গরমে ঘেমে ঘর্মাক্ত ‘ঘ’। অন্যরকম দেখতে হতে থাকা শরীর। গ্রন্থি-গ্রন্থি ব্যথা। বাড়ির আইন অমান্য। দলে দলে যোগদান। বর্ষার জলভরা প্যাচপ্যাচে কাদামাঠ। অকারণে ডাইভ মারা। হাতে চকলেট বোম ফাটাতে পারার শরৎ পুজো। হেমন্তে বুঝে উঠতে না পারা অদ্ভুত সব মনখারাপ। এগারো টাকার এসএমএস প্যাক শেষ। ফুঁসিয়ে গদগদে রাগ। মফসসল শীত-সকাল। খান খান হাওয়ায় খেজুর গাছে রস ধরা। শিরশির শরশর। ঝিমধরা মন্থরতা। অজানা আশ্চর্য। দোলে বাসন্তী রঙ। কতদূর গড়াল দেখতে গিয়ে বিপত্তি। চোখের সামনে খুঁজে পাওয়া দিদিদের নিষিদ্ধ বুকত্যকা। ছয় ঋতুর ছয় রিপুর ছয় পায়া। নির্জন বিছানায় কোলবালিশের সাথে কখনও মারামারি। কখনও জাপটা-জাপটি। টালমাটাল কৈশোর গেছে সবে। কোন আশ্চর্য জাদু। তোমার কথা আমিও কিছু জানি। মাতৃভাষা মানে তখনও আড়াল-আবডালে খিস্তি। যুদ্ধ মানে তখনও ইতিহাস বই। অন্ধকার মানে ভয় কম, আগ্রহ বেশি। অনশন মানে ফাইনালে আর্জেন্টিনা রানার-আপ।
সময় বয়ে যায়। জলের ধারার ন্যায়। প্যানডেমিক বলে কিছু একটা হয়ে যায়। বিস্ফোরণের অভ্যস্ততা। মধ্যপ্রাচ্য-সহ পৃথিবী জুড়েই। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ হয়ে ওঠেন ডিজিটাল ক্রিয়েটর। ইলন মাস্ক নিজের সন্তানের নাম রাখেন একস এই মাস্ক। একদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় নজর একটা পোস্ট। নিজের আঠারো বছর বয়সটা। ট্রাস্ট নো ওয়ান। কাউকে বিশ্বাস নয়। নব্বই শতাংশেরই বয়স কৈশোরে বা কৈশোর ছাড়িয়ে এগিয়েছে খানিক। বিস্মিত হতভম্বও। ৯৯ সালে জন্মেও বোধহয় অভ্যস্ত না। জেন-জি প্রবণতা। অভ্যস্ত হতে চাইওনি। নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়া লিমিটেড সিরিজ। ‘অ্যাডোলেসেন্স’ দেখে বিস্ময়। বেদনার সঙ্গে আর-একটি অনুভবেও জারিত প্রবল। ভয় আর ভয়হীনতার ঠিক মাঝখানে।
বয়ঃসন্ধিতে ছায়া। ম্যানোস্ফিয়া। ইন্সেল, ম্যানোস্ফিয়ার, চ্যাড, স্টেসি, রেড পিল, ব্লু পিল, ব্ল্যাক পিল। প্রভৃতি শব্দের সঙ্গে আলাপ ছিল না। নবীনদের অভিহিত করার জন্য বর্ণমালা যেহেতু শেষ। জেন-জি-র পরের ধাপ। জেন আলফা, জেন বেটা। প্রথম বিশ্বে ওইসব শব্দের প্রসার ও সংক্রমণ অনেক বেশি। তৃতীয় বিশ্বেও সংক্রমণ। অচিরেই একটা অতিমারীর রূপ। প্রথম বিশ্বের থেকে অবশ্যম্ভাবীভাবে বেশি ভয়ানক। কারণ তৃতীয় বিশ্ব নকল করতে চাইবে প্রথম বিশ্বকে। জেন জি-আলফা-বেটারা ভবিষ্যতে বলবে। বুঝি না, আগ্রহীও নই। আলাদা পৃথিবী নির্দিষ্ট হয়ে নেই। ভবিষ্যতে ইলন মাস্কের মহানুভবতায় হতেও পারে। জেন-জি-জেন আলফার পৃথিবীতে থাকতে হবে। সম্পূর্ণ আলাদা ভাষায় সংযোগ। সংযোগ আর ভাষা মূলত বিচ্ছিন্নতার। অবিশ্বাসের আর ঘৃণার। নিজের একান্ত কুঠুরিতে অনলাইন গেমিংয়ের জগতে বুঁদ। শরীর দুলিয়ে নেচে উঠবেন অদ্ভুতুড়ে। গুব্গাবে আর তীব্র শঙ্কায় এনিমি। কম্পিউটার থেকে নেমে আসবে সত্যিকারের রাস্তায়। জর্জ সোডিনি, এলিয়ট রজার, অ্যালেক মিনাসিয়ান কিংবা স্কট বিয়ার্লি নামক কেউ কেউ বেমালুম খুন করবেন মহিলা। পথচারী-সহ অনেককেই। নিজেদের চিহ্নিত করবেন ইন্সেল গোষ্ঠীর একজন হিসাবে। সম্পর্ক ও যৌনজীবন প্রস্ফুটিত নয়। এই অভাবের জন্য দায়ী মহিলারা ও সমাজ।
ইন্সেল হয়ে ওঠার পিছনে বুলিং-সহ নানা গূঢ় কারণ। একাকিত্ব, অবসাদ, উদ্বেগ ও প্রত্যাখ্যানের মতো জটিল বিষয়। বছর তেরোর অবয়বের বিশ্বাস, সে অসুন্দর। অসুন্দরতম। সমাজ-স্বীকৃত চোখে সে বুঝে নিতে শিখবে। কোন শরীর আকর্ষণীয় আর কোনটা নয়। আকর্ষণ-বিকর্ষণ থেকে সে নিজের মতো করে পাঠ। সমবয়সিদের মনোজগৎ, দুর্বলতা-সবলতা। সম্পূর্ণ ভুল-ভঙ্গুর-পলকা কিছু ধারণা। চিন্তাজগৎ দোমড়াতে শুরু করবে। হাতে উঠে আসবে ছুরি। ছুরির মালিক তার সহপাঠী রায়ান। জনপ্রিয়তাকে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। তদন্তকারী অফিসারকে সে প্রশ্নও করে, আপনি সত্যিই খুব জনপ্রিয় ছিলেন? ‘উইথ গার্লস্ অ্যান্ড স্টাফ?’ প্রশ্নের সময় চোখে খেলা করে লোভের চক্মকানি। জনপ্রিয় হয়ে উঠতে চাওয়ার পিছনে অবধারিত। ভয়াবহ কোনও অস্তিত্বের সংকট। সাম্প্রতিক ভুল পথে চালিত কৈশোর। চিহ্নিত না করে চাপা দিতে চায়। নির্মূল করতে চায়। এড়িয়ে যেতে চায়। ঢেকে রাখতে চায় নানা কিছু দিয়ে। বুঝে উঠতে পারে না, ‘the desire for eliminating pain is pain.’
পপ কিংবা কে-ড্রামা। নিজেদের ‘কুল’ ও আধুনিক মনে করে। অ্যানিমে-র ফ্যানাটিক ফ্যান। কিছু শব্দ নিজের স্কুলব্যাগে রেখে দিতে হবে। চকিত প্রয়োগে সমান-সমান ‘কুল’ এবং জনপ্রিয়। নিজের ওপর চাপানো। নিজেকে দিয়ে ভাবানো। নিজেকে দিয়ে করানো। কথা বলানো। শোনানো খাওয়ানো নিজেকে পরানো। ভাঙা অ্যান্ড্রয়েডের ওপর আইফোনের কভার লাগানো। মুখের রং উজ্জ্বল করতে নিত্যনতুন ক্রিম মাখানো। সরস্বতী পুজোর আগে এক সপ্তাহ জিম করে হাত ফোলানো। নিয়মিত প্রেমিকের কিংবা প্রেমিকার মোবাইল চেক করা। তীব্র মারধর করে ভালবাসার দোহাই দেওয়া। সংখ্যালঘুদের এড়িয়ে চলা। সমস্তই শুধু বাকিদের মতো হয়ে ওঠার তাড়ণা। ট্রেন্ডিং থাকতে পারার নিরাপত্তায়। ক্রমাগত এক চাপিয়ে যাওয়া নিজের সমগ্র অস্তিত্ত্ব। পাশের জনকেও চাপাতে প্রলুব্ধ করা। উন্মত্ততার বিদ্যালয়ের জাঁতায় প্রতিদিন বয়ঃসন্ধির অসম লড়াই। দুর্গন্ধ ঠিকরে বেরনোই অনিবার্য। ডি এস মিশা ফ্র্যাঙ্ক স্কুলে দাঁড়িয়ে এই ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ। ‘ইটস লাইক আ মিক্সচার অফ ভমিট, ক্যাবেজ অ্যান্ড মাস্টারবেশন।’ অথচ হওয়ার কথা ছিল না। কৈশোর কো-এড হাই স্কুলে ছিল না এই উত্তরাধুনিক দুর্গন্ধ।
মহাভারতের আপদ্ধর্ম পর্বে যুধিষ্ঠির জিজ্ঞাসা করলেন ভীষ্মকে। নৃশংস কে? ভীষ্ম জবাব দিলেন, ‘যে উত্তম ভোজ্য, পেয়, লেহ্য আরও দামি দামি ভোগ্যদ্রব্য চেয়ে থাকা অভুক্ত মানুষদের মধ্যে বসে দেখিয়ে দেখিয়ে উপভোগ করে খায়, তাকেই নৃশংস বলা উচিত।’ সাদা চামড়ার সহপাঠী-সহপাঠিনীরা। সাদাত্ব আর কালো চামড়ার নির্জন মেয়েটা। স্কুল ছুটির পর একা দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে বাড়ি ফিরতে থাকা অসংখ্য সাদা চামড়াদের। সবাই তার সহপাঠী, কেউ তার বন্ধু নয়। ঠিক যেভাবে পটল ও শাকসবজি দিয়ে সর্বাঙ্গ আবৃত করে রিল বানান। তৃতীয় বিশ্বের কোনও কোনও ডিজিটাল ক্রিয়েটর। উপভোগ করেন ‘ফান’ ছড়ানোর ক্ষমতা। বাড়তে থাকে ভিউজ। নবীন কোনও ডিজিটাল ক্রিয়েটর। ভাবতে থাকেন, আমার কেন নেই। ওর মতো পাঁচ লক্ষ ফ্যান-সাবস্ক্রাইবার? ‘ফান’ বোধহয় কম। সর্বাঙ্গ আবৃত করতে হবে পটলের চেয়ে উঁচু দরের কিছু দিয়ে। মাছ কিংবা মাংস। ‘অ্যাডোলেসেন্স’ দেখে ভয় করতে থাকে। ভয় ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে থাকা আলফা-বেটা প্রজন্মদের। সহপাঠীকে কেটে-খেয়ে নেওয়ার দৈনন্দিন অক্লান্ত প্রয়াসের অন্তঃসারশূন্যতা।
দরকার পড়বে কোনও ‘অ্যাপ্রোপ্রিয়েট অ্যাডাল্ট’-এর। দরকার পড়বে কোনও সাহারার। দরকার পড়বে একটা কোনও হট চক্লেটের মাঝে কিছু মার্শমেলোর। সর্বোত্তম একজন। জটিল সব প্রশ্নগুলি, পৌরুষ কী? নারীত্ব কী? যৌনতা কী? মৃত্যু কী? কেউ নিজেকে কীভাবে দেখে? কী মনে করে নিজেকে নিয়ে? অসুন্দর? নির্বোধ? চতুর? ইন্সেল? কালো? সংখ্যালঘু? প্রশ্ন, অ্যাম আই বেটার দ্যান আদার্স? অ্যাম আই ক্লেভার? অ্যাম আই স্মার্ট? অ্যাম আই ডিজায়ারেবল? প্রশ্নের মেটাভার্সনির্মিত অসন্তোসষজনক উত্তরের বিস্ফোরণে রক্তক্ষরণ। টের পেয়ে শান্ত থাকার ওষুধ গিলে চলা। শান্ত থাকতে না-পেরে নিত্যনতুন শব্দ ও বাঁচা। নিজের ওপর চাপানোর যে অনন্ত প্রয়াস। মুক্তি আদৌ সম্ভব। ভেবে নেওয়া মুশকিল। মানুষের সব প্রবৃত্তি, সব চিকীর্ষা। তথাকথিত স্বতন্ত্র ইচ্ছার মূলে রয়েছে অতৃপ্তি। অপ্রাপ্তি। না পাওয়া। বিশ শতকের শুরুতে পরপর দু’বার ভিয়েনার অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস-এ প্রবেশিকা পরীক্ষায় ফেল। অ্যাডলফ হিটলার নামে কোনও শিল্পীকে চেনা হত না। জীবনের চিত্রনাট্য নিখুঁত নয়। কারণ জীবন নিখুঁত নয়। উন্মত্ততার সাময়িক ভাঁটা। পেশাদারিত্বের মধ্যে হট চক্লেট। পরম যত্নে মার্শমেলো মিশিয়ে দেওয়াটা পৃথিবীর সকল পেশাদারিত্ব। সকল নিয়ম, সকল বিধিনিষেধের বাইরে। ওটুকুই জীবন। উদয়ানাচার্যের কথায় সুখখদ্যোতিক। দারুণ দুঃখ দুর্দিন। দুর্দিন শব্দের সংস্কৃতে মানে হল মেঘাচ্ছন্ন দিন। ঘন কালো মেঘাচ্ছন্ন দিনের পর সন্ধ্যার মৃদু আলো। মেঘাচ্ছন্ন দিনে সামান্য সুখখদ্যোতিক। এই হচ্ছে জীবন।
বাঁচাতে চাওয়ার নেপথ্যে কী? পৃথিবীজোড়া কোটি কোটি টাকার লেনদেন-ব্যবসা। তা তো আর থামবে না। থামবে না বুলিং। থামানো যাবে না বন্দুকের উৎপাদন। এখনও বোধহয় থামানো যেতে পারে, ওই বন্দুক থেকে গুলি বেরিয়ে যাওয়াটা। কারণ মানুষ পারে, এখনও পারে। নীরবতার মাঝে বৃষ্টির শব্দটা বেশি করে শোনা যায়। কাজ নিয়ে তার হতাশার কথা। অস্বচ্ছ কাচের বাইরে দিয়ে তাঁর অস্বচ্ছ প্রস্থান। ‘ইট ডাজ্ন্ট সিম লাইক আ প্রপার গুডবাই।’ বৃষ্টির শব্দ শুনলেও ঘরের ডানদিকের জানলা দিয়ে রোদও দেখা যায়। রোদ আর বৃষ্টি একসঙ্গে। জীবনের মতোই। মানুষ যেমন দুঃখের সপাট ছোবলে অপর কোনও মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার ছিনিয়ে নিতে পারে, তেমনই মানুষ এখনও দুঃখের প্রাবল্যে নিজের উদ্যত ইন্দ্রিয় আর শরীরকে নামিয়ে আনতে পারে নতমুখে। ‘ভুলে যেও না কত খারাপ, কত মারাত্মক, কত নীচ ওই প্রথম আঘাত, সেই দুঃসহ স্মৃতির তেজে দ্বিতীয় আঘাতকে প্রতিরোধ করো। তা সে অপর পক্ষ থেকেই আসুক অথবা তোমার নিজের বিক্ষুব্ধ জিঘাংসা থেকেই আসুক। এই সংযমনকেই মানুষের নৈতিক উৎকর্ষ বলে নির্ণয় করেছে মহাভারত-এর হংসগীতা। ‘যখন কেউ অভিশাপ দেয়, তাকে ফিরে অভিশাপ দিই না। দিতে ইচ্ছে হয়, কিন্তু ইচ্ছে দমন করি। এই দম-ই হল অমৃতের দ্বার। এটা জানি। গোপন বেদ-ব্রহ্ম বলছি। মানুষই একমাত্র এই পেটের বা উপস্থের লোভের বেগ, বাক্যবাণের বেগ, প্রতিহিংসার বেগ, ক্রোধের বেগ দমন করে উল্টো দিকে বওয়াতে পারে।’
দুনিয়াজোড়া আপাত ফান-এর মহাসাগরে একমাত্র শুদ্ধ দুঃখবোধ নিজেদের মতো করে ঠিক রাখতে পারে, পারবে। সেই দুঃখবোধ হয়ে উঠতে পারে আমাদের একমাত্র একান্ত প্রতিরোধ। আঘাত তৈরি না করলে স্টিমুলাসের গ্রহণ হয় না। ইন্দ্রিয়ের স্বভাব হচ্ছে, যদি গ্রহণ করতে হয়, একটুখানি ফ্রিকশন ছাড়া সে গ্রহণ করতে পারে না। ফ্রিকশনলেস যেমন বডি হয় না, ঠিক সেরকম ইন্দ্রিয়ের দ্বারা ফ্রিকশনলেস রিসিভিং হয় না। অতএব দুঃখমেবসর্বং বিকেকিনাম্। তাই ‘অ্যাডোলেসেন্স’-এর দুঃখের ঝাপটে খানিকটা সজীব লাগে নিজেকে। তখন গানের কথার মানে বোঝা যায়। ছেলের হাতে খুন হয়ে যাওয়া সহপাঠিনীর স্মৃতিতে ফুল রেখে যান যে বাবা, তাকে তখন চিনতে পারা যায় কেবলমাত্র গানে গান। আমরা আসলে ক্ষুদ্রের চেয়েও ক্ষুদ্র। আমরা যেন মনে রাখি, আমরা সকলেই কোনও না কোনওভাবে মৃত তারার সন্তান।
আগুনে পোড়া ধূসর শহর উধাও। শহরে দমকা হওয়া। বাতাসে উড়ছে ওড়না। অষ্টাদশী এলোচুল। হল থেকে বেরিয়ে আসছে ঘাসফুল হাসি। সূর্যমুখী আলো। গুঁড়ো বৃষ্টির আহ্লাদে ছলকে উঠছে টুকরো টুকরো জীবন। দিনযাপনের ক্লেদ মুছে তীব্র হচ্ছে বেঁচে থাকার আর্তি। ঝেঁপে বৃষ্টি। তীব্রতার ঘষায় দৃশ্যের আলপনা। গরমিলের ঐকিক নিয়ম। বুকে জড়িয়ে নেয় শুধুই শৃঙ্গজয়ের আনন্দ। সমাজমাধ্যমে অনুরাগীদের ভিড়। অনুসরণকারীদের উল্লাস। ঝকঝকে সেলুলয়েডের হাতছানি। জীবন মুঠোয় করে চাবুক মারা অশ্বারোহী মাদকতা। গভীর অন্ধকারে হিসহিস ফণা তোলে সন্দেহ। প্রেম মুহূর্তে প্রদাহ। সেনসেক্স পতনের মতো ওলটপালট হিসেব। ছোটবেলার টিকিট কেটে ফিরতে চাওয়া ভিন্ন, জীবন গতিহীন। অতীত তত দিনে আরও বিষাক্ত। জীবন খাদের কিনারে। ঠিক তখনই আবির্ভাব মৃত্যুঞ্জয়ের। আবির্ভাব কি শুধুই মৃত্যুর উপভোগ্যতা প্রশিক্ষণে? আলো-আঁধারিতে জীবনের ঝোড়ো ইনিংস। গ্যালারিতে প্রশ্নের ওভার বাউন্ডারি। ফেসবুক, ইনস্টা, রিলসে ঘেরা? মাঝরাতে ডুকরে ওঠা এমএমএস-আতঙ্ক? ভিউজের এগিয়ে যাওয়া, পিছিয়ে পড়া? প্রশ্নের বিপরীতে ভেসে থাকে দিনান্তের মায়া। এক আকাশ নীল রং মাথায় নিয়ে জোয়ারের জলে ভেসে চলা। চোখের কোণ বেয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ার মতোই সুন্দর। বডি কাউন্ট আর রাইট-লেফট সোয়াইপে আটকে থাকা হাড়ে-মজ্জায় ইন্টারনেটের হাতছানি। নেশাগ্রস্থ, মাতোয়ারা বন্দি জীবন।