Tuesday, April 8, 2025
spot_imgspot_img

Top 5 This Week

spot_img

Related Posts

কেন্দ্রীয় কমিটিতে বাংলার মিনাক্ষী! নজির গড়লেন সিপিআই(এম)যুবনেত্রী

যুবনেত্রী থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য! ‘নজির’ মীনাক্ষীর। নজর কাড়লেন। তামিলনাড়ুর মাদুরাইয়ে সিপিআই(এম)-এর ২৪তম পার্টি কংগ্রেস। পাঁচদিনের কর্মসূচি শেষ হয় রবিবার ৬ এপ্রিল, ২০২৫। ৮৫ জনের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন। কমিটিতে মীনাক্ষী-সহ বাংলার পাঁচ। এক সময়ের বাংলার শাসক দল সিপিআই(এম)। ভরসা সিপিআই(এম)-এর যুব নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। নজিরবিহীনভাবে সিপিআই(এম)-এর কেন্দ্রীয় কমিটিতে লড়াকু নেত্রী। কেন্দ্রীয় কমিটিতে মীনাক্ষী-সহ বাংলার পাঁচ। বয়সজনিত কারণে কমিটি থেকে বাদ বাংলারই প্রবীণ পাঁচজন। মীনাক্ষীর ক্যারিশমাকেই সিপিআই(এম) কাজে লাগাতে চাইছে বাংলায় ভোটে। মীনাক্ষীর উত্থান দলের যুবনেত্রী হিসাবে। ৪০ বছর বয়স পূর্ণ করার ফলে শীঘ্রই যুবনেত্রীর পদ থেকে সরে যাবেন। জুন মাসে দলের যুব সংগঠনের রাজ্য সম্মেলনে রাজ্য সম্পাদকের পদ ছাড়বেন মীনাক্ষী। ডিওয়াইএফআই থেকে বেরিয়ে এসে পুরোদস্তুর সিপিআই(এম) নেত্রী হিসাবে মাঠে নামবেন।

সিপিআই(এম)-এর রাজ্য কমিটিতে মীনাক্ষীর মতো অল্প বয়সীদের স্থান অতীতেও। রাজ্যস্তরে যুব আন্দোলন করতে করতে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান মেলা নজিরবিহীন! দলেরই শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য ও মতামত। সিপিআই(এম)-এর রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীতেও মীনাক্ষী স্থান পেতে চলেছেন। মীনাক্ষী ছাড়াও বাংলা থেকে চার নতুন মুখ দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে। গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্য সম্পাদক কননীকা ঘোষ, হুগলির জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ, পূর্ব বর্ধমানের জেলা সম্পাদক সৈয়দ হোসেন, দার্জিলিংয়ের জেলা সম্পাদক সমন পাঠক। বয়সজনিত কারণে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নাম না থাকা সূর্যকান্ত মিশ্র, রবীন দেব, অঞ্জু কর, রেখা গোস্বামী এবং অমিয় পাত্রকে। মহারাষ্ট্রের সিটুর সভাপতি বি এল কারাডের অন্তর্ভুক্তির দাবিতে ভোটাভুটি হলেও কারাড কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঢুকতে পারেননি।

নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির নামের প্যানেল পেশ করেন বিদায়ী পলিটব্যুরোর কো-অর্ডিনেটর। তালিকায় নিজের নাম জোড়ার দাবিতে আপত্তি নাসিকের সিটু নেতা ডি এল কারাডের! সমর্থন মহারাষ্ট্রের আরও এক জনের। অগত্যা ভোটাভুটির ঘোষণা প্রকাশ কারাটের। কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের প্রশ্নে সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসে কোনও কালে ভোটাভুটি হয়েছে কি না, কারুর জানা নেই। পক্ষে ৩৩টি ভোট। বিপক্ষে ৬৬১। নানা অভিযোগে দলে আগেই কমিশনের মুখে সিটুর নেতা এ বার পার্টি কংগ্রেসে দাগ রেখে গেলেন! নতুন সাধারণ সম্পাদক এম এ বেবি। বৃন্দা কারাট বলেন, ‘‘আমাদের নতুন সাধারণ সম্পাদকের নাম বেবি হলেও আসলে উনি এক জন যোদ্ধা!’’ বেবি-সহ নতুন নেতৃত্বের নির্বাচনে শুভেচ্ছা জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স ও সভাপতি শাহ আলম। মাদুরাইয়ে সিপিএমের ২৪তম পার্টি কংগ্রেসের শেষ দিনে ভোটাভুটিতে গঠিত ৮৫ জনের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি। একটি জায়গা ফাঁকা। বাকি ৮৪ জনের মধ্যে ৩০ জন নতুন। কমিটিতে মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব ১৭% থেকে বেড়ে ২০%।

১৯৯৮ সালে শেষ বার হয়েছিল কলকাতায়। ২০২৫ সালে মাদুরাইয়ে। ২৭ বছর পর ভোটাভুটি হল সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসে। পার্টি কংগ্রেসে প্রতিনিধি ছিলেন ৭৩২ জন। সিপিএমের ষোড়শ পার্টি কংগ্রেস হয়েছিল কলকাতার নজরুল মঞ্চে। ১৯৯৮ সালের সেই পার্টি কংগ্রেসের দু’বছর আগে জ্যোতি বসুর প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রস্তাব ফিরিয়েছিল সিপিএম। পার্টি কংগ্রেসে একাংশের প্রস্তাব কেন্দ্রীয় সরকারে দলের অংশগ্রহণ নিয়ে ভোটাভুটি। দলে মহিলাদের আনুপাতিক হার নিয়ে প্রস্তাব ছিল বৃন্দা কারাটের। ভোটাভুটিও হয়। বিজয়নকে রেখে এই রফা করতে গিয়ে পলিটব্যুরোর সদস্য-সংখ্যা ১৭ থেকে বেড়ে ১৮ হয়েছে। বিদায় নিয়েছেন প্রকাশ, বৃন্দা কারাট, মানিক সরকার, সুভাষিণী আলি, সূর্যকান্ত মিশ্র এবং জি রামকৃষ্ণন। প্রথম চার জনকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিশেষ আমন্ত্রিত সদস্য করা হয়েছে। পলিটব্যুরোয় নতুন অন্তর্ভুক্তি শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, জিতেন্দ্র চৌধুরী, কে বালকৃষ্ণন, ইউ বাসুকী, অমরা রাম, বিজু কৃষ্ণন, মরিয়ম ধওয়েলে ও অরুণ কুমার সহ ৮ জনের। গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মরিয়ম অশোক ধওয়েলের স্ত্রী। বঙ্গ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ছিলেন মাদুরাই পার্টি কংগ্রেসে!

বয়সবিধিতে সিপিএমের পলিটব্যুরো থেকে বাদ প্রকাশ কারাট এবং বৃন্দা কারাট। জায়গা পেলেন আরও এক দম্পতি জুটি অশোক ধাওয়ালে এবং মারিয়াম ধাওয়ালে। ১৯৯৫ সালে প্রথম বার পলিটব্যুরো সদস্য হয়েছিলেন প্রকাশ। বৃন্দা সদস্য হন ২০০৫ সালে, পলিটব্যুরোর প্রথম মহিলা সদস্য। প্রকাশ-বৃন্দাই পলিটব্যুরোয় একমাত্র দম্পতি ছিলেন। এ বার বদল। পলিটব্যুরো থেকে প্রকাশ, বৃন্দা-সহ মোট ছ’জন বাদ পড়েছেন। সিপিএম নিয়ম করেছে, ৭৫ বছরের ঊর্ধ্বে কেউ কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকতে পারবেন না। পলিটব্যুরোয় সিপিএমের মহিলা সংগঠন ‘সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি’র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মারিয়াম ধাওয়ালের অন্তর্ভূক্তিতে অশোক-মারিয়ামই এখন পলিটব্যুরোর ‘নব’দম্পতি। মারিয়ামের স্বামী তথা মহারাষ্ট্রের কৃষক নেতা অশোক গত পার্টি কংগ্রেসেই পলিটব্যুরোয় জায়গা পান। অশোক পেশায় চিকিৎসক। পলিটব্যুরোয় আর এক চিকিৎসক বাংলার রামচন্দ্র ডোম। আগে ছিলেন সূর্যকান্ত মিশ্র, এ বার বাদ পড়েছেন। পলিটব্যুরোয় দু’জন মহিলা বৃন্দার সঙ্গে ছিলেন সুভাষিনী আলি। লক্ষ্মী সায়গলের কন্যা সুভাষিনীও বয়সের কারণে বাদ পড়ে নতুন পলিটব্যুরোতেও দু’জন মহিলার এক জন মারিয়াম, আর এক জন তামিলনাড়ুর নেত্রী ইউ বাসুকি।

আগে বাংলার ১৩ জন সদস্য ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটিতে। এবার ৩ জন বাদ পড়লেন এবং নতুন করে পাঁচজন কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঢুকলেন। ৮৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বাংলার সদস্য ১৫। পলাশ দাস, কল্লোল মজুমদার, তাপস সিনহা, জামির মোল্লারা দৌড়ে থাকলেও কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঢুকতে পারলেন না। কেন্দ্রীয় কমিটিতে বাংলার নতুন মুখ হুগলির ছেলে দেবব্রত বছর তিনেক আগে রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীতে। এবারকেন্দ্রীয় কমিটিতে। সাংগঠনিক কাজে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেই এই স্থান অর্জন করেন দেবব্রত। নজিরবিহীন ঘটনা সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসে। সবচেয়ে চমকপ্রদ নাম মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। মিনাক্ষী যুব সংগঠনের রাজ্য সম্মেলন থেকে রাজ্য সম্পাদকের পদ ও যুব সংগঠন ছাড়লেও আপাতত তাঁকে পার্টির কাজেই ব্যবহার করবে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পাওয়ার পরে মীনাক্ষী বলেন, ‘‘আমাদের দলে ব্যক্তির জন্য আলাদা করে কিছু হয় না। দিল্লিতে যখন আরএসএস-বিজেপি এবং বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় বসে আছে, তখন বামপন্থীদেরই দায়িত্ব বাড়ছে। বিশেষ করে, বাংলায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের পরে আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’’ রাজ্যে আন্দোলনের ঝাঁজ বাড়িয়ে তুলতে সচেষ্ট হতে চলেছেন বলে জানান মীনাক্ষী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles