সবে বিকেল পেরিয়েছে। বিবেকানন্দ পার্কে সবেমাত্র খেলা শেষ। গোধুলি লগ্ন। গাছগাছালির ফাঁক দিয়ে লাল টকটকে সূর্য টুপ করে ডুব দিয়েছে। এবার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের পালা। রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী সটান ঢুকে পড়েছেন মাঠে। নিজেই একটি ধুলোমাখা চেয়ার টেনে বসে পড়লেন। জমিয়ে আড্ডা বেশ কয়েকজন ভেটারেন্স ক্রিকেটপ্রেমীদের নিয়ে। পুরস্কার বিতরণীর মঞ্চ তখনও অপ্রস্তুত। আয়োজক প্রাক্তন ক্রিকেটার সম্বরণ ব্যানার্জ্জী তখনও ইতিউতি সামলাতে নাজেহাল অবস্থা। আধঘন্টা মন্ত্রী মাঠেই বসে আড্ডা দিলেন। মেইনল্যান্ড কাপ ২০২৫ এর সমাপ্তি অনুষ্ঠান এক্কেবারে সাদামাটা। একমাস ধরে চলা টুর্ণামেন্টের মেনল্যান্ড সম্বরণ ক্রিকেট অ্যাকাডেমি। এই ২৫ বছরের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে এই প্রতিযোগিতায় সিংহভাগ চ্যাম্পিয়ান সম্বরণের অ্যাকাডেমিই। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান মঞ্চে প্রচুর অভ্যাগতের উপস্থিতি। টুর্নামেন্টের শেষ দিনে দর্শকাসনে বসেছিল যেন চাঁদের হাট। এরই মধ্যে, বিরাট ভুল করে বসলেন রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। খুদে ও শিক্ষার্থী ক্রিকেটারদের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে শচিন তেন্ডুলকর, বিরাট কোহলির নাম একাধিবার বললেও, ভুলে গেলেন বিশ্ব তথা বাংলা ক্রিকেটের আইকন সৌরভ গাঙ্গুলির নাম উচ্চারণ করতে। টিম ইন্ডিয়া তৈরীর প্রধান কারিগর প্রাক্তন বিসিসিআই প্রেসিডেন্টের নাম একবারও বললেন না ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। অথচ, সৌরভ গাঙ্গুলির সাফল্য অনুসরণ করেই ক্রিকেটের প্রতি ছেলেমেয়েদের আকৃষ্ট হওয়া। ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম সফলতম অধিনায়ক বাংলার মহারাজ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নামই উচ্চারণ করতে ভুলেই গেলে বাংলারই ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।

মাঠ ছোট হলে কী হবে, প্রতিযোগিতা টানটান। মেইনল্যান্ড কাপ ২০২৫ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট জিতে নিল মেনল্যান্ড সম্বরণ ক্রিকেট অ্যাকাডেমি। মেনল্যান্ড সম্বরণ ক্রিকেট অ্যাকাডেমির উদ্যোগে আয়োজিত অনূর্ধ্ব ১৪ অল বেঙ্গল ইনভিটেশনাল নক-আউট ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। মেইনল্যান্ড কাপ ২০২৫ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট এবার পা দিল ২৫ বছরে। রবিবার ছিল টুর্নামেন্টের ফাইনাল। চিরাচরিত প্রথায় মেইনল্যান্ড কাপ চ্যাম্পিয়ান সম্বরণের ক্রিকেট অ্যাকাডেমি ৭ রানে পরাজিত করে টোয়েন্টি টু ইয়ার্ডস স্পোর্টস স্কুলকে। গ্র্যান্ড ফাইনাল ম্যাচে মেইনল্যান্ড সম্বরণ ৪৫ ওভারে করে ৬ উইকেট হারিয়ে ৩৫০ রান। দেবজ্যোতি ভৌমিক ৯০ রান করেন ৭৭ বলে, শ্রীজিত শীল ৬০ রান করেন ৩৮ বলে, চিরন্তন সাহু ৫৭ রান করেন ৩৮ বলে, রাজেশ মণ্ডল ৫৫ রান করেন ৩৪ বলে। টোয়েন্টি টু ইয়ার্ডস স্পোর্টস স্কুল ৪৫ ওভারে ছয় উইকেট হারিয়ে করে ৩৪৩ রান। আব্দুল রউফ কায়সার শতরান ১২৪ মাত্র ১০০ বলে, সক্ষম সিনহা ১০১ রান করেন ৮১ বলে, রাজেশ মণ্ডল ৩ উইকেট নেন ৫৭ রান খরচ করে, অনুষ্টুপ মিত্র ৩ উইকেট নেন ৫৯ রান খরচ করে।

ফাইনালে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ মেইনল্যান্ড সম্বরণের দেবজ্যোতি ভৌমিক। ম্যান অফ দ্য টুর্নামেন্ট মেইনল্যান্ড সম্বরণের রাজেশ মণ্ডল, সেরা ব্যাটার চিরন্তন সাহু মেইনল্যান্ড সম্বরণেরই, সেরা বোলার অনুষ্টুপ মিত্র মেইনল্যান্ড সম্বরণেরই, সেরা উইকেট কিপার হন টোয়েন্টি টু ইয়ার্ডস স্পোর্টস স্কুলের আয়ুষ পান, সেরা ফিল্ডার আকাশ সর্দারও মেইনল্যান্ড সম্বরণেই কলকাতার বিবেকানন্দ পার্কে আয়োজিত এই টুর্নামেন্টে কলকাতা ও জেলা মিলিয়ে অংশ নিয়েছিল ১৬টি ক্লাব। খেলেছিল ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, এলআরএস বাংলা স্পোর্টস অ্যাকাডেমিও। চ্যাম্পিয়ন্স সেই মেনল্যান্ড-সম্বরণ ক্রিকেট অ্যাকাডেমিই। মেনল্যান্ড চায়না নামক এই সংস্থার সঙ্গে ২৫ বছর ধরে যুক্ত সম্বরণ ক্রিকেট অ্যাকাডেমি। বাংলার রঞ্জিজয়ী অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় প্রচুর ক্রিকেটার তৈরী করতে এই অ্যাকাডেমি সদা প্রস্তুত। ফাইনালে উপস্থিত ছিলেন সদ্য অনূর্দ্ধ ১৬ ভারতীয় দলে নিযুক্ত কোচ প্রাক্তন ক্রিকেটার সৌরাশিষ লাহিড়ি ও প্রাক্তন জাতীয় ক্রিকেটার শিবশঙ্কর পাল।

ছবি ও লেথা হৃত্বিক