নকল ওষুধ। ডাহা ফেল গুণমান পরীক্ষা্য়। রোগ সারা দুরস্থ বাড়ছে সংক্রমণ। বড় দোকানগুলো তো আছেই। সবচেয়ে বেশী দায়ী অলিতে গলিতে থাকা ছোট দোকানগুলি। ব্র্যান্ডেড প্রোডাক্ট রাখার বদলে জেনেরিক প্রোডাক্ট ব্যবহার করে চলছে জাল কারবার। এমনকি কোনও ছোট রিটেইল সবে থাকছে না যথার্থ ডিগ্রিধারী ফার্মাসিস্টও। ধুলো ময়লায় আবৃত ওষুধের দোকানগুলোতে স্বাস্থ্যও পরীক্ষা সঠিকভাবে করে না ড্রাগ কন্ট্রোল বলে অভিযোগ। লাইসেন্স রিনিওয়ালের সময় পকেটে টাকা গুঁজে দিয়ে কাজ সারেন অসাধু রিটেইলাররা বলে বিস্তর অভিযোগের পাহাড়। ধরা পড়েছে জাল ৫৩টি ওষুধ। তালিকায় ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ নিরাময়ে ব্যবহৃত ওষুধ ক্লাভহাম ৬২৫, গ্যাসের জন্য ব্যবহৃত প্যান ডি, জ্বরের জন্য ব্যবহৃত প্যারাসিটামল ট্যাবলেট আইপি ৫০০ ইত্যাদি ওষুধ। সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্স কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন-র রিপোর্টে প্রকাশ্যে তথ্য। বাজারে প্রচুর ওষুধ রয়েছে সেগুলির গুণগত মান যাচাই করার জন্য প্রতি মাসে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেন সেন্ট্রাল ড্রাগ স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন-র আধিকারিকরা। আগস্টেই ‘নট অফ স্ট্যান্ডার্ড কোয়ালিটি অর্থাৎ এনএসকিউ অ্যালার্ট-র তালিকা প্রকাশ করেছে সিডিএসসিও। তালিকায় প্রথমেই ৪৮টি ওষুধের নাম, দ্বিতীয় তালিকায় ৫টি ওষুধ। তালিকায় থাকা ব্র্যান্ড বড় কিছু ওষুধ তৈরির সংস্থার নাম জড়িয়ে। এর মধ্যে একটি সংস্থা আবার রাষ্ট্রায়ত্ত। গ্যাসের সমস্যায় ভরসাযোগ্য ওষুধ হিসেবে প্যান-ডি চলে চিকিৎসকদের পরামর্শেই। ডায়াবেটিসের ওষুধ গ্লিমেপিরাইড, হাই প্রেসারের ওষুধ টেলমিসার্টান রয়েছে তালিকায়। গুণগত মানের নিরিখে উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হয়েছে ক্লাভহামও। ওষুধ প্রস্তুতকারী এক সংস্থার সাফাই, সমস্ত ব্যাচের ওষুধের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে সেগুলি তাঁদের তৈরি নয় এবং সেগুলি জাল। ঘটনাটি নিয়ে তদন্তের দাবি।
প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে গিয়েই ওষুধের উপরে দেদার ছাড় দিচ্ছেন বহু ব্যবসায়ী। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশ তথা রাজ্যে জাল ওষুধের রমরমা ক্রমশ বাড়ছে। জাল ওষুধ চেনার উপায় ঠিক মতো জানা নেই সাধারণ মানুষ তো বটেই, ওষুধ ব্যবসায়ীদেরও। চোরাগোপ্তা দোকানদাররাও নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য বিক্রিও করছেন জাল ওষুধ। এমনটাই স্বীকার করল বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্টস অ্যাসোসিয়েশন অর্থাৎ বিসিডিএ। গুণগত মানের পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ ওষুধ ব্যবহার বন্ধ করতে বৃহস্পতি রাতেই নির্দেশিকা জারি করেছেন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। জানানো হয়েছে, পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ ব্যাচের ওষুধের তালিকা ও তথ্য সমস্ত সরকারি হাসপাতাল, সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর, পাইকারি বিক্রেতা এবং ডিস্ট্রিবিউটরদের নির্দেশিকা দিয়ে জানাতে হবে রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলকে। সেন্ট্রাল ড্রাগ স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজ়েশন অর্থাৎ সিডিএসসিও সূত্রের খবর, গত তিন মাসে প্রায় ৩০০টি ওষুধ গুণমানের পরীক্ষায় ফেল করেছে। যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের একাধিক সংস্থার তৈরি ওষুধও রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরও। নির্দেশ হয়েছে, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাসপাতাল থেকে শুরু করে দোকানেও প্রকাশ্যে ঝোলাতে হবে অনুত্তীর্ণ সব ওষুধের তালিকা। তা রাখতে হবে স্বাস্থ্য দফতরের ওয়েবসাইটেও। ওই সব ওষুধ বেচাকেনা হচ্ছে কিনা, নজরদারি চালাতে দোকানে আচমকা পরিদর্শন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলকে। গাফিলতি ধরা পড়লে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে। রাজ্যের যে সমস্ত ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার তৈরি ওষুধ অনুত্তীর্ণের তালিকায় রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যসচিব। ধুলো ময়লায় আবৃত ওষুধের দোকানগুলোতে নজরদারী চালানোর নির্দেশ। ওষুধের দোকানগুলোর স্বাস্থ্যও পরীক্ষা করার নির্দেশ। অসাধু ব্যবসায়ীর গলিতে ঘুপচি কারবার করে দেদার ভ্যাকসিনও গ্রামের দোকানগুলোতে গিয়ে সাপ্লাই দেন।
বিসিডিএ-এর মুখপাত্র শঙ্খ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘জাল বা ভুয়ো ওষুধের সমস্যা গুরুতর। যা দেশের জনগণের স্বাস্থ্য এবং ওষুধ ব্যবসা, দু’টিরই ক্ষতি করছে। দ্রুত এর বিরুদ্ধে সরকারের পদক্ষেপ করা প্রয়োজন। ৩৫ শতাংশ জাল ওষুধ তৈরি হয় এ দেশে। মিশর এবং চিনেও জাল ওষুধ তৈরির রমরমা কারবার চলে। সম্প্রতি যে ওষুধগুলি অনুত্তীর্ণ হয়েছে, তার বেশির ভাগ হাসপাতালে সরবরাহ করা হয়। অল্প কিছু ওষুধ দোকানে বিক্রি হয়। ব্যবসায়ীরাও বুঝতে পারেন না জাল ওষুধ কোনটি। সংগঠনের কোনও সদস্য জাল ওষুধের কারবারে ধরা পড়লে সাসপেন্ড করা হয়। ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে জেলায় জেলায় প্রচার চালাবে বিসিডিএ। বিসিডিএ-র কর্তারা জানাচ্ছেন, দেশে মাত্র ৩০০টি ওষুধে বারকোড দেওয়া রয়েছে। কিন্তু তাতেও নকল হচ্ছে। জাল ওষুধ আটকাতে সিডিএসসিও-কে আরও কড়া হতে হবে বলেও দাবি বিসিডিএ-র। সেই কাজে তারাও ড্রাগ কন্ট্রোলের সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করতে ইচ্ছুক বলে জানায় সংগঠন।’’ বিসিডিএ-র তরফেও দাবি, মানুষ সস্তায় ওষুধ কিনুন। কিন্তু সেটা কখনওই গুণগত মানের সঙ্গে আপস করে নয়। বড় ওষুধ ব্যবসায়ীরা ২০-৩০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছেন। তাঁদের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে মাঝারি ও ছোট ব্যবসায়ীরা আনকোরা ডিস্ট্রিবিউটরের থেকে ওষুধ কিনে মুনাফা লুটে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। এতেই বিপত্তি। শিডিউল কে’ তালিকাভুক্ত অ্যান্টিসেপটিক ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল, মাউথওয়াশ, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ক্রিম, কাশির লজেন্স, অ্যান্টি অ্যালার্জি, জ্বর-ব্যথা, নাকের স্প্রে, খুশকির শ্যাম্পু, কোষ্ঠকাঠিন্যের সিরাপ, অ্যান্টি-ব্যাক্টিরিয়াল, অ্যান্টিসেপটিক লোশন এবং গর্ভনিরোধক বিভিন্ন ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে মুদিখানা দোকানে। বিসিডিএ-র সম্পাদক পৃথ্বী বসু বলেন, ‘‘ওষুধ সস্তায় পাওয়ার জন্য সবার আগে জিএসটি প্রত্যাহার করতে হবে। কেন্দ্রই একমাত্র পারে ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার উপরে চাপ তৈরি করে দাম আয়ত্তে রাখতে। একই ওষুধের তিন জায়গায় তিন রকমের দাম কেন হবে?’’
২০২৫ বছরের প্রথম দু মাসে দেশের বিভিন্ন সংস্থার তৈরি প্রায় ৩০০ ওষুধ কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোলের গুণমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি। উত্তীর্ণ হতে না পারা সংস্হার মধ্যে এই রাজ্যের একাধিক সংস্থার ওষুধ রয়েছে বলে খবর। খোলা বাজার থেকে এইসব ওষুধের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা চালায় কেন্দ্রীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। পরীক্ষাগারে পরীক্ষার পর সেগুলিকে ‘নট ফর স্ট্যান্ডার্ড কোয়ালিটি ড্রাগস’ ঘোষণা করা হয়। উত্তীর্ণ হতে না পারা ওষুধের তালিকায় নামী সংস্থার বহুল প্রচলিত ব্র্যান্ডের একাধিক ওষুধ রয়েছে বলে রিপোর্টে প্রকাশ। চিকিৎসকদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যেও উদ্বেগ ছড়িয়েছে। বাজারে জাল ওষুধের রমরমা নিয়ে জল্পনার মধ্যেই সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশনের ওষুধ পরীক্ষার সাম্প্রতিক রিপোর্ট নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। বিভিন্ন কারণে ড্রাগ কন্ট্রোলের ছা়ড়পত্র পায়নি নামী দামী ব্রান্ডের একাধিক ওষুধ। কাফ সিরাপ, সাধারণ স্যালাইন থেকে শুরু করে পক্সের টিকা, বিভিন্ন এন্টিবায়োটিক ঔষধও রয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে প্যাকেটের গায়ে ছাপানো দাবি অনুয়ায়ী ভেতরে ওষুধ মিলছে না। আবার অভিযোগ কোনও কোন ও ট্যাবলেট খাবার পর শরীরে গিয়ে দ্রবীভূত হচ্ছে না, শক্তই থেকে যাচ্ছে। আবার কোনওটায় যে পরিমাণ ওষুধ আছে বলে দাবি করা হচ্ছে তার মাত্রা কম থাকছে। কোনও কোনও ওষুধে অপ্রয়োজনীয় দূষিত পদার্থ পাওয়া গেছে। সেই সমস্ত ওষুধগুলির সম্পর্কে সতর্কতা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগ।
সম্প্রতি জাল ওষুধের কারবার ধরাও পড়ছে হাওড়ায়। রমরমিয়ে চলছিল জাল ওষুধের কারবার। ড্রাগ কন্ট্রোল দপ্তরের আধিকারিকদের হানায় উদ্ধার হয়েছে বিপুল পরিমাণ জাল ওষুধ। সেই সঙ্গে জাল ওষুধ বিক্রির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে একজনকে। হাওড়া জেলার ড্রাগ কন্ট্রোল অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে, আমতার একটি ওষুধ সরবরাহকারী সংস্থা জাল ওষুধের ব্যবসা করছিল। একটি নামী ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার রক্তচাপের জাল ওষুধ বিক্রির অভিযোগ এসেছিল আমতার একটি ওষুধ সরবরাহকারী সংস্থার বিরুদ্ধে। এই অভিযোগ পাওয়ার পরে, বৃহস্পতিবার ওই সংস্থার গুদামে হানা দেন রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোল দপ্তরের আধিকারিকরা। ওই গুদামে হানা দিয়ে প্রায় ২০ লক্ষ টাকার জাল ওষুধ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি জাল ওষুধ বিক্রির অভিযোগে ওই ওষুধ সরবরাহকারী সংস্থার মালিক বাবলু মান্নাকে গ্রেপ্তার করেছে ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগের আধিকারিকরা। মুদি দোকানেও মেডিসিন বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ!
কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে ৩০০টি প্রয়োজনীয় ওষুধের উপর কিউআর কোড লাগিয়ে দেয় সংশ্লিষ্ট ওষুধ কোম্পানি। সম্প্রতি একটি নামী ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার নজরে আসে তাদের তৈরী রক্তচাপ ওষুধের কিউআর কোড জাল করা হয়েছে। এরপরেই ওই ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার পক্ষ থেকে রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলে অভিযোগ জানানো হয়। এই নিয়ে তদন্ত করে ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগের আধিকারিকরা জাল ওষুধ সরবরাহকারী সংস্থা হিসেবে আমতার একটি ওষুধ সরবরাহকারী সংস্থার সন্ধান পায়। তার পরেই বৃহস্পতিবার বিকালে ওই ওষুধ সরবরাহকারী সংস্থার গুদামে হানা দিয়ে ২০ লক্ষ টাকার জাল ওষুধ বাজেয়াপ্ত করেন। ড্রাগ কন্ট্রোল আধিকারিক সূত্রে খবর এই জাল ওষুধ বিহার থেকে আনা হয়েছে। ওই সংস্থা ১ কোটি টাকার বেশী জাল ওষুধ বাজারে বিক্রি করেছে। সেইসব জাল ওষুধ কোথায় দেওয়া হয়েছে এবং এই ঘটনার পিছনে আর কারা জড়িত আছে তা নিয়ে তদন্ত করছেন ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগের আধিকারিকরা।
বেঙ্গল কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস অ্যাসোসিয়েশন বিসিডিএর উদ্বেগ প্রকাশ, ইতিমধ্যে প্রচুর ওষুধের নকল ছড়িয়ে গিয়েছে বাজারে।
প্যান ডি, প্যারাসিটামল, গুণগত পরীক্ষায় ফেল ৫৩টি ওষুধ। ওষুধগুলি কেনার জন্য প্রেসক্রিপশনেরও দরকার হবে না। তালিকায় রয়েছে প্রায় ৪০০ ওষুধ। অনলাইনে ওষুধ বিক্রি নিয়েও উদ্বেগ। অনলাইনে অর্ডার করা যে ওষুধ বাড়িতে আসছে সেটি সঠিক কি না বা ঠিক মতো সংরক্ষণ করা হয়েছে কি না তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। অনুত্তীর্ণ ওষুধগুলোর সঠিকভাবে পরিশোধন করা তরল দিয়ে বানানো হয়নি, আবার কোনোটার ট্যাবলেটের গায়ে কালো কালো ছোপ। কোনোও ট্যাবলেট ক্যাপসুলের আবার ল্যামিনেশন-এর ত্রুটি কোনোটায় একই স্ট্রিপে থাকা কিছু ট্যাবলেট এক রঙের, কিছু ট্যাবলেট অন্য রঙের। কোনও কোনও ওষুধ আবার ব্র্যান্ড জাল করে বানানো বলে অভিযোগ। এর মধ্যে একাধিক বহুজাতিক সংস্থার ব্র্যান্ডেড ওষুধও আছে। সমস্ত ব্যাচের ওষুধগুলোর বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগ।
বাজারে রমরমিয়ে বিক্রি ভেজাল ওষুধ! আসল-নকল চেনার পরামর্শ বিশিষ্ট চিকিৎসকদের। ভুয়ো ওষুধের জাল থেকে কীভাবে বাঁচাবেন অসহায় সাধারন মানুষ? পরামর্শ চিকিৎসকদের। সারা দেশে নকল ওষুধের সমস্যা। এক বছরে গুণমান পরীক্ষায় প্রায় ১ হাজারটি ওষুধ ফেল। এ কলকাতার সেন্ট্রাল ড্রাগ ল্যাবের পরীক্ষায় ৩১২টি ওষুধের নমুনা মানহীন বলে প্রমাণিত। এ হেন পরিস্থিতিতে মানুষের সামগ্রিক স্বাস্থ্য সংকট।
প্যাকেজিং পরীক্ষা: মূল ওষুধের প্যাকেজিং সাধারণত উচ্চমানের হয়। যদি প্যাকেটের রঙ, ফন্ট, বা লোগো অস্পষ্ট বা ভুল মনে হয়, অবশ্যই নকল হওয়ার সম্ভবনা।
মেয়াদ উত্তীর্ণ তারিখ: ওষুধের মেয়াদ উত্তীর্ণ তারিখ এবং ব্যাচ নম্বর স্পষ্টভাবে মুদ্রিত থাকে। যদি এটি অস্পষ্ট বা অনুপস্থিত হয় তবে সতর্কতা জরুরী।
মূল্যের পার্থক্য: মূল ওষুধের তুলনায় যদি কোনো ওষুধের দাম অত্যন্ত কম হয়, তাহলেই নকল হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
ওষুধের রং ও আকার: ওষুধের রং, আকার বা গন্ধে কোনো অস্বাভাবিকতা থাকলেই নকল হতে পারে। ওষুধ কেনার পর দেখুন, সেই ওষুধ সহজে ভেঙে যাচ্ছে কিনা অথবা সেই ওষুধের গায়ে ব্লিস্টার তৈরি হচ্ছে কিনা। ম্যানুফ্যাকচারিং এবং ওষুধ স্টোরেজের সময় সঠিক তাপমাত্রায় না রাখলে ওষুধ ভেঙে যেতে পারে। ক্যাপসুলের ক্ষেত্রে দেখা যেতে পারে সেটি অসমতল কিনা।
কিউ আর কোড স্ক্যান: ওষুধের পিছনের নথি থেকে কিউ আর কোড অবশ্যই স্ক্যান করে ওষুধটির কম্পোজিশন ও কম্পানির তথ্য, ব্যাচ নাম্বার ও যথাযথ লাইসেন্স আছে কিনা তা চেক জরুরী।ব্র্যান্ডের ওষুধে ভেজাল থাকলে ডাক্তারদের পরামর্শ, সুগার হোক বা প্রেশার, নিয়মিত খাওয়ার ওষুধ নকল কিনা তা বারবার স্যাম্পলিং ছাড়া বোঝার আর কোনও উপায় নেই। জীবনযাত্রার মান অপরিবর্তিত রেখে নির্দিষ্ট ওষুধটি খেয়ে প্রতিদিন সকালে প্রেশার চেক করতে হবে। কারণ, একটি ওষুধ শরীরে কাজ দেবে কিনা তা অনেকগুলি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। কাজেই প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণ ছাড়া কোনও উপায় নেই। প্রকৃত অর্থে ওষুধ ভেজাল কিনা তা পরীক্ষা করা একমাত্র ল্যাব টেস্টের সাহায্যেই সম্ভব। দেশে ল্যাব সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। দেশের নিম্নবিত্ত মানুষরা ওষুধের ক্ষেত্রে পুরোপুরি ভাবেই সরকারের উপর নির্ভরশীল। কাজেই সরকারকে আরো বেশি তৎপর হয়ে মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে। বললেন চিকিৎসকরা
পাঠকদের প্রতি আবেদন: প্রতিবেদনটি চিকিৎসকের মতামতের ভিত্তিতে ও সমস্থ ওষুধের সংগঠন ও নানান অভিযোগের ভিত্তিতে লেখা। সম্প্রতি ধারাবাহিকভাবে হতে চলা সমস্যা সম্পর্কে সাধারণ ধারণার উপর আলোকপাত ও সাধারন মানুষকে ওয়াকিহাল করা। ব্যক্তিবিশেষে প্রতিটি সমস্যার চিকিৎসা এবং নিরাময়ের পদ্ধতি পৃথক। যে কোনও সমস্যায় শুধুমাত্র এই প্রতিবেদনের কথায় ভরসা না রেখে, ব্যক্তিগতভাবে চিকিৎসকের বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে এবং অবশ্যই নিজস্ব সুবুদ্ধি প্রয়োগ করা জরুরী।