Wednesday, April 16, 2025
spot_imgspot_img

Top 5 This Week

spot_img

Related Posts

মমতা জেলে যাবেন ব্যাগ গোছান!‌ কিছুতেই আশ্বস্ত হতে পারছেন না চাকরিহারা শিক্ষকরা?‌

এতো ঠিক চোর মচায়ে শোরের মতো। ঠিক যেভাবে অভয়াকান্ডে নিজে তথ্য প্রমাণ লোপাট করে উই ওয়ান্ট জাস্টিসের ব্যানার নিয়ে হেঁটেছিলেন এভাবেই মুভমেন্টে নামাতে চাইছেন। জেলে যাবেন ব্যাগ গোছান। রব তুললেন শুভেন্দু অধিকারী। রাজ্যে চাকরি গিয়েছে প্রায় ২৬ হাজার। রাজ্য জুড়ে শোরগোল। এই ইস্যুতে বিজেপির মিটিং মিছিল। কালীঘাট চলো। পালটা মিছিলের ডাক তৃণমূলের। ৯ এপ্রিল বিকেল ৩টে থেকে কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত চাকরি খাওয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে ছাত্র যুবদের মিছিল। তৃণমূলের মিছিলকে ঘিরে তীব্র কটাক্ষ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‌মুখ্যমন্ত্রী ৭ হাজার লোককে কার্ড দিয়েছেন। ১৯ হাজারকে অযোগ্য বলছেন। ৯ তারিখে তৃণমূলের যুব শাখা কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করবে। এতো ঠিক চোর মচায়ে শোরের মতো। ঠিক যেভাবে অভয়াকান্ডে নিজে তথ্য প্রমাণ লোপাট করে উই ওয়ান্ট জাস্টিসের ব্যানার নিয়ে হেঁটেছিলেন এভাবেই মুভমেন্টে নামাতে চাইছেন। বাংলা সব দেখছে। শুভেন্দু বলেন, মমতা সব জানেন। যেদিন সুপ্রিম কোর্টে স্টে দিল সেদিন তিনি ভিকট্রি দেখিয়েছিলেন। অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করেছেন। জেলে যাবেন ব্যাগ গোছান।’‌ ২৬ হাজারের চাকরি গিয়েছে তারপরে কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে শাসকদল, আর সেই ড্যামেজ কন্ট্রোলে ফের রাস্তায় নামার উদ্যোগ নিচ্ছে তৃণমূল, এসব দেখে অনেকেরই মনে পড়ে যাচ্ছে সেই আরজিকর কাণ্ডের কথা। সেই সময়ও উত্তাল হয়েছিল বাংলা। রাজনীতির ব্যানার ছেড়ে সেই সময় রাস্তায় নেমেছিলেন আমজনতা। আর সেই সময় ঠিক একই ভাবে ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমেছিলেন তৃণমূলের নেতারা। যখন দেশ জুড়ে উঠেছিল নিন্দার ঝড় তখন দেখা গিয়েছিল তৃণমূলও উই ওয়ান্ট জাস্টিস লিখে মিছিল বের করছে। এবারও একেবারে সেই একই ফর্মুলা।তৃণমূলের এমপি সৌগত রায় সভামঞ্চে বসেই ধূমপান করছেন। সভামঞ্চে বসে এই নেশা করার ছবি ভাইরাল। সভামঞ্চে সৌগতর পাশে একাধিক তৃণমূল নেতা। একেবারে মঞ্চে বসে একের পর এক সুখটান দিচ্ছেন। তৃণমূলের বর্ষীয়ান এমপি। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা। আচরণ দেখে অনেকে শিউরে উঠেছেন। বিজেপি নেতা এন রামচন্দর রাও এক্স হ্যান্ডেলে পোস্টে লেখেন, ‘‌টিএমসি এমপি সৌগত রায় নির্লজ্জের মতো ধূমপান করছেন মঞ্চে, ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলের এটাই পরিষ্কার প্রতিফলন। দায়িত্ববোধ বলে কিছু নেই। এটাই তথাকথিত ওয়েস্ট বেঙ্গল মডেল। এটা সারা দেশকে অনুসরণ করতে বলে? অসম্মানের।’‌

২০১৬ সালের এসএসসি’‌র নিয়োগ প্যানেল ‘অসাংবিধানিক’, ‘প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি’ বলে বাতিল করে সুপ্রিম কোর্ট। চাকরিহারাদের পাশে দাঁড়ানোর বিজেপি যুব মোর্চার ডাকে ‘কালীঘাট চলো’ অভিযান। তুলকালাম কাণ্ড। এক্সাইড মোড়ে অভিযান ঘিরে ধুন্ধুমার। পুলিশের সঙ্গে সরাসরি ধস্তাধস্তি। বিজেপির কর্মীদের ধরপাকড়। আটক তথা প্রাক্তন সাংসদ বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়, ফাল্গুনী পাত্র সহ একাধিক বিজেপি কর্মী। বিক্ষোভকারীদের তাড়া করে পুলিশ।কয়েকজন বিক্ষোভকারী কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের গেস্ট হাউসের ভিতরে ঢুকে পড়েন। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে চাকরিহারাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চাকরিহারাদের পাশে থাকার বার্তা দেন। আশ্বস্ত করেন, যোগ্যদের কারও চাকরি যাবে না। তাঁদের কাজে ফিরে পড়ুয়াদের শিক্ষা দেওয়ারও বার্তা দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নেতাজি ইন্ডোরের বৈঠক খেকে মমতা বার্তা, কোনও যোগ্য প্রার্থীর চাকরি বাতিল হতে দেবেন না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চাকরিহারাদের আশ্বাস। প্রথমে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের কাছে রায়ের ব্যাখ্যা চাইবে। আদালতে সমস্যার সমাধান না হলে আইন মেনেই ‘যোগ্য’দের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা। আপাতত স্কুলগুলিতে চাকরিহারাদের স্বেচ্ছায় পরিষেবা ভলান্টারি সার্ভিস চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ মুখ্যমন্ত্রীর। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। রায়ের মডিফিকেশন চেয়ে আবেদন। নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত অথবা চলতি শিক্ষাবর্ষ সম্পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত, যোগ্য চাকরিহারাদের চাকরিতে বহাল রাখা হোক। এসএসসিতে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরি গিয়েছে ২৫ হাজার ৭৩৫ জনের। চাকরিহারাদের একাংশের সঙ্গে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বৈঠকে ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস সহ অনেকেই। চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আট দফা দাবি। সঠিক তথ্য ও নথি নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার জন্য সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন দিতে হবে রাজ্য সরকারকে। সুপ্রিম কোর্টের যে বিচারপতি এই রায় দিয়েছেন, তাঁর বেঞ্চে রিভিউ পিটিশন দেওয়া যাবে না।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আদালতের রায়ে আমার হৃদয় পাথর হয়ে যাচ্ছে। আমি লাল-নীল-গেরুয়া কোনও রং দেখব না। তাতে আমাকে ওরা জেলে ভরলে ভরুক। আমরা সব সময় চাই, কোনও যোগ্য ব্যক্তির চাকরি যেন না-যায়। শিক্ষাব্যবস্থাকে ভেঙে দেওয়ার জন্য চক্রান্ত চলছে। আমি বেঁচে থাকতে যোগ্যদের চাকরি কেড়ে নিতে দেব না। এটা আমার চ্যালেঞ্জ। যাঁরা যোগ্য, তাঁদের চাকরি নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। আমাদের কোনও রাখঢাক নেই। আইন অনুযায়ীই যা করার করব। পথের মধ্যে থেকেই পথ খুঁজে নিতে হবে।আদালতের কাছে আমরা ব্যাখ্যা চাইব। নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার আগে আমাদের জানতে হবে, যাঁরা স্কুলে পড়াতেন, তাঁদের জন্য আদালতের ব্যাখ্যা কী। স্কুল কে চালাবেন? বাকি কাজ কে চালাবেন? কাউকে না খাইয়ে মারার অধিকার তো কারও নেই। চাকরি দিতে পারবেন না, আমার অনুরোধ তাঁরা যেন চাকরি কেড়ে না নেন। তার পর শিক্ষা দফতর যা করার করবে। আমরা দু’মাসের মধ্যেই বিকল্প ব্যবস্থা করে দেব। যোগ্যদের কারও চাকরি বাতিল হবে না। কিন্তু আমরা চাইব, তার আগে মানবিকতার খাতিরে সুপ্রিম কোর্ট আমাদের হাতে যোগ্য-অযোগ্যের তালিকা তুলে দিক। রায়ের ব্যাখ্যা দিক। শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে দেওয়ার অধিকার কারও নেই। অনেক বদহজম সত্ত্বেও আমি কখনও সিপিএমের কারও চাকরি খাইনি। ২০২২ সাল থেকে এই নোংরা খেলা শুরু হয়েছে। বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য কেন এই মামলা করলেন? ওঁকে উত্তর দিতে হবে। সিপিএমকে এর জবাব দিতে হবে। যাত্রাপালার মাধ্যমে কেউ কেউ আপনাদের ভুল বোঝাচ্ছে। এরা দু’মুখো কেউটে। এদের বিশ্বাস করবেন না। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মতো আমরা লড়ব। আঘাতের প্রত্যুত্তর ফিরিয়ে দেব। কেউ প্ররোচিত হবেন না। মনে রাখবেন, মাথার উপরে আমাদের সরকার আছে। কারও প্রতি অবিচার হবে না।’’ চাকরি বাতিল প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন দাখিল এবং আদালতের রায়ের ব্যাখ্যা চাওয়ার বিষয়ে রাজ্য সরকার নিয়োগ করবে আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি, কপিল সিব্বল, রাকেশ দ্বিবেদী, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রশান্ত ভূষণ এবং দেবাঞ্জন মণ্ডল। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে উল্লেখ, টেন্টেড অর্থাৎ চিহ্নিত অযোগ্যদের চাকরি যাবেই, সেই সঙ্গে বেতনও ফেরত দিতে হবে। অযোগ্য প্রার্থীদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, অযোগ্যদের বিষয়েও বিবেচনা করবেন। যাঁদের অযোগ্য বলা হচ্ছে, তাঁদের বিরুদ্ধে কী কী তথ্য দেখে ডাকার পর সত্যি অযোগ্য প্রমাণিত হলে তখন কিছু করার থাকবে তদন্তের পর আলাদা করে সেটা নিয়ে আমি কথা বলবেন মমতা। সকলে নিশ্চিন্তে থাকতেও বলেন।

‘কৃষক বিদ্রোহের মতো, শিক্ষক বিদ্রোহ হবে বাংলায়’। শাসকের ঘুম ওড়ালেন চাকরিহারা। কান্নায় নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ভেঙে পড়লেন চাকরিহারা শিক্ষকরা। চাকরিহারা শিক্ষক বলেন, যোগ্যরা তাদের সুবিচার পেল না। আপনার ব্যর্থতার জন্য আপনার অযোগ্যতার জন্য এই পরিস্থিতি তৈরি হল। নেতাজি ইন্ডোরে হুড়োহুড়ি অবস্থা। চাকরিহারাদের একাংশের দাবি, পাসও বিক্রি হয়েছে। একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ শিক্ষকদের। অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করতে পারেননি সেকারণে যোগ্যরা রাস্তায়। আজকেই শেষ। এই রকম শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করব না। এরপর থেকে বিদ্রোহ হবে। আন্দোলন নয়, বিদ্রোহ হবে। যেরকম কৃষক বিদ্রোহ হয়েছিল, নীল বিদ্রোহ হয়েছিল তেমন শিক্ষক বিদ্রোহ হবে। এর পর থেকে শিক্ষক বিদ্রোহ হবে। আন্দোলন নয়, সব জায়গায় আগুন জ্বলবে। ভয়াবহ হুঁশিয়ারি চাকরিহারা শিক্ষকদের। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে শিক্ষকদের। একেবারে দিশেহারা অবস্থা। কী করবেন বুঝতে পারছেন না তাঁরা। মমতার সভায় যাওয়ার আগে এক চাকরিহারা শিক্ষক বলেন, যোগ্য-অযোগ্য মেশানোর ফলে সুপ্রিম কোর্ট আমাদের তালিকা বাতিল করল। আমাদের বাড়িতে বউ বাচ্চা আছে। খাব কী! আমাদের উপর লোনের বোঝা আছে। আপার প্রাইমারিতে চাকরি পেয়েছিলাম, কিন্তু যাইনি। আমার বন্ধু বান্ধবরা সেখানে রয়েছেন। আমি একটা চাকরি ছেড়ে এখানে এসেছি। আমরা এখন কী করব! আমাদের এখন সংসারে হয়েছে। ক্লাসের একজন দুষ্টুমি করেছিল। আর গোটা ক্লাসকে শাস্তি দেওয়া হল! চরম অনিশ্চয়তা গ্রাস করেছে গোটা শিক্ষক সমাজকে। কিছুতেই আশ্বস্ত হতে পারছেন না চাকরিহারা শিক্ষকরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles