Wednesday, March 12, 2025
spot_imgspot_img

Top 5 This Week

spot_img

Related Posts

বিষ বাতাসের দূষনের চাদরে আবৃত ‘দেশ’! বিশ্বের ক্রমতালিকায় প্রথম সারিতে ভারত

দুষনের মাত্রা মাপা শুরু। আতঙ্কের পরিস্থিতি। দূষনের কবলে ভারত। বিশ্বের ২০টি মোস্ট পলিউটেড শহরে মধ্যে ১৩টি-ই ভারতের। সবচেয়ে দূষিত শহর আসামের বিরনিহাট! মঙ্গলে সুইস কোম্পানি আইকিউএয়ার তালিকায় ওয়ার্ল্ড এয়ার কোয়ালিটি রিপোর্ট ২০২৪ বলছে দূষনে এগিয়ে ভারত। ভারতের পড়শি দেশ পাকিস্তানের অবস্থা খুবই খারাপ। পাক দেশের ৪ শহর ভয়ংকর দূষিত। চিনের একটি শহর। ভারতের আসামের বিরনিহাট দিল্লি ছাড়াও তালিকায় পাঞ্জাবের মুল্লানপুর, ফরিদাবাদ, লোনি, গুরুগ্রাম, গঙ্গানগর, গ্রেটার নয়ডা, ভিওয়াদি, মুজফ্ফরনগর, হনুমানগড় এবং নয়ডা। আশ্চর্যজনক বিরনিহাট শহরটি অসম ও মেঘালয়ের সীমান্তের লোকেশনে অবস্থিত হয়েও দূষণ? দূষণের কারণ, কলকারখানা ফ্যাক্টরির এমিশন। রয়েছে ডিস্টিলারিজ, লোহা ও স্টিল প্ল্যান্ট। হু-র পূর্বতন প্রধান বিজ্ঞানী এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রকের উপেদেষ্টা সৌম্য স্বামীনাথন বলেন, বাতাসের দূষণ নিয়ন্ত্রণের তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে ভারত বেশ কিছুটা উন্নতি করলেও নিয়ন্ত্রণে গাফিলতি স্পষ্ট। বিষ বাতাসের কবলে দেশ! বিশ্বের দূষিততম ২৫টি শহরের মধ্যে ১৫টিই ভারতে। বিশ্বের দূষিততম রাজধানী নয়াদিল্লি।

সর্বাধিক দূষিত শহরগুলির অধিকাংশই ভারতে! দূষিততম ২৫টি শহরগুলির মধ্যে ১৫টিই এদেশে। দূষিত দেশগুলির তালিকায় পঞ্চম স্থানে ভারত। ২০২৩ সালে ভারতের স্থান ছিল তিন নম্বরে। একবছরে ভারতের দূষণের মাত্রা প্রায় ৭ শতাংশ কমেছে। রিপোর্ট, ২০২৩ সালে ভারতে পিএম ২.৫ কনসেন্ট্রেশনের পরিমাণ ছিল প্রতি কিউবিক মিতারে ৫৪.৪ মাইক্রোগ্রাম। গত বছর সেটা কমে দাঁড়ায় ৫০.৬ মাইক্রোগ্রামে। দূষণের সূচকে ভারত উন্নতি করলেও দেশের একাধিক শহর দূষিততমের তালিকায়। সকলের উপরে থাকা বার্নিহাটে গতবছর দূষণের মাত্রা ছিল ১২৮.২। দূষিত শহরের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে দিল্লি ১০৮.৩ মাত্রার দূষণ বিশ্বের দূষিততম রাজধানী নয়াদিল্লিতে। প্রথম ৫০টি দূষিত শহরের মধ্যে রয়েছে বাংলার দুর্গাপুর এবং আসানসোল। বায়ুদূষণের কারণে ভারতে প্রচুর শারীরিক সমস্যার কারণে দেশবাসীর আয়ু গড়ে ৫.২ বছর কমছে।

বাতাসে বিষ। হাঁসফাঁস শরীর। দিল্লির মতো কলকাতার বাতাসেও বিষ। বিপদ এড়াতে সুস্থ থাকতে পরামর্শ।দিনে ৭৫টি সিগারেট খেলে ফুসফুসের যতটা ক্ষতি, রাজধানী দিল্লির বাতাসে শ্বাস নিলেও একই ক্ষতি। প্রতি বছরই দেশের রাজধানীর বাতাসের দূষণের মাত্রা চিন্তার কারণ। চিন্তার ভাঁজ জোরালো। পরিস্থিতি সিভিয়ার প্লাস ক্যাটেগোরির। ধোঁয়ার চাদরে আবৃত তাজমহল, লালকেল্লাও। একিউআই বা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স ছুঁয়েছে ১৫০০-এর গণ্ডি। বায়ু দূষণের নিরিখে কলকাতা কম যায় না। অবশ্য পশ্চিমবঙ্গের দূষণ পরিস্থিতি ততটাও উদ্বেগের নয়। এ রাজ্যের বাতাসের অবস্থাও বেশ খারাপ। কলকাতার একিউআই ৩০৬। বাতাসে পার্টিকুলেট ম্যাটার, অর্থাৎ পিএম২.৫ ও পিএম১০-এর মাত্রাও অনেকটাই।

পার্টিকুলেট ম্যাটার ১০ ও ২.৫ এর অর্থ সহজ বাংলায়, পিএম১০ বাতাসের সেই সব সূক্ষ্ম ধূলিকণার আকার ১০ মাইক্রোনের চেয়ে কম। ২.৫ মাইক্রোনের থেকে ছোট ধূলিকণাকে বলা হয় পিএম২.৫। কলকাতার বাতাসে পিএম১০ রয়েছে ২২০ প্রতি কিউবিক মিটার বায়ুতে মাইক্রোগ্রাম পলিউট্যান্ট বা ধূলিকণা µg/m³-এর মাধ্যমে প্রকাশিত ও পিএম২.৫ রয়েছে ১৩৫ µg/m³। অর্থাৎ এক কিউবিক মিটার বায়ুতে ২২০ মাইক্রোগ্রাম পিএম১০ ও ১৩৫ মাইক্রোগ্রাম পিএম২.৫ রয়েছে, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক।

বিশিষ্ট জিন বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘প্রতি বছর শীত আসলেই এক ছবি। হুহু করে বাড়ে দূষণ। বাতাসে ধূলিকণার পাশাপাশি গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণও বাড়ে। এর ফলে জিনের ভয়াবহ ক্ষতি হয়। আয়ু কমে প্রায় ১০ বছর। মানুষের গড় আয়ু কমে যাওয়ার অর্থ দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি। বায়ু দূষণ নিয়ে ভীষণ ভাবে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। বায়ু দূষণের কারণে জিনের মধ্যে ‘এপিজেনেটিক চেঞ্জ’ অর্থাৎ পরিবেশজনিত কারণে জিনের কাজকর্মে যেই বদল হয়। সিঙ্গল নিউক্লিওটাইড পলিমরফিজ়ম বা এসএনপি সিক্যুয়েন্সে বদল মারাত্মক! এর ফলে ডায়াবিটিস, ক্যান্সার, ক্রনিক কিডনি ডিজিজ, কার্ডিও ভাস্কুলার ডিজিজ স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক সহ একাধিক জটিল রোগের ফাঁদে পড়ার আশঙ্কা। পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার কিংবা পিটিএসডি-এর মতো মানসিক সমস্যাও দূষণের কারণে বৃদ্ধির সম্ভাবনা।

বাতাসে ধূলিকণা ও অন্যান্য দূষিত পদার্থের উপস্থিতি ছোটদের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা। কারণ ছোটদের ফুসফুস পরিণত নয়। দূষিত বায়ুতে থাকলে তাদের শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা তৈরি হতে পারে। সাধারণ সর্দি-কাশি থেকে শুরু করে শ্বাসকষ্ট হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। হতে পারে নিউমোনিয়াও। সিওপিডি অর্থাৎ ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ কেবল ধূমপান করলেই হয় যে তা নয়। নেপথ্যে থাকে বায়ু দূষণ। ধূলিকণা থেকে শুরু করে বিভিন্ন গ্রিন হাউস গ্যাস সরাসরি ফুসফুসের ক্ষতি করে। বাতাসে দূষণের অর্থই অ্যালার্জেনের প্রভাব বৃদ্ধির কারণে বাতাসে এয়ার পার্টিকেল ইনডেক্স বিপদসীমার অনেক উপরে। আপার ও লোয়ার রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনে কাশি। শুকনো ও কফ-যুক্ত কাশির সঙ্গে হাঁচি, নাক দিয়ে জল গড়ানো, জ্বর, গলা খুসখুসের মতো ইনফ্লুয়েঞ্জা উপসর্গও। সিওপিডি-তে আক্রান্ত বয়স্কদের মধ্যে ইনফেকশনের প্রবণতা, নিউমোনিয়ার ঝুঁকি মারাত্মক ক্ষতিকর।

ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি। বায়ু দূষণ কমাতে শহরে সবুজের সমাহার প্রয়োজন। গাছ ক্ষতিকর বায়ুকে পরিশুদ্ধ করে। জলাভূমি বুজিয়ে দেওয়া বন্ধ করলে দূষণকে বশে রাখা সম্ভব। দূষণের চাদরে ঢাকা একাধিক শহর। বয়স্ক এবং শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য যথেষ্ট ক্ষতিকারক। দূষণের কারণে স্ট্রোক, হৃদরোগ, ফুসফুস ক্যান্সার, ফুসফুসের অসুখ এবং তীব্র শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সংক্রমণ। ঝুঁকির থেকে বাঁচতে ঘরে প্রয়োজন এয়ার পিউরিফায়ার। এয়ার পিউরিফায়ার ঘরের দূষণের মাত্রা কমিয়ে দেয়। বাড়িতে আরামে নিঃশ্বাস নেওয়ার ক্ষেত্রে এয়ার পিউরিফায়ার বাড়ির জন্য ভাল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles