খরচ প্রায় ২৫০ কোটি টাকার উপর। দিঘায় তৈরি জগন্নাথ মন্দির। সাধারণের জন্য খুলে যাবে দরজাও। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলে দিঘায় জগন্নাথ মন্দির। বহু পর্যটক এক ফাঁকে দেখে যাচ্ছেন মন্দির। এপ্রিল মাসে মন্দিরটির উদ্বোধন। ঘোষণা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। পর্যটকদের জন্য দিঘাতেই জগন্নাথ মন্দির। নিউ দিঘা স্টেশন সংলগ্ন নন্দকুমার ১১৬বি জাতীয় সড়কের পাশেই অবস্থিত মন্দির। ২০১৮ সালে এই মন্দির তৈরির ঘোষণা রাজ্যের। গত বছর অক্ষয় তৃতীয়ার দিন মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল। চলতি বছর অক্ষয় তৃতীয়াতেই উদ্বোধন। রাজস্থান থেকে আনিত বেলেপাথর দিয়ে তৈরী মন্দির। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের মতোই উচ্চতা সম্পন্ন দিঘার মন্দিরটিরও। মন্দিরের পারিপার্শ্বিক নকশাও প্রায় একই। জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন হলে সেখানেও রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।
ওল্ড দিঘা থেকে নিউ দিঘা যাওয়ার পথে দিঘা উন্নয়ন পর্ষদের ২০ একর জায়গাতেই মন্দির নির্মিত। ২০১৯ সালে দিঘায় গিয়ে ঘুরতে ঘুরতেই জগন্নাথ মন্দির তৈরির করার কথা ঘোষণা মমতার। তার পরেই সিদ্ধান্ত। পুরীর মন্দিরের আদলেই সৈকত শহরে জগন্নাথ মন্দির। উচ্চতাও পুরীর মন্দিরের সমান। কোভিড পরিস্থিতির কারণে নির্মাণকাজে দেরি। মন্দির তৈরির সমস্ত খরচ রাজ্য সরকারের বলে সূত্রের খবর। ২৫০ কোটি টাকার বেশী খরচ করে নির্মিত মম্দির। পুরোহিতদের পরামর্শে ৩০ এপ্রিল, অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে মন্দির উদ্বোধন। মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটনের প্রস্তুতি হিসাবে হোমযজ্ঞ শুরু ২৯ এপ্রিল থেকে। অনুষ্ঠানে থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী।

দিঘার জগন্নাথধামে রয়েছে ভোগ ঘর, স্টোর রুম, রেস্ট রুম, পুজোর ডালা ঘর। জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার মার্বেলের মূর্তি তৈরি হয়ে গিয়েছে। নিমকাঠ দিয়ে মূর্তিগুলি তৈরি। নিমকাঠের মূর্তি সামনে রেখেই পুজো চলবে। জগন্নাথধাম ছাড়াও রয়েছে স্বর্গদ্বার, মা বিমলা অর্থাৎ লক্ষ্মীমাতা মন্দির, রাধাকৃষ্ণ মন্দির। মূল প্রবেশপথের নাম ‘চৈতন্যদ্বার জগন্নাথধাম’। চৈতন্যদেবের মূর্তি ও চৈতন্যদেবের অন্তর্ধান দৃশ্য প্রত্যক্ষ করতে পারছেন দর্শক। পুরীর মন্দিরের আদলে প্রতি দিন ধ্বজা উত্তোলন। এ জন্য পুরী থেকে বংশানুক্রমে ধ্বজাবহন করে আসা পরিবারগুলি থেকে আনিত তিন-চার জনকে এখানে রাখা হবে। ধ্বজা বহনের জন্য মুখ্যমন্ত্রী পুরীর মন্দিরের ছোট দয়িতাপতি রাজেশের সঙ্গে পরামর্শ করেছেন। দিঘার জগন্নাথধামের সামনে পুরীর মতো খাজা, কালীঘাটের মতো প্যাঁড়া, গুঁজিয়া-সহ পুজোর নানা সামগ্রী বিক্রির ব্যবস্থা। এই ব্যবসায় স্থানীয় সনাতনীদের অগ্রাধিকার সবসময়। পুরীর আদলে একটি সোনার ঝাড়ুও ব্যবহার মন্দির প্রাঙ্গণ পরিষ্কার জন্য। ঝাড়ুর হাতলটি চন্দন কাঠে তৈরি। সোনার ঝাড়ুর জন্য মুখ্যমন্ত্রী নিজে পাঁচ লক্ষ টাকা দেন। মন্দিরের পাশাপাশি সমুদ্রপারে ঘাট এমনকি রথ রাখার আলাদা বন্দ্যোবস্তও। মূল মন্দির চত্বরের মধ্যেই পুরোহিতদের থাকার ব্যবস্থা। তিন-চারটি করে শয্যাবিশিষ্ট ঘর। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের ‘প্রথা’র আদলে প্রসাদের মধ্যে স্থানীয় মিষ্টির প্রাধান্য, দিঘার পুরানো জগন্নাথ মন্দিরকে ‘জগন্নাথের মাসির বাড়ি’ হিসেবে চিহ্নিত, জগন্নাথ-বলরাম ও সুভদ্রার জন্য তিনটি রথ নির্মাণ। পুরীর মন্দিরেএর মতোই প্রতি দিন সন্ধ্যায় ধ্বজা তোলার নিয়ম দিঘার মন্দিরেও। ‘চৈতন্য ফটক’ পুরীর স্বর্গদ্বারের মতোই আধ্যাত্মিক পরিবেশ। পর্যটকদের জন্য মন্দির চত্বরে কোনও অতিথিশালা থাকছে না।
মন্দিরের সামনের অতিথিশালাই মূল প্রশাসনিক ভবন। মন্দির দেখভালের সমস্ত কাজ সেখান থেকেই। মন্দির পরিচালনার জন্য একটি ট্রাস্টি বোর্ড বা অছি পরিষদ তৈরি রাজ্যের মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে। কমিটিতে থাকবেন পুরীর মন্দির থেকে চার জন, ইসকনের পাঁচ জন সনাতনী প্রতিনিধি এছাড়া স্থানীয় পুরোহিতদের চার জন। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, হিডকোর প্রতিনিধিও অছি পরিষদে থাকবেন। জগন্নাথধামে প্রশাসনিক নজরদারির জন্য মন্দির সংলগ্ন জেলা পরিষদের নবনির্মিত ভবন অধিগ্রহণ করা হয়েছে। প্রশাসনিক ভবনে থাকবে অতিরিক্ত পুলিশ পোস্ট ও চিকিৎসাকেন্দ্র এবং দমকলের দফতর। জগন্নাথ মন্দিরের উপর নজরদারির জন্য এক জন অতিরিক্ত জেলাশাসক এডিএম-কে নোডাল অফিসার নিয়োগ।
দিঘার জগন্নাথ মন্দির দিঘার প্রতি সাধারণ মানুষের আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে তুলবে। অক্ষয় তৃতীয়াতেই উদ্বোধন দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের। দ্বারোদ্ঘাটনের সরাসরি সম্প্রচারের জন্য ব্লকে ব্লকে লাগানো হবে জায়ান্ট স্ক্রিন। প্রবল ভিড় ঠেকাতেই এই সিদ্ধান্ত। মন্দির উদ্বোধন ও পুজোর সম্প্রচার। রাস্তা প্রশস্তকরণে রথযাত্রার সময়ে ভক্তদের সমাগমেও বিশেষ সুবিধা। দিঘা সমুদ্র সৈকত একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রস্থলও। মন্দির উদ্বোধনের পরেই তার পরিচালনার যাবতীয় দায়িত্ব তুলে দেওয়া হবে ইসকনের হাতে। অনেকেই মনে করছেন, দিঘার জগন্নাথ মন্দির পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে সৈকত শহরকে।