Wednesday, April 9, 2025
spot_imgspot_img

Top 5 This Week

spot_img

Related Posts

প্রথমেই সুনীতাদের স্বাগত জানাল একঝাঁক ডলফিল, মাস্ক ও নাসার উদ্যোগে অবশেষে ঘরে ফিরলেন সুনীতারা

ভারতীয় সময় ভোর ৩টে ২৭ মিনিট। বুধ ভোর। সুনীতা এবং বুচকে নিয়ে ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেসএক্সের মহাকাশযান ‘ড্রাগন ফ্রিডম’ ফ্লরিডার সমুদ্রে অবতরণ। সুনীতার সঙ্গে একই মহাকাশযানে ঘরে ফিরেছেন বুচ, নিক হগ এবং রুশ নভশ্চর আলেকজান্ডার গর্বুনভ। পৌঁছে গিয়েছিল মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজ। দুই নভশ্চরকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত বহু মানুষ। সুনীতাদের ক্যাপসুলের সফল ভাবে যখন অবতরণ ফ্লরিডার সমুদ্রে। হাজির একদল ডলফিন। মহাকাশযানের চারপাশে গোল হয়ে সন্তরনরত ডলফিনরা যেন অধীর আগ্রহে দুই নভশ্চরের ফেরার অপেক্ষায় ছিল। ফ্লরিডার সমুদ্রে অবতরণ করেছে সুনীতাদের ক্যাপসুল। তাঁদের উদ্ধার করতে পৌঁছেছে মার্কিন নৌবাহিনীর একটি জাহাজ। ক্যাপসুলটির চারপাশে চক্করে উদ্ধারকারীদের বোট। সমুদ্রে ঘনঘন ভেসে উঠেছে বেশ কয়েকটি ডলফিন। ভাসমান ক্যাপসুলটিকে ঘিরে সাঁতার কেটে স্বাগত জানানো ডলফিনের ভাষায় যেন অপ্রত্যাশিত, শ্বাসরুদ্ধকর সেই সাক্ষাৎ মহাকাশচারীদের মহাকাশ থেকে প্রত্যাবর্তনের যাত্রায় এক অনন্য স্পর্শ যোগ করেছে। ক্যাপসুল থেকে বেরিয়ে আসার পর সুনীতা এবং বুচকে নিয়ে যাওয়া হয় হিউস্টন জনসন স্পেস সেন্টারে। নাসার ক্রু-কোয়ার্টারই সুনীতাদের বর্তমান ঠিকানা।

ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুনীতাদের ঘরে ফেরার পর উৎসবে মাতোয়ারা গোটা বিশ্ব। আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে উপস্থিত ক্রু ১০-এর মহাকাশচারীদের গবেষণার কাজ বুঝিয়ে, তাঁদের সঙ্গে ছবি তুলে স্পেস এক্স ক্রু ৯-এ সুনীতাদের ফেরার পথে পাড়ি। মঙ্গল সকাল ১০টা ৩৫ নাগাদ শুরু থেকে সুনীতাদের ফেরা। বুধে আটলান্টিক মহাসাগরে নিরাপদে অবতরণের লাইভ সম্প্রচার করে নাসা। সমুদ্রে অবতরণের পর মার্কিন নৌসেনার বোট হাইড্রোলিক পদ্ধতিতে জাহাজে তোলে সুনীতাদের। ড্রাগন ক্যাপসুল থেকে ৮টে ২২ নাগাদ হাসিমুখে বেরিয়ে আসেন সুনীতা উইলিয়ামস। সেখান থেকে মহাকাশচারীরা রওনা দেন হিউস্টন জনসন স্পেস সেন্টারের উদ্দেশে। ৯ মাসে ৯০০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ১৫০টি বিষয়ে গবেষণার ফল। নাসার মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোর সহ মোট চার জনকে নিয়ে ফ্লোরিডা উপকূলে সফলভাবে অবতরণ করেছে ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেসএক্সের মহাকাশযান ড্রাগন। মাস্ক ও নাসার উদ্যোগে অবশেষে ২৮৬ দিন পর পৃথিবীর মাটি ছুঁলেন সুনীতারা। ভারতীয় বংশোদ্ভূত কন্যা সুনীতা উইলিয়মস। তাঁর ভ্রাতৃবধূ ফাল্গুনী পাণ্ডিয়ার কথায়, অতি শিগগিরিই সুনীতা ভারতে আসবে। এই বছরের মধ্যেই। আমরা একসঙ্গে ছুটি কাটাতে যাওয়ারও পরিকল্পনা করে রেখেছি। সবাই মিলে একসঙ্গে সময় কাটাতে মুখিয়ে রয়েছি সকলে। সুনীতা গ্রামে ফিরলেই হবে সামোসা পার্টি। হৃদয়ে ভারতীয়ত্বের ছোঁয়ায় সুনীতা সামোসার বিরাট ফ্যান। মহাকাশ স্টেশনেও তাঁর খাদ্য তালিকায় ছিল এই খাবার! সুনীতা দেশে ফেরার আগে তাঁর পরিবারও ভারত থেকে যেতে পারে মার্কিন মুলুকে। অন্য কোথাও একসঙ্গে ছুটি কাটাতে।

পৃথিবী থেকে ২৫৪ মাইল অ‌র্থাৎ ৪০৯ কিমি উপরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন আইএসএস। প্রায় ২৫ বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নভোচারীদের আতিথেয়তা দিতে তৎপর। আমেরিকা এবং রাশিয়া মূলত ফুটবল মাঠের আকারের এই গবেষণাগারটি পরিচালনা করে। বৈজ্ঞানিক সহযোগিতার একটি মূল কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। বুচ এবং সুনীতা দু’জনেই নৌবাহিনীর পরীক্ষামূলক পাইলট ছিলেন। পরে নাসায় যোগ দেন। ৬২ বছর বয়সী বুচ টেনেসিতে হাই স্কুল এবং কলেজ জীবনে ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন ৫৯ বছর বয়সী সুনীতা ম্যাসাচুসেটসের নিডহ্যামের একজন প্রতিযোগিতামূলক সাঁতারু এবং দৌড়বিদ ছিলেন। মহাকাশে থাকাকালীন বুচ তাঁর ছোট মেয়ের কলেজের বেশিরভাগ সময় মিস করেছেন। সুনীতা মহাকাশ থেকে ইন্টারনেট কলের মাধ্যমে তাঁর স্বামী, মা এবং আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন। মাসের পর মাস মহাকাশে থাকার ফলে নানা শারীরিক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় মহাকাশচারীদের। যার মধ্যে রয়েছে পেশী এবং হাড়ের ক্ষয়, শরীরে তরলের ঘাটতি যার ফলে কিডনিতে পাথর হতে পারে, দৃষ্টি সমস্যা এবং মাধ্যাকর্ষণে ফিরে আসার পরে ভারসাম্য ফিরে পাওয়া। আইএসএস-এ যাওয়ার তিন মাস পর থেকে সেখানকার কমান্ডার ছিলেন সুনীতা। বাড়ি ফেরার আগের দিন পর্যন্ত তিনি সেই দায়িত্বেই ছিলেন।

সুনীতা এবং বুত কী খেতেন মহাকাশে নয় মাস ধরে? ২০২৪ এর ১৮ নভেম্বর, দ্য নিউ ইয়র্ক পোস্ট তাঁদের একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, বুচ এবং সুনীতা আইএসএস-এ পিৎজা, রোস্টেড চিকেন এবং চিংড়ির ককটেল খাচ্ছিলেন। প্রতিবেদনে উল্লেখিত বোয়িং স্টারলাইনার মিশনের বিষয়গুলির সঙ্গে পরিচিত একটি সূত্র জানিয়েছে, ক্রুদের পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়ারই শুধু নির্দেশ ছিল। মহাকাশচারীদের প্রাতঃরাশে সিরিয়াল, গুঁড়ো দুধ, পিৎজা, রোস্ট চিকেন, চিংড়ি ককটেল এবং টুনা খাওয়ার সুযোগ ছিল। নাসার চিকিৎসকরা তাঁদের ক্যালোরি গ্রহণের উপর একটানা নজরদারি করত। ৯ সেপ্টেম্বর নাসা-প্রকাশিত একটি ছবিতে বুচ এবং সুনীতাকে আইএসএস-এ খাবার খেতে দেখা গিয়েছিল। প্রথমে তাজা ফল এবং সবজি পাওয়া যেত। তিন মাসের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। সমস্ত মাংস এবং ডিম আগে থেকে পৃথিবীতে রান্না করা। কেবল গরম করার প্রয়োজন হত। স্যুপ, স্টু এবং ক্যাসেরোলের মতো ডিহাইড্রেটেড খাবারগুলিকে আইএসএসের ৫৩০ গ্যালন বিশুদ্ধ জলের ট্যাঙ্কের জল ব্যবহার করে পুনরায় হাইড্রেট করা হত। স্টেশনটি মহাকাশচারীদের প্রস্রাব এবং ঘাম খাওয়ার জন্য বিশুদ্ধ জলে পরিণত করে পুনর্ব্যবহার করে। বিশেষজ্ঞরা জানান, সুনীতাদের ওজন কমে যাওয়ার পিছনে খাবারের পরিমাণ কম থাকা নয়। আইএসএস-এ পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার রাখা থাকে।

সুনীতাদের পথ চেয়ে বসেছিলেন বিশ্ববাসী। অপেক্ষার অবসান। সকলের মনেই স্বস্তি। প্রতিকূলতার সঙ্গে যুঝে মহাশূন্যে কাটিয়েছেন, মনোবল অটুট রেখে নিজেদের কাজে কোনও প্রশংসাই কম নয়। দেশের প্রধানমন্ত্রী ও বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর অভিনন্দন বার্তা। সুনীতা, বুচকে এক্স হ্যান্ডলে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদির মর্মস্পর্শী বার্তা, ‘পৃথিবী তোমাদের এতদিন খুব মিস করেছে!’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জ্জী লিখেছেন, তাঁদের সাহস, মনোবল মানব জাতির গর্ব অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষত দেশের মেয়ে সুনীতার কীর্তি অসামান্য। তাঁরা অবশেষে যে পৃথিবীতে সফলভাবে ফিরেছেন, তার জন্য শুভেচ্ছা। নাসার নভোচরদের উদ্ধার করতে মহাশূন্যে পাড়ি দেওয়া বিজ্ঞানীদেরও কৃতিত্বের কথাও ভোলেননি মমতা। আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন সেই টিমকেও।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles