Thursday, April 17, 2025
spot_imgspot_img

Top 5 This Week

spot_img

Related Posts

কলঙ্কিত স্টেট গেমস?‌ মালদায় চুড়ান্ত অব্যবস্থা! ৭০ লক্ষে গড়মিল?‌ ‘‌স্বরূপ’‌ দাপটেই মূল্যহীন বিওএ নির্বাচিত কর্তাদের মতামত?‌

চলতি রাজ্য স্টেট গেমসে টাকা উড়ছে?‌ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ১০ লক্ষ টাকা খরচ হয় কি করে? রাজ্য সরকারের তরফে ৪৫ লক্ষ। স্টেট ব্যাংকের তরফে ১৫ লক্ষ আর টুরিজম বিভাগ থেকে ১ লক্ষ। সব মিলিয়ে প্রায় ৬১লক্ষ। মালদায় কান পাতলে শোনা যাচ্ছে খরচের পরিমান ৭০ লক্ষ ছুঁই ছুঁই। হিসেবে গরমিলের পাহাড় বলেও গুরুতর অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। বেঙ্গল আলিম্পিকের দুই শীর্ষ কর্তা মালদা ছেড়েছেন বলেও কানাঘুঁষো।

রাজ্য ক্রীড়া সংস্থার অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না। অধিকাংশের প্রশ্ন। কে উনি?‌ হঠাৎ করে রাজ্য ক্রীড়ায় অনুপ্রবেশ। কার অনুপ্রেরণায় সন্তর্পণে অনুপ্রবেশ?‌ ক্রীড়াক্ষেত্র দখলের চেষ্টায় মুখ পুড়ছে নির্বাচিত প্রতিনিধি চন্দন রায়চৌধুরীর মতো নিষ্ঠাবান ক্রীড়া কর্তাদের। চন্দন জহররা নিজেদের জীবনে কিছু লাভের আশায় ক্রীড়াক্ষেত্রে পা রাখেননি। চন্দনরা এসেছেন রাজ্য ক্রীড়াকে স্বেচ্ছা সেবন করতে। নবম স্টেট গেমস-এর উদ্বোধন মঞ্চে চোখ রাখলেই স্পষ্ট দৃশ্য, ঢেকে গেছেন খোদ সভাপতি চন্দনই। এখানেও প্রশ্ন, ‘‌স্বরূপে’‌ আবৃত চন্দন, তাহলে রাজ্য ক্রীড়ার কপালে সাফল্যের তিলক আঁকবেন কে?‌ আবার কী তাহলে রাজ্য ক্রীড়া ও বিওএ-‌র পুণরুজ্জীবনে বাধা?‌ অনেক আশা নিয়ে রাজ্য ক্রীড়া সংস্থাকে নতুন সততার কাজকর্মে নিয়োজিত রাখতে চেয়েছেন সংস্থার প্রকৃত শুভাকাঙ্খীরা। অথচ ‘‌স্বরূপ’‌ মূর্তিতে বিদ্যমান একপ্রকার জোর করে ঢুকে পড়া, বলে অভিযোগ করছেন ক্রাড়ামহলের অধিকাংশ। বিনোদনে চরম বিশ্বাস ‌ঘাতকতা চোখের সামনে ভাসছে বলেও বিস্তর অভিযোগের পাহাড়। একের পর এক অসংখ্য অভিযোগমিশ্রিত প্রশ্নের পাহাড়ে জর্জরিত বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিটি রন্ধ্র। কে, কেন, কবে থেকে এমনকি কোথা থেকে, কিভাবে, কার হস্তক্ষেপে?‌ অসংখ্য প্রশ্নবানের রুক্ষ-‌রুষ্ট পর্বত!‌

ক্রীড়াচিত্র, নবম রাজ্য গেমস। নবম স্টেট গেমস-এর ব্যবস্থাপনা।একাধিক অভিযোগ ওঠা শুরু। খেলোয়াড়দের থাকার জায়গায় অব্যবস্থার অভিযোগ৷ দায় অস্বীকার। খেলোয়াড়দের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা কর্তৃপক্ষের একাংশের৷ স্টেট গেমস্-এ চরম অব্যবস্থার অভিযোগ! ক্ষুব্ধ বেঙ্গল হকি অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক‌। আয়োজকদের সঙ্গে কো-অর্ডিনেশন নিয়ে‌ও প্রশ্ন অধিকাংশের। মালদা জেলায় ২০২৫ এর নবম স্টেট গেমস। নবম স্টেট গেমসের প্রথম দিনেই খেলার ব্যবস্থাপনা নিয়ে অভিযোগ। কোথাও শৌচালয়ে জলের অভাব, কোথাও খেলোয়ারদের থাকার জায়গায় পর্যাপ্ত ম্যাট্রেস না থাকার অভিযোগ। এমনকি খেলার মাঠে মেয়েদের জন্য ড্রেসিংরুম কিংবা শৌচালয় না থাকা নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন বেঙ্গল হকি অ্যাসোসিয়েশনের-সহ সম্পাদক। আয়োজকদের সঙ্গে কো-অর্ডিনেশন নিয়ে‌ও প্রশ্ন তুলেছেন জনৈক কর্তা।

অপাঙ্ক্তেয় সন্ধেয় মালদা জেলা ক্রীড়া সংস্থার ময়দানে উদ্বোধন নবম স্টেট গেমসের। উদ্বোধনের সন্ধ্যাকে অনেকেই ‘‌অপাঙ্ক্তেয়’‌ বলে অভিহিত করার কারণ, উদ্বোধন মঞ্চের ছবিতে স্পষ্ট যে, কালের অমোঘ মেঘ স্বরূপে আবৃত করার চেষ্টায় রত তিলকরাজ চন্দনের সাফল্যের লক্ষ্যে অন্তরায় হতে। উদ্বোধন দিন‌ই বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের মুখ্য উপদেষ্টা অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় আগেভাগে ঝেড়েকেসে বলেই ফেলেছিলেন, “কিছু সমস্যা থাকবেই। খেলার আয়োজন করতে গিয়ে আর‌ও কিছু সমস্যা উঠে আসবে। তা থেকেই শিক্ষা নিয়ে আগামী দিনে সমস্যার সমাধান হবে। মালদা জেলায় অনেক খেলার পরিকাঠামো নেই। তবে আমরা শুরু না করলে এগোতে পারব না। আমাদের শুরু করতেই হবে।”

স্টেট গেমসে চরম অব্যবস্থার অভিযোগ। ক্ষুব্ধ বেঙ্গল হকি অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক‌। খেলা শুরু হ‌ওয়ার আগেই নানা অভিযোগ। মালদা শহরের বার্লো বালিকা বিদ্যালয়ে হকি ও তাইকোন্ডের খেলোয়ারদের অস্থায়ী আবাসস্থল নিয়েও ক্ষোভ। অভিযোগ, আগের দিন রাত থেকে শৌচালয়ে জলের ব্যবস্থা নেই। সকালে খেলার আগে গ্লাসে করে জল নিয়ে শৌচালয়ে যেতে হয়েছে খেলোয়ারদের। মেদিনীপুর দলকে নাকি মশার কামড় খেয়ে বাসে রাত কাটাতে হয়েছে! বেশ কিছু মাঠে খেলা চলাকালীন অসুস্থ খেলোয়ারদের মাঠ থেকে আনার জন্য স্ট্রেচারের ব্যবস্থাও ছিল না। মেডিক্যালে পেইন কিলার স্প্রে, জেল কিংবা ওআরএস-ও না থাকার অভিযোগ৷

ক্ষোভ উগড়ে বেঙ্গল হকি অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মহম্মদ খালিদ হোসেন জানান, “এত বড়ো খেলার আয়োজনে প্রতি মুহূর্তে সমন্বয়ের অভাব টের পাওয়া যাচ্ছে। খেলোয়াড়দের যেখানে রাখা হয়েছে, সেখানে নানা সমস্যা। রাত থেকে অনেক অভিযোগ এসেছে, আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কিন্তু কোনও ফল মেলেনি। মাঠে খেলোয়াড়দের রোদের মধ্যে বসে থাকতে হচ্ছে। খেলতে গিয়ে একটি মেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল। কিন্তু ওই খেলোয়াড়কে তুলে আনার জন্য কোনও স্ট্রেচারের ব্যবস্থা নেই। মাঠে চেঞ্জিং রুম নেই। বায়ো টয়লেট করার কথা থাকলেও তা হয়নি। অনেক বলার পর গ্যালারির পেছনে একটা গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। শুরুর আগের দিন, রাত দুটো নাগাদ মেদিনীপুরের টিম মালদায় এসে পৌঁছয়৷ তাঁদের দেরিতে পৌঁছনোর কথা আগেই কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল৷ রাতের খাবারের ব্যবস্থা না করা গেলে রাতে ঘুমোনোর ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা জানানো হয়েছিল৷ কিন্তু, সেসব কিছুই হয়নি৷ মশার কামড়ে বাসেই রাত কাটাতে হয়েছে ওই খেলোয়াড়দের৷ সকাল ১১টায় ওই খেলোয়াড়দের আবার মাঠে নামতে হয়েছে৷ এভাবে কি খেলোয়াড়রা খেলতে পারেন?”

আলিপুরদুয়ার মহিলা হকি দলের কোচ মিলন বর্মণ বলেন, “বার্লো গার্লস হাইস্কুলে আমাদের থাকতে দেওয়া হয়েছে। সকাল সাতটায় আমাদের মেয়েদের খেলা ছিল। সকালে দেখি মেয়েরা গ্লাসে করে জল নিয়ে যাচ্ছে। প্রথমে ভেবেছিলাম, চা কিংবা ঠান্ডা পানীয় খাওয়ার জন্য মেয়েরা জল নিচ্ছে৷ পরে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারি, মেয়েরা ওভাবে শৌচালয়ে জল নিয়ে যাচ্ছে। ভোর পাঁচটা নাগাদ কো-অর্ডিনেটরকে ফোন করি। উনি বিষয়টি দেখে নেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু, তারপরেও সমস্যা মেটেনি। মালদার দলেরও একই সমস্যা হয়েছিল। ওয়াকওভার এড়াতে ওনারা আমাদের সময় মতো টিম না নিয়ে যেতে অনুরোধ করেছেন। এক কথায় আমরা চরম অব্যবস্থার শিকার হয়েছি।”স্টেট গেমসের প্রতি দিনই ব্যবস্থাপনা নিয়ে অভিযোগ৷ পরে অভিযোগের ভিত্তিতে অনেকটা তৎপর আয়োজকরা ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমে পড়েছিলেন৷ নড়েচড়ে বসেন আয়োজকরা৷ ইংরেজবাজারের নরহাট্টা গোপেশ্বর সাটিয়ার হাইস্কুলে কবাডি প্রতিযোগিতা৷ সেখানেই খো খো প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয়। ইংরেজবাজারের নরহাট্টা গোপেশ্বর সাটিয়ার হাই স্কুলেই রাখা হয়েছিল খেলোয়াড়, সাপোর্টিং স্টাফ-সহ অফিসিয়ালদের৷ সেখানেও অব্যবস্থার অভিযোগ৷

শিলিগুড়ির কবাডি দলের কোচ শিবু রায়ের কথায়, “আমাদের নরহাট্টা হাইস্কুলে রাখা হলেও আমাদের বেশ কিছু সমস্যা৷ বাথরুমে জল ছিল না, পুরো নোংরা৷ খেলোয়াড়দের দেওয়া খাবারও অপর্যাপ্ত৷ শৌচালয় নিয়ে প্রবল সমস্যা৷ আমাদের নদীর ধারে, স্নান-শৌচকর্ম করতে যেতে হয়েছে৷ এখানে যাঁরা দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁদের জানানোর সত্ত্বেও ওঁরা শুধু বলছেন, ঠিক করে দিচ্ছি, হয়ে যাবে৷ কিন্তু, সমস্যা একই ছিল৷ এর আগে একাধিকবার স্টেট গেমসে দল নিয়ে গিয়েছি৷ কিন্তু, এমন সমস্যায় পড়তে হয়নি৷”

পশ্চিমবঙ্গ কবাডি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সুরঞ্জন ভট্টাচার্যের অভিযোগ, “আমরা কবাডি অ্যাসোসিয়েশন এই টুর্নামেন্ট কনডাক্ট করেছি৷ খেলাটা কিন্তু বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে৷ সংবাদমাধ্যমের থেকে শৌচালয়ের অবস্থার ছবি দেখে স্কুল কর্তৃপক্ষ, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে কথা বলে শৌচালয় পরিষ্কার করা, জলের ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছিলাম৷” মালদায় আয়োজিত স্টেস গেমসে অপরিষ্কার খেলোয়াড়দের শৌচালয়। পরে অবশ্য শৌচালয় পরিষ্কার করে, জলের ব্যবস্থা করা হয়৷ মালদা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর কথায়, “মাত্র ১৬ দিনের মধ্যে সমস্ত ব্যবস্থাপনা৷ পরিকাঠামো যাচাইয়ের সময় সমস্ত কিছু সঠিক থাকলেও পরে সমস্যা দেখা দেয়৷”

কর্তারাই এবার দ্বিধাবিভক্ত। সবকিছু প্রতিকুল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ। চলতি রাজ্য স্টেট গেমসে টাকা উড়ছে?‌ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ১০ লক্ষ টাকা খরচ হয় কি করে? রাজ্য সরকারের তরফে ৪৫ লক্ষ। স্টেট ব্যাংকের তরফে ১৫ লক্ষ আর টুরিজম বিভাগ থেকে ১ লক্ষ। সব মিলিয়ে প্রায় ৬১লক্ষ। মালদায় কান পাতলে শোনা যাচ্ছে খরচের পরিমান ৭০ লক্ষ ছুঁই ছুঁই। হিসেবে গরমিলের পাহাড় বলেও গুরুতর অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। বেঙ্গল আলিম্পিকের দুই শীর্ষ কর্তা মালদা ছেড়েছেন বলেও কানাঘুঁষো। অধিকাংশের দাবি, বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের শুরুর দিকটা ভালোই হয়েছিল। যত দিন যাচ্ছে ছবিটা বদলাচ্ছে বলে অভিযোগ। কে, কেন, কবে থেকে এমনকি কোথা থেকে, কিভাবে, কার হস্তক্ষেপে?‌ অসংখ্য প্রশ্নবানের রুক্ষ-‌রুষ্ট পর্বতমালা!‌

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles