Saturday, April 19, 2025
spot_imgspot_img

Top 5 This Week

spot_img

Related Posts

নববর্ষে হার কলকাতা নাইট রাইডার্সের! পয়লা বৈশাখে পাঞ্জাব হারাল কলকাতাকে

পাঞ্জাব কিংস: ১১১ (প্রভসিমরন ৩০, প্রিয়াংশ ২২, হর্ষিত ৩/২৫, নারিন ২/১৪, বরুণ ২/২১)
কলকাতা নাইট রাইডার্স: ৯৫ (অঙ্গকৃশ ৩৭, চাহাল ৪/২৮, জানসেন ৩/১৭)
১৬ রানে জয়ী পাঞ্জাব।

বাংলার নতুন বছরেই কলকাতার হার। অ্যাওয়ে ম্যাচে কেকেআর হারল নববর্ষের সন্ধ্যায়। কলকাতাকে পয়েন্ট না নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হল বাংলা বছরের প্রথম দিন। পাঞ্জাব কিংসের কাছে হারল ১৬ রানে। প্রথমে পাঞ্জাব কিংস সামলাতে পারেনি নাইট বোলিং লাইন আপ। হর্ষিত রানা ও বরুণ-নারিন জুটিতে নাজেহাল অবস্থা হয়েছিল কেকেআর প্রাক্তনী শ্রেয়স আইয়ারের দল। নাইটদের আইপিএল জেতানো অধিনায়ক রান না করেই প্যাভিলিয়নে ফেরেন। মুল্লানপুরে ম্যাচের শুরুতে টস হারে কেকেআর। প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন পাঞ্জাব অধিনায়ক শ্রেয়স। টসের সময় কেকেআর অধিনায়ক অজিঙ্ক রাহানে জানান, এই পিচে প্রথমে বল করতে চেয়েছিলেন। টসে হারলেও কোনও সমস্যা হবে না। মইন আলির পরিবর্তে এদিন অ্যানরিখ নখিয়াকে প্রথম একাদশে রাখে কেকেআর। পাওয়ারপ্লের আগেই চার উইকেট হারায় পাঞ্জাব। ২২ রান করে আউট ফর্মে থাকা প্রিয়াংশ আর্য। প্রভসিমরন সিং আউট হন ৩০ রানে। পাঞ্জাব অধিনায়ক শ্রেয়স দুই বল খেলে হর্ষিতের শিকার হন। পাঞ্জাব ব্যাটিং লাইন আপের প্রথম তিন উইকেট নেন তারকা পেসার। ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার সূর্যাংশ শেগড়ে ৪ রান করে আউট হন। আঁটসাট বোলিং স্পিন জুটি বরুণ চক্রবর্তী এবং সুনীল নারিনের জোড়া উইকেট। প্রথম একাদশে সুযোগ পাওয়া নখিয়াও একটি উইকেট পান। এক উইকেট বৈভব আরোরার। নাইট বোলারদের দাপটে ১৫.৩ ওভারেই শেষ হয়ে যায় পাঞ্জাব ইনিংস ১১১ রানে।

রান তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই আউটসুনীল নারাইন। তৃতীয় ওভারের শেষে প্যাভিলিয়নে ওপেনার কুইন্টন ডি’ককও। কেকেআর ইনিংসকে গড়েন অধিনায়ক রাহানে ও তরুণ অঙ্গকৃশ রঘুবংশী। দশম ওভারে রাহানে আউট হতেই ম্যাচের রাশ হাতছাড়া কেকেআরের। অঙ্গকৃশ আউট নাইটদের স্কোর ৭২ রানে। ২৩ রানের মধ্যে ৬ উইকেট পড়ল নাইটদের। শেষদিকে চেষ্টা করেও আন্দ্রে রাসেল শিকার হন মার্কো জানসেনের। কেকেআরকে ধ্বংস করা চাহালের আইপিএলে সেরা পারফরম্যান্স ছিল কেকেআরের বিরুদ্ধে ২০২২ সালে ৫ উইকেট। রাহানে-রঘুবংশী তাঁরই শিকার। রিঙ্কু সিং এবং রমনদীপ সিংকেও প্যাভিলিয়নে ফেরান। কেকেআরের বিরুদ্ধে তিন উইকেট নেন জানসেন। একটি করে উইকেট জেভিয়ার বার্টলেট, অর্শদীপ সিং এবং গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের।

জবাবে ব্যাট করতে নেমে কেকেআর ১৫.১ ওভারে মাত্র ৯৫ রানে অল-আউট হয়ে যায়। ১৬ রানে ম্যাচ জেতে পঞ্জাব। আইপিএলের ইতিহাসে প্রথমে ব্যাট করা কোনও দল এত কম রান তুলে কখনও ম্যাচ জেতেনি। কেকেআরের হয়ে অংকৃষ রঘুবংশী একটি ছক্কা, পাঁচটি চারের হাত ধরে ২৮ বলে ৩৭ রান করেন। এটাই সর্বোচ্চ। অজিঙ্কা রাহানে ও আন্দ্রে রাসেল উভয়েরই ব্যক্তিগত ১৭ রান। স্পষ্ট নট-আউট অজিঙ্কা রাহানে। ডিআরএস নিলেন না। অজিঙ্কা রাহানের সিদ্ধান্তই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। খেসারত ম্যাচ হেরে দিতে হয় কলকাতা নাইট রাইডার্সকে। মুল্লানপুরে পঞ্জাব কিংসের বিরুদ্ধে কেকেআর ১১২ রান তাড়া করতে নেমে ৯৫ রানে অল-আউট। ১৬ রানে হেরে যায় নাইটরা। দায়ী নিঃসন্দেহে কেকেআর অধিনায়ক রাহানে। ডিআরএস না নেওয়ার সিদ্ধান্তই পুরো ম্যাচের রং বদলে দিল। অষ্টম ওভারে বল করতে এসেছিলেন যুজবেন্দ্র চাহাল। প্রথম ওভারের ওভারের চতুর্থ বলে রাহানে স্লগ সুইপ মিস করেন। পিছনের পায়ে বলটি লাগে। যুজবেন্দ্র চাহাল এলবিডব্লিউ-এর আবেদন করলে, ফিল্ড আম্পায়ার আউট দিয়ে দেন। অংগক্রিশ রঘুবংশীর সঙ্গে কথা বলেন রাহানে। অথচ ডিআরএস ডিসিশন রিভিউ সিস্টেমের সাহায্য না নিয়ে মাঠ ছাড়েন। রিপ্লে-তে বল ট্র্যাকিংয়ে দেখা যায়, রাহানের পিছনের পায়ে যখন বল লাগে, সেটি অফ-স্ট্যাম্পের বাইরে ছিল। উইকেটে বলটি কোনও ভাবেই লাগত না। বলটি বেরিয়ে যেত। পাঞ্জাবের হয়ে ৪ উইকেট নেন যুজবেন্দ্র চাহাল। ৩ উইকেট নেন মার্কো জানসেন।

আইপিএলের ইতিহাসে সব থেকে বেশি রান তাড়া করে ম্যাচ জয়ের সর্বকালীন রেকর্ড রয়েছে পাঞ্জাব কিংসের। গত বছর ইডেনে কেকেআরের বিরুদ্ধে সেই নজির। এবার আইপিএলের ইতিহাসে সব থেকে কম রান রক্ষা করে ম্যাচ জয়ের সর্বকালীন রেকর্ডও নিজেদের দখলে পাঞ্জাব কিংসের। ২টি ম্যাচে শ্রেয়স আইয়ার ছিলেন দুই শিবিরে। ইডেনের ম্যাচে আইয়ার ছিলেন কেকেআরের ক্যাপ্টেন। এবার মুল্লানপুরের ম্যাচে শ্রেয়স পাঞ্জাব দলনায়ক। ২৬ এপ্রিল ইডেনে আইপিএল ২০২৪-এর ৪২তম লিগ ম্যাচে কলকাতা নাইট রাইডার্স ও পাঞ্জাব কিংস মুখোমুখি হয়। শুরুতে ব্যাট করে কেকেআর ২০ ওভারে ৬ উইকেটের বিনিময়ে ২৬১ রান তোলে। ফিল সল্ট ৭৫, সুনীল নারিন ৭১, বেঙ্কটেশ আইয়ার ৩৯, শ্রেয়স আইয়ার ২৮ ও আন্দ্রে রাসেল ২৪ রান করেন। জবাবে ব্যাট করতে নেমে পাঞ্জাব কিংস ১৮.৪ ওভারে ২ উইকেটের বিনিময়ে ২৬২ রান তুলে ম্যাচ জিতে যায়। ৮ বল বাকি থাকতে ৮ উইকেটে ম্যাচ জেতে পঞ্জাব। আইপিএলের ইতিহাসে এত বেশি রান তাড়া করে ম্যাচ জেতেনি আর কোনও দল। জনি বেয়ারস্টো ১০৮ রান করেন। প্রভসিমরন সিং ৫৪, শশাঙ্ক সিং ৬৮ ও রিলি রসউ ২৬ রান করেন।

হারের যাবতীয় দায় নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে রাহানে বললেন, অধিনায়ক হিসেবে তাঁর আরও দায়িত্ব নিয়ে ব্যাট করা উচিত ছিল। কিন্তু সেটা পারেননি। ‘কিছু বলার নেই আমার। কী হল, সেটা আমরা সবাই দেখেছি। এই পারফরম্যান্সে অত্যন্ত হতাশ। পুরো দোষটা আমি নিজের কাঁধে নেব। আমি ভুল শট খেলেছি। যদিও ওটা স্টাম্পে লাগছিল না। নন-স্ট্রাইকার এন্ডে দাঁড়িয়ে থাকা তরুণ অংকৃষ রঘুবংশীও নিশ্চিত ছিল না। ও বলেছিল যে আম্পায়ার্স কল হতে পারে। ওই সময় আমি কোনও ঝুঁকি নিতে চাইনি। আমিও নিশ্চিত ছিলাম না। ব্যাটিং ইউনিট হিসেবে আমার অত্যন্ত জঘন্য ব্যাট করেছি। আমরা পুরো দায়ভার নিচ্ছি। এই পিচে বোলাররা খুব ভালো বোলিং করেছে। পঞ্জাবের মতো শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন-আপকে মাত্র ১১১ রানে আটকে রাখার ব্যাপারটা দারুণ ব্যাপার। ব্যক্তি হিসেবে আমাদের আরও আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। থাকতে হবে ইতিবাচক। এই উইকেটে পুরো ব্যাট খুলে খেলা উচিত। সেটা বেশি ভালো। সুইপ করা কঠিন ছিল।’

ম্যাচের পর শ্রেয়স বলেন, ‘‌শব্দে এই জয় বর্ণনা করা যাবে না। আমি স্রেফ নিজের সহজাত খেলার উপরে জোর দিয়েছিলাম। আমি বুঝতে পারছিলাম বল ঘুরছে। তাই যুজিকে (চহল) বলেছিলাম মাথা ঠান্ডা রেখে বল করতে। আমাদের আগ্রাসী হওয়া দরকার ছিল। ভাগ্য ভাল যে সঠিক জায়গায় সঠিক ফিল্ডারেরা ছিল। যা-ই হোক, এখন এ সব বিশ্লেষণ করা সত্যিই কঠিন। এই ম্যাচটা জেতা সত্যিই বিশেষ অনুভূতির। দু’ওভারে দুটো উইকেট আমাদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল। কিন্তু ওদের দু’জন ব্যাটার ম্যাচটা নিজেদের দিকে নিয়ে গেল। যুজি এসে বল ঘোরানো শুরু করতেই আমাদের আশা বেড়ে যায়। আমি চেয়েছিলাম আগ্রাসী ফিল্ডিং সাজাতে। একদম কেকেআর ব্যাটারদের মুখের সামনে, যাতে ওরা ভুল করতে বাধ্য হয়। ওখানেই ম্যাচটা আমাদের দিকে ঘুরে গেল। পিচের বাউন্স অসমান ছিল। তাই ১৬ রানে জিতে মনে হচ্ছে, ঠিক রানই তুলেছিলাম। বাউন্সের বৈচিত্রের ব্যাপারটা সবার মাথার মধ্যয়ে ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম। বোলারদের বলেছিলাম, বাউন্সের কথা মাথায় রেখে বল করতে। সেটাই করেছে ওরা।’‌

পয়লা বৈশাখে বাংলার উৎসবের মেজাজেই পাঞ্জাবের মুলানপুরে নাইট রাইডার্সে নববর্ষের আনন্দ। বেগুনি পাঞ্জাবিতে বাংলায় সংলাপ বলে নববর্ষের আনন্দে মাতোয়ারা নাইট শিবির। মিষ্টিমুখের সঙ্গে খোদ কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতের মুখে শোনা গেল ‘শুভ নববর্ষ’। পয়লা বৈশাখের সকালে কেকেআর থেকে এক্স হ্যান্ডলে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। নাইট কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতের জন্য উপহার হিসেবে ছিল বেগুনি পাঞ্জাবি। নববর্ষের উপহার পেয়ে আপ্লুত পণ্ডিতমশাই ও বোলিং কোচ ভরত অরুণ, মায়ঙ্ক মার্কণ্ডে, চেতন সাকারিয়ারাও মাতলেন নববর্ষের উৎসবে। মিষ্টিমুখ। এক থালা রসগোল্লা। মিষ্টিমুখের শর্ত। নাইট কোচ বলেন, “বল মারব এখানে, পড়বে গ্যালারির মাঝখানে।” বাংলায় হলতে হবে। ভরত অরুণ বলেন, “চ্যালেঞ্জ নিবি না কেকেআরের সাথে।” এরপর মিষ্টিমুখ পর্বের শুরু। রসগোল্লার স্বাদ চেখে এরপর সবাই মিলে সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, “শুভ নববর্ষ।” কেকেআরের পোস্ট, ‘শুভ নববর্ষের অফুরন্ত প্রীতি ও শুভেচ্ছা, আপনাকে ও আপনার পরিবারকে।’কিন্তূ, প্রাক্তন অধিনায়ক শ্রেয়সের ঘর থেকে খালি হাতে ফিরতে হল বর্তমান অধিনায়ক রাহানের নাইটদের। পয়েন্ট, মান কিছুই রক্ষা হল না।

পঞ্জাব কিংসের কাছে হেরে আইপিএলের পয়েন্ট টেবলে এক ধাপ নেমে গেল কলকাতা নাইট রাইডার্স। প্রথম চারে উঠে এল শ্রেয়স আয়ারের পাঞ্জাব কিংস। পয়েন্ট টেবলের শীর্ষে গুজরাত টাইটান্স। শুভমন গিলেরা ছ’টি ম্যাচ খেলে চারটিতে জয়ে পয়েন্ট ৮। নেট রান রেট ১.০৮১। দ্বিতীয় স্থানে দিল্লি ক্যাপিটালস। অক্ষর পটেলের দলের পাঁচ ম্যাচে চার জয়। পয়েন্ট ৮। দিল্লির নেট রান রেট ০.৮৯৯। তৃতীয় স্থানে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। ছয় ম্যাচে চারট জয়ে আরসিবির পয়েন্ট ৮। নেট রান রেট ০.৬৭২। চতুর্থ স্থানে শ্রেয়সেরা। পাঞ্জাব কিংস ছ’টি ম্যাচ খেলে চারটি জয়ে পয়েন্ট ৮। নেট রান রেট ০.১৭২। পয়েন্ট তালিকায় পঞ্চম স্থানে ঋষভ পন্থেরা। লখনউ সুপার জায়ান্টস সাতটি ম্যাচ খেলে চারটি জয়ে পয়েন্ট ৮। লখনউয়ের নেট রান রেট ০.০৮৬। ষষ্ঠ স্থানে থাকল কেকেআর সাত ম্যাচ খেলে তিনটি জয় অজিঙ্ক রাহানেদের। পয়েন্ট ৬। কেকেআরের নেট রান রেট ০.৫৪৭। সপ্তম স্থানে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। হার্দিক পাণ্ড্যেরা ছ’টি ম্যাচ খেলে দু’টি ম্যাচ জিতে পয়েন্ট ৪। নেট রান রেট ০.১০৮। অষ্টম স্থানে সঞ্জু স্যামসনেরা। রাজস্থান রয়্যালস ছ’টি ম্যাচ খেলে দু’টি জিতে পয়েন্ট ৪। রাজস্থানের নেট রান রেট -০.৮৩৮। নবম স্থানে থাকা হায়দরাবাদ ছ’টি ম্যাচ খেলে দু’ম্যাচে জয়। প্যাট কামিন্সের দলের পয়েন্ট ৪। নেট রান রেট -১.২৪৫। দশম স্থানে চেন্নাই সাতটি ম্যাচ খেলে দু’টি জয়। মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের পয়েন্ট ৪। নেট রান রেট -১.২৭৬।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles