Saturday, May 24, 2025
spot_imgspot_img

Top 5 This Week

spot_img

Related Posts

‘‌#২৬৯, সাইনিং অফ’‌-‌ ২২ গজে সৃষ্টি হল বিরাট শূণ্যতা!!‌ ফুঁৎকারে বোর্ডের অনুরোধ উড়িয়ে লাল বলের ইনিংসে ইতি টানলেন কোহলি

দেশের হয়ে আর টেস্ট খেলবেন না। শেষ হল ভারতের অত্যন্ত উজ্জ্বল এক টেস্ট অধ্যায়। ক্রিকেটের নিষ্ঠাবান শিক্ষার্থী কোহলি। শচীন তেন্ডুলকরের শূন্যস্থান পূর্ণ করা বিরাট থামলেন! রোহিত শর্মার পরে শেষ হল ভারতের টেস্ট ক্রিকেটের আরও একটি বর্ণোজ্জ্বল অধ্যায়। ভারতীয় ক্রিকেটে কোহলির প্রতিভাবান ব্যাটার হিসাবে। ২০০৮ সালের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ জয় ক্রিকেটার কোহলির উত্থানের প্রথম ধাপ। তেন্ডুলকর অবসর নেওয়ার পর ভারতীয় দলে শূন্যস্থান ভরাট করার দায়িত্ব দেওয়া হয় এক তরুণকে। দিল্লির বিরাট কোহলি ডাকনাম চিকু। ভারতীয় ক্রিকেটে উপস্থিত কোহলি-উত্তর যুগ। চিকু ভারতের জার্সি পরে ২২ গজে আর টেস্ট খেলবেন না। শূন্যস্থান পূরণ করা কোহলিই তৈরি করলেন আর একটি শূন্যস্থান। জীবনের বৃত্ত এ ভাবেই পূর্ণ হয়। সদা অগ্রগামী জীবন থামতে পারে না।

ভারতে ক্রিকেটে পূজিত হন ক্রিকেটারেরা। শচীনের মতো কোহলিও ক্রিকেট ঈশ্বরের বরপুত্রের অভাব অনুভব করবে ভারতীয় দল। অনুভব করবেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। ৩৬ বছর বয়স! তবু অবসর নিয়ে ফেললেন। টি-টোয়েন্টির পর টেস্ট ক্রিকেট থেকেও। অসংখ্য ক্রিকেটপ্রেমীর কথা একটু ভাবলেন না। কোহলি ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের অনুরোধেও মন গলেনি! রোহিত শর্মার পর তিনিও সরে গেলেন লাল বলের ক্রিকেট থেকে। প্রতিভাবান ব্যাটার। ২০০৮ সালে তাঁর নেতৃত্বে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত। ক্রিকেটার কোহলির উত্থানের প্রথম ধাপ হিসাবে সেটাই চিহ্নিত হয়ে রয়েছে। বিরাট হয়ে ওঠার পরেও ক্রিকেটের নিষ্ঠাবান শিক্ষার্থী কোহলি। অনুশীলন, নিজের প্রস্তুতির সঙ্গে কখনও আপস করেননি। ক্রিকেটের জন্য বদলে ফেলেছেন নিজের জীবনদর্শন, বাকি সকলের থেকে আলাদা। ছোটবেলায় অনুশীলনের পর খিদে মেটাতেন প্রিয় ছোলে-বাটুরেতে। ক্রিকেটের জন্য প্রিয় সেই খাবার ২০১৪ সালের পর মুখে তোলেননি। সম্পর্ক চুকিয়ে দেন প্রিয় বাটার চিকেনের সঙ্গেও। ফিটনেসের জন্য বদলে ফেলেছেন নিজের খাদ্যাভ্যাস। ক্রিকেটের জন্য ছেড়ে দিয়েছেন প্রিয় আরও অনেক কিছু। ফিটনেস সচেতন কোহলি। নিখুঁত। খাওয়ার নিয়ম ভেঙে বাড়তি ট্রেনিং করতেন না। শচীনের শূন্যস্থান পূরণ করা কোহলি। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির পর ভারতীয় দলের অধিনায়ক হওয়া কোহলি। ক্রিকেটের নিজস্ব ব্র্যান্ড। ব্র্যান্ডের ভিত ফিটনেস, পারফরম্যান্স এবং আগ্রাসী মেজাজের মিশেলে অননুকরণীয়।

তিন বছর বয়সে বাবা প্রেমনাথ কোহলির সঙ্গে বাড়ির উঠোনে ক্রিকেট খেলা শুরু। ছোট্ট কোহলিকে টানা বল করতে হত প্রেমনাথকে। ব্যাট ছাড়তেন না ছোট্ট কোহলি। ছেলের বয়স ১০ হওয়ার পর রাজকুমার শর্মার ক্রিকেট কোচিং সেন্টারে ভর্তি করিয়ে দেন প্রেমনাথ। তাঁর হাত ধরেই ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলেন কোহলি। ক্রিকেটার কোহলির শুরুর পথ অবশ্য মসৃণ ছিল না। দিল্লির অনূর্ধ্ব ১৪ দলে জায়গা পাকা করতে পারেননি। কয়েকটি ম্যাচের পরই বাদ পড়তে হয়েছিল পারফর্ম করতে না পারায়। এক বছরের মাথায় সেই কোহলিই দিল্লির অনূর্ধ্ব ১৫ দলে অপরিহার্য হয়ে উঠেছিলেন। আর কখনও দল থেকে বাদ পড়তে হয়নি। শুধু এগিয়েছেন। নিজেকে পরবর্তী স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য যা যা করা প্রয়োজন, সব করেছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরেও করেছেন। দরকারে ছুটে গিয়েছেন রাজকুমারের কাছে। ভুল শুধরে নিতে লজ্জা পাননি। সময় সময় নিজের খেলার পরিবর্তন, পরিমার্জন করেছেন। ভারতীয় দলের নেতৃত্ব ছাড়ার বিতর্কিত অধ্যায়কেও শাসন করেছেন ব্যাট হাতে। মাত্রা ছাড়াতে দেননি। মাঠের ভিতরে বা বাইরে। পরিস্থিতি আগাম অনুমান করতে পারার দক্ষতাই তাঁকে অনন্য করে তুলেছে। ২০০৮ সালে প্রথম শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে এক দিনের সিরিজের জন্য ভারতীয় দলে ডাক পান কোহলি। ঘরোয়া ক্রিকেটে মাত্র আটটি ৫০ ওভারের ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা ছিল। কোহলির ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়া বিস্মিত করেছিল অনেককে। তিন ধরনের ক্রিকেটে একের পর এক বিস্ময়কর ইনিংস খেলে তাঁদের বিস্ময় আরও বাড়িয়ে তুলেছেন কোহলি। পৃথিবীর সর্বত্র সাফল্য পেয়েছেন। সব দলের বিরুদ্ধে পেয়েছেন।

অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ ছাড়াও কোহলির মুকুটে রয়েছে ২০১১ সালের এক দিনের বিশ্বকাপ, ২০১৩ এবং ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, ২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তিনি অধিনায়ক থাকার সময় পর পর তিন বছর (২০১৭ থেকে ২০১৯) টেস্ট ক্রিকেটে বিশ্বের সেরা দল হয়েছে ভারত। ভারতীয় ক্রিকেটকে ভরিয়ে দিয়েছেন কোহলি। নেতৃত্ব ছাড়ার পরেও তিনিই ছিলেন দলের নেতা। প্রয়োজনে মাঠে অধিনায়ককে পরামর্শ। দলের নতুন সদস্যদের জন্য সাজঘরের পরিবেশ বন্ধুত্বপূর্ণ করে তোলার দায়িত্ব নিয়েছেন। বিরাট-ব্যক্তিত্বের আবরণ তৈরি না করে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন সতীর্থদের মাঝে। ব্যাটিং বা ফিল্ডিং নিয়ে কারও সমস্যা হলে সমাধান করার চেষ্টা করেছেন। বোলারদের বাতলে দিয়েছেন প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের আউট করার কৌশল। উৎসাহিত করেছেন প্রতি মুহূর্তে। ১২ মে, নিজের টেস্টজীবনে ইতি টানলেন কোহলি। দেশের হয়ে ১২৩টি টেস্ট খেলে কোহলি করেছেন ৯২৩০ রান। গড় ৪৬.৮৫। ৩০টি শতরান এবং ৩১টি অর্ধশতরান রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। ২০১৯ সালে পুণেতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে খেলেছিলেন অপরাজিত ২৫৪ রানের ইনিংস, যা টেস্ট ক্রিকেটে কোহলির সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর ২০ ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করেছিলেন। থাকল শুধু এক দিনের আন্তর্জাতিক।

ক্রিকেটজীবনের মতো ব্যক্তিজীবনেও কোহলি ব্যতিক্রমী। বলিউড অভিনেত্রী অনুষ্কা শর্মার সঙ্গে ঘর বেঁধেছেন। দেশের সবচেয়ে আলোচিত দম্পতিদের মধ্যে অন্যতম বিরুষ্কা। বিতর্কহীন রেখেছেন ব্যক্তিগত জীবনকেও। দুই সন্তানের পিতা কোহলি দায়িত্বশীল বাবাও। সন্তানদের প্রচারের লক্ষ ওয়াটের আলো থেকে দূরে রাখেন। ক্রিকেটীয় ব্যস্ততার বাইরে পরিবারকে সময় দেন। পেশা এবং ব্যক্তিজীবনের মধ্যে থাকা সূক্ষ্ম পর্দা ছিঁড়তে দেননি কখনও। ভারসাম্য বজায় রেখেছেন সচেতন ভাবে। স্বচ্ছন্দে। পিতা কোহলির স্নেহভরা চোখই প্রতিপক্ষের কাছে আতঙ্কের। আশঙ্কার। আগুনে ছারখার হয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, পাকিস্তানের মতো প্রতিপক্ষ। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের অনুরোধ রাখলেন না। টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে নিলেন বিরাট কোহলি। রোহিত শর্মার অবসর ঘোষণার পর কোহলিও সমাজমাধ্যমে অবসরের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন। গত বুধবার টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন রোহিত শর্মা। তিনি সমাজমাধ‍্যমে নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। কোহলিও একই পথে হাঁটলেন। ১২৩টি টেস্টে ৯,২৩০ রান রয়েছে কোহলির। গড় ৪৬.৮৫। শতরান ৩০টি, অর্ধশতরান ৩১টি। ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার।

সমাজমাধ্যমে কোহলি লিখেছেন, ‘‘১৪ বছর আগে প্রথম টেস্ট ক্রিকেটের নীল ব্যাগি টুপি পরেছিলাম। সত্যি বলতে তখন জানতাম না, ক্রিকেটের এই ফরম্যাট আমাকে কতটা এগিয়ে নিয়ে যাবে। কল্পনাও করিনি। এই ফরম্যাট আমার পরীক্ষা নিয়েছে। আমাকে তৈরি করেছে। আমাকে শিক্ষা দিয়েছে। সারা জীবন এই শিক্ষা বহন করব। সাদা পোশাকে খেলার মধ্যে কিছু ব্যক্তিগত গভীর বিষয় থাকে। শান্ত পরিবেশ, দীর্ঘ সময় খেলা, ছোট ছোট মুহূর্তগুলো কেউ দেখতে পায় না। তবে এগুলো চিরকাল আমার সঙ্গে থাকবে।’’

দেশের হয়ে ১২৩টি টেস্ট খেলে কোহলির ৯২৩০ রান। গড় ৪৬.৮৫। ৩০টি শতরান এবং ৩১টি অর্ধশতরান রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। ২০১৯ সালে পুণেতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে খেলেছিলেন অপরাজিত ২৫৪ রানের ইনিংস, যা টেস্ট ক্রিকেটে কোহলির সর্বোচ্চ রানের ইনিংস।
১. ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে সব থেকে বেশিবার এক ক্যালেন্ডার বর্ষে সর্বাধিক টেস্ট রান করেন বিরাট (২০১২, ২০১৫, ২০১৬, ২০১৮ ও ২০২৩)।
২. ভারত অধিনায়ক হিসেবে টেস্টে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস খেলেন কোহলি। ২০১৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে অপরাজিত ২৫৪ রান করেন বিরাট।
৩. ভারতের ক্যাপ্টেন হিসেবে টেস্টে সব থেকে বেশি ২০টি সেঞ্চুরি করেন বিরাট কোহলি। টেস্টে নেতৃত্ব দিতে নেমে আর কোনও ভারতীয় ক্রিকেটার এতগুলি সেঞ্চুরি করেননি।
৪. ভারত অধিনায়ক হিসেবে টেস্টে সব থেকে বেশি রান সংগ্রহ করেন কোহলি। তিনি ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দিতে নেমে টেস্টে সাকুল্যে ৫৮৬৪ রান সংগ্রহ করেন।
৫. টেস্টে ভারতীয়দের মধ্যে সব থেকে বেশি ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন কোহলি। টেস্ট ক্রিকেটে কোহলির ঝুলিতে রয়েছে ৭টি দ্বিশতরান।
৬. ক্যাপ্টেন হিসেবে টেস্টে সব থেকে বেশি দ্বিশতরান করেছেন বিরাট কোহলি। তিনি দেশকে নেতৃত্ব দিতে নেমে টেস্টে মোট ৬টি ডাবল সেঞ্চুরি করেন।
৭. ভারতের টেস্ট ক্যাপ্টেন হিসেবে সব থেকে বেশি ম্যাচ জয়ের রেকর্ড রয়েছে কোহলির দখলে। বিরাটের নেতৃত্বে ভারতীয় দল মোট ৪০টি টেস্টে জয় তুলে নেয়।
৮. টেস্টে টানা চারটি সিরিজে ডাবল সেঞ্চুরি করার বিরল রেকর্ড রয়েছে বিরাট কোহলির দখলে।
৯. ভারতীয় ব্যাটারদের মধ্যে আইসিসি টেস্ট ব়্যাঙ্কিংয়ে সর্বোচ্চ রেটিং পয়েন্টে পৌঁছন বিরাট। তিনি ২০১৮ সালে ৯৩৭ রেটিং পয়েন্টে পৌঁছেছিলেন।
১০. এশিয়ার প্রথম ক্যাপ্টেন হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সিরিজ জয়ের রেকর্ড গড়েন বিরাট কোহলি (২০১৮-১৯)।
১১. ক্যাপ্টেন হিসেবে একটানা সব থেকে বেশি ৯টি টেস্ট সিরিজ জয়ের বিরল রেকর্ড রয়েছে বিরাট কোহলির দখলে।
১২. ভারতীয় ব্যাটারদের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সব থেকে বেশি ৭টি টেস্ট সেঞ্চুরি করেছেন বিরাট কোহলি।

‘‌#২৬৯, সাইনিং অফ’‌। টেস্ট থেকে অবসর ঘোষণার সময় আবেগপ্রবণ বার্তা লিখেছেন বিরাট কোহলি। শেষটা এভাবেই করেছেন ভারতের তারকা ক্রিকেটার। নেপথ্যে বিরাটের টেস্ট ক্যাপ নম্বর। টেস্ট বিরাট যে ভারতীয় দলের ক্যাপ পরতেন, সেটার নম্বর ছিল ২৬৯। কারণ ভারতের ২৬৯ তম খেলোয়াড় হিসেবে টেস্ট খেলেছিলেন। ভারতের ২৮১ তম খেলোয়াড় হিসেবে রোহিতের টেস্টে অভিষেক হয়েছিল। বিরাটের জার্সি নম্বর ১৮। টেস্ট ক্যাপ নম্বর ২৬৯।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles