ক্রিকেটের প্রতি অগাধ ভালোবাসা। এক বোতল রক্ত। নিচ্ছেন আইপিএলের টিকিট। বিনিময়ে কথাটা এখানে কতটা প্রযোজ্য তা নিয়ে বেশ সন্দীহান খোদ কর্তারাই। কোচবিহার জেলা ক্রীড়া সংস্থার দিকে আঙুল তুলেছেন অনেকেই। আবার সিংহভাগ কর্তা এর মধ্যে কোনও ভুল দেখছেন না। খোদ সিএবির অধিকাংশ কর্তার মুখে শোনা গেল, বিষয়টা গর্বের। ক্রিকেট খেলা দেখার নেশায় রক্তও দান করছেন মানু্ষ। এই কাজে অপরাধ কোথায়? প্রশ্নও তুলেছেন ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের অনেক কর্তাব্যক্তিই।

টিকিটের বিনিময়ে মোটা অঙ্কের টাকা নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। আইপিএলের টিকিট নিয়ে কোচবিহার জেলা ক্রীড়া সংস্থায় তীব্র অভিযোগ। সূত্রের খবর, আইপিএলের টিকিট দেওয়ার বিনিময়ে মোটা অঙ্কের টাকাও তোলা হচ্ছে। টিকিট বিতরণ ঘিরে নানা অনৈতিক কাজ চলছে কোচবিহার জেলা ক্রীড়া সংস্থায় বলে অধিকাংশের অভিযোগ। অথচ কোচবিহার জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক সুব্রত দত্ত বলেন, ‘জেলা ক্রীড়া সংস্থার আয় বলতে কিছুই নেই। ২০০-৫০০ টাকা অতিরিক্ত যাঁরা দিচ্ছেন তার জন্য রসিদ কেটে দেওয়া হচ্ছে। এই টাকা জেলা ক্রীড়া সংস্থার উন্নয়নেই খরচ হয়। এটা নতুন কিছু নয়। দীর্ঘ বছর ধরেই এই কাজ হয়ে আসছে।’ এই কাজে অনৈতিক কোনও যোগ আছে বলে মনে করছেন না সিএবির অধিকাংশ কর্তা।

প্রিয় দলের খেলা দেখতে টিকিটের জোগাড় করতে হিমসিম ক্রীড়াপ্রেমীরা। কোচবিহার জেলা ক্রীড়া সংস্থা সিএবির সদস্য হিসেবে একটি নির্দিষ্ট কোটার টিকিট পাচ্ছে। আর সেই টিকিট বিক্রিতে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে হাওড়াতেই। এই অভিযোগ সংস্থার সদস্য থেকে শুরু করে সাধারণ ক্রীড়াপ্রেমীদের। হাওড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার অন্দরমহলে ভিন্ন ভিন্ন অভিযোগে চরম ক্ষোভ। জেলা সংস্থার প্রোমোটার-দালালির পেশায় নিযুক্ত অধিকাংশ কর্মকর্তা নিজেদের অসচ্ছতাকে ঢাকতে ‘সিএবি’র মতো প্রতিষ্ঠিত সংস্থাকে বেছে নিয়েছেন। পরে ধীরে ধীরে বাঁকা পথে গুপ্ত রোজগারের পথ হিসাবেও ব্যবহার করে চলেছে। ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের প্রেসিডেন্ট স্নেহাশীষ গাঙ্গুলীর অগোচরে এইরকম কর্মকাণ্ড ঘটে চলেছে, তা হয়তো তিনি টেরই পাচ্ছেন না। এমনকি সিএবি প্রেসিডেন্ট স্নেহাশীষ গাঙ্গুলী ও প্রাক্তন বিসিসিআই প্রেসিডেন্টের ছবি হাওড়া জেলার অনুষ্ঠানে বড় বড় করে ব্যবহারে জনৈক জেলার কর্তারা ‘নিজ’ প্রচারের বহর বৃদ্ধি করতে গিয়ে, অপমান করে বসলেন খোদ আন্তজার্তিক মহিলা ক্রিকেটারদেরই বলে অভিযোগ। ক্ষুব্ধ ও অপমানিত জাতীয় মহিলা ক্রিকেটাররা অনুষ্ঠানের মাঝপথেই ফিরে আসেন বলে জানা গেছে।

আইপিএলের সময় প্রত্যেক জেলার ক্রীড়া সংস্থাকে টিকিট দেওয়ার প্রথা চিরাচরিত। ২০২৫ আইপিএলে ২০টি টিকিট বরাদ্দ করা হয়েছে কোচবিহার জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে। টিকিটের দাম ৯০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকা। সংস্থার হাতে থাকা সব দামের টিকিট বিতরণেই বিপুল দুর্নীতির অভিযোগ। বাড়তি টাকা দাবি করা। টিকিটের বিনিময়ে রক্ত নেওয়া। ভয়ঙ্কর অভিযোগের তালিকায় জেলার ক্রীড়া সংস্থাগুলোর? তালিকায় হাওড়াও রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। হাওড়া ক্রীড়া সংস্থায় দু-এক জনের বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগও শোনা যাচ্ছে। ফুটবল সংস্থায় খেই না পেয়ে জেলা সংস্থার ক্রিকেট প্রশাসনে জোর করে অনুপ্রবেশের চেষ্টা। এখানেই শেষ নয়। টিকিট নিয়ে কালোবাজারী। বাংলার ক্রিকেট সংস্থায় যে কোনও জেলা ক্রীড়া সংস্থার একজন প্রতিনিধির উপস্থিতির নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও একাধিক প্রতিনিধি এসে গলায় কার্ড ঝুলিয়ে বিচরণ করেন। বিপুল রাজনীতির শিকার হাওড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদ্যস্যরা বলে অভিযোগ অন্দরমহলে।

বীরভূমের কোনও কর্তার লেজ ধরে আসা জনৈক ব্যক্তি শ্যুটেড-বুটেড হয়ে সারা সিএবি জুড়ে ঘোরাফেরা করেন বলে অভিযোগ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্তাবৃন্দরা। জনৈক হোটেল-রিসর্টের ব্যবসায়ী অবাধে সিএবির যে কোনও ঘরে আচমকাই ঢুকে পড়েন অবাধে। জনৈক ব্যক্তির এই অবাধ প্রবেশে, খোদ সিএবির সদস্য-কর্তাদের মধ্যে চাপা প্রশ্ন ও ক্ষোভমিশ্রিত অভিযোগ। ‘‘সিএবিতে নাকি বিশাল সোর্স! ক্রিকেটারদের নাকি অনায়াসেই হাজির করতে পারেন! সিএবির সব কর্তারা নাকি তার হাতের মুঠোয়!’’-এমনটাও বলে নিজের ব্যবসা তরান্বিত করার অভিযোগ রয়েছে জনৈক শ্যুটেড-বুটেড হোটেল-রিসর্টের ব্যবসায়ীর নামে।

কোচবিহার শহরের বাসিন্দা ক্রীড়াপ্রেমী বলেন, ‘আমি সব মিলিয়ে তিনটি টিকিট কেটেছি। এপ্রিলের ৮ তারিখ ইডেন গার্ডেনসে কলকাতা নাইট রাইডার্স–এর খেলা দেখতে ৭ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে তিনটি টিকিট বুক করেছি।’ টিকিটের দাম দু’হাজার টাকা করে হলেও আড়াই হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে বলে তাঁর দাবি। তিনি বলেন, ‘প্রথমে বিষয়টি জানিনি। ভেবেছিলাম, টিকিটের দাম আড়াই হাজার টাকা করে। যখন ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক সুব্রত জানান, অতিরিক্ত টাকার জন্য ডোনেশন কুপন দেওয়া হবে, তখন বিষয়টি জানলাম।’ অর্থাৎ এক্ষেত্রে কোচবিহার জেলা ক্রিকেটের উন্নতির জন্য ডোনেশন বাবদ টিকিটের মূল্য বেশী নেওয়া হচ্ছে। এই কাজে অপরাধ দেখছেন না অধিকাংশ ক্রিকেট কর্তারাই।

কোচবিহার জেলা ক্রীড়া সংস্থার অন্দরে বিবাদ। সংস্থার একপক্ষের দাবি, আইপিএলের টিকিট দেওয়ার বিনিময়ে বিরাট অঙ্কের টাকা দাবি করা হচ্ছে। টিকিটের যা দাম, তার থেকেও বেশি টাকা চাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কোচবিহার জেলা ক্রীড়া সংস্থা জেনারেল সেক্রেটারি সুব্রত দত্ত। তাঁর কথায়, কাউকেই টাকা দেওয়ার জন্য জোর করা হচ্ছে না। সংস্থার কাজ যেন সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে, সেই জন্য অনুদান দিতে অনুরোধ করা হচ্ছে। যাঁরা ইচ্ছুক, তাঁরাই নিজেদের ইচ্ছামত অর্থ দিচ্ছেন অনুদান হিসাবে। অনুদানের রসিদও দেওয়া হয়েছে তাঁদের। টিকিটের দাম অনুসারে কোনও কোনও ক্ষেত্রে ৩০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত বেশী নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। যদিও জেলা ক্রীড়া সংস্থার দাবি, এটা নতুন কিছু নয়। দীর্ঘদিন থেকেই এই নিয়ম চলে আসছে। ক্রীড়া সংস্থা চালানোর জন্য ওই সামান্য টাকা ডোনেশন হিসাবে নেওয়া নেওয়া হয়। তার জন্য রীতিমতো রসিদও দেওয়া হয়। বিনামূল্যের ৩৫টি টিকিট ও মাত্র ২০টি টিকিট বিক্রির জন্য কেনা হয়। সেই ২০টি টিকিট সামান্য ডোনেশনের বিনিময়ে রসিদ দিয়ে বিক্রি করা হয়। জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে কালিমালিপ্ত করার জন্য একাংশ মানুষ এসব করছেন বলে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদকের দাবি। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক সুব্রত দত্ত বলেন, জেলা ক্রীড়া সংস্থার ফান্ড কালেকশন করার বহু পুরানো ব্যবস্থা রয়েছে। কেউই অনলাইনে টিকিট কাটেন না। সকলেই ডিএসএসের কাছ থেকে টিকিট প্রত্যাশা করেন। তার বিনিময়ে ডিএসএকে সহযোগিতা করেন। ৩৫টি ফ্রি টিকিট কাউকে বিক্রি করা হয় না। পয়সা দিয়ে ২০টি মাত্র টিকিট কেনা হয়। সেই কটি টিকিটই বিক্রি করা হয়। উপযুক্ত রসিদের বিনিময়ে ডোনেশন বাবদ কিছু টাকা নেওয়া হয়। আসলে, জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তাদের কালিমালিপ্ত করার এটা একটা অপচেষ্টা। সিএবির টাকা দিয়ে ক্রিকেটের কাজ হয়। ফুটবল, অ্যাথলেটিক্স চালাতেও ডিএসএর খরচ হয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেন সিএবি প্রেসিডেন্ট স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়। জেলার ক্রীড়া সংস্থায় ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর দিকে নজর রাখছেন ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের সভাপতি নিজেই।