Saturday, May 24, 2025
spot_imgspot_img

Top 5 This Week

spot_img

Related Posts

দিকে দিকে যুদ্ধের রব!‌ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ!‌ ভয়ঙ্কর ভূস্বর্গে সন্ত্রাসকাণ্ডের প্রতিবাদে প্রত্যাঘাতের বার্তা দিচ্ছে ভারত!

ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ। দিকে দিকে যুদ্ধের রব। রণডঙ্কা বাজা শুরু। একাধিক রণতরী। আরব সাগরে মহড়ায় ব্যস্ত। ভারতের যুদ্ধজাহাজগুলি সক্ষম। দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত। প্রত্যাঘাতের বার্তায় ভারত। গলি, পাড়া, মহল্লা জুড়ে যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব। একটাই প্রশ্ন। যুদ্ধ কবে? কবে যুদ্ধ? হাল্লা চলেছে যুদ্ধের। নৌসেনার মহড়ায় একাধিক ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র। মাঝসমুদ্র থেকে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ। আরব সাগরে ভারতীয় নৌসেনার মহড়া। অসন্তুষ্ট পাকিস্তান। বিবৃতিও জারি। বয়েই গেল ভারতের। আড়ালে আবডালে ভীত পাক বাহিনী। ভারতীয় সেনার স্থলবাহিনী সজাগ। প্রত্যাঘাতের বার্তা। সেনা অঙ্গীকার। সর্বদা দেশের স্বার্থরক্ষার জন্য যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে প্রস্তুত। মহড়ায় অনুরূপ বার্তা নৌসেনার। ভূখণ্ডে ঢুকে যুদ্ধ করার পাশাপাশি ইলেকট্রনিক যুদ্ধের জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছে বায়ুসেনা। রাজস্থানে সীমান্ত এলাকায় মহড়া চালাচ্ছে স্থলসেনা। এবার সম্মুখ সমরের প্রস্তুতিতে শামিল নৌসেনাও। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধংদেহি মেজাজে সক্রিয় হয়ে উঠেছে ভারত। ভারতের জলসীমা নিরাপদ রাখতে প্রস্তুত নৌসেনা, এই বার্তাই দেওয়া হয়েছে রবিবারের মহড়ার পরে। প্রয়োজনে যুদ্ধের জন্যও প্রস্তুত নৌসেনা। মহড়ায় হাজির কলকাতা-ক্লাস ডেস্ট্রয়ার, নীলগিরি, ক্রিভক-ক্লাস ফ্রিগেটসের মতো যুদ্ধজাহাজগুলি। ব্রাহ্মোস-সহ একাধিক মিসাইল উৎক্ষেপণ।

নৌসেনা কর্তার কথায়, ‘‘যে কোনও পরিস্থিতির জন্য আমরা কতটা প্রস্তুত, প্রদর্শনের জন্য ভারতীয় নৌসেনার জাহাজগুলি মহড়ায় যোগ দেয়। মহড়া সফল। আমরা প্রস্তুত, এটাই প্রমাণ। দেশের সামুদ্রিক এবং নৌ সংক্রান্ত স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে নৌসেনা প্রস্তুত। সব সময়, সব জায়গায় এবং সব রকম ভাবে।’’পাকিস্তান হুমকি। সিন্ধুর জল বন্ধ হলে তা ‘যুদ্ধ’ হিসাবে দেখা হবে। মহড়ায় বার্তা দিয়ে নৌসেনার জবাব। পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার আবহে সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত রাখার ঘোষণা ভারতের। সরব পাকিস্তান। যুদ্ধের ঘোষণা করার বার্তা। পাকিস্তানি রাজনীতিবিদ বিলাওয়াল ভুট্টোর ফাঁকা ভাষণ, হয় সিন্ধুর জল বইবে, নাহলে ভারতীয়দের রক্ত। পাকিস্তানের ভাঁওতার গলাবাজিতে খাল কেটে সিন্ধু হত্যা। সিন্ধু নদে গিয়ে মেশে শতদ্রু, বিয়াস, রবি, চেনাব, ঝিলম নদী। সিন্ধু অপরিকল্পিত খাল ও নালা কাটার ফলে পাক পাঞ্জাব প্রদেশে, পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে সিন্ধু নদের হাল খুব খারাপ। মরুভূমিকে সবুজ করার স্পপ্ন জেগেছে পাকিস্তানি পাঞ্জাবিদের মধ্যে। যার জেরে সিন্ধু নদের জল থেকে আরও বঞ্চিত সিন্ধু প্রদেশের মানুষজন। পাক পাঞ্জাবের দক্ষিণাঞ্চলটি আদতে মরুভূমি। ভারতের থর মরুভূমিরই সম্প্রসারিত অংশের নাম চোলিস্তান। মরুভূমিকেই সবুজ বানাতে চায় পাকিস্তান সরকার। সিন্ধু থেকে পাঁচটি এবং শতদ্রু থেকে ১টি বিশাল খাল কাটে পাকিস্তান। এই খাল দিয়ে জল মরুভূমির দিকে প্রবাহিত হলে সিন্ধু প্রদেশে অবস্থা দুরুহ। পাক সেনা প্রধান অসিম মুনিরের প্রকল্প। ভারতের সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত করার ঘোষণা পর চোলিস্তানের এই প্রকল্প আপাতত স্থগিত রেখেছে পাকিস্তান।

পহেলগাঁওয়ের দৃশ্য। এখনও টাটকা। স্বামীর বুলেটবিদ্ধ মৃতদেহ। পাশে হাঁটু ভেঙে বসে আছেন স্ত্রী। অসহায়। নাচার। হতবাক। নতমুখ। দুর্ভাগ্যের হাতে সমর্পিত। কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে বৈসরন উপত্যকার ছবি! তরুণীর নাম হিমাংশী নারওয়াল। নিষ্প্রাণ দেহের সামনে বসে হাঁটু ভেঙে স্ত্রী। নিথর সদ্যবিবাহিত স্বামী ভারতীয় নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট বিনয় নারওয়ালের। দিন আষ্টেক আগে বিয়ে হয়েছিল। ইউরোপের কোনও দেশের ভিসা না পেয়ে মধুচন্দ্রিমায় কাশ্মীরে। সোম পহেলগাঁওয়ের একটি হোটেলে উঠেছিলেন নবদম্পতি। মঙ্গলে লাশ হয়ে গেলেন বিনয়। ভিন্‌রাজ্যের এক উপত্যকায় এখন একলা হিমাংশী। চারদিকে উঁচু উঁচু পাইন গাছের সারি। মধ্যিখানে একফালি চটা-ওঠা জমি। সেই জমিতে তিনটে চরিত্র। বিনয়, হিমাংশী আর একটা ট্যুরিস্ট ব্যাগ। বিনয়ের সঙ্গে সেই ঘাসহীন জমিতে পড়ে-থাকা ব্যাগটার কোনও তফাত না। দু’টিই প্রাণহীন। তৃতীয় চরিত্র, হিমাংশী নিষ্প্রাণ মূর্তি। এক ভাবে দেখে মনে হচ্ছিল, ওই ফ্রেমের কোথাও কোনও প্রাণের চিহ্ন অবশিষ্ট নেই। সময় থমকে গিয়েছে। ঘড়ির কাঁটা আর এগোবে না। অদূরে একটা লাল ফাইবারের চেয়ার। তার আশপাশে তিন পাটি চপ্পল এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে। দ্রুত পলায়নপর কারও পা থেকে খসে পড়া। কিছু দূরে দুটো হলদে রঙের তাঁবু। সেই তাঁবুর সামনে খুদে হয়ে আসা দু’-তিনটে চেহারা। তারও পরে পাইনের জঙ্গল। যার উপরে দুপুরের রোদ্দুর ঝকমক। তারও ও পারে পর্বতমালা। উপরে আদিগন্ত নীল আকাশ দুপুরের রোদে ঝলসাচ্ছে। কাশ্মীরের বাতাসে বারুদ আর আতঙ্কের গন্ধ। পরিস্থিতি অস্বাভাবিক। আতঙ্কবাদের কাছে কখনও মাথা নোয়ায়নি ভারত সরকার।

কাশ্মীরের পহেলগাওঁ। দুর্দান্ত নৈসর্গিক দৃশ্য। প্রকৃতি আদর করে রূপের গালিচা বিছিয়ে রেখেছে পাহাড়ের ঢালে-নাবালে। একটা পাহাড় পার হতেই চোখের সামনে হাট করে খুলে যাচ্ছে এক একটা দৃশ্যের দরজা। কাশ্মীরে এক বার গেলে আর সেখানে ফিরে যেতে চাইবে না কেউ। চুলোয় যাক নিসর্গ, চুলোয় যাক ভূস্বর্গ! আপনি বাঁচলে কাশ্মীরের নাম। ক্লিন্ন, ক্ষয়াটে মুখের সারি। কপালে উদ্বেগের বলিরেখা। অটোর উইন্ডস্ক্রিনে ইংরেজি হরফে পোস্টার সাঁটা এই মর্মে যে, তাঁরা সম্পূর্ণ বিনা পারিশ্রমিকে পর্যটকদের বিমানবন্দর বা রেলস্টেশনে পৌঁছে দেবেন। কেন দেবেন? কারণ, তাঁরা পর্যটকদের বলতে চান যে, তাঁরা যেন কাশ্মীরকে বর্জন না-করেন। এখন তো আর কাশ্মীরে কেউ আসবে না। মরব আমরা! এখানে লোকে বেড়াতে আসত। আমরা তাদের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যেতাম। আমাদের দুটো পয়সা হত। সে সমস্ত নষ্ট হয়ে গেল। আমাদের রুজি-রোজগার সমস্ত গেল! পহেলগাওঁয়ের ঘটনায় যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে তো আমরাও শহিদ হয়েছি। ট্যুরিস্ট হমারি জান হ্যায়, ট্যুরিস্ট হমারি শান হ্যায়। ট্যুরিস্টদের বাঁচাতে দরকার হলে আমরা বন্দুকের সামনে বুক পেতে দিতাম! যারা ওদের মেরেছে, তারা মানুষ নয়। শয়তান! তারা মুসলমানও নয়।

পহেলগাঁওয়ে হামলায় জঙ্গিরা একে ৪৭ এবং এম৪ অ্যাসল্ট রাইফেল ব্যবহার করেছিল। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার কার্তুজও। হামলার আগে এক স্থানীয় নাগরিক এবং পর্যটকের ফোনও কেড়ে নেয় জঙ্গিরা। জঙ্গিরা কোকেরনাগের জঙ্গল হয়ে ২০ কিলোমিটার হেঁটে বৈসরন উপত্যকায় পৌঁছায়। পহেলগাঁও থেকে বৈসরন ৬ কিলোমিটার দূরে। পুরো এলাকা পাহাড় আর ঘন জঙ্গলে ঘেরা। অনেকটাই উঁচু উপত্যকায় সরাসরি কোনও রাস্তা নেই। পর্যটক আর ট্রেকিংপ্রেমীদের জন্য এই জায়গা অত্যন্ত পছন্দের। পর্যটনস্থলের কোন জায়গা দিয়ে ঢুকে হামলা চালানোর পর পালানোর পথ আগে থেকেই জঙ্গিদের নখদর্পনে থাকার কারণে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই হামলা চালিয়ে পালাতে সক্ষম হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু কার্তুজ উদ্ধার একে ৪৭ এবং এম৪ অ্যাসল্ট রাইফেলের।

পহেলগাঁওয়ের নারকীয় এবং ন্যক্কারজনক ঘটনার পর গোটা দেশ জুড়ে ক্রোধের ঝড় উঠেছে, তাতে এই সব ভাল ভাল কথা খড়কুটোর মতো ভেসে যাওয়ার কথা। যাচ্ছেও। বরং দিকে দিকে যুদ্ধের রব উঠেছে। রণডঙ্কা বাজতে শুরু করেছে। আম কাশ্মীরিদের অনুনয় বা মোমবাতি মিছিলের মতোই এই জিগিরে চাপা পড়ে যাচ্ছে এই সরল প্রশ্নটি যে, এই ডোভাল-যুগে কী করে চার-পাঁচ জন সন্ত্রাসবাদী নির্বিবাদে ঢুকে পড়ল পহেলগাঁওয়ে। হাতে অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র, দেহে আটকানো হামলার টাটকা ছবি তোলার ক্যামেরা, মাথার মধ্যে নিজেদের লেখা কিছু নিরস্ত্র মানুষের মৃত্যু পরোয়ানা বহন করে তারা চলেও এল পহেলগাঁওয়ে। ২৬ জনকে গুলি করে মেরে আবার ফিরেও গেল। তাদের চার জনের ছবি জোগাড় করে ফেলল নিরাপত্তা সংস্থা। এখনও তাদের হদিস পেল না। ক্রুদ্ধ ভারত মাটিতে মুহুর্মুহু পাকিস্তানের বিষয়ে বিবিধ কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিন্ধু জলচুক্তি বাতিল, পাক কূটনীতিককে দেশে ফেরানো, পাক নাগরিকদের ভিসা বাতিল, বিভিন্ন রাজ্যে যে সমস্ত পাক নাগরিক আছেন, তাঁদের অবিলম্বে দেশে ফেরত পাঠানো। সীমান্তের ও পার থেকেও পাল্টা বিবিধ বহ্বাস্ফোট ভেসে আসছে।

জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি। কাশ্মীর জুড়ে চিরুনি তল্লাশি ভারতীয় সেনার। পাকিস্তান মতপুষ্ট জঙ্গিদের একের পর এক বাড়ি ধ্বংস করা হচ্ছে। তালিকাতেই নবতম সংযোগ ফারুক আহমেদ তাড়ওয়া। উত্তর কাশ্মীরের কুপওয়ারার কালারুস এলাকায় এই জঙ্গির বাড়ি ধ্বংস করে দিয়েছে প্রশাসন। এখনও পর্যন্ত মোট ৬ জন জঙ্গির বাড়ি ধ্বংস করেছে ভারতীয় সেনা। ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওতে জঙ্গি হামলার পর থেকেই জঙ্গি দমনে সেনার তৎপরতা আরও বেড়েছে।শ্রীনগরেরই ৬০টি জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালায় সেনা। উপত্যাকায় গোটা জঙ্গি নেটওয়ার্কটাকেই ধ্বংস করতে চায় সেনা এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ। কুপওয়ারা থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ বাজেয়াপ্ত করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। অপরদিকে দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগ, সোপিয়ান ও পুলওয়ামায় সক্রিয় ১৪ জন জঙ্গির তালিকা তৈরি করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার তালিকা অনুযায়ী, ৮ জঙ্গি লস্কর-ই-তৈবার সঙ্গে যুক্ত এবং জইশ-ই-মহম্মদ ও হিজবুল মুজাহিদিনের ৩ জন করে জঙ্গি। মোস্ট ওয়ান্টেডের এই তালিকায় লস্কর জঙ্গি এহসান-উল-হকের নামও রয়েছে। সম্প্রতি পুলওয়ামায় তাঁর বাড়ি ভেঙে দেয় নিরাপত্তা বাহিনী। লস্কর কমান্ডার আদিল রেহমান দেতু, জইশ কমান্ডার আহমেদ শেখ, পুলওয়ামা হামলায় ওয়ান্টেড জঙ্গি হারিস নাজির, পুলওয়ামা হামলায় জড়িত জইশ-ই-মহম্মদের আমির নাজির ওয়ানির নাম রয়েছে। এই তালিকায় শাহিদ আহমেদ কুটিয়ার নামও রয়েছে। অনন্তনাগে হিজবুল মুজাহিদিনের অপারেশনাল কমান্ডার জুবায়ের আহমেদ ওয়ানিও রয়েছেন মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায়। এ+ গ্রেডের জঙ্গির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত।‌

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles