ভালো কাজের জন্য ধোনিদের সাম্মানিক পদ প্রদান করা হয়েছে। সাম্মানিক পদ হলেও যদি যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয় বা সত্যিকারের যুদ্ধ হলে রিজার্ভ ফোর্সের প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে টেরিটোরিয়াল আর্মিকে ডাকা হয়ে থাকে। টেরিটোরিয়াল আর্মিও রিজার্ভ ফোর্সের আওতায়। সেরকম পরিস্থিতি তৈরি হলে ধোনিদের সীমান্তে যেতে হবে। আর নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে হবে বলে জানান একজন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল। টেরিটোরিয়াল আর্মিকে ‘অ্যাকটিভ’ করা হল। টেরিটোরিয়াল আর্মির অফিসার হলেন ভারতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক তথা চেন্নাই সুপার কিংসের সিএসকে অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। সাম্মানিক পদ হলেও প্রয়োজনে ধোনিকেও ময়দানে নামতে হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক অস্থিরতার আবহেই সেনাপ্রধানের ক্ষমতা বৃদ্ধি করল ভারত। কেন্দ্রের তরফে একটি নির্দেশিকা দিয়ে জানানো হয়েছে, প্রয়োজনে ‘টেরিটোরিয়াল আর্মি’ (টিএ)-র সদস্যদের ডেকে নিতে পারবে ভারতীয় সেনা। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে স্থলসেনাপ্রধান উপেন্দ্র দ্বিবেদীকেই। ‘টেরিটেরিয়াল আর্মি’ সংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রয়োজন মোতাবেক নিরাপত্তারক্ষার কাজে কিংবা সেনাবাহিনীকে সাহায্য করার কাজে নিযুক্ত করা যাবে টিএ-র আধিকারিক কিংবা অন্য সদস্যদের। এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন স্থলসেনাপ্রধানই। টিএ হল অস্থায়ী সেনা। ১৯৪৮ সালের ‘টেরিটোরিয়াল আর্মি অ্যাক্ট’ অনুসারে এটি গঠন করা হয়। নির্দিষ্ট কয়েকটি মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে পারলে সাধারণ মানুষও এই অস্থায়ী সেনায় যোগ দিতে পারেন। সঙ্কটকালীন পরিস্থিতিতে কিংবা আপৎকালীন পরিস্থিতির মোকাবিলায় এই সেনার সঙ্গে যুক্তদের ডেকে পাঠানো হয়। ১৯৬৫ এবং ১৯৭১-এর ভারত-পাক যুদ্ধ, কার্গিল যুদ্ধে যোগ দিয়েছেন টিএ-র সদস্যেরা। টিএ-র কত জনকে মোতায়েন করা হবে, তা স্থির হয় মোট কতটা অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে তার উপর। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের একটি নির্দেশিকা অনুসারে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ব্যতীত অন্য কোনও মন্ত্রক তাদের প্রয়োজনে টিএ-র সদস্যদের ডাকতে পারে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রককে ব্যয়ভার বহন করতে হয়।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, ১৯৪৮ সালের টেরিটোরিয়াল আর্মির নিয়মের ৩৩ নম্বর ধারার আওতায় ক্ষমতা প্রদান অনুযায়ী প্রয়োগ। ভারতীয় সেনাকে সহায়তা করার জন্য টেরিটোরিয়াল আর্মির প্রত্যেক অফিসার এবং তাতে নথিভুক্ত থাকা প্রত্যেক সদস্যকে মোতায়েন করার জন্য সেনাপ্রধানকে পূর্ণ ক্ষমতা দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। সাউর্দান কম্যান্ড, ইস্টার্ন কম্যান্ড, ওয়েস্টার্ন কম্যান্ড, সেন্ট্রাল কম্যান্ড, নর্দার্ন কম্যান্ড, সাউথ-ওয়েস্টার্ন কম্যান্ড, আন্দামান ও নিকোবর কম্যান্ড, এবং আর্মি ট্রেনিং কম্যান্ডের আওতাধীন এলাকায় মোতায়েনের জন্য টেরিটোরিয়াল আর্মির ৩২টি ইনফ্র্যান্টি ব্যাটেলিয়নের মধ্যে ১৪টিকে সক্রিয় করে দেওয়া হচ্ছে। নির্দেশ ২০২৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৮ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কার্যকর থাকবে বলে জানানো হয়েছে। ভারতের চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান, ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী, ভারতীয় বায়ুসেনার প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল এপি সিং, ভারতীয় নৌসেনার প্রধান অ্যাডমিরাল দীনেশকুমার ত্রিপাঠী এবং প্রতিরক্ষা সচিব রাজেশকুমার সিংয়ের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং।
‘প্রত্যাঘাত না করাই অপরাধ,’ বেলুড় মঠের সেক্রেটারি সুবীরানন্দজী মহারাজ বলেন, ‘সাধারণ মানুষ যেন দেশ ও সরকারের পাশে দাঁড়ায়। এই যুদ্ধ সরকারের যুদ্ধ নয়, এই যুদ্ধ সাধারণ মানুষের যুদ্ধ। ভারত মাতৃকা যে কোনও ধরনের আঘাত করার চেষ্টা করবে ভারত মাতৃকার সন্তান হিসাবে আমরা অবশ্য়ই প্রত্যাঘাত করব। স্বামীজি বলেছেন ভারতের কল্যাণ আমার কল্যাণ। স্বামীজি বলেছেন ভারতের প্রতিটি ধূলি অত্য়ন্ত পবিত্র। স্বামীজি বলেছেন ভারত যৌবনের উপবন, বার্ধক্যের বারাণসী। অতএব সেই যে ভারত বিবেকানন্দের ভারত, রামকৃষ্ণের ভারত, সভ্যতার প্রথম প্রভাত থেকে বিভিন্ন ঋষি মুণির ভারত সেই ভারতকে যদি কেউ বিন্দুমাত্র আঘাত করে তবে ভারতবর্ষ বসে থাকবে না। প্রত্যাঘাত করবে। তাতে আধ্য়াত্মিক দিক থেকে, শাস্ত্রীয় দিক থেকে কোনও অপরাধ নেই। বরং প্রত্যাঘাত না করাই অপরাধ। সেকারণে ভারত সরকারের এই উদ্যোগ তাকে আমরা পূর্ণ সমর্থন করছি সেটাই নয়, আমরা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি যারা ভারত সরকার পরিচালনা করছেন তাঁদের শক্তি দিন তাঁদের বুদ্ধি দিন যাতে এই যুদ্ধ স্পষ্টভাবে জিততে পারি। এটা অকল্যাণের উপর কল্যাণের যুদ্ধ। অশুভের উপর শুভর যুদ্ধ, বর্বরতার উপর সভ্যতার যুদ্ধ।’ একেবারে স্পষ্টভাবে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে দিলেন বেলুড় মঠের সেক্রেটারি মহারাজ।
সেক্রেটারি মহারাজ জানিয়েছেন, ‘ভারত সরকারের এই উদ্যোগ তাকে আমরা পূর্ণ সমর্থন করছি সেটাই নয়, আমরা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি যারা ভারত সরকার পরিচালনা করছেন তাঁদের শক্তি দিন তাঁদের বুদ্ধি দিন যাতে এই যুদ্ধ স্পষ্টভাবে জিততে পারি। এটা অকল্যাণের উপর কল্যাণের যুদ্ধ। অশুভের উপর শুভর যুদ্ধ, বর্বরতার উপর সভ্যতার যুদ্ধ।’
ফের ভারতের অসামরিক এলাকা লক্ষ্য করে হামলা পাকিস্তানের। কাশ্মীরের উরি এবং পুঞ্চ সেক্টরে সীমান্তের ওপার থেকে পরপর ফায়ারিং করতে থাকে পাক সেনা। জম্মু বিমানবন্দরে লাগাতার বাজতে থাকে সাইরেন। উরি, পুঞ্চ সেক্টরের পর জম্মু-কাশ্মীরের কুপওয়াড়া জেলাতেও হামলার খবর মিলেছে। জানা গিয়েছে, কুপওয়াড়ার কার্না এবং টাংধার সেক্টরে শেলিং করেছে পাক সেনা। মর্টার নিয়ে হামলা চালানো হচ্ছে লাইন অফ কন্ট্রোলের এপারে। পাকিস্তানের হামলার ঘটনায় পাল্টা জবাব দিয়েছে ভারত। ভারতীয় বায়ুসেনার উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং জানান, ‘৮ এবং ৯ মে রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পশ্চিম সীমান্তজুড়ে একাধিকবার ভারতীয় আকাশসীমা লঙ্ঘন করে। উদ্দেশ্য ছিল ভারতের সামরিক এলাকাগুলিতে হামলা চালানো। পাকিস্তান সেনা এলওসি-এর দিকেও আর্টিলারি হামলা চালিয়েছে। সীমান্তে ব্যাপক সংখ্যক ড্রোনের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। সীমান্ত ও লাইন অফ কন্ট্রোল বরাবর লেহ থেকে শুরু করে সির ক্রিক পর্যন্ত প্রায় ৩৬টি জায়গায় ৩০০ থেকে ৪০০টি ড্রোন ও অন্যান্য প্রযুক্তিগত উপায়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করা হয়েছে। এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পরীক্ষা করে দেখা ও ভিতরের তথ্য সংগ্রহ করা’। এমনকি, ভাতিন্ডা এয়ারবেসকে লক্ষ্য করেও হামলার চেষ্টা করেছিল পাকিস্তান। কিন্তু ভারতের এয়ার ডিফেন্স তৈরি থাকায় তা মুহূর্তেই নিষ্ক্রিয় করা হয়। তবে ছেড়ে কথা বলেনি ভারত। এদিন সেনার তরফে জানানো হয়, জবাবে পাকিস্তানের চারটি ডিফেন্স এয়ারবেসে হামলা চালায় ভারত। একটি ড্রোন সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয় শত্রু দেশের এডি রাডার।’
পাকিস্তানের প্ররোচনা এবং ভারতের প্রত্যাঘাত। দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধে লিপ্ত। তা ঘোষণা করবেন কে? ভারতে যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটের পরামর্শের ভিত্তিতে এটি প্রয়োগ করা হয়। ভারতীয় সংবিধানে অন্য কিছু দেশের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণার পদ্ধতি সম্পর্কে স্পষ্টভাবে কিছু বলা নেই। সংবিধানের ৩৫২ অনুচ্ছেদের অধীনে জরুরি অবস্থা ঘোষণা হল যুদ্ধের পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কিত সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সাংবিধানিক প্রক্রিয়া। সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ কমান্ডার হিসেবে অনুচ্ছেদ ৫৩(২) রাষ্ট্রপতির যুদ্ধ ঘোষণা বা শান্তি স্থাপনের সাংবিধানিক ক্ষমতা রয়েছে। সরকারের পরামর্শের ভিত্তিতে এই ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয়। সংবিধানের ৫৩ অনুচ্ছেদে অনুযায়ী, কেন্দ্রের নির্বাহী ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতেই রয়েছে। ৭৪ অনুচ্ছেদের অধীনে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ক্যাবিনেটের সহায়তা এবং পরামর্শ অনুসারে কাজ করেন। অতএব, রাষ্ট্রপতি কর্তৃক যুদ্ধ বা শান্তির যে কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা কেবল মন্ত্রিসভার পরামর্শেই করা হয়। বাস্তবে, যুদ্ধে যাওয়ার বা শান্তি ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা দ্বারা নেওয়া হয়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক, বিদেশ মন্ত্রক এবং জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ মন্ত্রিসভাকে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ প্রদান করে থাকে। সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর আগে মন্ত্রিসভা সামরিক প্রধান, গোয়েন্দা সংস্থা এবং কূটনৈতিক গোষ্ঠীর কাছে মতামত চাইতে পারে। ১৯৭৮ সালের ৪৪তম সংশোধনী আইন অনুসারে, রাষ্ট্রপতি কেবল মন্ত্রিসভার লিখিত সুপারিশের ভিত্তিতে জাতীয় জরুরি অবস্থা যা যুদ্ধ পরিস্থিতিতে প্রযোজ্য বলে ঘোষণা করতে পারেন। সংসদ সাংবিধানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা বা পূর্ব-অনুমোদনের জন্য বাধ্য নয়। তবে প্রতিরক্ষা বাজেটের তত্ত্বাবধান এবং সামরিক কর্মকাণ্ড নিয়ে সরকারকে করার ক্ষমতা রয়েছে সংসদের। যুদ্ধ ঘোষণা নিয়ে সরকার সংসদকে অবহিত করবে এবং রাজনৈতিক ঐকমত্য অর্জন করবে। মন্ত্রিসভার পরামর্শে রাষ্ট্রপতি যুদ্ধ ঘোষণা করলে পরবর্তীতে এটি অনুমোদনের জন্য লোকসভা এবং রাজ্যসভা উভয়ের কাছেই উপস্থাপন করতে হয়।
যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করতে পরিস্থিতি মূল্যায়নের পর মন্ত্রিসভা রাষ্ট্রপতির কাছে লিখিত সুপারিশ করবে। এর পর রাষ্ট্রপতি ৩৫২ অনুচ্ছেদের অধীনে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন। এই ঘোষণা সমগ্র দেশ বা দেশের একটি নির্দিষ্ট অংশের জন্য হতে পারে। জরুরি অবস্থা ঘোষণা সংসদের প্রতিটি কক্ষের পেশ করতে হবে। দু’টি কক্ষে সেই প্রস্তাব দুই তৃতীয়াংশ ভোটে পাশ হয়ে গেলে এক মাসের মধ্যে জরুরি অবস্থা কার্যকর হবে। সংসদে অনুমোদনের পর জরুরি অবস্থা ছয় মাস বলবৎ থাকে। পরিস্থিতি বিচার করে আরও ছয় মাসের জন্য বৃদ্ধি করা যেতে পারে। রাষ্ট্রপতি যে কোনও সময় জরুরি অবস্থা ঘোষণা প্রত্যাহার করতে পারেন। ৪৪তম সংশোধনী অনুযায়ী, লোকসভা যদি জরুরি অবস্থা বহাল রাখার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে রাষ্ট্রপতিকে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করতে হবে। সংবিধানে কেবল যুদ্ধ ঘোষণা করার জন্য কোনও নির্দিষ্ট অনুচ্ছেদ নেই। ৩৫২ অনুচ্ছেদের অধীনে জাতীয় জরুরি অবস্থা সম্পর্কিত বিধানগুলি যুদ্ধ বা অন্যান্য জরুরি পরিস্থিতিতে প্রয়োগ।