ইডেন থেকে হাতছাড়া না করার। এই বিষয়ে সিএবি প্রেসিডেন্ট স্নেহাশিষ গঙ্গোপাধ্যায় কী একবার চেষ্টা করবেন ফাইনাল ম্যাচ কলকাতায় ফিরিয়ে নিয়ে আসার? প্রশ্ন বঙ্গ ক্রিকেট প্রেমীদের।
ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষবিরতির পর আবার শুরু আইপিএল। ১৭ মে থেকে ফের শুরু হতে চলেছে আইপিএল। ভারতীয় বোর্ডের তরফ থেকে টুর্নামেন্টের বাকি ক্রীড়াসূচি ঘোষিত। ফাইনাল-সহ টুর্নামেন্টের বাকি সতেরো ম্যাচ হবে ছ’টা শহরে। তালিকায় নেই ইডেনের নাম। ছ’টা শহর যথাক্রমে বেঙ্গালুরু, জয়পুর, দিল্লি, লখনউ, মুম্বই আর আমেদাবাদ। এবারের আইপিএলের কোয়ালিফায়ার আর ফাইনাল কোনওটাই হওয়ার সম্ভাবনা নেই ইডেনে। পূর্ব নির্ধারিত সুচি অনুযায়ী অবশ্য ইডেনেই ওই দুটো ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল। পরিবর্তিত নতুন সূচিতে ইডেনে কোনও ম্যাচ দেওয়া হয়নি। সূত্রের খবর, মে মাসের শেষে ও জুনের প্পথম দিকে কলকাতায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস, সেই কারণে বোর্ড কোনওরকম ঝুঁকি নিতে চায়নি। গ্রুপ পর্বে কেকেআরের ইডেনে সব ম্যাচ খেলা হয়ে গেছে। কলকাতায় এবারের মতো আইপিএল যজ্ঞ শেষই বলা যায়। নতুন সূচি অনুযায়ী, কেকেআর ১৭ মে খেলবে আরসিবির বিরুদ্ধে বেঙ্গালুরুতে। অজিঙ্ক রাহানের টিমের গ্রুপের শেষ ম্যাচ সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে। হায়দরাবাদের ঘরের মাঠে না দেওয়ায় হবে দিল্লিতে। হায়দরাবাদেও প্লে অফের কোনও ম্যাচ নেই। ছয় শহরের মধ্যে প্লে-অফ কোথায় হবে, এখনও ঠিক হয়নি। প্রথম কোয়ালিফায়ার ২৯ মে। এলিমিনেটর ৩০ মে। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ১ জুন। ফাইনাল ৩ জুন হবে বলে জানায় ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। সীমান্তে উত্তেজনায় ধর্মশালায় দিল্লি বনাম পঞ্জাব ম্যাচ মাঝপথে বন্ধ হয়। ক্রিকেটারদের বিশেষ ট্রেনে ফিরিয়ে আনা হয়। পর দিনই আইপিএল এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ হয়। এরপর সংঘর্ষবিরতি ঘোষণা করে ভারত ও পাকিস্তান। বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করে ১০ দল। তাড়াতাড়ি বৈঠকে বোর্ডকর্তারা। আইপিএল বন্ধ হওয়ার সময়ই বোর্ড ১০ দলকে জানিয়ে দিয়েছিল, যে সব ক্রিকেটার ও সাপোর্ট স্টাফ দেশে ফিরে গিয়েছেন, তাঁরা যেন ভারতে ফিরে আসার জন্য তৈরি থাকেন। বোর্ডের সবুজ সঙ্কেত পেলেই দলের সঙ্গে যোগ দিতে হবে তাঁদের। নির্দেশও পাঠিয়ে দেওয়া হয়। চেন্নাই এবং হায়দরাবাদে একটিও ম্যাচ রাখা হয়নি। বেঙ্গালুরুতে দু’টি ম্যাচ। কেকেআর খেলবে ১৭ মে এবং হায়দরাবাদের খেলবে ২৩ মে। ঘরের মাঠে খেলবে কোহলির আরসিবি। জয়পুর, দিল্লি, আহমদাবাদ, লখনউ এবং মুম্বইয়ে বাকি ম্যাচগুলি হবে। জয়পুরে রাজস্থান বনাম পাঞ্জাব ১৮ মে, পাঞ্জাব বনাম দিল্লি ২৪ মে এবং পাঞ্জাব বনাম মুম্বই ২৬ মে ম্যাচ। দিল্লিতে দিল্লি বনাম গুজরাত ১৮ মে, চেন্নাই বনাম রাজস্থান ২০ মে এবং হায়দরাবাদ বনাম কলকাতার ২৫ মে ম্যাচ। লখনউয়ে হবে লখনউ বনাম হায়দরাবাদ ১৯ মে এবং লখনউ বনাম বেঙ্গালুরু ২৭ মে ম্যাচ। আহমদাবাদে হবে গুজরাত বনাম লখনউ ২২ মে এবং গুজরাত বনাম চেন্নাই ২৫ মে ম্যাচ। ফের শুরু হওয়া এবারের আইপিএলএ পরের দুটি রবিবারই থাকছে ডাবল হেডার, অর্থাৎ দুটি করে ম্যাচ হবে।

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের বাকি ১৭ ম্যাচের ভেনু নির্বাচনের ক্ষেত্রে বোর্ড যে কথাটি মাথায় রেখেছে, তা হল আবহাওয়া। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি ম্যাচে বৃষ্টি হয়েছে। ধর্মশালায় পরিত্যক্ত হওয়া ম্যাচও বৃষ্টির জন্য বিলম্বিত হয়েছিল। আইপিএল শেষ করার জন্য হাতে সময় কম। বৃষ্টির জন্য কোনও ম্যাচ না ভেস্তে যায়, এমন কি ফাইনাল বা প্লে অফেও যাতে বৃষ্টির ভ্রুকুটি না থাকে, ইত্যাদি বিষয় মাথায় রেখেই এই ভেনু নির্ধারণ করা হয়েছে বলে মনে করছে ক্রিকেটমহল। ভারত-পাকিস্তান অশান্তির আবহে হয়ত ম্যাচ সীমান্তবর্তি এলাকার স্টেডিয়ামে না দিয়ে দক্ষিন ভারত এবং পূর্ব ভারতে দেওয়া হতে পারে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড নিজেদের পছন্দ মতো স্টেডিয়ামই বেছে নিলেন আইপিএলের বাকি ম্যাচগুলো আয়োজনের জন্য। গতবার কেকেআর আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর এবারের আইপিএল ফাইনাল হওয়ার কথা ছিল কলকাতা নাইট রাইডার্সের ডেরায়। সেই ভেন্যু বদল। আইপিএলের প্লে অফের ভেনু হতে চলেছে মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম। ফাইনালের সম্ভাব্য ভেন্যু হিসেবে উঠে আসছে আহমদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামের নাম, জানা যাচ্ছে ৩রা জুন এখানেই হবে ২০২৫ আইপিএল ফাইনাল।
একঝলকে আইপিএল ২০২৫ পরিবর্তিত সূচি-
১৭ মে বেঙ্গালুরুতে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বনাম কলকাতা নাইট রাইডার্স ম্যাচ
১৮ মে রাজস্থান রয়্যালস বনাম পাঞ্জাব কিংসের ম্যাচ জয়পুরে
১৮ মে গুজরাট টাইটান্স বনাম দিল্লি ক্যাপিটালসের ম্যাচ দিল্লিতে
১৯ মে লখনউ সুপার জায়ান্ট বনাম সানরাইজার্স হায়দরাবাদের ম্যাচ লখনউতে
২০ মে চেন্নাই সুপার কিংস বনাম রাজস্থান রয়্যালসের ম্যাচ দিল্লিতে
২১ মে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স বনাম দিল্লি ক্যাপিটালসের ম্যাচ মুম্বইতে
২২ মে গুজরাট টাইটান্স বনাম লখনউ সুপার জায়ান্টের ম্যাচ আমদাবাদে
২৩ মে বেঙ্গালুরুতে আরসিবি বনাম সানরাইজার্স হায়দরাবাদের ম্যাচ
২৪ মে শনিবার জয়পুরে পাঞ্জাব কিংস বনাম দিল্লি ক্যাপিটালসের ম্যাচ
২৫ মে গুজরাট টাইটান্স বনাম চেন্নাই সুপার কিংস ম্যাচ আমদাবাদে
২৫ মে সানরাইজার্স হায়দারাবদ বনাম কলকাতা নাইট রাইডার্স ম্যাচ দিল্লিতে
২৬ মে পাঞ্জাব কিংস বনাম মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ম্যাচ জয়পুরে
২৭ মে লখনউ সুপার জায়ান্ট বনাম আরসিবির ম্যাচ লখনউতে
প্লে অফের পরিবর্তিত সূচি তারিখ ঠিক হলেও ভেনু ঘোষণা করেনি বোর্ড
২৯ মে প্রথম কোয়ালিফায়ার
৩০ মে এলিমিনেটর
১ জুন কোয়ালিফায়ার ২
৩রা জুন অর্থাৎ মঙ্গলবার ফাইনাল
আবহাওয়াকে ‘শিখণ্ডী’ করে ইডেন থেকে আইপিএলএর দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার এবং ফাইনাল সরানোর পরিকল্পনা বোর্ডের। প্লে-অফের ভেন্যু নিয়ে এখনও কোনও স্পষ্টতা নেই। মুম্বই এবং আমেদাবাদ নতুন আয়োজকের তালিকায়। কলকাতা থেকে ম্যাচ দু’টি সরানোর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, জুনের শুরুতে কলকাতার আবহাওয়া নিয়ে সংশয়। স্পষ্টতই বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার খবর থাকার কারণে ম্যাচ দু’টি সরানো হচ্ছে। এই সময়ে সর্বত্রই কম-বেশি বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। পরিসংখ্যান অনুসারে, জুনের প্রথম দিকে কলকাতা বৃষ্টিপাতের প্রভাব খুব কমই পড়ে এবং গত কয়েক বছরের হিসেব দেখলে দেখা যাবে, জুনের প্রথম ১০ দিন আবহাওয়া নিয়ে কোনও সমস্যা সেভাবে দেখা যায় না। এমনটা দাবি কলকাতার সাধারণ মানুষেরও।

আট দিন পর শনিবার থেকে আবার শুরু আইপিএল। দুনিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় টি-টোয়েন্টি লিগের উত্তেজনা এবং হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের কারণে আইপিএল বন্ধ হওয়ার আগেই প্লে-অফের দৌড় থেকে ছিটকে গিয়েছিল তিনটি দল। সাতটি দল রয়েছে প্লে-অফের দৌড়ে। বেশ কয়েক জন বিদেশি ক্রিকেটারের আর আইপিএল খেলার সম্ভাবনা নেই। অনেকেই অনিশ্চিত। ১১ জুন থেকে শুরু বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলবে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা। ২৯ মে থেকে শুরু হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ডের সাদা বলের সিরিজ।
গুজরাত টাইটান্স ১১ ম্যাচে ১৬ পয়েন্টে এই মুহূর্তে আইপিএলের ‘ফার্স্ট বয়’। প্লে-অফ থেকে মাত্র একটি জয় দূরে। ১৮ পয়েন্ট পেলেই প্রথম চারে থাকা নিশ্চিত হবে। বাকি তিনটি ম্যাচেই হারলে ছিটকেও যেতে পারে। কারণ আরও চারটি দলের সম্ভাবনা রয়েছে ১৭ বা তার বেশি পয়েন্ট অর্জন করার। শেষ দু’টি ম্যাচ ঘরের মাঠে খেলায় সুবিধা গুজরাতের। আহমদাবাদে ৪-১ এগিয়ে তারা। রান রেটেও দ্বিতীয় স্থানে। বিদেশিদের নিয়ে সমস্যায় গুজরাত। দলে ইংল্যান্ডের জস বাটলার, ওয়েস্ট ইন্ডিজের শেরফানে রাদারফোর্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার কাগিসো রাবাডা এবং জেরাল্ড কোয়েৎজি দেশের হয়ে খেলার কথা ভেবে আইপিএল থেকে নাম সরিয়ে নিতে পারেন । বাটলার এবং কোয়েৎজি আইপিএল খেলতে আসবেন।
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ১১ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট একটি ম্যাচ জিতলেই প্লে-অফে চলে যাবে। বাকি তিনটি ম্যাচ হারলেও প্লে-অফে। দু’টি ম্যাচ জিতলেও প্রথম দু’য়ে শেষ করার ব্যাপারে নিশ্চয়তা নেই। কারণ গুজরাত এবং পাঞ্জাব ২০ বা তার বেশি পয়েন্টে শেষ করতে পারে। গুজরাত এখন রান রেটে এগিয়ে। পাঞ্জাব বাকি তিনটি জিতলে ২১ পয়েন্টে পৌঁছবে। বিদেশিদের পাওয়া নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় আরসিবি। দলের পেস আক্রমণ দুর্বল হয়ে যেতে পারে। আইপিএলের পরেই রয়েছে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে খেলার প্রস্তুতি নেবেন অস্ট্রেলিয়ার জস হেজলউড এবং দক্ষিণ আফ্রিকার লুঙ্গি এনগিডি, এই দুই পেসার ভারতে আইপিএল খেলার জন্য ফিরবেন না। হেজলউডের চোট থাকায় ফেরার সম্ভাবনা সবচেয়ে কম। আইপিএলের পর ইংল্যান্ড বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ এক দিনের সিরিজ়ের প্রস্তুতির জন্য না-ও আসতে পারেন রোমারিয়ো শেফার্ড এবং টম বেথেল। ইংল্যান্ড দলে না থাকায় লিয়াম লিভিংস্টোন আসতে পারেন।
পাঞ্জাব কিংস ১১ ম্যাচে ১৫ পয়েন্টে দু’টি ম্যাচ জিতলে তবেই প্লে-অফ নিশ্চিত। প্লে-অফে ওঠার জন্য ১৭ পয়েন্ট নিশ্চিত নয়। পাঞ্জাব যদি রাজস্থানকে হারায় এবং দিল্লি ও মুম্বইয়ের কাছে হারে, দিল্লি যদি গুজরাতকে হারায় এবং মুম্বইয়ের কাছে হারে, তখন বেঙ্গালুরু, গুজরাত, মুম্বই, দিল্লি এবং পাঞ্জাব সব ক’টি দলই শেষ করবে ১৭ বা তার বেশি পয়েন্টে। দিল্লিকে হারিয়ে বাকি দু’টি ম্যাচ হারলেও ১৭ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্জাব প্লে-অফে যেতে পারে, যদি মুম্বই এবং দিল্লির মধ্যে যে কোনও একটি দল ১৭ বা তার বেশি পয়েন্টে শেষ করে। বাকি সব ম্যাচ হারলেও পাঞ্জাব প্লে-অফে যেতে পারে। দিল্লিকে দু’টি ম্যাচ হারতে হবে, লখনউকে অন্তত দু’টি ম্যাচ জিততে হবে। পাঞ্জাব, দিল্লির মধ্যে যাদের রান রেট বেশি থেকে প্লে-অফে।
পাঞ্জাব পাবে না দুই অস্ট্রেলীয় জস ইংলিস এবং মার্কাস স্টোইনিসকে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের প্রস্তুতির কারণে। বাঁহাতি পেসার মার্কো জানসেনকে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দলে রেখেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য আইপিএলে খেলতে না আসার সম্ভাবনা প্রবল।
মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ১২ ম্যাচে ১৪ পয়েন্টে গুজরাতের কাছে হারলেও মুম্বইয়ের ভাগ্য এখনও নিজের হাতে। শেষ দু’টি ম্যাচে জিতলে প্লে-অফ নিশ্চিত। একটিতে জিতলে বাকি দলগুলির দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। দু’টিতেই হারলে তারা ছিটকে যাবে। রান রেট ১.১৫৬ ভাল থাকায় মুম্বই বাড়তি সুবিধা পেতে পারে। মুম্বই দলে বিদেশিদের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার রায়ান রিকেলটন এবং করবিন বশকেই বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দলে রেখেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রতিযোগিতার প্রস্তুতির জন্য আইপিএল খেলতে না-ও আসতে পারেন।
দিল্লি ক্যাপিটালস ১১ ম্যাচে ১৩ পয়েন্টে। হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেস্তে যাওয়ায় দিল্লি গুরুত্বপূর্ণ এক পয়েন্ট পেয়েছে। ১৫ পয়েন্ট পেলেও প্লে-অফের দৌড়ে থাকতে পারবে,বাকি দলগুলির ফলের দিকে তাকিয়া থাকতে হবে। ১৭ পয়েন্ট পেলেও। তিনটি ম্যাচেই জিতলে তাদের প্লে-অফ নিশ্চিত হয়ে। শেষ পাঁচটি ম্যাচে মাত্র একটিতে জয় পাওয়া দিল্লির পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানোই আসল চ্যালেঞ্জ। অস্ট্রেলিয়ার জোরে বোলার মিচেল স্টার্ক আসছেন না। নেই জেক ফ্রেজার ম্যাকগার্কও।
কলকাতা নাইট রাইডার্স ১২ ম্যাচে ১১ পয়েন্ট। প্রায় বিদায়ের মুখে। অঙ্কের হিসাবে অবশ্য ক্ষীণ সম্ভাবনা। সর্বোচ্চ ১৫ পয়েন্টে যেতে পারে। দু’টি দলের ইতিমধ্যেই ১৫ পয়েন্টের বেশি রয়েছে। পাঞ্জাবের ১৫ পয়েন্ট তিনটি ম্যাচও বাকি। বিদেশিদের নিয়ে সবচেয়ে কম সমস্যায় কেকেআর। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে নেই সুনীল নারাইন এবং আন্দ্রে রাসেল। রভমন পাওয়াল সুযোগ পাবেন কি না নিশ্চিত নন। তিন জনেই আইপিএল খেলতে ভারতে আসতে পারেন। স্পেনসার জনসন অস্ট্রেলিয়া দলে নেই। ইংল্যান্ডের মইন আলি, দক্ষিণ আফ্রিকার কুইন্টন ডি’কক অবসর নিয়েছেন।
লখনউ সুপার জায়ান্টস ১১ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট। লক্ষ্য বাকি তিনটি ম্যাচে জিতে ১৬ পয়েন্টে শেষ করা। লখনউ আর একটি ম্যাচ হারলেই ছিটকে যাবে। বাকি তিন দল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ১১ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট, রাজস্থান রয়্যালস ১২ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট এবং চেন্নাই সুপার কিংস ১২ ম্যাচে ৬ পয়েন্টএ প্লে-অফে ওঠার আর কোনও সম্ভাবনাই নেই। শোনা যাচ্ছে, গাভাসকর এই আর্জির পরই আইপিএলের দ্বিতীয় পর্বটা জাঁকজমকহীন করার কথা ভেবেছে বিসিসিআই। বোর্ড মনে করছে, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আইপিএলে বিশেষ জাঁকজমক না করাই ভালো। গাভাসকরের দাবি মতোই চিয়ারলিডার এবং ডিজে বাদ দিয়ে আইপিএলের দ্বিতীয় পর্বের আয়োজন হতে পারে। বোর্ডের কর্তাদের ইচ্ছা, চটজলদি আইপিএলের বাকি অংশের সমাপ্তি।