Friday, April 11, 2025
spot_imgspot_img

Top 5 This Week

spot_img

Related Posts

কলের জল ও নর্দমার জল একাকার?‌ ‘‌রূপকারদের’‌ উপর হাওড়াবাসীর ক্ষোভ!‌ ‘‌জল’‌ সংকটে হাহাকার ৫০০ বছরের পুরানো শহরে ‌!‌ ‘‌পানীয় জল’‌ কালোবাজারীর হানা

ত্রি-‌ফলায় বিদ্ধ হাওড়ার বাসিন্দারা। ধসের কারণে বাড়িতে ফাটল। বিদ্যুৎহীন একাধিক এলাকা। তার ওপর তীব্র জল সঙ্কট। ভুগছে হাওড়ার বিস্তীর্ণ এলাকা। সমস্যা কত দিনে মিটবে?‌ স্পষ্ট নয় এখনও। প্রশাসনের তরফে নিশ্চয়তা নেই। সন্দিহান বাসিন্দারা। হাওড়ার ভাগাড় অঞ্চলের বেলগাছিয়ায় ধসের জেরে পাইপলাইন ফেটে বিপত্তি। হাওড়ার অন্তত ২২টি ওয়ার্ডে ব্যাহত জল সরবরাহ। পরিস্থিতি সামাল দিতে হাওড়ায় জলের গাড়ি পাঠাচ্ছে কলকাতা পুরসভা। কয়েকটি ওয়ার্ডে কোন্নগর এবং উত্তরপাড়া পুরসভার জলের গাড়িও পাঝানো হয়েছে। তেষ্টা মিটছে না হাওড়ার। উত্তর ও মধ্য হাওড়া এবং শিবপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন ওয়ার্ডে জলের লম্বা লাইন। উত্তর হাওড়ার বাসিন্দাদের বক্তব্য, জলের গাড়ি পাঠানো হলেও তা অপর্যাপ্ত। রান্না-খাওয়ার জল নেই ঘরে। এ ভাবে আর কত দিন চলবে? প্রশাসনের সাফাই, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ হচ্ছে। লাভটা কী হচ্ছে!’’ জলের সমস্যা মেটাতে হাওড়ার বেলগাছিয়া মোড়ে একটি বিকল্প পাইপলাইন জোড়ার কাজে পুরসভা।

পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান সুজয় চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘শিবপুর ও মধ্য হাওড়ায় জলের সমস্যা শীঘ্রই মিটে যাবে। নতুন পাইপলাইন জোড়া হলে উত্তর হাওড়ায় জল সরবরাহ করা যাবে। অতিরিক্ত জলের গাড়ি ও পরিস্রুত জলের পাউচ পাঠানো হচ্ছে উত্তর হাওড়ায়।।’’ রাজ্য খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, ‘‘একটা বিপর্যয় ঘটেছে। যার ফলে পুরসভায় জল সরবরাহ ব্যাহত হয়। বিভিন্ন পুরসভা থেকে জলের গাড়ি এনে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করা যায়, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’’ কলের জল মিশছে নর্দমায়, রাস্তাও ভেসে যাচ্ছে দুর্গন্ধময় কালো জলে! জলকষ্ট হাওড়ার বিস্তীর্ণ এলাকায়। ভাগাড়ে ধসের কারণে নিকাশি ব্যবস্থা সম্পূর্ণ নষ্ট। পরিস্থিতিতে নিকাশি ব্যবস্থা মেরামতে জল সরবরাহ বন্ধ। ভাগাড়ে ধসের কারণে নিকাশি ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফলে রাস্তায় জল জমছে। সেই জল নর্দমায় মিশে দুর্গন্ধময় কালো জল রাস্তায় জমে যাচ্ছে। ড্রেন তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। শেষ না হওয়া পর্যন্ত জল বন্ধ।

পদ্মপুকুর জলপ্রকল্পের মূল পাইপলাইন বেলগাছিয়া মোড় থেকে এফ রোড হয়ে, বেলগাছিয়া ভাগাড়ের পাশ বরাবর গেছে। আবার পানীয় জলেই এই পাইপলাইনের পাশ দিয়েই উত্তর হাওড়ার মূল নিকাশি নালা। সেখানেই বিপত্তি। শহরের সমস্ত আবর্জনা জমে কার্যত পাহাড়ের আকার নেওয়া ভাগাড়ে প্রায়ই ধস নেমে এলাকার মূল নিকাশি নালা অবরুদ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটে। জমা আবর্জনা থেকে মিথেন গ্যাস বেরিয়ে আগুনও লেগে যায় প্রায়ই। ধোঁয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন এলাকার বাসিন্দারা। একই কারণে মাটির তলায় ধসের জেরে জলের পাইপলাইন ফেটে জল সরবরাহ বন্ধ উত্তর হাওড়ার ১৪টি ওয়ার্ড, শিবপুরের চারটি ওয়ার্ড এবং মধ্য হাওড়ার দু’টি ওয়ার্ডে। আবার ধসের জেরে বহু বাড়িতে ফাটল। জলের জন্য হাহাকার। পরিস্থিতি বেশ ভয়ানক। কেএমডিএ-র কর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক পুরসভার আধিকারিক ও জেলা প্রশাসনের কর্তাদের। আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসাবে বেনারস রোডের বেলগাছিয়া মোড় পর্যন্ত এসে কাজ বন্ধ হয়ে থাকা একটি পাইপলাইন বসাতে শুরু করেছে পুরসভা ও কেএমডিএ। এরই মাঝে আবার বৃষ্টির জেরে শনিবার ফের ধস নামায় সেই কাজ বাধা।

হাওড়ার জলসংকট মেটাতে গিয়ে প্রকাশ্যে বড় সমস্যা। হাওড়ার বেলগাছিয়ার ভাগাড়ে ধসের জেরে প্রায় দেড় বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রাস্তায় ফাটল। ধসের জেরে ফেটে যায় পাইপ লাইন। ভূমিধসের জেরে ফেটে যাওয়া পাইপটি উত্তর হাওড়া ও শিবপুর বিধানসভা কেন্দ্রে জল সরবরাহের মূল পাইপ লাইন। পাইপটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১ কিলোমিটার। তীব্র গরমেও জল পাচ্ছেন না ওই এলাকার বাসিন্দারা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফেঁপে যাওয়া মাটির তলায় মিথেনের সঙ্গে মিশছে গঙ্গার জল। ধসে যেতে পারে গোটা উত্তর হাওড়া? ভূ-বিজ্ঞানীদের দাবি, ভাগাড় এলাকার ভূ-গর্ভে তৈরি হচ্ছে মিথেন গ্যাস! সঙ্গে মিশছে গঙ্গার জল। জমে থাকা মিথেন গ্যাস বের করার ব্যবস্থা না করলে ঘটতে পারে বড়সড় বিপদ! ধসে যেতে পারে গোটা এলাকাই! ভয়াবহ আশঙ্কা ক্রমে দানা বাঁধছে। মাটি থেকে বেরচ্ছে মিথেন গ্যাস। ভূবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ভাগাড়ে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা আবর্জনা ও পশুপাখির মৃতদেহে। দীর্ঘদিনের এ হেন পরিস্থিতিতে প্রাণীদেহের রস শুষে নেওয়ার ক্ষমতা কার্যত হারাতে বসছে মাটি। মাটির তলা ফেঁপে গিয়েছে। মাটির নীচে ফাঁকা জায়গা থাকলে তৈরি হয় মিথেন গ্যাস! এর উপর আবার মিথেন গ্যাসের সঙ্গে গঙ্গা নদীর জল মিশে বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে আশঙ্কা ধসে যেতে পারে বিস্তীর্ণ এলাকা।

ভূবিজ্ঞানীর কথায়, “ভাগাড়ে পড়ে থাকা পচাগলা দেহরস এলাকার মাটিকে নষ্ট করে দিয়েছে। মাটির তলা ফেঁপে মিথেন গ্যাস ও গঙ্গার জল ঢুকে যাওয়ার জেরে যে কোনও সময় ভাগাড় সংলগ্ন এলাকা মাটির তলায় চলে গিয়ে বড়সড় বিপর্যয় ঘটতে পারে। প্রশাসনের উচিত খুব দ্রুত মাটিতে গহ্বর তৈরি করে মিথেন গ্যাস বার করা। তবেই বড়সড় বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।” ঘটনাস্থলে কলকাতার ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের একটি দল পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে। আইআইএসটি, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ার ও রাজ্য সরকারের ইঞ্জিনিয়ারদের দল পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার পর জেলাশাসকের বাংলাতে বৈঠক সেরে আগামী পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে স্থানীয় প্রশাসন।

জলের হাহাকারের মধ্যেই হাওড়ায় শুরু কালোবাজারী। ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ২০ লিটারের ব্যারেল। ঘটনার কথা স্বীকার করে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক বলেন, এলাকার তিন চারটে প্ল্যান্ট এরকম করছে। এ২০ লিটার জলের দাম ৩০ টাকা। ২ তলার বেশি ওপরে পৌঁছে দিলে বাড়তি ১০ টাকা নিতে পারেন। ১ পয়সা বেশী নিলেই পুলিশি পদক্ষেপ। অভিযোগ, হাওড়া শহরের একাংশে পুরসভার জল সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে কালোবাজারি। এই পরিস্থিতিতে চড়চড়িয়ে বেড়েছে পানীয় জলের চাহিদা। মানুষ পানীয় জলের জন্য ব্যারেল, বোতল নিয়ে লাইন দিচ্ছেন ‘‌আরও’‌ প্ল্যান্টগুলিতে। অভিযোগ, পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে চলছে কালোবাজারি। ২০ লিটারের ব্যারেলে জল নিতেই দিতে হচ্ছে ৩০০ টাকা। হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। জলের অভাবে স্নান খাওয়া বন্ধ হওয়ার জোগাড়।

মুহূর্তে বড়সড় বিপদের আশঙ্কা। নিজের বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র যেতে নারাজ হাওড়ার বেলগাছিয়ার বাসিন্দারা। এলাকায় বিক্ষোভ। পুনর্বাসনের দাবিতে সরব। বেলগাছিয়ায় বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কর্মীরা। মাটি পরীক্ষা ভাগাড়ের। ফলাফল সন্তোষজনক হলে বায়ো মাইনিং পদ্ধতির মাধ্যমে জঞ্জাল সরানোর কাজ শুরু হবে। এলাকায় মাইকিং। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এলাকা খালি করে দেওয়ার নির্দেশিকা জারি। স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য এলাকারই একটি ক্লাবে বসবাসের বন্দোবস্ত। প্রস্তাবে নারাজ স্থানীয়রা। মহিলারা পথে নেমে বিক্ষোভ দেখান। “প্রাণ থাকতে বাড়ি ছাড়বেন না”, বলে দাবি। আশঙ্কা, ভাগাড় পরিষ্কারের নামে বাড়ি ভেঙে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হবে। আর কোনওদিন স্থায়ী মাথা গোঁজার ঠাঁই পাবেন না। সে কারণেই বিপদে আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও বাড়ি ছেড়ে যেতে নারাজ বাসিন্দারা। দাবি, বহু কষ্টে লোন নিয়ে তৈরি বাড়ি ভেঙে গেলে কোথায় যাবেন? পুনর্বাসনের দাবি বসবাসকারীদের। সাধারন মানুষের অভিযোগ একের পর এক ‘‌হাওড়ার রূপকার’‌ নাম নিয়ে আসেন প্রশাসক। অথচ ভিতরটা সবই ফাঁপা। শুধপ পানীয় জলের হাহাকার এজ ধরা পড়ল। আবার বর্ষা এলেই দেখা যায় জমা জল। দিনের পর দিন জল জমা থাকে হাওড়া জুড়ে। এলাকার বিধাকরা হাঁটু জলে ফটো সেশন করে চলে যান। পাইপ ফেটে যাওয়া বামুনগাছি এবং উত্তর হাওড়ার সালকিয়া, বেলগাছিয়া সহ বিস্তীর্ণ এলাকা পুরোপুরি নির্জলা। বর্ষা এলেই বেলগাছিয়া এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। ‘‌হাওড়ার রূপকার’ রা প্রচুর সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে হাজির হন। অথচ কাজের কাজ কিছুই হয় না বলে হাওড়াবাসীর অভিযোগ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles