৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসব! ভারতীয় সময় অনুসারে মঙ্গল রাতে শুরু উৎসব। উৎসব কর্তৃপক্ষের কড়া নির্দেশ। লাল গালিচায় ‘নগ্নতা’ নিষিদ্ধ। বিশ্বব্যাপী চলচ্চিত্র জগতে আলোড়ন। ২৪টি সিঁড়ি এবং ৬০ মিটার দীর্ঘ লাল গালিচা। হাঁটার জন্য মুখিয়েচলচ্চিত্র জগতের তারকারা। কান উৎসব কর্তৃপক্ষ উৎসবে অতিথিদের জন্য একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। উৎসবে ‘নগ্ন’ পোশাকে প্রবেশ করা যাবে না। রেড কার্পেটে কোনও দীর্ঘ ফ্রিল যুক্ত পোশাক পরেও হাঁটা যাবে না। উৎসব কর্তাদের দাবি, এই ধরনের পোশাক পরলে তা কর্তব্যরত কর্মীদের ভিড় সামলাতে বাধা সৃষ্টি করে! লুমিয়ের গ্র্যান্ড থিয়েটারে প্রবেশের জন্যও একাধিক নির্দেশিকা জারি। কান উৎসবের পিছনের দিকে তাকালে, বেলা হাদিদ, এলে ফ্যানিং, কেন্ডল জেনারের মতো তারকাদের পোশাকে ‘নগ্নতা’র আভাস পরিলক্ষিত। বিতর্কও বিস্তর। ২০২২ সালে উৎসবের রেড কার্পেটে একজন মহিলা ইউক্রেনের সমর্থনে পোশাক খুলে নগ্ন হন। বিতর্কও দানা বাঁধে। গ্র্যামি পুরস্কার অনুষ্ঠানের রেড কার্পেটে সাহসী পোশাকে হাঁটেন সঙ্গীতশিল্পী কাইনে ওয়েস্টের স্ত্রী বিয়াঙ্কা সেন্সরি। শিট ড্রেসে আলোকচিত্রীদের সামনে বিয়াঙ্কার নগ্নতাই প্রকাশ্যে। বিশ্বজুড়ে ‘রেড কার্পেট ন্যুডিটি’ চর্চা।
বিশ্বের অন্যতম কঠোর লাল গালিচার অবস্থান কান চলচ্চিত্র উৎসবে। অতীতেও উৎসবের সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য নানা নিয়ম জারি কর্তৃপক্ষের। ২০১৫ সালে কানে লাল গালিচায় তারকাদের সঙ্গে নিজস্বী তোলার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি। অভিনেত্রী জুলিয়া রবার্টস এবং ক্রিস্টিন স্টিউয়ার্ট খালি পায়ে কানের লাল গালিচায় হেঁটে শোরগোল। প্রশ্ন, উৎসব কর্তাদের নির্দেশিকা ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই ‘নগ্নতা’র সংজ্ঞা কী। কান চলচ্চিত্র উৎসবে বিশ্ব সিনেমার প্রথম সারির তারকাদের আগমন। উৎসবের রেড কার্পেটে হাঁটার জন্য অতিথিদের পোশাক অনেক আগেই তৈরি করে ফেলেন পোশাকশিল্পরা। শেষ মুহূর্তে অনেকেই এই ধরনের ঘোষণায় ফাঁপরে পড়াটাই স্বাভাবিক। প্রতি বছর ভারত থেকেও একাধিক তারকাকে কালের লাল গালিচায় হাঁটতে দেখা যায়। চলতি বছরে, উৎসবের লাল গালিচায় হাঁটবেন ঐশ্বর্য রাই বচ্চন, আলিয়া ভট্ট, শর্মিলা ঠাকুর, কর্ণ জোহর, জাহ্ণবী কপূর, সিমি গাঢ়েওয়াল সহ অনেক ভারতীয় তারকাই।
ফ্যাশনপ্রেমীদের কাছে তীর্থক্ষেত্রের সমান মেট গালা। কিছুদিন আগেই এই আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ইভেন্ট গিয়েছে। এদিকে মেট গালার থেকে কম কিছু নয় কান চলচ্চিত্র উৎসবের রেড কার্পেট। এইখানেও নিজের ফ্যাশন ও স্টাইল স্টেটমেন্টকে সকলের সামনে তুলে ধরার জন্য মুখিয়ে থাকেন অনেকে। আর আজ থেকেই শুরু হচ্ছে এই উৎসব। চলবে ২৪ মে পর্যন্ত। এদিকে গত কয়েক দশক ধরে কানের রেড কার্পেটে বিভিন্ন ফ্যাশনেবল পোশাকে নজর কেড়েছেন ভারতীয় অভিনেত্রীরা। এর মধ্যে দীপিকা পাডুকোন, ঐশ্বর্য রাই সহ আরও অনেকের নাম করতেই হয়। এই বছরও কিন্তু রেড কার্পেটে থাকছে নানা চমক। এক ঝাঁক নতুন তারকা প্রথম বারের জন্য পা রাখতে চলেছেন কানের লাল গালিচায়। ‘লাপাতা লেডিসের’ ‘ফুল’ অর্থাৎ নীতাংশী গোয়েল জনপ্রিয়তা কুড়িয়ে নিয়েছেন। এই ছবিতে অভিনয়ের জন্য এত কম বয়সে তিনি সেরা অভিনেত্রীর সম্মান পেয়েছেন সম্প্রতি। আন্তর্জাতিক স্তরে তাঁর জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। কানের রেড কার্পেটে দেখা যাবে নীতাংশীকে। সেখানে পারুল গুলাটির সঙ্গেই হাঁটবেন। প্রথম বারের জন্য কানে দেখা যাবে জাহ্নবী কপূর ও ঈশান খট্টরকেও। আসলে এই বছর নীরজ ঘায়ওয়ানের ছবি হোমবাউন্ড ছবিটি চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হবে। এই ছবিতে অভিনয় করেছেন জাহ্নবী ও ঈশান। সেই সূত্রেই তাঁদের দেখা যাবে কানে। তাঁদের সঙ্গে দেখা যাবে করণ জোহারকেও। কারণ হোমবাউন্ড ছবির প্রযোজক তো তাঁর সংস্থাই।বর্ষীয়ান অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর এই বছর কান চলচ্চিত্র উৎসবে উপস্থিত থাকবেন। ১৯৭০ সালে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘অরণ্যের দিন রাত্রি’ পুনরুদ্ধারকৃত সংস্করণের ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ারের জন্যই তিনি যাচ্ছেন সেখানে। কানের ক্লাসিকের মধ্যে এই ছবি স্ক্রিনিং হবে। উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে থেকে শর্মিলা ঠাকুর কানের আসল বিচারকদের অংশ। এদিকে ‘অল উই ইমাজিন অ্যাজ আ লাইট’-এর পরিচালর পায়েল কাপাডিয়াকেও দেখা যাবে কান চলচ্চিত্রে।
ফ্যাশন জগতের সবথেকে বড় ইভেন্ট মেট গালা। ফ্যাশনপ্রেমীদের কাছে যা অস্কারের থেকে কম কিছু নয়। নিউ ইয়র্ক সিটির মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অফ আর্টে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে এই ইভেন্টটি। একদিকে এই ইভেন্টের রেড কার্পেটে হেঁটে যান তাবড় তাবড় তারকারা। তাঁদের আউটফিট হয় দেখার মতো। এক একজনের লুকে ফুটে ওঠে পোশাকশিল্পীদের আঙুলের কাজ, তাঁদের মুনশিয়ানা। মেট গালা আসলে অ্যাভান্ট-গাড্রে ফ্যাশন স্টেটমেন্ট তুলে ধরার একটা অন্যতম জায়গা। তারকাখচিত ইভেন্টে রেড কার্পেট লুকই সবথেকে আকর্ষণীয় বিষয়। গত কয়েক বছরে ফ্যাশনের এই আন্তর্জাতিক ইভেন্টে বেড়েছে বলিউডের অংশগ্রহণ। ইতিমধ্যেই আলিয়া ভাট, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ও দীপিকা পাডুকোনকে এই মঞ্চে দেখা গিয়েছে। এই বছর রয়েছে বিশেষ চমক। বলিউডের একগুচ্ছ তারকা এই বছর প্রথম বার রেড কার্পেট আলো করে হেঁটে যাবেন। সেই তালিকায় প্রথমেই রয়েছেন কিং খান। তাঁর লুক দেখতে এখন থেকেই উৎসাহী অনেকেই। বাদশা ছাড়াও রয়েছে কিয়ারা আডবাণী ও দিলজিৎ দোসাঞ্জ। এত বড় ফ্যাশন ইভেন্ট নিয়ে উত্তেজনা তো রয়েছে। অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্য তারকাদের কোন কঠোর নিয়মে বাধা পড়তে হয়েছে?
ভগের এডিটর-ইন-চিফ তথা এই ইভেন্টের চেয়ার পার্সন অ্যানা উইনট্যুর নিজে সব আয়োজন দেখেন। ইভেন্টে ৪০০-র বেশি হাই প্রোফাইল অতিথি আমন্ত্রিত। তাঁদের বসার ব্যবস্থা আচার ব্যবহার, খাওয়া সবটাই ঠিক করেন অ্যানা। কিছু কঠোর নিয়মাবলীও থাকে এই অনুষ্ঠানের জন্য। মেট গালা ২০২৫-এ কিছু নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয়েছে। মেট গালার রেড কার্পেটে হাই প্রোফাইল সেলিব্রিটি ও সোশ্যাল মিডিয়া স্টারদের দেখা যায়। তার পরেও কিন্তু ইনস্টাগ্রাম স্টোরি বা টিকটক ভিডিয়োতে মেট গালার ভিতরের ছবি, ভিডিয়ো দেখা যায় না। এর অন্যতম কারণই হল এই ইভেন্ট আয়োজকদের কঠোর ‘নো ফোন’ পলিসি। প্রাইভেট ট্যুর, ডিনার ও রেড কার্পেটে পারফরম্যান্সের ছবি বা ভিডিয়ো নেওয়ার অনুমতি নেই। এমনকী সেলফি তোলাও মানা। তবে সেলিব্রিটিদের অনেক সময় বাথরুমেই সেলফি তুলে পোস্ট করতে দেখা গিয়েছে।
ফটো, সেলফি তোলা নিষেধ, তাও মানা যায়। কিন্তু খাবারেও রয়েছে নানা নিষেধাজ্ঞা। যেমন ইভেন্টে অংশগ্রহণকারীদের পাতে পড়ে না রসুন, পেঁয়াজ ও পার্সলে। মেট গালার ডিনারের মেনু থেকে সম্পূর্ণ বাদ এই তিন জিনিস। এর পিছনেও অবশ্য একটা কারণ রয়েছে। বছরের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাশনের রাত এই মেট গালা। তাই এখানে অংশগ্রহণকারীদের সবসময় সুন্দর ও ফ্রেশ দেখাবে, এমনটাই চান অ্যানা উইনট্যুর। কিন্তু পেঁয়াজ, রসুন খেলে মুখে গন্ধ হয়। আবার পার্সলে খেলে দাঁতের ফাঁকে আটকে যেতে পারে। তখন ফটোশ্যুটের জন্য হাসলে দাঁতের ফাঁকে লেগে থাকা পার্সলে পাতা দেখা যেতে পারে। যা পুরো ছবিটাকেই নষ্ট করে দেয়। এ সব অপ্রত্যাশিত ঘটনা এড়াতেই মেট গালার খাবারে এই তিন জিনিসের ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ। মেট গালায় যেতে হলে কিন্তু সেলিব্রিটিদেরও ধূমপানের নেশা ত্যাগ করতে হয়। অন্তত এই ইভেন্টে তো সিগারেট ছুঁতেও পারেন না তাঁরা। এর পিছনেও রয়েছে নির্দিষ্ট কারণ। এই ইভেন্টের জন্য দামি আউটফিট বানান ফ্যাশন ডিজাইনাররা। তাতে কোনও ভাবে সিগারেটের ছাঁই বা আগুন এসে পড়লে তা নষ্ট হতে পারে। আবার পোশাকে সিগারেটের একটা গন্ধও মেখে যেতে পারে। তাই মেট গালায় ধূমপান একেবারে নিষিদ্ধ।
মেট গালায় অংশ নেওয়ার জন্য কিন্তু সেলিব্রিটিদের নিজেদের গ্যাঁটের কড়ি খরচ করতে হয়। নিজেদের আসনের জন্য তাঁদের দিতে হয় মোটা টাকা। যদিও আমন্ত্রণের ভিত্তিতেই সেলেবরা এখানে হাজির হন। তবুও এখানে প্রতিটি আসন ও টেবিলের জন্য নির্দিষ্ট মূল্য ধার্য করা রয়েছে। অনেকেই ভুলে যান যে, মেট গালা আসলে মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অফ আর্টের জন্য তহবিল সংগ্রহের একটা ইভেন্ট। আর এই ফান্ড রেইজিং থেকে উপার্জিত সব অর্থ সাত শতাব্দী পুরনো ফ্যাশন কালেকশন রক্ষণাবেক্ষণের খাতে ব্যবহার করা হয়। টাইমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, একটি টিকিটের দাম ৭৫ হাজার ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৬৩ লক্ষ ৩১ হাজার টাকার কাছাকাছি। এদিকে পুরো টেবিলের জন্য দিতে হয় ৩ লক্ষ ৫০ হাজার ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যা ৩ কোটি টাকার কাছাকাছি। মূলত এই ইভেন্টে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজের পোশাক পরেন সেলেবরা। সেলিব্রিটিদের মাধ্যমেই সকলের সামনে সেই ব্র্যান্ড বা ডিজাইনারদের পোশাক প্রদর্শিত হয়। তাই ফ্যাশন হাউসগুলিই এই টিকিটের খরচ বহন করে। এদিকে মেট গালার রেড কার্পেটে কোন পোশাক পরে হাঁটবেন, তাও আগে থেকে অ্যাপ্রুভ করাতে হয়। ভগের এডিটর অ্যানা উইনট্যুর নিজে আউটফিটে সবুজ সংকেত দেন।
৭৫ হাজার ডলার দেওয়ার পরেও কিন্তু সেলিব্রিটিরা নিজেদের আসন নির্বাচন করতে পারেন না। কর্তৃপক্ষ অনেক ভেবেচিন্তে বসার জায়গা ঠিক করেন। কে কোথায় এবং কার পাশে বসবেন, তা নিয়ে অনেক পরিকল্পনা করতে হয় বলে জানিয়েছেন ভগের স্পেশ্যাল প্রজেক্টের ডিরেক্টর ওয়ার্ড ডুরেট। এখানে আবার দম্পতিকে পাশাপাশি বসতে দেওয়া হয় না। এমনকী আসন নির্বাচন করার সময় সেলেবদের পারস্পরিক সম্পর্কও দেখে নেওয়া হয়। আর এই কাজ এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে ডিসেম্বর থেকেই এই বসার তালিকা তৈরি করা শুরু হয়। এতসব নিয়মাবলী মেনে হয় মেট গালা।
কানের লাল গালিচায় বিধিনিষেধ:
১) উৎসবের লাল গালিচায় তারকারা নিজস্বী তুলতে পারবেন না।
২) প্রেক্ষাগৃহের ভিতরে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ।
৩) কানের লাল গালিচায় স্মার্ট ক্যাজ়ুয়াল নিষিদ্ধ। পুরুষদের ক্ষেত্রে টাক্সেডো ফ্যাশন বাধ্যতামূলক। অর্থাৎ পরনে থাকবে কালো বা গা়ঢ় নীল রঙের সাটিনের ল্যাপেল যুক্ত কোট, সাদা শার্ট, কালো ট্রাউজার্স। গলায় থাকবে বো টাই।
৪) মহিলারা তাঁদের ইচ্ছামতো পোশাক পরতে পারেন। কিন্তু চলতি বছরে সেখানে ‘নগ্নতা’ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি, অতিথিদের দীর্ঘ ফ্রিল যুক্ত কোনো পোশাক পরতে নিষেধ করা হয়েছে।
৫) লাল গালিচায় পোশাকের সঙ্গে মানানসই জুতো পরতে হবে। তবে খালি পায়ে হাঁটা নিষেধ!
৬) পোশাকের সঙ্গে আনুষঙ্গিক ফ্যাশনের অ্যাকসেসরি ক্ষেত্রে কোনও বিধিনিষেধ নেই। তবে সঙ্গে কোনও টোট ব্যাগ বা বড় ব্যাগ নিয়ে প্রেক্ষাগৃহে প্রবেশ নিষেধ।