১১৩ তম জন্মদিবসে বিশ্বশ্রী মনোহর আইচ। একজন বিশ্ববিখ্যাত বডিবিল্ডার। অবিভক্ত বঙ্গের কুমিল্লা জেলার ধামতি নামক এক প্রত্যন্ত গ্রামে ১৭ই মার্চ, ১৯১২ জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫২ সালে আয়োজিত মিস্টার ইউনিভার্স-গ্রুপ ৩ বিভাগে বিজয়ী হয়েছিলেন। বডি বিল্ডিং-এ এশিয়ান গেমসে তিনবার স্বর্ণ পদক তাঁর দখলে। তাঁর উচ্চতা ৪ ফুট ১১ইঞ্চি প্রায় ১.৫০ মিটার হওয়ার কারণে তাঁকে ‘পকেট হারকিউলিস’ ও ‘ভারতীয় শরীরচর্চার জনক’ নামে অভিহিত করা হয়। ছোটবেলা থেকেই তাঁর শারীরিক শক্তি সম্বন্ধীয় খেলাধূলা যেমন কুস্তি, ভারোত্তোলনের প্রতি ছিল প্রভূত আগ্রহ। ১২ বৎসর বয়সে কালাজ্বরে আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। শীঘ্রই তিনি ব্যায়ামের মাধ্যমে নিজের স্বাস্থ্যের পুনরুদ্ধারে সমর্থ হন। শরীরকে সুগঠিত করার লক্ষ্যে পুশ-আপ, স্কোয়াটস, পুল-আপ, লেগ রেইসেস এবং ঐতিহ্যগত সিট-আপ ইত্যাদি নানান রকমের শরীরচর্চা শুরু করেন। ঢাকার জুবিলি স্কুলে বিদ্যা শিক্ষা শুরু। বিদ্যালয়ে পাঠরত অবস্থায় শারীরিক কসরতের জন্য রূপলাল ব্যায়াম সমিতিতে ভর্তি হন। এরপর ঢাকায় থাকাকালীন ‘ফিজিক অ্যান্ড ম্যাজিক’ নামক প্রদর্শনীতে বিশ্বখ্যাত জাদুকর পি সি সরকারের সঙ্গে ক্রীড়াকৌশলাদি প্রদর্শন শুরু করেন। দাঁত দিয়ে ইস্পাত বাঁকানো, গলার সাহায্যে বল্লম আনমিত করা অথবা তরোয়ালের উপর উদর অধিস্থাপিত করার মত কৌশলও প্রদর্শন করতেন। এমনকি এই কাজের জন্য তাঁকে কারাবরণ করতে হয়েছিল। জেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা শারীরিক অনুশীলন করতেন দেখে কারাগার কর্তৃপক্ষ ওনার জন্য বিশেষ খাদ্যসামগ্রীর ব্যবস্থা করেছিলেন।

১৯৫০ সালে মাত্র ৩৭ বছর বয়সে মিস্টার হারকিউলিস খেতাব জয়। ১৯৫১ সালে আয়োজিত মিস্টার ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। ১৯৫২ সালে একই প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে মিস্টার ইউনিভার্স খেতাব জেতেন। ১৯৫৫ ও ১৯৬০ সালে মিস্টার ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান অধিকার করেন। ১৯৬০ সাল থেকে বিভিন্ন বডি বিল্ডিং এর উপর বিভিন্ন প্রদর্শনী করেন। বিশ্বশ্রীর শেষ প্রদর্শনী ছিল ২০০৩ সালে ৯০ বৎসর বয়সে।

বিশ্বখ্যাত বডিবাল্ডার মনোহর আইচের প্রদর্শিত কলা কৌশলগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ৩০০ কিমি স্কোয়াট, মাংসপেশির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রদর্শন, ১৫০০ পাতার একটি বই ছিঁড়ে ফেলা। শারীরিক কসরত প্রদর্শণ উপলক্ষ্যে সারা পৃথিবী ভ্রমণ করেছেন এবং তাঁর শক্তি এবং মাংস পেশির নিয়ন্ত্রণের কারণে বিশ্বে প্রশংসিত। বৃদ্ধ বয়সেও তিনি একটানা ৯০ মিনিট ব্যায়াম অনুশীলন করতে পারতেন। নিজে ব্যায়ান করার জন্য কলকাতাস্থিত নিজের ব্যায়ামাগার, ‘দ্য ফিজিক’ খুলেছিলেন। তাঁর এই ব্যায়ামাগার থেকেই তৈরী হয়েছেন ভারতীয় বডি বিল্ডিংএর রত্ন সত্যেন দাস, সত্য পাল, সন্দীপন সিনহা এবং হিতেশ চ্যাটার্জীর মত বডি বিল্ডাররা। মনোহর আইচের খাদ্য তালিকায় ছিল ভাত এবং অন্যান্য স্বেতসার জাতীয় খাদ্য, ডাল, বিভিন্ন সবজি, ফল আম, কলা, কাঁঠাল ও পেয়ারা। আমিষ জাতীয় খাদ্যের মধ্যে পছন্দের তালিকায় ছিল মিষ্টি জলের টাটকা মাছ। দুই পুত্রের জনক মিস্টার ইউনিভার্স মনোহর আইচ। শতবর্ষ পার করা বডিবিল্ডারের শেষ জীবন খুব একটা সুখের ছিল না। অসংখ্য অভিযোগ ছিল পুত্রদের বিরুদ্ধে। ছেলেদের থেকে খুব একটা ভালো আচরণ পাননি বলেও বিস্তর অভিযোগ। ৫ই জুন, ২০১৬ সালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন বিশ্বশ্রী।