আপনি বাংলার আইকন! আপনি বিশ্ব ক্রিকেটের গৌরব! আপনাকে দেখেই বাংলার ছেলেমেয়েরা ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছে! আপামর বাঙালি মনে করেন, আপনাকে ছোঁয়া দুস্কর! প্রতিটি বাঙালির মননে আপনিই তো একমাত্র ‘দাদা’। প্রিন্স অব ক্যালকাটা স্বয়ং সৌরভ গাঙ্গুলিই। ‘প্রিন্স’ শব্দের ব্যবহার হয় দিয়েগো মারাদোনা কিংবা লিওনেল মেসির নামের আগে। অবশ্যই বিশ্ব ক্রিকেট বাংলার দাদাকেই প্রিন্স নামে ডাকে। মনে পড়ে ধারাভাষ্যের সময় কমেনটেটর চিৎকার করে আপনার স্কোয়ার কাটের বাউন্ডারির বিবরণ দিতে গিয়ে বলতেন ‘এক্সেলেন্ট স্ট্রোক বাই প্রিন্স অব ক্যালকাটা’। আপনার আসনে আপনি নিজেই সেরার সেরা। অথচ কোথাও একটা যেন ভ্রান্তি চোখে পড়ছে। আপনাকে যাঁরা সত্যিই হৃদয় দিয়ে ভালোবাসেন, প্রত্যেকেই মনে করছেন ‘দাদা’ কেন এতোটা সহজলভ্য হয়ে পড়ছেন। বিশ্ব ক্রিকেটের মহারাজ সৌরভ গাঙ্গুলি ও মাস্টার ব্লাস্টার শচীন তেন্ডুলকর একই আসনে প্রতিষ্ঠিত দুই বিগ্রহ। তবে কেন এতোটা সকলের কাছে নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছেন বাংলার মহারাজ ‘দাদা’? একটাই প্রশ্ন বারবার মাথা ঠুকে মরছে প্রত্যেকেরই মননে।
একটা সময় ‘দাদা’র ভুমিকা ছিল দ্বৈত! একইসাথে ভারতীয় ক্রিকেটের সবচেয়ে প্রিয় এবং অপ্রিয় খেলোয়াড় ছিলেন বটে! বেঙ্গল ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব দারুনভাবে সামলানোর পরই পৌঁছে গিয়েছিলেন আরও এক তারার লক্ষ্যে। সফল হলেনও। ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের প্রেসিডেন্ট। ভারতীয় ক্রিকেটের নব রূপকার ‘দাদা’র কাঁধে বসল আরও এক তারা। অপেক্ষায় ছিল ভারতবাসী। কাঁধে বসতে চলেছে আরও এক ‘তারা’! অপেক্ষায় ছিল ইন্টারন্যাশানাল ক্রিকেট কাউন্সিলের চেয়ারটাও। হতেই পারতেন আইসিসি সিংহাসনের মহারাজ? সকলের ভালোবাসার মানুষ ‘প্রিন্স অব কলকাতা’ কে অফসাইডে ব্যাট হাতে বিস্ময়কর দক্ষতার জন্য ‘অফসাইডের ঈশ্বর’ নামেও পরিচিত! ক্রমাগত ব্যর্থতা, স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারি এবং হারের চক্রে ধুঁকতে থাকা ভারতীয় দল যখন ওডিআই র্যাংকিংয়ে আট নম্বরে অবস্থান করছে, তখন দলের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন দাদা। এরপর শুধুই ইতিহাস রচনা নিজের হাতে, এমনকি নিজের খেয়ালখুশি মতো! আক্রমণাত্মক অধিনায়কত্বে বদলে দিয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেটের খোলনলচে। দাদার হাত ধরেই ভারত উঠে আসে ওডিআই র্যাংকিংয়ে দুই নম্বরে, টেস্টে তিনে। “দেশে বাঘ, বাইরে বিড়াল”, টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের এই অপবাদ সরাতে সক্ষম ‘দাদি’ই। নিঃসন্দেহে সৌরভ গাঙ্গুলি সর্বকালের সেরাদের একজন। একটা যুগ। বাইশ গজের পিচে সুগন্ধী সৌরভান্বিত সৌরভে মন্ত্রমুগ্ধের মতো মাতোয়ারা ক্রিকেট বিশ্ব, সে মুগ্ধতা আজও কমেনি বা হ্রাস পাওয়ার কথাও না কখনোই!
আদতে ডানহাতি ছিলেন! পাড়ার ক্রিকেটে বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের কদর ছিল বলে বাঁহাতে ব্যাটিং রপ্ত করেন! তারপর বিশ্ব ক্রিকেটে দাদাগিরি খোদ বিশ্ববাসীর জানা। টিভি রিয়েলিটি শো ‘দাদাগিরি’তে হোস্ট দাদা ক্রিকেট মাঠে দাদাগিরির জন্যই ভক্তদেরও ‘দাদা’। ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সফলতম অধিনায়ক। সৌরভ গাঙ্গুলি আজও প্রাসঙ্গিক। কারণ আপনি শুধুই ক্রিকেটার নন। আপনি এক অনুপ্রেরণা। আপনার নাম শুনলে রক্ত আজও গরম হয়। জিওফ্রে বয়কট বলেছিলেন কলকাতার রাজপুত্রের দুটি বিশেষ গুণ হল বুদ্ধিমত্তা এবং স্পষ্টভাষা, যা সমসাময়িক ক্রিকেট জগতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করেছে। সুনীল গাভাস্কার বলেছিলেন সৌরভ সত্যিই ভারতের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক। লর্ডসের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে গায়ের জামা খুলে ওড়ানোর সেই দৃশ্য যেন আজও ভোলার নয়। নতুন করে দাদা’র সম্পর্কে বিবরণ স্রেফ শব্দ খরচ ছাড়া কিছুই নয়। কিন্তূ কেন আজ ‘দাদা’ সহজলভ্য? প্রশ্ন ক্রিকেট মহলের, প্রশ্ন আপামর বঙ্গবাসীর।