Wednesday, March 12, 2025
spot_imgspot_img

Top 5 This Week

spot_img

Related Posts

‘‌হোলি’‌ উৎসবে দেদার আনন্দ, দোলযাত্রায় খাওয়া-‌দাওয়া আর হুল্লোড়

‘এসো হে বন্ধু থেকো না দূরে গাও ফাগুয়ার গান, এই মিলনে রঙিন হরষে রাঙিয়ে নাও মনপ্রাণ!’ গান গেয়ে রঙিন আনন্দে মাতোয়ারা হতে চায় সকলেই। দোলের আনন্দ আর উদ্দীপনা। হোলি পার্টি পুল বিবিধের সমাহার! ১৪ এপ্রিল শুক্র দুপুর হতে চলেছে অন্য বসন্ত-বিলাপের সাক্ষী। রং মেখে বা মাখিয়ে দেওয়ার ভীরু মধ্যবিত্ত জড়তা হুস্‌স্‌। হোলি পার্টির আসরে রং মেখে রেন-ডান্স। মাদকতায় সঙ্কোচ দূরে ঠেলে গেয়ে উঠতেই হয় ‘‌এই তো জীবন, যাক না যেদিকে খুশি’‌। মাতাল বলা চলবে না কিন্তূ। মদ্যপ নয়। শুধু দিল খোলা আনন্দ আর উল্লাস। শান্তিনিকেতনের আদলে আবির খেলা। শহর থেকে শহরতলি রীতি মেনে গান গেয়ে প্রভাতফেরির বাঙালি। তবে তা অত্র বিক্ষিপ্ত। হোলি পার্টিতে সামিল সদলবলে। চুক্তিমাফিক জুটি। সগুষ্টি ইয়ারদোস্তদের পরম্পরা সম্মেলন। হোলির রংঝরা রেন ডান্সের দোলে দোদুল দোল দুলোনা। অঝোর ফোয়ারায় সিক্ত দেহ-মন। পানাহারেরও দেদার বন্দোবস্ত। টলোমলো পায়ে, সাবলীল খোকা হেঁটে যায়।

নব উদ্দ্যমে নাচে গালে পার্বণী খেয়ালের আদপ কায়দা। সবাই বানাতে চায় আস্ত শান্তিনিকেতন। নাচের তালে ফাগের গন্ধে উদ্‌যাপন বসন্ত উৎসবের। খাসির মাংসের দোকানে লম্বা লাইন ১২টা না-বাজতেই লম্বা লাইন। সুগন্ধি সরবতে নিপুণ হাতে সিদ্ধি দিয়ে অদ্ভূত ঘোল। খেয়েও মজা, খাইয়েও। রংবাজি। দোলের হুল্লোড়। সুনসান শহর। উৎসবের ছোঁয়াচ সোশ্যাল মিডিয়ায় গেড়ে বসে। লাল-নীল-সবুজের আক্ষরিক অর্থেই মেলা বসেছে। রং মেখে ভূত ছবিতে প্রোফাইল পিকচার লেপ্টে দিয়ে দোলের বহর দেখানোর পালা! মাথা ঘুরপাক খেয়ে যায়। সুরাপান নাহলে কী দোল জমে। রংমাখা আঙুল ঝোলে ডুবিয়ে মাংসভাত খেয়ে দিবানিদ্রা। গান শুনতে শুনতে কারও সাবেক দোলের রোম্যান্স। হঠাৎ করে আসা ভাবনায় চোখের কোন চিকচিক করে ওঠে। ক্ষণিকের আবেগতাড়িত অশ্রু। হাসপাতালে শুয়ে থাকা অসুস্থ আত্মীয় কিংবা বৃদ্ধাবাসের বাসিন্দা আত্মীয়টির কথা মনে পড়া যায় কারুর। হলেও হতে পারে, একসময় রং ভাগাভাগি করছেন।

মেঘ-রোদের লুকোচুরি খেলা। বাংলার আকাশে ফাগুনে মেঘের আনাগোনা। দোলের হাওয়ায় মাতোয়ারা আপামর বাঙালি। দোল রে দোল, দোল দোল দোল। ২০২৫ এর ক্যালেন্ডার ১৪ মার্চ দোল। বসন্তের হাওয়ায় মিশছে আবির। অফিস থেকে স্কুল-কলেজ, সর্বত্রই তালাচাবি। মানুষ দোলের আনন্দে মাতোয়ারা হওয়ার কাউন্টডাউন শুরু। শহর ও শহরতলি বুকেও একের পর এক বসন্ত উৎসবের বড় আসর। ক্রিয়েটিভিটি রয়েছে বসন্ত উৎসবেও। একঘেঁয়েমির বালাই নেই। বিশাল আনন্দযজ্ঞ। বসন্ত উৎসবের সোনাঝরা রঙিন উৎসব। ভি‌ড় জমানোর তাড়া। রঙের উৎসবে সামিল তরুণ-তরুণীর দল। আবিরে রাঙা আকাশ। উঠছে দেদার সেলফি। খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাও। ঝুমুরের তালে নাচ। বসন্তে ভরা আনন্দের ফোয়ারা। প্রিয়জনকে রাঙিয়ে দেওয়া প্রেমের রঙে।

ইনটেলেকচুয়াল বাঙালি। পূর্ণিমার থেকে দোল পূর্ণিমার গুরুত্ব একটু বেশীই। অনেকের বাড়িতে পুজো পাঠ। গৃহপ্রবেশ সেরে ফেলার চলও আছে। নজর রাখতে মরিয়া সংসারে সুখশান্তি বজায় রাখার বিষয়ে। শ্রীবৃদ্ধির দিকেও খেয়াল রাখতে দোষ নেই। বাস্তুমতে ধাতব কচ্ছপকে শুভ। দোল বা হোলির দিনে এটি বাড়িতে নিয়ে সটান প্রবেশ। কচ্ছপটি অবশ্যই কিন্তূ পাঁচ ধাতু দিয়ে তৈরি হতে হবে। তার পিঠে শ্রীযন্ত্র ও কুবের যন্ত্র থাকা আবশ্যক। লাভের আশা করতেই পারা যায়। বাড়ির ভিতরে কচ্ছপটিকে উত্তর দিকে মুখ করে জলের মধ্যে রাখলেই হল। পিরামিডের সম্পদ আকর্ষণ করার ক্ষমতা থাকায় বিত্তের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। প্রাচীন মন্দিরের অনেকগুলো এই পিরামিড আকারের। বাড়িতে একটা ছোট পিরামিডই রাখলে বিশ্বাস আর্থিক বাধা দূরীভূত হয়। হোলির দিন বা তার আগের দিন আম বা অশোক গাছের পাতা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। নেগেটিভ এনার্জির প্রভাব আটকানোর তাগিদ। হোলিকা দহনের দিন মূল প্রবেশদ্বারে আম বা অশোক পাতার পুজো। হোলির দিনও প্রবেশদ্বারে রাখা শুভ। বাঁশ গাছকে খুবই পবিত্র। দোলের দিন বাড়িতে বাঁশের চারা গাছে সাত থেকে এগারোটি লাঠি রাখলেইই সুফল। বাঁশের চারা বাড়িতে থাকলে দেবী লক্ষ্মীর কৃপা বজায় এবং দীর্ঘায়ুর জন্য বাঁশের চারা বাড়িতে।

দোল উৎসব মানেই আয়েশ করে খাওয়া দাওয়া। হোলি স্পেশাল মাটন রাঁধতেই হবে। হোলির জম্পেশ উদরপূর্তি মাটনের পদে। ভোজনরসিক বাঙালির উৎসব অনুষ্ঠানের অর্থই পেটপুজো। রসনা তৃপ্তিতে উদর ‘বাবাজি’র বেশি খুশি! দোলের দিন ঝাল ঝাল মাটন কষা। গড়গড়ে মাটনের ঝোল দিয়ে ধোঁয়া ওঠা বাসমতি চালের ভাত। পোলাও ভুরিভোজ। স্বাদকোরক সাম্বা নেত্যয় বাধ্য! পাঠার মাংস অন্যভাবে রাঁধার রেসিপি। হান্ডি মাটন একবার চেখে দেখলে কেমন হয়। উপকরণ :‌ মাটন, গরম মশলা গুঁড়ো (জিরে, ধনিয়া, শাহ মরিচ, সবুজ এলাচ, কালো এলাচ, লবঙ্গ, দারুচিনি, জায়ফল, জয়িত্রী), কসৌরি মেথি, আদা বাটা, রসুন বাটা, পিঁয়াজ কুচি, রসুন, শুকনো লঙ্কা, টক দই, সর্ষের তেল। রান্নার পদ্ধতি :‌ কড়াইতে তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে সোনালি রং হওয়া পর্যন্ত ভেজে তুলে রাখতে হবে। একটি বড় পাত্রে কাঁচা লঙ্কা, পুদিনা পাতা, আদা-রসুন বাটা, টক দই, ধনে গুঁড়োর সঙ্গে লঙ্কা গুঁড়ো, হলুদ গুঁড়ো, স্বাদমতো নুন, ধনেপাতা কুচি, ভাজা পেঁয়াজ ও ভাজা পেঁয়াজ তেল দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে মাটন দিয়ে ভালভাবে ম্যারিনেট। একটি প্রেসার কুকারে তেলের মধ্যে শুকনো লঙ্কা, তেজপাতা, দারচিনি ফোঁড়ন দিয়ে সুগন্ধ আসা শুরু হলেই প্রেসার কুকারে ম্যারিনেট মাটন এবং ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। মাংস নরম না হওয়া পর্যন্ত চলবে রান্না। ঢাকনা খুলে একটু ভালো করে কষে নিতে হবে। র‌্যাস রেডে হান্ডি মাটন।

আরও এক ভিন্ন স্বাদে মোহিনীমোহন মাটন। উপকরণ :‌ মাটন (২৫০ গ্রাম), টমেটো কুচি , সর্ষের তেল (৮ টেবল চামচ), পেঁয়াজ কুচি (৩টি) (লালচে করে ভেজে তোলা), জিরে (আধ চা-চামচ) (ফোড়নের জন্য), গোটা গরম মশলা (ফোড়নের জন্য), আদা-রসুন বাটা (দেড় টেবল চামচ), কাঁচালঙ্কা, পেঁয়াজ কুচানো (৪টি), টকদই (২ টেবল চামচ), তেজপাতা (২টি), গোলমরিচ গুঁড়ো (১ চা-চামচ), হলুদ গুঁড়ো (১ চা-চামচ) লঙ্কা গুঁড়ো (১ টেবল চামচ), ধনে গুঁড়ো (১ টেবল চামচ), শাহি গরম মশলা গুঁড়ো (আধ চা-চামচ), নুন (আন্দাজমতো)। রান্নার পদ্ধতি :‌ মাংস ধুয়ে টকদই আর টমেটো দিয়ে মেখে ১ ঘণ্টার মতো রাখতে হবে। কড়াইতে তেল গরম করে তাতে জিরে আর গোটা গরম মশলা ফোড়ন, পেঁয়াজ কুচি, আদা বাটা, রসুন বাটা দিয়ে কষিয়ে নিয়ে ম্যারিনেটেড মাটন ও একই সঙ্গে কাঁচালঙ্কা, গোলমরিচ গুঁড়ো, হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো ,ধনে গুঁড়ো ও গুঁড়ো গরম মশলা দিয়ে ঢাকা বন্ধ করে মাংস সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত রান্না করতে হবে। মাংস আধসেদ্ধ হয়ে গেলে প্রেশার কুকারে সামান্য জল দিয়ে নুন মিশিয়ে ২টি সিটি পর্যন্ত রান্নার পর স্টিম বেরিয়ে গেলেই মাংস রেডি। এবার পোলাও-এর সঙ্গে জমিয়ে খাওয়া।‌ আহা!‌

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles