কেকেআর: ২০৪-৯ (অঙ্গকৃষ ৪৪, রিঙ্কু ৩৬)
দিল্লি ক্যাপিটালস: ১৯০-৯ (ফ্যাফ ৬২, অক্ষর ৪৩, নারিন ৩-২৯)
কেকেআর ১৪ রানে জয়ী।

জয়ের দরজা খুলল। দলগত পারফরম্যান্স। অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে। ২০০র গন্ডি টপকে নাইটদের লড়াই জারি। চলতি মরশুমে ২৪০ রানও করেছে নাইটরা। নাইটদের সংসারে সুখ কম। আশঙ্কাই বেশি। টানা দুটো ম্যাচ হারের পরে ঘরের মাঠে পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে ম্যাচটাও বৃষ্টির জন্য ভেস্তে যাওয়ার ফলে এক পয়েন্ট পকেটে আসে কলকাতার। দিল্লি ম্যাচ নাইটদের জেতা ছাড়া গত্যন্তর নেই। দিল্লির তুলনামূলক স্লো পিচ। টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে যায় কেকেআর। নির্ধারিত ২০ ওভারে নাইটদের ইনিংস শেষ ৯ উইকেটে ২০৪ রানে। শুরুতে গুরবাজ করেন ২৬ রান। নারিন করেন ১৬ বলে ২৭। রাহানে ২৬, ভেঙ্কটেশ আইয়ার ৭ রানে প্যাভিলিয়নে। ৯১ রানে ৪ উইকেট হারায় নাইটরা। জুটি বাঁধেন রিঙ্কু এবং অংকৃষ। রিঙ্কু ২৫ বলে ৩৬ এবং অঙ্গকৃষ ৩২ বলে ৪২ রান করে আউট হন। গতবারের চ্যাম্পিয়ন কেকেআরের স্কোর ১৭০ পার। রাসেল ৯ বলে ১৭ রানের ইনিংস খেলে কেকেআরকে দুশোর গন্ডি টপকে দেন। দুই ক্যারিবিয়ান তারকা আন্দ্রে রাসেল ও রভম্যান পাওয়েল কেকেআর-কে নিয়ে যান ২০৩ রাবে। পাওয়েল ফিরে যাওয়ার পরের বলেই চামিরা শরীর ছুড়ে দুর্দান্ত ক্যাচ ধরেন অনুকূল রায়ের। স্টার্কের শেষ ওভারেই যত কাণ্ড। অসি তারকা হ্যাটট্রিক করতে না পারলেও উইকেট কিপার অভিষেক পোড়েল রান আউট করেন রাসেলকে ১৭ রানে। শেষমেশ কেকেআর করল ৯ উইকেটে ২০৪ রান। কেকেআর জয়েরই আশা রেখেছিল অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামের স্লো পিচের পুঁজিতে।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই আউট হন দিল্লি ওপেনার বাংলার ক্রিকেটার অভিষেক পোড়েল। অনুকূলের বলে রাসেলের হাতে ৪ রান করে ধরা পড়লেন অভিষেক। ২০৫ রান তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় দিল্লি। বৈভবের বলে ১৫ রান করে এলবিডব্লিউ হন নায়ার। ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট রাহুল ৭। ৬০ রানে তৃতীয় উইকেট হারিয়ে কলকাতার বিরুদ্ধে চাপে পড়ে যায় দিল্লি। নারাইনের বলে হর্ষিতের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট অক্ষর ৪৩ রানে। এ বারের আইপিএলে দিল্লি অধিনায়ক সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেললেন। নারাইনের বলে বোল্ড স্টাবস ১ রানে। এক ওভারে দু’টি উইকেট নেন নারাইন। নারাইনের বলে রিঙ্কুর হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন সেট হয়ে যাওয়া সহ-অধিনায়ক ডুপ্লেসি ৬২ রানে। বরুণের বলে প্যাভিলিয়নে ফেরেন আশুতোষ ৭ রান করে। পরেই স্টার্ককে ০ রানে আউট করলেন বরুণ। বিপরাজকে ৩৮ রানে ফেরালেন রাসেল। ৩ ম্যাচ পর আইপিএলে জয়ে ফিরল কেকেআর। দল হিসাবে খেলে দিল্লি ক্যাপিটালসকে ১৪ রানে হারাল নাইটরা। কেকেআরের জয়ের অন্যতম কারিগর সুনীল নারিন। চলতি আইপিএলের প্লেঅফের লড়াইয়ে জীবিত রইল নাইটরা। অন্তত খাতায়কলমে এখনও সম্ভাবনা রয়েছে কেকেআরের। ১০ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবিলে ৭ নম্বরে কেকেআর। নিজেদের শেষ সবকটি ম্যাচ জিতলে এখনও প্লেঅফে যেতে পারে নাইটরা।
টসের পরেই অজিঙ্ক রাহানে জানিয়ে দিয়েছিলেন, বাকি পাঁচটি ম্যাচের সব ক’টি জিততে হবে। একটি করে ম্যাচ ধরে এগোচ্ছেন। প্রথম লড়াইয়ে সফল রাহানে। সফল রাবানের পরিকল্পনা। ব্যাট হাতে ১৬ বলে ২৭ রান। হাত ঘুরিয়ে ২৯ রানে ৩ উইকেট। ফিল্ডিংয়ে একটি ক্যাচ এবং সরাসরি থ্রোয়ে একটি রান আউট। মঙ্গলে দিল্লির বিরুদ্ধে কেকেআরের জয়ে তিন বিভাগেই অবদান অলরাউন্ডার সুনীল নারাইনের। ম্যাচের সেরাও তিনি। জয়ের কৃতিত্ব নিজে নিতে রাজি নন নারাইন। দিলেন সতীর্থদের। নারাইনের কথায়, “দলের প্রচেষ্টাতেই আমরা জিতেছি। অঙ্গকৃশ এবং রিঙ্কু ভাল খেলেছে। নিজে যত বারই ব্যর্থ হই না কেন, ফিরে আসার চেষ্টা করি এবং দলকে সাহায্য করার চেষ্টা করি। আজও সেটাই করেছি। কিছু ম্যাচে শুরুটা ভাল হলেও পরের দিকে সমস্যায় পড়তে হয়। কিছু ম্যাচে শুরুটা খারাপ হলেও শেষটা ভাল হয়। আজ দ্বিতীয়টাই হয়েছে। সব ক’টা উইকেট পেয়েই ভাল লেগেছে। কারণ সব উইকেটই গুরুত্বপূর্ণ। আসলে যত বেশি উইকেট পাব, দলের ভাল। সেরা উইকেট নিয়ে মাথা ঘামাই না। আমি জানি যে খুব ভাল ফিল্ডার নই। কিন্তু রান আউট যে কোনও সময়ে করতে পারলেই খুব ভাল লাগে। আজকের রান আউটের পিছনে আলাদা কোনও রহস্য নেই। সব সময়ে চেষ্টা করি বলটা যত জোরে সম্ভব উইকেট লক্ষ্য করে ছুড়ে দিতে। দল চাপে থাকলে নিজের পারফরম্যান্সের সাহায্যে সব সময় অধিনায়ককে একটা বিকল্প দেওয়ার চেষ্টা। ক্রিকেটার হতে গেলে কঠোর অনুশীলন করতে হবে। অনুশীলন না থাকলেও নিজেকে উজাড় করে দিতে হবে।”
কলকাতা নাইট রাইডার্সের ১৪ রানে জয়ের পর সতীর্থদের উপহারের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন ৩৭ বছরের তরুণের। মঙ্গলে জন্মদিনে ৩৭ বছর পূর্ণ করলেন জামাইকার ক্রিকেটার রাসেল। আইপিএলের দিল্লি-কলকাতা ম্যাচের পর রাসেল বলেন, ‘‘দলের বৈঠকে সবাইকে বলেছিলাম, জন্মদিনে একটা জয় উপহার দিতে। টি-টোয়েন্টি লিগটা অসাধারণ। সূচি অনুযায়ী ম্যাচটা আমার জন্মদিনের দিন পড়েছে। উপহার পাওয়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। আমাদের পরিকল্পনা ছিল খুব সাধারণ। বড় রান তুলে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলতে চেয়েছিলাম আমরা। সেটা করতে পেরেছি আমরা। দিনটা সব মিলিয়ে খুশির হল। অধিনায়ককে বলেছিলাম, ছ’টা ইয়র্কার করতে চাই। ছ’টা ইয়র্কার করতে পারিনি ঠিকই। তবে ছ’টা ইয়র্কার করার লক্ষ্য এবং মানসিকতা নিয়েই বল করেছি। তিনটে বা চারটে পেরেছি। সেটাই কাজে এসেছে। আমাদের ব্যাটিং ভাল হচ্ছিল না। ছ’সাত জন ব্যাটারের মধ্যে অন্তত তিন জনকে ভাল রান করতে হয়। আমাদের সেটা হচ্ছিল না। তবে সবাই চেষ্টা করছিল। আত্মবিশ্বাসের অভাব ছিল না দলে। দিল্লির বিরুদ্ধে সবাই ভাল শট নিতে পেরেছে। ফলাফলের কথা না ভেবে নিজেদের প্রয়োগ করতে চেয়েছিলাম। এটা তারই ফল। ১৪তম ওভারে নারাইন আমাদের লড়াইয়ে ফিরিয়ে আনে। ওটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেল। দু’টো বড় উইকেট তুলে নিল নারাইন। তার পর থেকেই আমাদের মনে হয়েছে, ম্যাচটা জিততে পারি। নারাইন ভাল বল করল পরেও। হ্যাঁ, বরুণ চক্রবর্তীর কথাও বলব। দুর্দান্ত বল করে উইকেট নিল। একই ওভারে দুটো উইকেট নিয়ে দিল্লিকে কোণঠাসা করে দিল বরুণ। আমাদের দলটা খারাপ নয়। ২০০ রান হাতে থাকলে, প্রতিপক্ষকে তার মধ্যে আটকে রাখার ক্ষমতা রয়েছে আমাদের।নারাইন ফিল্ডিং করার সময় যথেষ্ট সক্রিয় থাকে। অনেকে ওকে ভুল বোঝে। ভাবে গা লাগিয়ে খেলে না। আসলে তা নয়। একটু চাপচাপ স্বভাবের। তবে সব সময় খেলার মধ্যে থাকে। নারাইন খুব ভাল নেতাও। আগের থেকে অনেক বেশি কথা বলে। গত পাঁচ বছরে পরিবর্তন হয়েছে অনেক। যে কোনও মানুষ নিজেকে যত বেশি প্রকাশ করতে পারে, সে তত বেশি উপভোগ করতে পারে। নারাইনও এখন দারুণ উপভোগ করছে।’’ জন্মদিনে পাওয়া উপহারের জন্য সতীর্থদের আবার ধন্যবাদ জানান।