১১ এপ্রিল চিপকে কেকেআরের পরবর্তী প্রতিপক্ষ চেন্নাই সুপার কিংস। পাঁচ ম্যাচে ৩টি হার। শেষ ম্যাচে হার ৪ রানে। মরিয়া চেষ্টা করেও জেতাতে পারেননি রিঙ্কু সিংরা। হতাশ কেকেআর শিবির, বিমর্ষও। আশার বাণী শোনালেন খোদ নাইট কর্ণধার শাহরুখ খান। লখনউয়ের বিরুদ্ধে হারের পর নাইট মালিক বার্তা পাঠিয়েছেন ক্রিকেটারদের। ড্রেসিংরুমে সেই বার্তা পড়ে শুনিয়েছেন খোদ সিইও ভেঙ্কি মাইসোর। বার্তায় শাহরুখ বলেন, “এই হারটা আরও বেশি দুঃখ দিচ্ছে। কারণ, আমরা জয়ের খুব কাছে চলে গিয়েছিলাম। তবে এই ম্যাচের অনেক কিছু ইতিবাচক দিকও রয়েছে। আমরা শেষপর্যন্ত লড়ে গিয়েছিলাম। আর বড় রান করেছি। অনেক সময় সেরাটা দিয়েও সাফল্য আসে না। এটা সেরকমই একটা দিন ছিল। এই হারটা সবাই ভুলে যাও। মনে রেখো জয়ের থেকে আমরা শুধু একটা বল, একটা হিট দূরে ছিলাম। আমরা শেষপর্যন্ত লড়াই করে গিয়েছি। তাই সব ভুলে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমরা ভালো খেলছি। পরের ম্যাচের জন্য।”
অষ্টাদশ আইপিএলের প্রথম থেকে ইডেন বাইশ গজ নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। ইডেন পিচ নিয়ে কেকেআর মোটেও তুষ্ট নয়। আরসিবি-র বিরুদ্ধে উদ্বোধনী ম্যাচ হার। পিচের ‘টার্ন’ নিয়ে হাহাকার। ইডেন কিউরেটর সুজন মুখোপাধ্যায় স্পষ্ট বলে দিয়েছিলেন, ইডেনের পিচ চরিত্র বদলানো সম্ভব নয়। সাইমন ডুল, হর্ষ ভোগলেরা ইডেন কিউরেটরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় প্রতিবাদস্বরূপ বিসিসিআইকে চিঠিও দিয়েছে সিএবি। আরসিবি-র পর ইডেনে সানরাইজার্স ম্যাচ কেকেআর জেতে। ফের লখনউ সুপার জায়ান্টসের বিরুদ্ধে কেকেআর ৪ রানে হার। কেকেআর অধিনায়ক অজিঙ্ক রাহানে সাংবাদিক সম্মেলনে ইডেন পিচ নিয়ে, ইডেন কিউরেটর সুজন মুখোপাধ্যায়কে বলেন, পিচ নিয়ে, হোম অ্যাডভান্টেজ নিয়ে তিনি মুখ খুলবেন না। কারণ, তিনি বলতে শুরু করলে অশান্তি বেঁধে যাবে! তবে নির্দ্বিধায় ইডেন কিউরটেরকে ‘প্রচার প্রিয়’ বলতে তিনি দু’বার ভাবেননি! ‘‘আমাদের কিউরটের প্রচার পেতে পছন্দও করেন!’’
খেলা শেষে তখন মাঠে সিএবি কর্তাদের সঙ্গে কেকেআর কর্তাদের মাঠে কথাবার্তা। কেকেআরের এক উচ্চপদস্থ কর্তা সিএবির এক বর্তমান পদাধিকারীকে ‘অভিনন্দন’ জানান! সেই পদাধিকারী প্রথমে বুঝতে না পেরে নাইট কর্তার কাছে জানতে চান, অভিনন্দন জানানোর কারণ? উত্তরে উচ্চপদস্থ কেকেআর কর্তা বলেন, “আপনারাই তো জিতলেন ম্যাচটা! তাই অভিনন্দন জানাচ্ছি!” সিএবি পদাধিকারীর দাবি, তাঁকে কেকেআর কর্তা তির্যকভাবে বলেন, ম্যাচ সেরার পুরস্কার ইডেন কিউরেটরকে দিয়ে যেতে! ভারতীয় ক্রিকেট সার্কিটের সঙ্গে থাকা এক বঙ্গ ক্রিকেটার উত্তেজিতভাবে বলেন, “ওরা একবারও বলছে না, ভুল ব্যাটিং অর্ডার নির্বাচনে লখনউয়ের বিরুদ্ধে হারল। এর ফলে প্লেয়াররা দিব্যি ছাড় পেয়ে যাচ্ছে। ওদের ব্যর্থতার দিকে আঙুল তোলার তো কেউ নেই। প্লেয়াররাও জেনে যাচ্ছে, ইডেনে ম্যাচ হেরে গেলে পিচকে কাঠগড়ায় তুলে দিলেই চলবে।” প্রাক্তন বাংলা ক্রিকেটার বলেন, বাংলার কাউকে টিমের সঙ্গে রাখে না কেকেআর। না প্লেয়ার, না সাপোর্ট স্টাফ। বছরের দু’মাস আইপিএলের সময়টুকু বাদ দিয়ে দেখতে গেলে কোনও যোগাযোগই থাকে না বাংলা ক্রিকেটের সঙ্গে কেকেআরের।
ইডেনের পিচ। ইডেনের মাঠের মাপ। লখনউ ম্যাচে ইডেনের মাপ একদিকে ৫৭ মিটার, আর একদিকে ৭০ মিটার। কেকেআর অধিনায়কও টসের সময় সেই ইডেনের ‘ডায়মেনশন’ নিয়ে বলেন। ইডেন কিউরেটর সুজন বলেন, প্রথমত যে মাপ নিয়ে প্রচার চলছে, সেটা সম্পূর্ণ ভুল। ছোট দিকটা ছিল ৬৫ মিটার। বড় দিকটা ৭২ মিটার। লম্বায় দু’টোই সত্তর। যে ক’টা ছক্কা গতকাল হয়েছে, তার প্রত্যেকটা কত দূর গিয়েছে, হিসেব নিয়ে রেখেছেন! কিউরেটর বললেন, একটা-দু’টো ছয় বাদ দিলে প্রতিটা ছয় নাকি পঁচাত্তর মিটার পার করেছে! পিচ নিয়ে ক্ষোভে অজিঙ্ক রাহানে। কেকেআর অধিনায়ক আইপিএলের গভর্নিং কাউন্সিলের কাছে অভিযোগ জানাবেন। অথচদলের সহ-অধিনায়ক বেঙ্কটেশ আয়ার জানালেন, চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে সব পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। কলকাতা নাইট রাইডার্সের অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়কের মধ্যে মতের অমিল? শুক্রে অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনির চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে চেন্নাইয়ের মাঠে খেলতে নামবে কলকাতা। বেঙ্কটেশ বলেন কেকেআরের প্রধান শক্তি স্পিন বোলিং। চেন্নাইয়ের মাঠে স্পিন ভাল হয়। বরুণ চক্রবর্তী নিজের ঘরের মাঠে খেলবেন। বেঙ্কটেশ বলেন, “আমরা কখনও পরিবেশ দেখি না। আমরা নিজেদের প্রস্তুতির দিকে নজর দিই। সব পরিবেশে যাতে ভাল খেলতে পারি সেই চেষ্টা করি। পেশাদার ক্রিকেটার হিসাবে আমাদের সব সময় তৈরি থাকা উচিত। আইপিএলের মতো লম্বা প্রতিযোগিতা জিততে বা চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে সব রকম পরিবেশে ভাল খেলতে হবে। সব রকম পরিবেশের জন্য সেরা একাদশ থাকতে হবে। নইলে হবে না। আমি কত রান করছি সেটা বড় কথা নয়। আমি কোন মানসিকতা নিয়ে খেলছি সেটা বড় কথা। আমার মাথায় দলের জয় ছাড়া কিছু থাকে না। আগের ম্যাচে আমরা মাত্র চার রানে হেরেছি। তার মানে আমরাও লড়াই করেছি। লড়াইটাই আসল। খেলায় হার-জিত আছেই। কিন্তু আগের ম্যাচে দলের পারফরম্যান্সে আমি খুশি।” ২৩ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকার বেঙ্কটেশকে কেকেআর অধিনায়ক করা উঠতে বেঙ্কটেশ অধিনায়ক হতে রাজি ছিলেন। দেড় কোটি টাকায় কেনা রাহানেকে অধিনায়ক করে কলকাতাকে। বেঙ্কটেশ সহ-অধিনায়ক। সিদ্ধান্ত মানতে পারেননি বেঙ্কটেশ? অধিনায়কের সঙ্গে সুর মিলছে না বা অশান্তির আঁচ নাইট শিবিরে।
ঘরের মাঠে কেকেআরের পরবর্তী ম্যাচ আগামী ২১ এপ্রিল। কেমন হবে, সেই ম্যাচের পিচ? কেকেআরের চাহিদা মতো টার্ন কি থাকবে এবার ইডেন পিচে? সিএবি-র কেউ কেউ বলেন, ইডেনে রাইট অ্যাঙ্গেল টার্ন অসম্ভব। তাতে পিচের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। আগামী বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইডেনে খেলা রয়েছে। পিচ নিয়ে আইসিসি দেখবে? তবে দেখা হবে, পিচে জল-টল দেওয়া কমিয়ে, ‘রোল’ কম করে, যতটা সম্ভব টার্ন করা যায়। কেকেআর ১১ এপ্রিল চিপকে তাদের পরবর্তী প্রতিপক্ষ চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে খেলবে।