মোহনবাগান সচির দেবাশীষ দত্তের উপর প্রচণ্ড বিরক্ত রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। মোহনবাগান মাঠে বারপুজোর আমন্ত্রণ সত্ত্বেও মোহন তাঁবুতে পা রাখেননি। অথচ ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে বসে দীর্ঘক্ষণ মেজাজে আড্ডা দেন অরূপ বিশ্বাস। বিরক্তির কারণ ও ভাব দুইই স্পষ্ট করে দেন হাবেভাবে, এমনটাই মনে করছে ময়দান। এর চব্বিশ ঘন্টা কাটতে না কাটতেই ক্রীড়ামন্ত্রীর কাটা ঘায়ে মলমের প্রলেপ দিতে শুরু করলেন চিরপ্রতিদ্বন্দী ক্লাবের শীর্ষকর্তা। মহিলা ফুটবলে ভারতসেরা ইস্টবেঙ্গল। এক ম্যাচ বাকি থাকতেই ট্রফি নিশ্চিত করেছে মশাল গার্লস। লাল হলুদ মেয়েদের সাফল্যকে বাংলার জয় বলেই মনে করছেন ইস্টবেঙ্গল কর্তা দেবব্রত সরকার। লাল হলুদ শীর্ষকর্তার ইচ্ছা বাংলার হয়ে এই ভারতসেরা ট্রফি তুলে দেবেন রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস? এই মর্মে চিঠি দেওয়া হয় ফেডারেশনে।
ময়দানের বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে গেছে দিন কয়েক আগেই। আইএসএল ফাইনালের ঘটনাপ্রবাহ আজও দগদগে ঘা। যার ফল ভোগ করছেন মোহন সচিব। ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে ফাইনালে আমন্ত্রণ না জানানো। আবার, আমন্ত্রণে বিলম্ব অনুচিত, সম্ভাবনাকেও জোরদার করেছে। আইএসএল কাপ ফাইনাল ম্যাচে জিতে কাপ জিতেছে মোহনবাগান। সেই ম্যাচে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপকে। কলকাতা শহরে একটি টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা, অথচ ক্রীড়ামন্ত্রী আমন্ত্রিত নন! অভাবনীয় ঘটনা। সাম্প্রতিক অতীতে ঘটেছে বলে মনে হয় না। আইএসএলের আয়োজক এফএসডিএল, সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কল্যাণ চৌবের পাশাপাশি মোহনবাগান ক্লাবকেও অভিযুক্ত করা হয়। আনুষ্ঠানিক সৌজন্যটা ক্লাবের দেখানো উচিত ছিল। একটা ফাঁক থেকেই গিয়েছে। অরূপ ফাইনালে যাননি। একপ্রকার ‘বয়কট’ই করেন বলা বাহুল্য। মোহনবাগান সূত্রের দাবি, ‘সচিব নিজে কেন ক্রীড়ামন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানাননি? মোহনবাগান সচিবের ক্রীড়ামন্ত্রীকে অবশ্যই আমন্ত্রণ করা উচিত ছিল। এমন ধারণা কেন করলেন?’
বিরক্ত, ক্ষুব্ধ ক্রীড়ামন্ত্রী পা রাখলেন না মোহন তাঁবুতে। সচিব দেবাশিসের সাফাই, ‘‘ওঁর না আসাটা দুঃখজনক। কষ্ট পেয়েছি। এফএসডিএলের অর্থাৎ আইএসএলের আয়োজকের ভুল কাজের খেসারত আমাদের দিতে হচ্ছে। ফাইনালের আয়োজক ছিল এফএসডিএল। আমি এফএসডিএল-কে অনুরোধ করি। মোহনবাগান সুপার জায়ান্টসকেও অনুরোধ করি। সুপার জায়ান্টসের হয়ে বিনয় চোপড়া কথা বলেন। এফএসডিলের বক্তব্য, গত বছর তারা কোনও আমন্ত্রণ পাঠায়নি। তা সত্ত্বেও ক্রীড়ামন্ত্রী এসেছিলেন। যদিও আমি মনে করি, যে রাজ্যে খেলা হচ্ছে, তার ক্রীড়ামন্ত্রীকে অবশ্যই আমন্ত্রণ জানানো উচিত ছিল। এটা অনুচিত হয়েছে।’’
ভারতসেরা লাল-হলুদ প্রমীলাবাহিনী। কল্যাণী স্টেডিয়ামে ওড়িশা এফসি’কে হারিয়ে আইডব্লিউএল চ্যাম্পিয়ন লাল-হলুদের মহিলা বাহিনী। ম্যাচের একমাত্র গোল সৌম্যা গুগুলোথের। আইডব্লিউএল চ্যাম্পিয়ন ইস্টবেঙ্গল এএফসি ওমেন্স চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ছাড়পত্রও পেয়েছে লাল-হলুদের মহিলা ব্রিগেড। শেষ ম্যাচ বাকি ইস্টবেঙ্গলের। শুক্রবার ইস্টবেঙ্গল মাঠে গোকুলামের বিরুদ্ধে নামবেন অঞ্জু তামাংরা। ওই ম্যাচের পরেই লাল-হলুদ ব্রিগেডের হাতে চ্যাম্পিয়নের ট্রফি তুলে দেওয়া হবে। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রীর উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করার অনুরোধ জানিয়ে ফেডারেশনকে চিঠি দিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। মহিলা লিগ জয়ী ইস্টবেঙ্গলকে পুরস্কার দেবেন ক্রীড়ামন্ত্রী, এমনটাই চায় ক্লাব। এখনও কোনও জবাব আসেনি ফেডারেশনের তরফে।
বিতর্ক। জল্পনা। এক সপ্তাহ যেতে না যেতে কলকাতার ফুটবল ময়দানে আরও একটি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। আই লিগ জেতা ইস্টবেঙ্গলের মহিলা দলকে শুক্রবার পুরস্কৃত করা হবে। ইস্টবেঙ্গল ক্লাব চাইছে তাদের মাঠে ক্রীড়ামন্ত্রী পুরস্কার তুলে দিন। আই লিগের আয়োজক সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের তরফে এখনও এ ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত আসেনি। ক্লাবের কর্তা দেবব্রত সরকারের উক্তি, “মেয়েরা যেন ফুটবল খেলে আরও এগিয়ে যায়, সেই উদ্যোগ নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আমরা যেন মেয়েদের দল গড়তে পারি সেদিকেও নজর রেখেছিলেন। আমরা মনে করি, ইস্টবেঙ্গলের এই সাফল্য আসলে বাংলার জয়। যেহেতু বাংলার জয়, তাই বাংলার প্রতিনিধি হিসাবে এই ট্রফি গ্রহণ করতে অনুরোধ জানাচ্ছি ক্রীড়ামন্ত্রীকে। এই মর্মে ইতিমধ্যেই চিঠি দেওয়া হয়েছে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনে।” মঙ্গলবার পয়লা বৈশাখের বারপুজোয় ইস্টবেঙ্গলে হাজির ছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী। ইস্টবেঙ্গলের আজীবন সদস্যপদও রয়েছে অরূপের। ক্রীড়ামন্ত্রীর হাত দিয়েই ট্রফি তুলে দিয়ে সম্মান দিতে চাইছে লাল-হলুদ শিবির। মহিলাদের আই লিগ ইস্টবেঙ্গল চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেলেও একটি ম্যাচ বাকি রয়েছে কেরালা এফসির বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচ হবে ক্লাবের মাঠে শুক্রবারের ম্যাচের পর পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান। গত শনিবার আইএসএল কাপের ফাইনালের দিন ক্রীড়ামন্ত্রীকে আমন্ত্রণ না জানানো নিয়ে বিতর্কে সূত্রপাত। বাংলার বুকে আবারও এক ফাইনাল। বিশাল গুরুত্বপূর্ণ না হলেও, ক্রীড়ামন্ত্রীকে সন্তুষ্ট করা খুবই প্রয়োজন বলে মনে করছেন ক্লাবকর্তারা। মহিলাদের আই লিগের ক্ষেত্রে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আগেভাগেই সক্রিয় ইস্টবেঙ্গল ক্লাব।