কেন হচ্ছে না হাওড়া পুরসভার নির্বাচন? রাজ্যের থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে মার্চে কিংবা এপ্রিলের প্রথমেই জানাতে হবে রাজ্যকে। কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের পূর্ব নির্দেশ ছিল, সময় মতো করতে হবে হাওড়া পুরসভার নির্বাচন। হাওড়া থেকে বালি পুরসভাকে আলাদা করার প্রক্রিয়ায় জটে আটকে যায় নির্বাচন। হাওড়া পুরসভায় দ্রুত নির্বাচন করার আবেদন জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মৌসুমী রায় নামে এক আবেদনকারী। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালতে জানানো হয়, ২০২২ সালে হাওড়া থেকে বালি পুরসভাকে আলাদা করার সম্মতি দিয়েছিলেন রাজ্যপাল। তারপরও নির্বাচন না হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চের প্রশ্ন ছিল, কেন হচ্ছে না হাওড়া পুরসভার নির্বাচন?
হাওড়া পুরসভায় শেষ নির্বাচন হয় ২০১৩ সালে। সেই বছরে বামফ্রন্টকে হারিয়ে এই পুরসভার ক্ষমতায় এসেছিল তৃণমূল। সেই বোর্ডের সময়সীমা ২০১৮ সালে শেষ হয়ে যায়। এরপর বিভিন্ন জটে আটকে যায় পুর নির্বাচন। ২০১৬ সালে বালি পুরসভার ৩৫টি ওয়ার্ডকে হাওড়া পুরসভার সঙ্গে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। হাওড়া পুরসভার ওয়ার্ডের সংখ্যা ৫০ থেকে বেড়ে ৬৬ হয়। ২০২১ সালে রাজ্য ফের বালি পুরসভা হাওড়ার থেকে আলাদা। রাজ্য সরকার ২টি পুরসভাকে আলাদা করতে চেয়ে বিধানসভায় বিল পাস করে। বিধানসভায় পাস করা হলেও এতে সই করেননি বাংলার প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। নির্বাচনী জটিলতায় হাওড়া পুরসভায় নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলে আদালতে মামলার প্রেক্ষিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
হাওড়া পুরসভার দীর্ঘ দিন নির্বাচন না হওয়ার কারণেই হাই কোর্টে জোড়া জনস্বার্থ মামলা দায়ের। গত বছর হাই কোর্ট সময় মতো নির্বাচন করার জন্য নির্দেশ দিলেও এখনও পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ ছিল পুরভোট কেন হল না, আট সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যকে কারণ জানাতে হবে। হাওড়া পুরসভার ভোট কেন হল না, রাজ্যের কাছে আবার জানতে চায় কলকাতা হাই কোর্ট। প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, আট সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যকে জানাতে হবে যে, কেন এখনও হাওড়া পুরভোট হল না। মার্চের শেষ কিংবা এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে পা রাখছে আট সপ্তাহের নির্দেশনামা।
২০২২ সালে হাওড়া থেকে বালি পুরসভাকে পৃথক করার পদ্ধতিগত জটে নির্বাচন আটকে যায়। নির্বাচন না হওয়ায় হাই কোর্টে জোড়া জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। গত বছর হাই কোর্ট সময় মতো নির্বাচন করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিল। এ বার রাজ্যের অবস্থান জানতে চাইল হাই কোর্ট। হাওড়া পুরসভায় শেষ নির্বাচনে ২০১৩ সালে বামফ্রন্টকে হারিয়ে পুরবোর্ডের দখল নেয় তৃণমূল। বোর্ডের সময়সীমা ২০১৮ সালে শেষ হলেও রাজ্য সরকার নতুন করে নির্বাচন ঘোষণা করেনি। হাওড়া পুরসভায় পুর দফতর নির্বাচিত প্রশাসকমণ্ডলীই তার পর থেকে পুরসভা পরিচালনা করে আসছে। এর মধ্যে কয়েক বার পুরভোট করানোর চেষ্টা হলেও বালি পুরসভা নিয়ে জটের কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি। ২০১৬ সালে বালি পুরসভাকে প্রথমে হাওড়ার সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। ২০২১ সালে তা আবার হাওড়া পুরসভা থেকে আলাদা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় প্রক্রিয়াগত জট তৈরি হয়। তৎকালীন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গেও রাজ্যের বিরোধ প্রত্যেকেরই নখদর্পনে।
বহুবার নবান্নে রাজ্যের একাধিক পুরসভার চেয়ারম্যান ও পুরসভার অফিসারদের নিয়ে বৈঠক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। উপস্থিত ছিলেনও রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং সব জেলার জেলাশাসকরা। হাওড়া এবং বালি পুরসভার নির্বাচন নিয়ে কথাও হয়। রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী তথা হাওড়া মধ্য বিধানসভার বিধায়ক অরূপ রায়, যুবকল্যাণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী তথা শিবপুরের বিধায়ক মনোজ তিওয়ারি, হাওড়া উত্তরের বিধায়ক গৌতম চৌধুরী, বালির বিধায়ক ডাঃ রানা চট্টোপাধ্যায় এবং হাওড়া দক্ষিণের বিধায়ক নন্দিতা চৌধুরী সহ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন হাওড়া পুরসভার প্রশাসক ডাঃ সুজয় চক্রবর্তী। পুরসভার দিক থেকে যে পরিষেবা দেওয়া হয় সেই সংক্রান্ত আলোচনার সঙ্গে দুই পুরসভার বকেয়া নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয়েছিল বলে নবান্ন সূত্রে খবর। হাওড়া এবং বালি পুরসভার নির্বাচনের সম্ভাবনা নিয়ে জোর গুঞ্জন। বৈঠকে হাওড়া এবং বালি পুরসভা এলাকার বিধায়কদের উপস্থিত থেকে পুরসভার নির্বাচন নিয়ে নানা কথা। ভোটের সম্ভাবনাময় দু’তিন মাসের মধ্যে এই দুই পুরসভার নির্বাচন হতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।
২০১৬ সালে বালি পুরসভার ৩৫টি ওয়ার্ড হাওড়া পুরসভার সঙ্গে যুক্ত করা হয়। রাজ্য সরকারের এই কাজের জেরে হাওড়া পুরসভার ওয়ার্ডের সংখ্যা ৫০ থেকে বেড়ে হয় ৬৬। ২০২১ সালে বালি পুরসভাকে হাওড়ার থেকে আলাদা করে দেওয়া হয়। ভাগাভাগির জেরে বালি পুরসভার ভোট করার ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধা নেই। পুর দফতর নির্বাচিত প্রশাসকমণ্ডলীই তার পর থেকে পুরসভা পরিচালনা করে আসছে। এর মধ্যে কয়েক বার পুরভোট করানোর চেষ্টা হয়। বালি পুরসভা নিয়ে জটের কারণে তা সম্ভব হয়নি। হাওড়া পুরসভার নির্বাচন নিয়ে জটিলতার কারণ হাওড়া আবার ৫০টি ওয়ার্ডের পুরসভায় পরিণত হয়। অথচ আইনে ৬৬টি ওয়ার্ডের কথা বলা রয়েছে। পরে এই ৫০টি ওয়ার্ডকে পুনর্বিন্যাস করে ৬৬টি ওয়ার্ডে পরিণত করা হয়। পাতত হাওড়ায় নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আর কোনও জটিলতা নেই বলে সূত্রের খবর। এ সবের মাঝেও বারবার একই প্রশ্ন মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে—‘হাওড়া পুরসভার ভোট কবে?’