বার্ড ফ্লু এক ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা। এইচ৫এন১ ধরনের ভাইরাস। ভাইরাসটি সবচেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে মুরগি পালনের মধ্যে দিয়ে। দেশীয় পোল্ট্রি খামারগুলিতে এর প্রভাব মারাত্মক। বার্ড ফ্লু ভাইরাস কোনও প্রজাতির পাখিদের মধ্যে ছড়িয়ে মৃত্যুর হার বেড়ে যায়। বার্ড ফ্লু ভাইরাস ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ছড়ায় না। পাখি থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকেই। বার্ড ফ্লু কি মহামারির আকার ধারণ করতে পারে? ভাইরাস দ্রুত ছড়াচ্ছে? হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুল ও ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার বিজ্ঞানীদের দাবি, বার্ড ফ্লু তথা অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস এর্থাৎ এইচ৫এন১ ছড়ালেও, মানুষের জন্য ততটা ক্ষতিকর নয়। কোভিড পরবর্তিতে ঝুঁকি রয়েছে। সংক্রমণ আটকানোর পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা বিশ্বজুড়ে। আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির বিজ্ঞানীদের আবিস্কৃত যন্ত্র বাতাসের গুণমান পরীক্ষার মাধ্যমে নির্দেশ করতে পারবে ভাইরাস বাতাসের কণার সংমিশ্রণ রয়েছে আদৌ? বার্ড ফ্লু তথা অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের দুই প্রজাতি। এইচ৫এন১ এবং এইচ৭এন৯। ইউরোপ ও আমেরিকার বিজ্ঞানীরা বার্ড ফ্লু ভাইরাস নিয়ে গবেষণায় খুব দ্রুত ‘মিউটেশন’ বা জিনের রাসায়নিক বদল হচ্ছে ভাইরাসের। নতুন নতুন প্রজাতির জন্ম হওয়ার ফলে বাতাসে ভেসেও সংক্রমণ ঘটাতে তৎপর। এইচ৫এন১ ভাইরাস তার জিনগত বিন্যাসের বদল ঘটিয়ে আরও সংক্রামক হয়ে উঠেছে। আগে কেবল আক্রান্তের সংস্পর্শ থেকে ভাইরাস ছড়াত। এই প্রজাতি এখন বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা বা জলকণাকে আশ্রয় করে বহু দূর অবধি ভেসে যেতে পারে। ভাইরাসের গতিপথেই নজর বিজ্ঞানীদের।
বার্ড ফ্লুর আতঙ্ক ক্রমশ বাড়ছে। মানুষ-সহ বিভিন্ন প্রাণীর শরীরে এই ভাইরাসের প্রকোপ। বিড়ালের শরীরেও ধরা পড়ছে এইচ৫এন১ ভাইরাস। মধ্যপ্রদেশের ছিন্দওয়ারায় ৩টি পোষা বিড়াল এবং একটি পাখির শরীরে এইচ৫এন১ অতি রোগজীবাণুযুক্ত এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা শনাক্ত করণ হয়েছে। ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫ তারিখে, মধ্যপ্রদেশের ছিন্দোয়ারায় ৩টি পোষা বিড়াল এবং একটি পাখির বাজারে এইচ৫এন১-এর ঘটনা রিপোর্ট। স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বার্ড ফ্লুর উপস্থিতিতে রাজ্যটিকে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করার নির্দেশ এমনকি বাজারের সমস্ত পাখি মেরে ফেলা হয়েছিল এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সার্টিফিকেট না পাওয়া পর্যন্ত বাজারটি ২১ দিনের জন্য বন্ধ ছিল।
ভারত সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুসারে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছিল। ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ তারিখে, পাখির বাজারে কর্মরত পশুচিকিৎসক এবং অন্যান্যদের কাছ থেকে ৬৫টি নমুনা সংগ্রহ করে পুণের এনআইভিতে পাঠানো হয়। সমস্ত নমুনায় ইনফ্লুয়েঞ্জার নেগেটিভ মিলেছিল। বার্ড ফ্লু ভাইরাস দেশের নানা রাজ্যে যেমন, অন্ধ্রপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, বোকারোর পোলট্রি ফার্মগুলিতে ভাইরাস পাওয়া গিয়েছে। পাখির থেকে বিড়ালের শরীরেও ঢুকেছে ভাইরাস। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা আক্রান্ত হাঁস, মুরগি বা পরিযায়ী পাখির সংস্পর্শ থেকে কেবল নয়, বাতাসে ভেসেও ছড়াচ্ছে ভাইরাস। বিজ্ঞানীদের কথায়, বিশেষ ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল ক্যাপাসিটিভ বায়োসেন্সর বাতাসের কণায় মিশে থাকা ভাইরাস চিহ্নিত করতে পারবে। কোন এলাকার বাতাসে ভাইরাসের আধিক্য বা কত দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে, ক্ষেত্রবিশেষ জানা সম্ভব হবে। নতুন যন্ত্রটিতে ন্যানোক্রিস্টাল ও গ্রাফিন অক্সাইডের সূক্ষ্ম স্তর নেটওয়ার্কের কাজ করবে। কার্বন ইলেক্ট্রোডের উপর বসানো, যন্ত্রে সেন্সরে বাতাস ঢুকলে তাতে ভাসমান জলকণা, ধূলিকণায় জলকণায় বার্ড ফ্লু ভাইরাস চিহ্নিত করা যাবে। বার্ড ফ্লুর আতঙ্কে চিকেন নিষিদ্ধ হয় বেঙ্গল সাফারি পার্কে। কোনও পশুকেই চিকেন দেওয়া বন্ধ করা হয়। বিদেশি পাখিদের উপর বিশেষ নজরদারি। স্যানিটাইজ সাফারির গাড়ির চাকাও। পর্যটকদের হাত-পা ধুয়ে স্যানিটাইজার ব্যবহার করে ঢুকতে দেওয়া হয় পার্কে। বার্ড ফ্লুর প্রভাব না পড়লেও বেঙ্গল সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষের সতর্কতামূলক পদক্ষেপ। প্রাণীদের জন্য চিকেন বন্ধ রাখারা পাশাপাশি পাখিদের ওপর বিশেষ নজরদারির বন্দোবস্ত করা হয়।