Friday, May 23, 2025
spot_imgspot_img

Top 5 This Week

spot_img

Related Posts

দিঘায় নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন দুপুর আড়াইটে-তিনটে নাগাদ! জগন্নাথ মন্দিরে বিগ্রহের প্রাণপ্রতিষ্ঠা স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের

বুধবার ৩০ এপ্রিল। অক্ষয় তৃতীয়ার মহালগ্ন। দিঘায় নবনির্মিত জগন্নাথ ধামের উদ্বোধন। জগন্নাথ মন্দিরে বিগ্রহের প্রাণপ্রতিষ্ঠা। প্রাঁপ্রতিষ্ঠা করবেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২৯ এপ্রিল বিশেষ হোমযজ্ঞ। নিরাপত্তাবলয়ে মোড়া সৈকতনগরী। বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন। দিঘা জুড়ে কড়া নজরদারি। দিঘা গেট এবং ওড়িশা সীমানাতেও। মন্দির কর্তৃপক্ষ সূত্রে খবর, অক্ষয় তৃতীয়ার দিন জগন্নাথ মন্দিরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। উপাচার শুরু হয়ে গিয়েছে কয়েক দিন আগেই। পুরীর মন্দিরের রাজেশ দয়িতাপতির নেতৃত্বে শুরু শান্তিযজ্ঞ। ইসকনের সহ-সভাপতি রাধারমণ দাসও রয়েছেন। ইসকনের বিভিন্ন শাখার অন্তত ৬০ জন ভক্তও মাঙ্গলিক কাজে অংশগ্রহন করেছেন। বৃহস্পতি ২৪ এপ্রিল থেকে প্রায় এক কোটি মন্ত্রোচ্চারণের লক্ষ্যে চারটি কুণ্ডের মাঝে মহাকুণ্ড জ্বালিয়ে চলছে যজ্ঞ। গর্ভগৃহে প্রদীপ জ্বালিয়ে দেবতাকে আহ্বান জানানো হয়েছে। শেষ হয়েছে জগন্নাথদেবের বসার পিঁড়ির পুজো। দুগ্ধস্নান সম্পন্ন জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা এবং সুদর্শনের। লক্ষ্মী, বিমলা, সত্যভামা-সহ সমস্ত দেবদেবীর মূর্তিকেও দুগ্ধস্নান সম্পন্ন। দিঘা জুড়ে মাইকে বাজছে মাঙ্গলিক সানাইয়ের সুর। ২৯ তারিখ মঙ্গলে মহাযজ্ঞ। রোজই হোমযজ্ঞ চলবে।

৩৩ কোটি দেবতাকে দিঘায় আহ্বান জানাতে জগন্নাথ মন্দিরে বিশেষ মন্ত্রোচ্চারণ। রবি বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটে পুরীর নিয়মে দিঘায় জগন্নাথ দেবের প্রাণপ্রতিষ্ঠার আচার অনুষ্ঠান শুরু। মঙ্গলে মহাযজ্ঞের আগে শাস্ত্রীয় মতে পুজোপাঠ ও হোমযজ্ঞ। জগন্নাথদেবের মূল মন্দিরের সামনে হোমযজ্ঞে অস্থায়ী আটচালা ঘরে দু’বেলা পুজো এবং হোমযজ্ঞ চলছে। পুরীর মন্দির থেকে ৫৭ জন জগন্নাথদেবের সেবক এবং ইসকন থেকে ১৭ জন সাধু এসেছেন। ২৮ এপ্রিল সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিঘায়। ২৯ তারিখ বিশ্বশান্তির মহাযজ্ঞ। ১০০ কুইন্টাল আম ও বেলকাঠ এবং ২ কুইন্টাল ঘি পোড়ানো হবে। ৩০ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই মন্দিরের দ্বারোদঘাটন ও জগন্নাথদেবের প্রাণপ্রতিষ্ঠা। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের বিধান অনুযায়ী করবেন পুরীর রাজেশ দৈতাপতি। কোন দিক থেকে পুণ্যার্থীরা আসবেন, গাড়ি কোথায় রাখা হবে, কোথায় বসানো হবে, প্রস্তুতি সেরে ফেলা হয়েছে। ৩০ এপ্রিল, অক্ষয় তৃতীয়ায় দিঘায় নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনে বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন দিঘা জুড়ে। কাঁথির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গ্রামীণ শুভেন্দ্র কুমার বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই দিঘা গেটের কাছে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। সোমবার বেলার দিক থেকে ওল্ড দিঘায় যান চলাচল সম্পূর্ণ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা শুরু হবে। আগে থেকেই নজরদারি চলছে পর্যটকদের যাতায়াতে। আগামী কয়েক দিন দিঘার সুরক্ষা ব্যবস্থায় কোনও খামতি রাখা হবে না।’’

দিঘা জুড়ে উৎসবের মেজাজ। মাঙ্গলিক সানাইয়ের সুর ভাসছে সর্বত্র। জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের আগে ২৮ এপ্রিল সোমবার শুরু দিঘা থেকে ১১৬ বি জাতীয় সড়কে যান নিয়ন্ত্রণ। বিশেষ পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। মন্দির উদ্বোধনের সাক্ষী থাকতে জেলা, রাজ্য, প্রতিবেশী রাজ্যের বহু পুণ্যার্থী আসবেন সৈকত শহর দিঘায়। সাধারণ মানুষের যাতে কোনও অসুবিধা না হয় তার জন্য ট্রাফিক ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে। মন্দির দর্শনে যাওয়ার জন্য ওল্ড দিঘা থেকে ১১৬ বি জাতীয় সড়ক ধরে তিন কিলোমিটার হেঁটে মন্দিরে পৌঁছতে হবে। নিউ দিঘা বাস ডিপো থেকে ১১৬ বি জাতীয় সড়ক ধরে শনিমন্দিরের সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়া যাবে।! দিঘার জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধন উপলক্ষে স্পেশাল ট্রেন দেওয়ার পরও বাতিল! ট্রেনের যাত্রীরা ওল্ড দিঘার উপর দিয়ে ও বাইপাস ধরে দু’দিক দিয়েই দিঘার জগন্নাথের মন্দিরে পৌঁছতে পারবেন। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ট্রাফিক শ্যামলকুমার মণ্ডল জানান, নন্দকুমার দিঘা ১১৬ বি জাতীয় সড়কে দিঘা গেট থেকেই যান নিয়ন্ত্রণ করা হবে। বিশেষ চেকপোস্ট থাকছে। গাড়ির পাস থাকলেই কেবল ভিতরে প্রবেশ করতে পারবেন। গাড়িগুলিকে বাইপাস হয়ে বিভিন্ন পার্কিং পয়েন্টে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কোলাঘাট থেকে দিঘা পর্যন্ত জাতীয় সড়কের ধারে জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের ফ্লেক্স সাজানো। তমলুক এবং নন্দকুমার থানা এলাকায় প্রতি ১০০ মিটার অন্তর হলদিয়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ফ্লেক্স। কোলাঘাট থেকে দিঘা যাওয়ার পুরো রাস্তা সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি চালাচ্ছে পুলিশ। পুণ্যার্থীদের জন্য সিসি ক্যামেরার পাশাপাশি প্রতিটি জায়গায় থাকছে পুলিশ অ্যাসিস্ট্যান্ট বুথ।ও সড়ক বরাবর প্রতিটি থানাকে ওয়াচ টাওয়ার থেকে নজরদারি চালানোর নির্দেশ। বাজকুল, চণ্ডীপুর, নন্দকুমার-সহ বিভিন্ন জায়গায় তৈরি হয়েছে অস্থায়ী ওয়াচ টাওয়ার। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক বলেন, “আমরা জগন্নাথদেবকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত।” মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্ছিদ্র রাখতে অন্তত ৮০০ পুলিশ মোতায়েন। পাশের জেলাগুলি থেকেও পুলিশবাহিনী আসছে দিঘায়। সোম থেকে বুধ ওল্ড দিঘা থেকে নিউ দিঘার জগন্নাথ ধাম পর্যন্ত ১১৬বি জাতীয় সড়কে যান চলাচল সম্পূর্ণ ভাবে নিয়ন্ত্রণ।

মন্দির কর্তৃপক্ষ সূত্রে খবর, অক্ষয় তৃতীয়ার দিন জগন্নাথ মন্দিরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলেও, উপাচার শুরু হয়ে গিয়েছে কয়েক দিন আগে থেকেই। পুরীর মন্দিরের রাজেশ দয়িতাপতির নেতৃত্বে শুরু হয়েছে শান্তিযজ্ঞ। রয়েছেন ইসকনের সহ-সভাপতি রাধারমণ দাসও। ইসকনের বিভিন্ন শাখার অন্তত ৬০ জন ভক্তও মাঙ্গলিক কাজে হাত লাগিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার থেকে প্রায় এক কোটি মন্ত্রোচ্চারণের লক্ষ্যে চারটি কুণ্ডের মাঝে মহাকুণ্ড জ্বালিয়ে চলছে যজ্ঞ। গর্ভগৃহে প্রদীপ জ্বালিয়ে দেবতাকে আহ্বান জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে জগন্নাথদেবের বসার পিঁড়ির পুজো। দুগ্ধস্নান সম্পন্ন হয়েছে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা এবং সুদর্শনের। লক্ষ্মী, বিমলা, সত্যভামা-সহ সমস্ত দেবদেবীর মূর্তিকেও দুগ্ধস্নান করানো হয়েছে। দিঘা জুড়ে মাইকে বাজছে মাঙ্গলিক সানাইয়ের সুর। ২৯ তারিখ হবে মহাযজ্ঞ। ওই দিন পর্যন্ত রোজই হোমযজ্ঞ চলবে বলে মন্দির সূত্রে খবর।

রবি ছুটির দিন থাকায় দিঘায় পর্যটকদের ভিড়। মন্দিরের সামনেও উৎসাহী পর্যটকদের আনাগোনা। সাধারণ মানুষের জন্য মন্দিরে প্রবেশ সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ। মন্দিরের সামনে ও আশপাশের এলাকায় কড়া প্রহরায় রয়েছে পুলিশবাহিনী। জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের পোস্টারে ছয়লাপ জেলা। রঙিন আলোয় সেজে উঠেছে ওল্ড দিঘা থেকে নিউ দিঘা। চতুর্দিক সজ্জিত চন্দননগরের আলোর গেট। দিঘায় হোটেল পেতে বেশ বেগ। কয়েক মাস থেকেই বহু পর্যটক আগামী বুকিং করে রেখেছেন হোটেলগুলিতে। প্রশাসনিক আধিকারিকদের একটি বড় অংশের জন্যেও হোটেল আগাম নেওয়া হয়েছে। দিঘার হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক বিপ্রদাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রশাসনের তরফে প্রয়োজনমতো কিছু হোটেল বুকিং রাখা হয়েছে। সোম থেকে বুধ পর্যন্ত এই তিন দিন পর্যটকদের থাকার ক্ষেত্রে খুব বেশি সমস্যা না হয়, দেখা হবে। জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনে আসা পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা ঠিকই হয়ে যাবে।’’

২০১৮ সালের ৬ ডিসেম্বর দিঘায় সমুদ্র সৈকত ধরে ওল্ড দিঘা থেকে নিউ দিঘার দিকে বেড়াতে যাওয়ার সময়ে জগন্নাথদেবের একটি মন্দির প্রথম নজরে আসে মুখ্যমন্ত্রী মমতার। সেই সন্ধ্যাতেই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলে দিঘাতেও জগন্নাথ মন্দির গড়ে তোলা হবে। মন্দির নির্মাণের দায়িত্ব বর্তায় দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের উপর। শুরু হয় জমির খোঁজ। প্রথমে দিঘা থানার উল্টো দিকে সমুদ্রের ধারে জগন্নাথ ঘাটের কাছেই একটি চিহ্নিত হয়েছিল নতুন মন্দির নির্মাণের জন্য। পরে পরিকল্পনা বাতিল। ২০১৯ সালে নিউ দিঘা রেলস্টেশনের পূর্ব দিকে সমুদ্রতট থেকে প্রায় ৩৬০ মিটার উত্তরে ভগীব্রহ্মপুর মৌজার ২০ একর জায়গা জগন্নাথ মন্দির নির্মাণের জন্য চিহ্নিত ফের। সেই জমি দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ হিডকোর হাতে তুলে দেয়। দিঘার জগন্নাথ মন্দিরটি সম্পূর্ণ ভাবেই পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের অনুকরণে তৈরি হয়েছে। মন্দিরের নির্মাণশৈলীতে পুরীর মতোই উত্তর ভারতীয় নাগারা স্থাপত্যের অনুসরণে কলিঙ্গ আর্ট স্থাপত্যের নিদর্শন । মন্দির নির্মাণে ব্যবহৃত রাজস্থানের বংশীপাহাড়পুরের বেলেপাথর। রাজস্থান এবং ওড়িশার প্রায় ৪০০ শ্রমিক জগন্নাথদেবের মন্দিরটি নির্মাণ করেন। পুরীর মন্দিরে মূল বিগ্রহটি নিম কাঠের। দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে পূজিত হবে পাথরের মূর্তি। কাঠের মূর্তিটি রথে চড়ে মাসির বাড়ি যাবে।

পুরোনো জগন্নাথ মন্দিরটি জগন্নাথের মাসির বাড়ি। রথযাত্রার সময় নবনির্মিত মন্দির থেকে জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রা রথে চেপে মাসির বাড়িতে যাবেন। নতুন জগন্নাথ মন্দির থেকে পুরোনো জগন্নাথ মন্দির পর্যন্ত রাস্তাটিকে আরও বেশি চওড়া করে সাজানো হয়েছে। মন্দিরের মূল প্রবেশপথের সামনে ১১৬বি জাতীয় সড়কের উপর তৈরি হচ্ছে চৈতন্যদ্বার। চৈতন্যদ্বার পেরোলেই জগন্নাথদেবের মূল মন্দিরের প্রবেশদ্বার। স্যান্ডস্টোন বা বেলেপাথরে নকশাখচিত মূল প্রবেশদ্বারটির মাঝের অংশ অপেক্ষাকৃত উঁচু ১০ মিটার এবং দু’দিকের অংশ অপেক্ষাকৃত নীচু ৮.৫ মিটার। ওই ফটক দিয়ে ঢুকলেই দু’দিকে ১১টি করে পিলার সম্বলিত রোডশেড থেকে এগিয়ে গেলে দু’দিকে রয়েছে দিয়াস্তম্ভ। কিছুটা গেলেই অরুণস্তম্ভ। প্রায় ১০ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট অরুণ স্তম্ভটি তৈরি হয়েছে কালো গ্রানাইট পাথর দিয়ে। অরুণস্তম্ভ পেরিয়ে গেলেই সামনে রয়েছে সিংহদ্বার বা গোপুরম ১। সিংহদ্বারের বাইরে দরজার পাহারায় জয়-বিজয়। মাঝে নবরত্ন ন’জন দেবদেবী। সিংহদ্বারের কাঠের প্রবেশদ্বারের উপরে কালো গ্রানাইট পাথর দিয়ে তৈরি গজলক্ষ্মীর দু’দিকে দুই নর্তকী এবং দেবদাসী। সিংহদ্বারের ভিতরের অংশ পুরোটাই ভিয়েতনাম মার্বেল দিয়ে সাজানো। ভিতরে জগন্নাথদেবের পতিতপাবন মূর্তি। পাশের দেওয়ালের দিকে হনুমানের একটি মূর্তিও। রয়েছে পদ্মকুণ্ড। পদ্মকুণ্ডের চারদিকে ফাঁকা চাতাল থেকে নামার জন্য সিঁড়ি। এই চাতালে জগন্নাথদেবের আরাধনা করা যাবে। সামনে এগোলেই গোপুরম ১-এর মতোই দেখতে গোপুরম ২তে পূজিত হবেন অনন্তনাগ। অনন্ত বাসুদেবের মন্দিরও বলা হয়। এর পর মূল মন্দিরের ভোগমণ্ডপ, নাটমন্দির, জগমোহন এবং গর্ভগৃহ। ভোগমণ্ডপের দেওয়ালে ৫৬টি পদ্মের চক্রের নিশান। ভোগমণ্ডপের প্রতিটি দেওয়ালে একটি করে স্টোররুম ও ছোট ছোট ছ’টি দরজা। এখানে জগন্নাথদেবকে ভোগ দেওয়া হবে। ভোগমণ্ডপে রয়েছে তিনটি হাতির কাঠামো। ফটকের উপরে গ্রানাইটের নবগ্রহ। র্তনের আসর বসার জয়গা এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে, গরুড় সরাসরি জগন্নাথ বলরাম এবং সুভদ্রাকে দেখতে পান। উপরে রয়েছে সাতটি ঝাড়বাতি। নাটমন্দিরে গ্রানাইট পাথরে তৈরি ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরের মূর্তি। নাটমন্দিরের পরেই জগমোহন। মূলত বলরামদেবের মন্দিরের দক্ষিণ দরজায় দু’টি অশ্বের মূর্তি বসানো দরজার নাম অশ্বদ্বার। নাটমন্দিরের উত্তর দিকের দরজায় দু’টি হাতির মূর্তি। দুয়ারের নাম হস্তিদুয়ার। জগমোহনের ভিতরে চারটি বড় বড় স্তম্ভের উপর দিকটা গম্বুজের মতো। সব শেষে মূল মন্দির বা গর্ভগৃহ। এটি প্রায় ৬৫ মিটার উঁচু। গর্ভগৃহে রত্নবেদীতে অধিষ্ঠিত জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রা। মার্চে রাজস্থান থেকে আসা মূর্তিগুলিকে রত্নবেদীর উপর অধিষ্ঠিত করা হয়েছে। অক্ষয় তৃতীয়ার শুভলগ্নে মূর্তিগুলিই প্রাণপ্রতিষ্ঠা পাবে। দিঘা পৌঁছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “মঙ্গলবার মহাযজ্ঞ চলবে। বুধে জগন্নাথদেবের বিগ্রহ প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া এবং দুপুর আড়াইটে-তিনটে নাগাদ দ্বারোদঘাটন।’‌’‌

প্রভু জগন্নাথদেবকে স্বাগত জানাতে পুণ্য ক্ষেত্রে জোরকদমে চলছে হোমযজ্ঞ। কাঁসরঘণ্টা, উলুধ্বনিতে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছে মন্দিরচত্বর। উদ্বোধনের প্রাক্কালে পুরীর রাজেশ দ্বৈতাপতি এবং ইসকন প্রতিনিধি রাধারমন দাস পুজো পার্বণ ও হোমযজ্ঞ চালাচ্ছেন শাস্ত্রীয় আচার মেনেই। মন্দিরের বাইরেও প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। চৈতন্যদ্বারে রঙের প্রলেপ পড়েছে। তার সামনে থেকে লোহার রেলিং খুলে দেওয়া হয়েছে। সেজে উঠেছে নিউ এবং ওল্ড দিঘা। লাইট থেকে সাউন্ড প্রস্তুতি শেষ। চন্দননগরের আলোকসজ্জায় সেজে উঠেছে বিশাল গেট।  ’মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রয়েছেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, অরূপ বিশ্বাস, সুজিত বসু এবং স্থানীয় নেতা সুপ্রকাশ গিরি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‌দিঘা হবে আন্তর্জাতিক পর্যটনকেন্দ্র। এখানে সমুদ্র এবং জগন্নাথ মন্দির দুইই আছে। এখন সব কাজ দেখব কেমন হয়েছে। বহু পর্যটক এখানে ইতিমধ্যেই এসে গিয়েছেন। পরে বিদেশ থেকেও পর্যটকরা আসবেন। দিঘায় মন্দিরের কাজ খুব ভাল হয়েছে। এখানে আগে প্রাণপ্রতিষ্ঠার কাজ হবে। তারপর উদ্বোধন হবে। এখানে জগন্নাথ মন্দির গড়ে ওঠার ফলে নবীন প্রজন্ম, প্রবীণ মানুষজন সকলের ক্ষেত্রেই একটা আধ্যত্মিকতার জায়গা তৈরি হল।’‌

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles