টাকা উড়িয়ে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা। টাকার ফলায় সংস্থাকে বিদ্ধ করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জোর প্রচেষ্টা। ব্যাক্তি না সংস্থা? কোনটা আগে? বড় প্রশ্ন? খেলাধুলার স্নিগ্ধ সবুজ রঙ নিজের কদর্য চেহারায় মেখে নতুন করে খুঁজে পেতে উদগ্রীব। টাকার স্পর্শে স্নিগ্ধ সবুজ গালিচাও হয়ে ওঠে কলুষিত গাঢ় ঘোলাটে। এমনিতেই প্রায় সব খেলার প্রশাসনেই টাকার জোরে জবরদখল। প্রশাসনে ক্রীড়া ব্যক্তিত্বের উপস্থিতি হাতে গোনা। ভারতের সবথেকে জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেটকে আঁকড়ে ধরে ওঠার জোর কসরত চলছে। আইপিএল এলেই ভিড় জমে। বঙ্গ ক্রিকেটকে দক্ষ হাতে এগিয়ে নিয়ে যেতে তৎপর স্নেহাশীষ গাঙ্গুলী, সঞ্জয় দাস, লক্ষ্মীরতন শুক্লার মতো প্রাক্তন ক্রিকেটাররা। বাংলা ক্রিকেটকে নতুন দিশা দেখিয়েছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। যাঁকে দেখেই ক্রিকেটে ভিড় জমিয়েছে অগনিত শিক্ষানবীশ। বঙ্গ ক্রিকেট শুধু নয়, বিস্তৃত ভারত ভূম অতিক্রম করে বিশ্বেও। প্রশাসকের আসনে বিরাজমান থেকেও ক্রিকেটের ব্যাকরণে নতুন অসংখ্য সংযোজন। কিন্তূ, পরোক্ষে আড়াল থেকে ঢুকে পড়ার চেষ্টায় জোর মেহনত করা ‘কালো টাকার সাদা হাত’! ক্রিকেটকেও অবলম্বন ভেবে নি:শেষ করে দেওয়ার নিমিত্তে স্পর্শ লাভে মরিয়া ওই ‘কালো টাকার সাদা হাত’। হয়তো প্রত্যেকেও পুরোটাই বুঝতে পারেন! ময়দানে কান পাতলেই শোনা যায়, ‘এক অর্থভারে নূব্জ দাম্ভিক কর্তা ফুটবলকে নিংড়ে খুন করে এবার নাকি ঢুকে পড়েছে ক্রিকেট সুন্দরীকে ধর্ষন করতে?’ ফুটবলপ্রেমীদের অভিযোগ ছিল, বাংলার ফুটবল যেটুকু ছিল তা প্রায় কেওড়াতলার কাছাকাছি পৌঁছে দিয়ে ক্ষান্ত হননি। বাংলার ফুটবলে একেবারে অস্তিত্বহীন ‘নিজ’ চেহারা। অতএব ফুটবলে ফেরার আর কোনও পথই নেই। ময়দানে নিজেকে টিকিয়ে রাখার বিকল্প পথই এবার ক্রিকেট। সেখানেও ময়দনি গুঞ্জনে কান পাতা দায়, শোনা যাচ্ছে, আরও বড় মোটা ডাল ধরতে, যায় যাক বিশ লাখ? অনেকেরই প্রশ্ন, তাহলে যে মানুষটা ময়দানের ক্রিকেটকে ভালোবেসে, সুদীর্ঘ বছর ধরে ক্রিকেটকে আঁকড়ে ধরে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। তারুন্যে যৌবনে মনপ্রাণ দিয়ে খেলেছেন ক্রিকেটও। ‘কালো টাকার সাদা হাত’ বিশ লাখে এক নিমেষে সরিয়ে দিল ক্রিকেট পাগল মানুষটার ক্রিকেট মর্যাদাই। ময়দানে কান পাতলে এও শোনা যাচ্ছে, কোনও অঙ্গপ্রতঙ্গের স্পর্শে, না ছিল কোনওদিন ফুটবল, না ছিল কোনওদিন ক্রিকেট খেলার অভ্যাস! তাহলে এতো লোভ লালসা কী কারণে? ময়দানি এক ক্রিকেট প্রেমীর প্রশ্নের উত্তরে অন্যজন বললেন, আরে, গলায় কার্ড ঝুলিয়ে, পরিবার নিয়ে বক্সে বসে খেলা দেখা, তারকাদের সঙ্গে সেলফি-ছবি তুলে পরবর্তীকালে নাতিপুতি আত্মীয়স্বজনকে দেখানো, দাদা দাদা করে গা ঘেঁষে নিজেকে সমতূল্য ভাব প্রদর্শণ, আহা এ তো আরও বড় প্ল্যাটফর্ম! যাক না পকেট থেকে বিশ লাখ? কী অপরূপ মহিমা মোর? হরদম স্বগতোক্তি থেকে নিষ্কৃত অহংয়ের গন্ধ?
বৈভবের নির্ঘোষ। হাবভাব চলনবলন যাপনে অনাবশ্যক ‘কর্তা-কত্তা’ চিৎকৃত উপস্থিতি। ক্রিকেটীয় মূল্যবোধে অনীহা। অথচ ক্রিকেটীয় পদলোভে সমীহ। চোখমুখ জুড়ে অপরের অনাবশ্যক ক্ষতিসাধনের লালসা লেলিহান। কথায় কথায় কঠিন ‘শিরদাঁড়া’র সৎ মানুষকেও গুঁজে দেওয়া ‘ঘুষ’-এ কাত করতে বিফল। কস্মিনকালেও হাতে ব্যাটবল? একদমই না! ওই ফেলে আসা ফুটবল? ধুর! ধারেকাছেই ছিল না? পছন্দের পদ লাভে মুখেও তৃপ্তির বিরল অভিব্যক্তি। হেভিওয়েটের কান এঁটো করা হাসি আর থামতেই চায় না। ধুর! ফুটবলে কিছুট্টি পেলাম না! ক্রিকেটে ‘নিজ’ বিপণনের আয়ু দীর্ঘায়িত করার শপথ। উৎসাহ বেড়ে দ্বিগুন, তিনগুন, চার গুন, ক্রিকেট যাপনের লিফ্টেও উঠে পড়া তরতর। অহমিকা সুলভ অবিমৃশ্যকারিতা, অধিকতর প্রত্যাশা আত্মস্থ করার স্পৃহা। উচ্চ আকাঙ্ক্ষার প্রবণতা, তীব্র বাতিকগ্রস্ততা, যা মাঝে মাঝে হয়ে ওঠে শীতল এবং ধ্বংসাত্মক। ঠিক যেমনটা হয়েছিল আয়তক্ষেত্রের ক্রীড়াজগতে। আপাতত গুগল গোলকের ক্রীড়ায় মনোনিবেশে। তারুন্যে মনপ্রাণ নিবেদিত ক্রিকেট খেলুড়েকে বিশ লাখি ঠেলায় এক্কেবারে বাউন্ডারির বাইরে ফেলার ফেলার অন্তিম প্রচেষ্টা।
এমনিতেই কথায় আছে, অতি-ধনীরা চিরকালই ক্ষমতার গা ঘেঁষে থাকার চেষ্টা করেন। মাথা গলিয়ে ঢুকে পড়া সেই বৃত্তেই। ডুবও দেওয়া প্রত্যক্ষ ক্রিকেট মহাকুম্ভে? নিজস্ব ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথও আরও প্রশস্থ হতে সাহায্য করছে নিশ্চয়ই। কত দিন অক্ষুণ্ণ থাকবে ক্রিকেটের সঙ্গে সঘন রসায়ন? প্রাক্তন ক্রিকেটার, প্রথিতযশা ক্রিকেটার, দীর্ঘদিন ক্রিকেট চর্চা করার ব্যাকরণী ক্রিকেট প্রশাসকরা মেনে নিতে পারবেন আদৌ এই আগন্তূককে? আপাতত ভিজে বেড়াল হয়ে প্রবেশ, পরবর্তীতে কর্তৃত্ববাদী মানসীকতা ফলাতে গেলেই পর্দা ফাঁস! গেল গেল রব। হিংস্র ক্ষতিকারক চোখে স্মিত হাসির ভান বজায় রাখা খুবই কষ্টসাধ্য বিষয়। তবু আপাতত কিছু পেতে গেলে যথেচ্ছ স্যাক্রিফাইস করতেই হবে, বসস্। কুবেরের ভান্ডার ভাঁড়িয়ে অমিত শক্তিশালী হওয়ার অন্তিম প্রচেষ্টা। শুধু ময়দানে যেন তেন প্রকারেণ টিকে থাকা। ময়দানি ক্রিকেট মহল বলছে, এক অতি-লাভজনক ব্যবসার মালিকানা। এমনিতেই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অ্যাপেক্স কাউন্সিলের অনেকেই ভ্রু কুঁচকেছেন ‘আগন্তূক’ নিয়েই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্রিকেট মহলে অনেকেরই বিস্তর অভিযোগের পাহাড় ‘আগন্তূক’ কে নিয়েই। প্রাক্তন এক বিদগ্ধ ক্রিকেটার বলেই বসলেন, ‘‘এটাকে প্রবেশ বলা যায় না, ‘অনুপ্রবেশ’, বুঝতেই পারছি না। মাত্র বিশ লাখের ঘাড়ধাক্কায় ওলট পালট’’? কেতাবি চেহারার ধোপদুরস্ত ভদ্দরলোকের প্রভাবশালী ইচ্ছা। জাগরিত ক্রিকেট অন্দরমহলেরই মৌলিক জিজ্ঞাসা। সর্বাধিক অনৈতিক শোষণের প্রশ্নটি থেকেই যাবে? ভবিষ্যৎই বলবে, কোথায় এর সদুত্তর? ব্যক্তিসত্তার অস্তিত্ব যখন কেউ বৃহৎ পরিসরে অনুভব করে, তখনই তা হয়ে ওঠে ‘আত্মনো মোক্ষার্থং জগদ্ধিতায় চ’।