Friday, April 18, 2025
spot_imgspot_img

Top 5 This Week

spot_img

Related Posts

ভারতে ২৬/১১-র চক্রী তাহাউর রানা! কুখ্যাত জঙ্গির জন্য দিল্লি ও মুম্বইয়ের কয়েকটি জেলে প্রস্তুতি

কুখ্যাত জঙ্গি। ২৬/১১ মুম্বই হামলায় অন্যতম চক্রী তাহাউর রানা। কয়েক সপ্তাহ এনআইএ-র হেফাজতে রাখা হবে ২৬/১১-র মূলচক্রী তাহাউর রানাকে। মার্কিন বিচার বিভাগের নথি অনুযায়ী, লস্কর-ই-তৈয়বাকে আর্থিক সহায়তা এবং ডেনমার্কের একটি সংবাদপত্রে হামলার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ২০০৯ সালে তাহাউর রানা ও ডেভিড হেডলিকে গ্রেফতার করে এফবিআই। ২০১৯ সালে ভারত সরকার রানার প্রত্যর্পণ চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একটি কূটনৈতিক নোট হস্তান্তর করে। মার্কিন আদালতের সুপারিশ মেনে দিল্লি ও মুম্বইয়ের দুটি জেলে গোপনে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা। কুখ্যাত জঙ্গির জন্য দিল্লি ও মুম্বইয়ের কয়েকটি জেলে প্রস্তুতি। ভারতে আনার পর প্রথম কয়েক সপ্তাহ রানাকে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার এনআইএ হেফাজতে রাখা হবে। রিপোর্টে দাবি, তাহাউর রানাকে বিশেষ বিমানে করে ভারতে নিয়ে আসা। পুরো অভিযানে কড়া নজরদারিতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ আধিকারিকরা।

পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক রানা লস্কর-ই-তৈয়বার সক্রিয় সদস্য। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত হলেও বর্তমানে কানাডার নাগরিক। এত দিন লস অ্যাঞ্জেলসের বন্দিশালায় আটক। অভিযোগ, পাক বংশোদ্ভূত আর এক সন্ত্রাসবাদী ডেভিড কোলম্যান হেডলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। হেডলির সঙ্গে মিলেই ২৬/১১-র মুম্বই হামলার বিষয়টি ছক কষে রানা। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন লশকর-এ-ত্যায়বার সঙ্গেও যোগ ছিল। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ডেভিড কোলম্যান হেডলি ওরফে দাউদ গিলানির জন্য পাসপোর্ট জোগাড় করে। ২০০৮ সালের নভেম্বরে লস্কর ও পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের সহায়তায় ভারতে হামলাকারীদের চিহ্নিত করেছিল হেডলি। তদন্তকারী সংস্থাগুলির সূত্রের খবর, হামলার পরিকল্পনা ছাড়াও ২০০৮ সালের ১১ নভেম্বর দুবাই হয়ে মুম্বই ঢোকে রানা। এরপর হোটেল রেনেসাঁ পাওয়াই এবং আক্রমণ সম্পর্কিত ব্যবস্থা পর্যালোচনা। ২৬ নভেম্বরে হামলার ঘটনা।

ভারতে প্রত্যর্পণের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে সম্প্রতি আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিলেন রানা। আবেদন নাকচ করে আদালত। ৬৪ বছরের রানা অসুস্থতার অজুহাত দিয়ে মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে ভারতে প্রত্যর্পণের নির্দেশ পুনর্বিবেচনার জন্য আর্জি জানালেও সে দেশের শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টসের বেঞ্চে গত ৪ এপ্রিল রানার আবেদন বিবেচনার জন্য পাঠানো হলেও আবেদন নাকচ। আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টে নিম্ন আদালতের প্রত্যর্পণের নির্দেশের বিরুদ্ধে আবেদন রানা লেখা, ‘‘আমি পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এবং মুসলিম। তাই ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আমার উপর অত্যাচার চালাবেন বলে আশঙ্কা করছি।’’ ৭ মার্চ মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের নবম সার্কিটের বিচারপতি এলেনা কাজান সেই আবেদন খারিজ করে দেন।

মুম্বই হামলার অন্যতম এই চক্রীকে দীর্ঘ দিন ধরে এ দেশে ফেরানোর দাবি নয়াদিল্লির। চলতি বছরের শুরুতে রানার প্রত্যর্পণে সায় দেয় আমেরিকার একটি আদালত। ফেব্রুয়ারি মাসে রানাকে ভারতে প্রত্যর্পণের বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “বিশ্বের অন্যতম শত্রু, যিনি ২০০৮ সালে মুম্বই হামলায় জড়িত, তাঁকে বিচারের সম্মুখীন হওয়ার জন্য ভারতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও।

২৬/১১ মুম্বাই সন্ত্রাসবাদী হামলার অভিযুক্ত তাহাউর রানার প্রত্যর্পণ বিরোধী জরুরি আবেদন খারিজ করে দেয় মার্কিন আদালত। ভারত ও আমেরিকা দুই দেশের মধ্যে ১৯৯৭ সালে প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ভারতের অনুরোধে আমেরিকার প্রশাসন রানাকে গ্রেফতার করে। ২০১১ সালে শিকাগোর আদালতে সন্ত্রাসবাদী মামলায় দোষী সাব্যস্ত রানার বিরুদ্ধে লস্কর-ই-তইবা জঙ্গিদের সাহায্য করার অভিযোগ ছিল। তাহাউর রানার বন্ধু পাকিস্তানি-আমেরিকান নাগরিক ডেভিড কোলম্যান হেডলি। ২০২৩ সালের মে মাসে একটি মার্কিন আদালত পাক বংশোদ্ভূত রানাকে ভারতে প্রত্যর্পণের পক্ষে রায়ের বিরুদ্ধে রানা আবেদন করেছিল। রানার প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া থমকে গেলেও এরপর মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট রানার বিপক্ষে রায় দেয় সম্প্রতি।

মার্কিন বিচার বিভাগের নথি অনুযায়ী, লস্কর-ই-তৈয়বাকে আর্থিক সহায়তা এবং ডেনমার্কে হামলার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ২০০৯ সালে তাহাউর রানা ও ডেভিড হেডলিকে গ্রেফতার করে এফবিআই। ২০১৯ সালে ভারত সরকার রানার প্রত্যর্পণ চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একটি কূটনৈতিক নোট হস্তান্তর। ২০২০ সালের জুনে ভারত তাকে অস্থায়ীভাবে গ্রেফতারের জন্য একটি আনুষ্ঠানিক আবেদন দায়ের করে, যা তার প্রত্যর্পণের পথ প্রশস্ত করে। গত ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রানাকে ভারতে প্রত্যর্পণের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ও ভারতে গিয়ে বিচারের মুখোমুখি হবে। রানার প্রত্যর্পণকে ভারতের জন্য একটি বড় কূটনৈতিক ও আইনি বিজয় হিসাবে দেখা হচ্ছে। ২০১৯ সাল থেকে এর জন্য লাগাতার প্রচেষ্টা চালাচ্ছিল মোদী সরকার।

২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বই হামলায় ১৭৪ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং শতাধিক আহত হন। পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা এই হামলা চালিয়েছিল। রানার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে তার সহযোগী ডেভিড কোলম্যান হেডলিকে মুম্বই হামলার পরিকল্পনায় সাহায্য করেছিলেন। রানার ইমিগ্রেশন কনসালটেন্সি ফার্মের কর্মী সেজে মুম্বইয়ের রেকি করেছিল হেডলি। হেডলির সাক্ষ্য অনুযায়ী, ২০০৬ সালের গ্রীষ্মে ভারতে তার গুপ্তচরবৃত্তির কার্যকলাপ লুকোতে সে এবং দুই লস্কর জঙ্গি মুম্বাইয়ে একটি অভিবাসন অফিস খোলার পরিকল্পনা করেছিল। হেডলি এই তথ্য রানাকে দিয়েছিল। রানা তার শিকাগো-ভিত্তিক সংস্থা ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেসের মাধ্যমে হেডলিকে ভারতে একটি অফিস খোলার অনুমতি দেয় যাতে হেডলি সহজেই মুম্বই ভ্রমণ করতে পারে। ২০০৭ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে হেডলি পাঁচবার ভারতে ভ্রমণ করেছিল এবং তাদের সবকটিতেই সে ২৬/১১ হামলার জন্য রেকি করে এবং পাঁচ বছরের ভিসা ছিল, তা জোগাড় করতে রানা তাকে সাহায্য করেছিল। মুম্বই পুলিশ তাদের দু’জনের মধ্যে ই-মেল কথোপকথনও আইএসআইয়ের মেজর ইকবালের বিষয়ে আলোচনা নিশ্চিত করে।

ভারতে ফেরানো হচ্ছে ২৬/১১ মুম্বই হামলায় অন্যতম চক্রী তাহাউর হুসেন রানাকে। বুধ সন্ধ্যে কিংবা গভীর রাতে বিশেষ বিমানে তাকে নিয়ে ফিরবে এনআইএ-র তদন্তকারী দল। কুখ্যাত জঙ্গির জন্য প্রস্তুত দিল্লি ও মুম্বইয়ের দুটি জেল। কারাগারগুলোয় আঁটসাঁট নিরাপত্তা। রানার প্রত্যর্পণের বিষয়টির তত্ত্বাবধানে রয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। পাশাপাশি রানার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা সেরে ফেলেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়ার দায়িত্বে রয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ডোভাল ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের শীর্ষ কর্তারা। এদিকে, রানার জন্য তৈরি রাখা হয়েছে মুম্বই ও দিল্লির দুটি জেলের হাই সিকিউরিটি ওয়ার্ড। নিরাপত্তা দশগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, প্রথমে দিল্লিতে রানাকে জেরা করতে পারে এনআইএ। তিহার জেলে একটি বিশেষ সেল প্রস্তুত করা হয়েছে। সেলের সঙ্গেই থাকছে বাথরুম। মনিটরে সেলে সর্বক্ষণ নজর রাখা হচ্ছে। ভারতে একমাত্র আজমল কাসাবই ২৬/১১ হামলার জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। ২০১২ সালে ফাঁসি হওয়া একমাত্র জীবিত সন্ত্রাসী ছিল কাসাব। বাকিরা সব সন্ত্রাসী সেই হামলাতেই নিহত হয়েছিল। এদিকে ভারতে রানার বিরুদ্ধে ইউএপিএ ও ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। এনআইএ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও অনেক তথ্য উদঘাটন হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles