Saturday, May 24, 2025
spot_imgspot_img

Top 5 This Week

spot_img

Related Posts

দুয়ারে যুদ্ধ?‌ সেনাপ্রধান-রাজনাথ বৈঠক!‌ পাক সেনাপ্রধান মুনির নিখোঁজ? কাশ্মীরের পুঞ্চে গুলি বিনিময়, পহেলগাঁওয়ে ভয়ডরহীন পর্যটকেরা!‌

ছবির মতো সুন্দর জায়গা পহেলগাঁও। কাশ্মীরের মিনি সুইজারল্যান্ড। ‘মর্ত্যের স্বর্গে’ রম্যসফরের ইতি?‌ কাশ্মীর ভ্রমণের স্বপ্ন ঝাঁঝরা। পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের দিকে ধাবিত ইস্পাতের বুলেট। জম্মু ও কাশ্মীরের অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। ভূ-স্বর্গের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের টান। বারবার কাশ্মীরে ছুটে গিয়েছেন পর্যটকরা। জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য প্রশাসন, কেন্দ্রীয় সরকার, সেনা-পুলিশের তৎপরতা। পর্যটকরা সাহসে ভর করে হাজির কাশ্মীরে। প্রাণ ফিরে পাচ্ছে উপত্যকা। অভিশপ্ত পহেলগাঁওয়ে ফিরলেন পর্যটকরা। উপভোগ করলেন। প্রতিবছরই প্রায় লক্ষ লক্ষ পর্যটক সেখানে ভিড় জমান। ২২ এপ্রিল, ভয়াবহ জঙ্গি হামলা। ভূ-স্বর্গের ছবিটা সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে। জঙ্গি হামলার পর ভরা মরসুমেও কাশ্মীর খাঁ খাঁ করছে। আতঙ্ক গ্রাস করেছে।

আবারও কাশ্মীরে কয়েকজন পর্যটকের দেখা মিলেছে। কয়েকজন পর্যটক ছবি তুলছিলেন। সেলফি তুলছিলেন। পহেলগাঁওয়ের অত্যন্ত জনপ্রিয় সেলফি পয়েন্টে। লিডার নদীর ধারেই এই সেলফি পয়েন্ট। পহেলগাঁও যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও বাধা নেই। ছুটি পেয়েই পহেলগাঁওতে হাজির আবার। হোটেলগুলির তরফে পর্যটক আকর্ষণের জন্য স্পেশাল কিছু ডিসকাউন্টও দেওয়া হচ্ছে। কিছু রেস্তরাঁতে একটি করে ফ্রি মিলও দেওয়া হচ্ছে। বেশিরভাগ দোকানপাট এখনও বন্ধ। চারদিকে সেনার কড়া নজর। কার্যত হেরে গিয়েছে জঙ্গিরা। গুলি চালিয়ে ভয় দেখাতে চেয়েছিল জঙ্গিরা। একের পর এক পর্যটককে গুলি করে খুন করেছিল। দমাতে পারেনি পর্যটকদের। পর্যটকরা যাতে আসেন পহেলগাঁওতে সেব্যাপারে বার বার আবেদন করেছেন সেখানকার সাধারণ মানুষ। মিছিল বের করেছেন এই জঙ্গি হানার বিরুদ্ধে। আমরা প্রাণ দিয়ে এই জঙ্গিদের মোকাবিলা করব। এবার ফের ফিরতে শুরু করলেন পর্যটকরা। বাঙালি পর্যটকরাও ঘুরছেন পহেলগাঁওতেই।

২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ের মিনি সুইজারল্যান্ড বৈসরনে জঙ্গি হামলায় ২৬ জনের মৃত্যু। আতঙ্কে পহেলাগাঁও ছাড়েন বহু পর্যটক। পরবর্তী কয়েক দিন সুন্দরী উপত্যকার রূপ দেখতে আসার সাহস করেননি কেউ। কাশ্মীর ছাড়তে শুরু করেন পর্যাটকদের একাংশ। পরিস্থিতির বদলাচ্ছে। চাপা উদ্বেগ সত্ত্বেও পাহেলগাঁও ভ্রমণ বাদ দেননি ভ্রমণপিপাসু মানুষগুলো। পর্যটকদের নিরপত্তা বোধই ছন্দে ফেরাতে পারে কাশ্মীরকে। উপকৃত হবেন স্থানীয়রা। পর্যটনই কাশ্মীরের অর্থনীতি চাঙ্গা করে। কলকাতার এক পর্যটকের কথায়, কাশ্মীর এখন নিরাপদ। দোকান-পাট খোলা। পর্যটকরা নিরাপদ। সবাই আসছেন। আপনারও যদি কাশ্মীর বেড়ানোর পরিকল্পনা করে থাকেন, তবে আসুন। চিন্তার কিছু নেই। সেনাবাহিনী, সরকার এবং স্থানীয়রা আমাদের সঙ্গে আছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। ঘটনার পর আমরা ভীত ছিলাম। প্রথমে ফিরে যাব ঠিক করেছিলাম। কিন্তু স্থানীয়রা এবং সেনাবাহিনী আমাদের সাহস দেয়। বিদেশি পর্যটকরাও আর ভয় পাচ্ছেন না। ক্রোয়েশিয়া থেকে আসা তরুণীর কথায়, “আমরা এখানে ৩-৪ দিন ধরে আছি। দিব্য নিরাপদ বোধ করছি। আপনাদের দেশ খুব সুন্দর। আমাদের কোনও সমস্যা হয়নি। এখানে মানুষ খুব আন্তরিক। কাশ্মীরে পৌঁছানোর একদিন আগে আমরা ঘটনাটি শুনেছিলাম। তথাপি এসেছি। নিরাপদ বোধ করছি।”

নিয়ন্ত্রণ রেখা এলওসির বেশ কয়েকটি ভারতীয় পোস্টে গুলি চালিয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। পহেলগাঁও জঙ্গি হামলা পরবর্তী সময়ে যুদ্ধের আতঙ্কে বারবার যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে চলেছে পাক সেনা। যোগ্য জবাব ভারতীয় সেনার। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল। ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলায় ধর্মের নামে খুন ভারতীয়রা। সীমান্তে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল। পাকিস্তানের আশঙ্কা উরি বা পুলওয়ামার জবাব ভারত দিয়েছিল, এবারও কিছু করতে পারে ভারত। আতঙ্কে পাক। যুদ্ধের আশঙ্কার মাঝেই রাতভর ভারতকে উস্কানি দিয়ে গিয়েছে পাকিস্তান। ভারতের একধিক পোস্ট লক্ষ্য করে উড়ে এসেছে পাক গুলি। উত্তর কাশ্মীরের তুতমারি গলি ও রামপুর সেক্টরে হামলা পাকিস্তানের। পাক উস্কানির দৃঢ় জবাব দিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। ভারত যুদ্ধবিরতি স্থগিত করতে পারে, কারণ পাকিস্তান নিজেই নিয়মিত ভাবে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে চলেছে। এক সেনা কর্তার কথায়, নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন আরও তীব্র ও বিস্তৃত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যুদ্ধের আতঙ্কে ভুগতে থাকা পাকিস্তান সেনার মনোবল তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। অভিযোগ, পাক সেনা প্রধান অসিম মুনির ইতিমধ্যেই নিজের পরিবারকে পাঠিয়ে দিয়েছেন বিদেশে। বাকি উচ্চপদস্থ সেনাকর্তারাও তাঁদের পরিবারকে পাকিস্তানের বাইরে পাঠাচ্ছেন। পাকিস্তানি সেনায় পদত্যাগের হিড়িক। ভারত পাকিস্তানের ওপর পূর্ণ শক্তিতে ঝাঁপিয়ে পড়ার অপেক্ষায়। ইসলামাবেদর রাতের ঘুম ছুটেছে।

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে প্রায় যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ সিডিএস জেনারেল অনিল চৌহানের। সূত্রের খবর, প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে সামরিক বাহিনীর প্রস্তুতি সম্পর্কে আবগত করেছেন সিডিএস। পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের নৃশংস হত্যালীলার পরে ভারতীয় স্থলসেনা, নৌসেনা এবং বিমান বাহিনী হাই এলার্টয়ে। তিন বাহিনীর তরফে যুদ্ধের মহড়াও সম্পন্ন। ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পর ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলা ভারতের মাটিতে সরচেয়ে বড় সন্ত্রাসবাদী হামলা। সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে পড়শি দেশ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। একাধিক কূটনৈতিক প্রত্যাঘাত ভারত সরকারের। কোনওভাবে যুদ্ধে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতিও শুরু। সর্বদল বৈঠক, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ-সহ একাধিক বৈঠকে। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সিডিএস-এর বৈঠক খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সীমান্তে পাক উসকানি। দু’দিন ধরে রাতের আঁধারে জম্মু-কাশ্মীরের পুঞ্চ ও কুপওয়াড়া বরাবর সংঘর্ষ বিরতি চুক্তি ভেঙে গোলাগুলি চালাল পাক সেনা। পালটা জবাব দিয়েছে ভারতীয় সেনাও। ভারতীয় সেনা সূত্র বলছে, ২৭-২৮ এপ্রিল পাকিস্তান সেনার নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর কুপওয়াড়া ও পুঞ্চ সেক্টরে উসকানি। সশস্ত্র হামলা চলেছে। ভারতীয় সেনাও দ্রুত এবং যথাযথ জবাব দিয়েছে। পহেলগাঁও হামলার পর শিমলা চুক্তি বাতিলে এই প্রথম সংঘর্ষ বিরতি চুক্তি ভাঙল পাক সেনা। পাকিস্তান শিমলা চুক্তি বাতিল করে শান্তি প্রক্রিয়া বিঘ্নিত করলে ভারতেরও দায় নেই তা বজায় রাখার। পাকিস্তান হামলা চালালেই প্রত্যাঘাত পাবে। শিমলা চুক্তি পুরোপুরি সংঘর্ষবিরতির জন্য স্বাক্ষরিত হয়েছিল। চুক্তি বাতিলের অর্থ দু’দেশই যে কোন সময় আক্রমণ করতে পারে।

সাধারণ পাকিস্তানিদের জন্য রবিবার শেষ ভিসার মেয়াদ। ভারত সরকারের নির্দেশিকার পর আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে ভারত ছেড়েছেন ৫৩১ জন। পাকিস্তান থেকে ভারতে আসার জন্য একাধিক ক্ষেত্রে ভিসা দেয় বিদেশমন্ত্রক। চলতি মাসেই শেষ সমস্ত রকম ভিসার মেয়াদ। পাকিস্তানিদের ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই মতো সার্ক ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে ২৬ এপ্রিল। মেডিক্যাল ভিসা ছাড়া সব রকমের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে ২৭ এপ্রিল। মেডিক্যাল ভিসার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৯ এপ্রিল। এই তালিকা থেকে বাদ রাখা হয়েছে দীর্ঘমেয়াদী ও কূটনৈতিক ভিসা। মোদি সরকার স্পষ্টভাবে জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যারা ভারত ছাড়বেন না তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সমস্ত রাজ্যকে নির্দেশ,সেক্ষেত্রে ১৯৪৬ সালের বিদেশ আইনের অধীনে তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে সরকার। এই আইন অনুযায়ী ভিসা শেষ হওয়ার পরও যদি কোনও বিদেশি দেশে থেকে যান সেক্ষেত্রে তাঁদের জরিমানা, কারাদণ্ড, নির্বাসন দেওয়া হবে। অভিযুক্তকে কালো তালিকাভুক্ত করতে পারে সরকার। অর্থ আর কখনও ভারতে প্রবেশ করতে পারবেন না। শাস্তি নির্ধারিত হবে ভিসার মেয়াদ শেষের পর অভিযুক্ত বিদেশি কতদিন ভারতে থেকেছেন তা প্রত্যক্ষ করে।

পহেলগাঁওয়ের গণহত্যার বদলার আগুন। পাকিস্তানের উপর প্রত্যাঘাত শানাতে কূটনৈতিক ও সামরিক দু’ধরনের প্রস্তুতিতে নয়াদিল্লি। কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের আক্রমণাত্মক রূপ দেখে ইসলামাবাদের কপালে জমেছে বিন্দু বিন্দু ঘাম। আতঙ্কিত পাক সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরও। প্রাণ বাঁচাতে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন? লুকিয়েছেন কোনও গুপ্ত কুঠুরিতে? উত্তেজনার পারদ চড়তেই পাক সেনাপ্রধান দেশে ছেড়ে চম্পট দিয়েছেন বলে জল্পনা তীব্র। সেই কারণেই গত কয়েক দিন ধরে তাঁকে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না। সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির অভিযানে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন। ‘মিসিং ইন অ্যাকশন’ বা এমআইএতে রেখেছে রাওয়ালপিন্ডির সেনা সদর দফতর। অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ কিছু অফিসারকে নিয়ে রাওয়ালপিন্ডির একটি বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়েছেন জেনারেল মুনির। ইসলামাবাদ জেনারেল মুনিরের গ্রুপ ছবি প্রকাশ করলেও তাঁকে নিয়ে বিতর্ক থামছে না। ভারতের সঙ্গে উত্তেজনার আবহে তিনি পরিবারের সদস্যদের বিদেশে পাঠিয়েছেন। এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করা ছবির নীচে পাক পিএমও লিখেছে, “২৬ এপ্রিল অ্যাবটাবাদের কাকুলে পাকিস্তান মিলিটারি অ্যাকাডেমির (পিএমএ) ১৫১তম কোর্সের স্নাতক উত্তীর্ণ সেনা অফিসারদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ শাহবাজ় শরিফ এবং সেনাপ্রধান জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনির।’’ ২০১১ সালে এই অ্যাবটাবাদ এলাকাতেই কুখ্যাত জঙ্গি সংগঠন আল-কায়দার শীর্ষনেতা ওসামা বিন লাদনকে ফৌজি অপারেশন চালিয়ে নিকেশ করে আমেরিকা। ভারতের বিরুদ্ধে প্ররোচনামূলক প্রচারের জন্য পাকিস্তানের ১৬টি ইউটিউব চ্যানেলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। কোপ পড়েছে প্রাক্তন পাক ক্রিকেটার শোয়েব আখতারের চ্যানেলের উপরেও। পাকিস্তানের নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবিকে সমর্থন করে চিন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিঙের সরকার। পহেলগাঁও কাণ্ডে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে রাশিয়া। কাশ্মীরে হত্যাকাণ্ডের পর রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীকে শোকবার্তা পাঠান রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতীয় অংশীদারদের সঙ্গে যোগাযোগ আরও মজবুত ও জোরদার করতে আমরা সর্বদাই প্রস্তুত। এই নৃশংস অপরাধের কোনও ক্ষমা নেই। সন্ত্রাসবাদী সংগঠন এবং অপরাধীরা তাদের প্রাপ্য শাস্তি পাবেই।’’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles