Wednesday, March 12, 2025
spot_imgspot_img

Top 5 This Week

spot_img

Related Posts

লজ্জা!‌ হাওড়ায় অপমানিত জাতীয় মহিলা ক্রিকেটাররা! কে এই অভব্য ‘‌কর্তা’?‌‌ চরম বিশৃঙ্খলা হাওড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার অনুষ্ঠানে

নারী দিবসের পরিদিনই অপমানিত হলেন জাতীয় পর্যায়ে খেলা মহিলা ক্রিকেটাররা। হাওড়া ডিস্ট্রিক্ট স্পোর্টস অ্যাসোসিয়শন আয়োজিত ক্রিকেটের ফাইনালে আমন্ত্রণ জানিয়ে অসম্মান করা হল মহিলা ক্রিকেটারদের। মাঠের এক কোনে কয়েকটি প্লাস্টিকের চেয়ার দিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছিল খ্যাতনামা মহিলা ক্রিকেটারদের। মঞ্চে তখন আয়োজকরা ব্যস্ত শুধু সৌরভ গাঙ্গুলী তোষামোদ করতেই। মন্ত্রী ও সিএবির উচ্চপদস্থ কর্তাদের নিয়ে জোর কদমে মাতামাতি চলল মঞ্চে। সম্মাননা জ্ঞাপনের তালিকা থেকে বাদ পড়লেন আন্তজার্তিক ক্রিকেটে অংশগ্রগনকারী মহিলা ক্রিকেটাররা। অনুষ্ঠানের মাঝেই ক্ষুব্ধ হয়ে ফিরে গেলেন দেশের মহিলা ক্রিকেটাররা। এক ক্রীড়া সাংবাদিক আয়োজকদের কানে মহিলা ক্রিকেটারদের মঞ্চে সম্মাননা জ্ঞাপনের জন্য অনুরোধ জানালেও, বিষয়টি কর্ণপাত করেননি আয়োজকরা। শেষমেস ক্ষুব্ধ অপমানিত জাতীয় ক্রিকেটাররা অনুষ্ঠানের মাঝপথেই ফিরে গেলেন একরাশ হতাশা নিয়ে। মঞ্চে কিংবদন্তি ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলী বক্তব্য রাখার সময় কয়েকজন মহিলা ক্রিকেটারদের নাম করে সম্মান জানানোর সময় ইতিউতি তাকিয়ে তাঁদের খোঁজার চেষ্টা করলেও দেখতে পাননি। কারণ, অনেক আগেই ক্ষোভে অপমানে অনুষ্ঠানস্থল ছেড়েছেন মহিলা ক্রিকেটাররা। নারী দিবসের পরদিনই বাংলা তথা দেশের গৌরব এনে দেওয়া মহিলা ক্রিকেটারদের চরম অপমান করে হাওড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে ‘‌লজ্জা’‌য় মুখ ঢাকতে বাধ্য করলেন গুটিকয়েক জেলা কর্তা।

প্রথম থেকে অনুষ্ঠানের সাংগঠনিক দিক থেকে গলদ ছিল বলে বিস্তর অভিযোগ। দণ্ডমুন্ডের মূল কর্তার দিকেই অভিযোগের তীর। সব ক্ষেত্রেই প্রধান অভিযুক্তের তালিকায় এক জেলাকর্তার নাম উঠে আসছে বলে হাওড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার অন্দরমহলের অভিযোগ। দীর্ঘদিন জোর করে হাওড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার ‘‌ট্রেজারার’‌ পদ আগলে রাখা জনৈক কর্তার দিকে আঙুল তুলছেন সংস্থারই অন্যান্য কর্তারাই। অভিযোগ নিজেকে ‘‌হামবড়া’‌ ভাব দেখানো জনৈক কর্তা অনেকেরই চক্ষুশূল। এর আগেও নানান আর্থিক তছরূপ ও অনৈতিক কাজের অভিযোগ রয়েছে ট্রেজারার পদ আগলে রাখা গুনধর কর্তার নামে। এমনকি আইপিএল সহ যে কোনও বড় খেলার দিনগুলোতে সিএবিতে হাজির থেকে টিকিট সংগ্রহ করেও নানান অনৈতিক কার্যকলাপ করেন বলেও অভিযোগ তীব্র। হাওড়া ডিস্ট্রিক্ট স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের অন্দরমহলেও উক্ত কর্তাকে অধিকাংশই অযোগ্য-‌দাম্ভিক বলে অভিযোগ করেন। বড় কোনও কর্তাকে তোষামোদ করে পদ আগলে রেখে অন্যান্যদের অসম্মান করেন এবং নিজের অনৈতিক কাজকর্মের স্বার্থ চরিতার্থ করতে সচেষ্টও হল বলে বিস্তর অভিযোগ জনৈক স্বঘোষিত ‘‌ট্রেজারার’‌ পদ দখল করে রাখা কর্তার বিরুদ্ধে। অনেক কর্তাকে বলতে শোনা যায় সংস্থায় কাশীবাবু সহ সংগঠনের আরও অনেক ভদ্র-‌সৎ-‌স্বচ্ছ অথচ সুন্দর আচরণের মানুষ থাকা সত্ত্বেও কেন বা কার দাক্ষিন্যে এই অসৎ চরিত্রের কর্তা পদ দখল করে থাকেন?‌ তীব্র অভিযোগ সহ প্রশ্ন সংস্থার ও সংস্থার বাইরেও হাওড়া জেলার অসংখ্য ক্রীড়া সংগঠনের?

‌এখানেই শেষ নয়!‌ অনুষ্ঠানে একাধিক খ্যাতনামা সাংবাদিকের সঙ্গেও অভব্য আচরণ করেন ওই জেলাকর্তা বলেও বিস্তর অভিযোগ। দেশের রাষ্টপতির কাছ থেকে সম্মান পাওয়া এমনকী অসংখ্য বিশ্বকাপ কভার করা সাংবাদিককেও ‘‌গালিগালাজ’‌ সহকারে ভর্ৎসনা করারও অভিযোগ জনৈক ‘‌পদ আগলানো’‌ কর্তার বিরুদ্ধে। সদ্য স্থানাধিকারী এক নম্বর চ্যানেলের সাংবাদিক ও ক্যামেরাপার্সনকেও সৌরভের কাছে ইন্টারভিউয়ের জন্য পৌঁছতে দেননি অভিযুক্ত কর্তা। শহর থেকে আগত একাধিক টিভি চ্যানেলের সাংবাদিককে আমন্ত্রণ জানিয়ে রিফ্রেশমেন্ট রুমে তীব্র অপমান করেন বলে অভিযোগ পদ আগলে রাখা জনৈক ‘‌প্রভাব খাটিয়ে স্বার্থ-‌সিদ্ধি ঘোষ’‌ করা কর্তার নামে। কলকাতা থেকে আগত সাংবাদিকরাও অপমানিত হয়ে ফিরে যান। দীর্ঘ কর্মকাণ্ডের ধকল সামলানো অন্যান্য গভর্নিং বডির কর্তা ও সহকারীদের, অনুষ্ঠান শেষে সারিবদ্ধভাবে বসে বিশ্রাম নিতে দেখেও, নির্লজ্জের মতো ‘‌নিজের’‌ প্লেট সাজিয়ে স্বলালসা তৃপ্তিতে ব্যস্ত উক্ত পদ দখলকারী কর্তা, বলেও অভিযোগ। সারা দিন ধরে চলা অনুষ্ঠানে কর্মরত হাওড়া জেলা সংস্থার অনেকেই নিজেদের সম্মান রক্ষার্থে ‘‌অভুক্তই’‌ থেকে গেলেন বলে সূত্র মারফৎ শোনা গেল।

দীর্ঘ একমাস ধরে চলা হাওড়া প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেটের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয় রবিবাসরীয় সকাল থেকেই। হাওড়া মিউনিশিপ্যাল কর্পোরেশনের প্রাক্তন মেয়র পারিষদ সদস্য শ্যামল মিত্রের তত্বাবধানে আয়োজিত ক্রিকেটে অংশগ্রহনকারী জেলার আট দলের লিগের উদ্বোধন করেছিলেন সিএবি প্রেসিডেন্ট স্নেহাশীষ গাঙ্গুলী। রবিবার ফাইনালে সালকিয়ার ক্রিকেট দল চ্যাম্পিয়ান হয় সাঁকরাইলকে পরাজিত করে। ফাইনালের উদ্বোধন করেন প্রাক্তন জাতীয় ক্রিকেটার ও বর্তমান বাংলা ক্রিকেট দলের হেড কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্লা।

অপরাহ্নে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট তথা কিংবদন্তি ক্রিকেট অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী, ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের প্রেসিডেন্ট স্নেহাশীষ গাঙ্গুলী, রাজ্যের দুই মন্ত্রী অরূপ রায় ও সুজিত বসু, প্রাক্তন ক্রিকেটার শরদিন্দু মুখার্জ্জী, হাওড়া পুর প্রশাসক ডা:‌ সুজয় চক্রবর্ত্তী, সিএবি প্রাক্তন কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে, সিএবি যুগ্ম সচিব দেবব্রত দাস, মোহনবাগান ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট অসিত চট্টোপাধ্যায়, বিধায়ক কল্যাণ ঘোষ, রানা চ্যাটার্জ্জী, নন্দিতা চৌধুরী, মোহনবাগান ক্লাবের প্রাক্তন সচিব সৃঞ্জয় বোস, সঞ্জয় দাস সহ সিএবির অধিকাংশ কর্তারা ও প্রাক্তন জাতীয় মহিলা ক্রিকেটাররাও।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রত্যেকেরই অভিযোগে অভিযুক্ত জেলা ক্রীড়া সংস্থার পদ দখল করে রাখা জনৈক সার্থাম্বেষী কর্তার অভব্য আচরণের কথা বাদ দিলে, বাকি অনুষ্ঠান বেশ বর্ণাঢ্যই ছিল। অনুষ্ঠানের মূল আয়োজক শ্যামল মিত্র ও দেবব্রত আচার্য্যের অক্লান্ত পরিশ্রমে আয়োজিত অনুষ্ঠান জমজমাটই। অথচ কোনও এক চুতুর্থ স্থানাধিকারী করণিক হওয়ার অযোগ্য গায়ের বল প্রয়োগ করা ও বুলির জোরে নিজ স্বার্থসিদ্ধির তাগিদে কর্তা হওয়ার সদিচ্ছা পূরণকারীর জন্য মহিলা ক্রিকেটারদের অপমানিত হতে হল বলে অভিযোগ। সংস্থার অনেক কর্তাই ক্ষুব্ধ হয়ে অনৈতিক কর্তার অপসারণও দাবি করেছিলেন বলে অভিযোগ শোনা যায়। ক্রিকেট কিংবদন্তির উপস্থিতির আড়ালে বা তাঁর অগোচরে ঘটে যাওয়া ‘‌জনৈক কর্তা’‌ কৃত অসম লজ্জা ঢাকতে বেশ সময় লাগবে বলে মনে করছেন ক্রীড়ামহলের বিশিষ্ট জনেরাও!‌


LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles