Wednesday, March 12, 2025
spot_imgspot_img

Top 5 This Week

spot_img

Related Posts

‘সুনীল ছেত্রী ইজ ব্যাক’‌! অবসর ভেঙে নীল জার্সিতে জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তন কিংবদন্তির‌

আন্তর্জাতিক ফুটবলকে আলবিদা জানিয়েছিলেন। আবার ফিরলেন। অবসর ভেঙে ফের জাতীয় দলে ফিরে এলেন সুনীল ছেত্রী। সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন অর্থাৎ এআইএফএফ তরফে বলা হয়েছে, ‘সুনীল ছেত্রী ইজ ব্যাক। মার্চে ফিফার আন্তর্জাতিক উইন্ডোতে ভারতীয় দলে ফিরতে চলেছেন অধিনায়ক, নেতা এবং কিংবদন্তী।’ ২৫ মার্চ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এএফসি এশিয়ান কাপের যোগ্যতা-অর্জন পর্বের তৃতীয় রাউন্ডের ম্যাচ খেলতে নামবে ভারত। ১৯ মার্চ মালদ্বীপের বিরুদ্ধে ফ্রেন্ডলি ম্যাচ। ৪০ বছরের কিংবদন্তি ফুটবলার সুনীল ভারতীয় দলে ফিরছেন।

শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন ৬ জুন। কুয়েতের বিরুদ্ধে যুবভারতী স্টেডিয়ামে। সিদ্ধান্ত ছিল, আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানালেও ক্লাব ফুটবল খেলবেন। বেঙ্গালুরু এফসির জার্সিতে দাপটের সঙ্গে পারফরম্যান্স। জাতীয় দল থেকে অবসর নেওয়ার ৮ মাস অতিক্রান্ত। সুনীল করেছেন ১২টি গোল। সত্যিই ঈর্ষণীয় পরিসংখ্যান। চল্লিশর্দ্ধো সুনীলের অনবদ্য ফর্ম দেখেই জাতীয় দলের কোচ মানোলো মার্কুয়েজের সিদ্ধান্ত। প্রয়োজনীয় ভারতীয় দলে সুনীলের প্রত্যাবর্তন। আক্রমণভাগে কিংবদন্তি ফুটবলাররে উপস্থিতি প্রয়োজন নীল জার্সিতে। জাতীয় দলের কোচ নিজেই কথা বলেন সুনীলের সঙ্গে। অনুরোধ করেন, অবসর ভেঙে জাতীয় দলে ফেরার। সিদ্ধান্ত নিতেও উৎসাহ দেন সুনীলকে। শেষমেস জাতীয় দলের হয়ে পুণরায় মাঠে নামতে রাজি সর্বকালের অন্যতম সেরা ভারতীয় ফুটবলার সুনীল ছেত্রী।

সুনীলের সিদ্ধান্তে ধন্দে ফুটবল ভক্তরা। নেটিজেনদের কথায়, ‘একদিকে আনন্দের কথা, সুনীল ছেত্রী ফের ভারতীয় জার্সি পরে মাঠে নামবেন। অপরদিকে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয় যে পুরো দেশে আমরা এখনও সুনীল ছেত্রীর একজনও বিকল্প পেলাম না। সুনীল ছেত্রীকে বিনা ভারতীয় দলের এমনই অবস্থা যে ওঁকে অবসর ভাঙতে বাধ্য হল।’ ইন্ডিয়ান সুপার লিগ অর্থাৎ আইএসএল পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। আইএসএল সর্বোচ্চ গোলদাতাদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে সুনীল। ২৩টি ম্যাচে ১২টি গোল করেছেন। সুনীল ছাড়া প্রথম ২০-তে একজন ভারতীয় শুভাশিস বোস। ২২টি ম্যাচে ছ’টি গোল মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের অধিনায়কের। শুভাশিষ ডিফেন্ডার, স্ট্রাইকার নন। একথা নি:‌সন্দেহে বলা যেতে পারে, ‌জাতীয় দলে সুনীলের বিকল্প তৈরী করা যায়নি। জাতীয় দলের বুট তুলে রেখেও সুনীলকে ফিরতে হল আবার।

অবসর গ্রহণের সিদ্ধান্ত ঘোষণার সময় সুনীল বলেছিলেন, ‘আমি কখনও ভাবিনি যে দেশের হয়ে এতগুলি ম্যাচ খেলব। যা করেছি, তা ভালো হোক বা মন্দ। মাসদুয়েক ধরে আমি বিষয়টা নিয়ে ভেবেছি। বিষয়টা খুব অদ্ভুত ছিল। কুয়েতের বিরুদ্ধে এই ম্যাচ যে আমার শেষ ম্যাচ হবে, তা নিয়ে নিজের সিদ্ধান্তে সম্ভবত খুশি না হলেও, নিজেই স্থির করি। আমি যখন নিজেকে বলতে থাকি যে, এটাই আমার শেষ ম্যাচ হবে, তখন আমার সবকিছু স্মৃতি মনে পড়ছিল। কী অদ্ভুত ছিল বিষয়টা। ম্যাচটার কথা ভাবছিলাম। কোচের কথা ভাবছিলাম। অন্য কোচদের কথা কথা ভাবছিলাম। টিমটার কথা ভাবছিলাম। মাঠের কথা ভাবছিলাম। অ্যাওয়ে হোম ম্যাচের কথা ভাবছিলাম। ভালো ম্যাচের কথা ভাবছিলাম। বাজে ম্যাচটার কথা ভাবছিলাম।’
আবার ভারতীয় দলের জার্সিতে খেলবেন সুনীল ছেত্রী। ভারতীয় ফুটবল সংস্থা সমাজমাধ্যমে সুনীল প্রত্যাবর্তনের কথা পোস্ট করেছে, “সুনীল ছেত্রী ফিরছেন। ভারতীয় ফুটবলের অধিনায়ক, নেতা এবং কিংবদন্তি মার্চে আন্তর্জাতিক দলে ফিরছেন।”

২০০২ সালে মোহনবাগানে পেশাদার ফুটবলজীবন শুরু হয়েছিল সুনীলের। এখনও আইএসএলে খেলেন বেঙ্গালুরু এফসি-র হয়ে। ২০০৭, ২০০৯ এবং ২০১২ সালে ভারতের নেহেরু কাপ জয়ের অন্যতম কান্ডারি ছিলেন সুনীল। চার বার (২০১১, ২০১৫, ২০২১ এবং ২০২৩) জিতেছেন সাফ কাপও। ২০০৮ সালে ভারতকে এফসি চ্যালেঞ্জ কাপ জিতিয়েছিলেন তিনি। যা ভারতকে ২৭ বছরে প্রথম বার এএফসি এশিয়ান কাপে যোগ্যতা অর্জন করিয়েছিল। আন্তর্জাতিক ফুটবলে ১৯ বছরে ১৫০টি ম্যাচ খেলেন সুনীল। ৯৪টি গোলও করেন। ভারতীয় ফুটবলকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার নেপথ্যে বড় ভূমিকা সুনীল ছেত্রীর। গত বছর জুন মাসে শেষ বার ভারতের হয়ে খেলার পর যুবভারতীতে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। মাঠ প্রদক্ষিণ করে দর্শকদের ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন সুনীল। আবার ফিরতে চলেছেন ভারতীয় ফুটবলে। আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নেওয়ার কথা নিজে সমাজমাধ্যম পোস্ট করে জানিয়েছিলেন সুনীল। ২০০৫-এর ১২ জুন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে প্রথম ম্যাচ খেলেছিলেন। অভিষেক ম্যাচেই গোল করেছিলেন। সুনীলের প্রথম আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ছিল ২০০৭ নেহরু কাপ। প্রথম ম্যাচে কম্বোডিয়াকে ৬-০ হারায় ভারত। দু’টি গোল করেছিলেন সুনীল। সিরিয়ার কাছে হার এবং কিরঘিজস্থানের বিরুদ্ধে জয়ের ম্যাচেও গোল করেছিলেন।

মার্চে ভারতের আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য দল ঘোষণা কোচ মানালো মার্কুয়েজের। দলে সুনীল ছাড়াও আক্রমণভাগে ফারুখ চৌধুরী, ইরফান ইয়াদওয়াদ, লালিয়ানজুয়ালা ছাংতে এবং মনবীর সিংহ। বাদ পড়েছেন অভিজ্ঞ গোলরক্ষক গুরপ্রীত সিংহ সান্ধু। অভিজ্ঞ গোলরক্ষক ছন্দ হারানোর কারণে দলে নেওয়া হয়নি। ভারতীয় দলে রাখা হয়েছে তিন গোলরক্ষক অমরিন্দর সিংহ, গুরমিত সিংহ এবং বিশাল কাইত। রক্ষণভাগে আশিস রাই, বোরিস সিংহ থাংজাম, চিংলেসানা সিংহ কোনশাম, মিংথানমাওয়াইয়া, মেহতাব সিংহ, রাহুল ভেকে, রোশান সিংহ নাওরেম, সন্দেশ জিঙ্ঘন এবং শুভাশিস বসু। মাঝমাঠে আশিক কুরুনিয়ান, আয়ুষ দেব ছেত্রী, ব্রেন্ডন ফার্নান্ডেজ, ব্রাইসন ফার্নান্ডেজ, জিকসন সিংহ, আপুইয়া, লিস্টন কোলাসো, মহেশ সিংহ নাওরেম এবং সুরেশ সিংহ ওয়াংজাম।

প্রস্থানে ছন্নছাড়া ভারতীয় দলের আক্রমণভাগ। গোল করতে পারছিলেন না ছাংতে-মনবীররা। ব্লু টাইগার্সদের হাল ফেরাতে অবসর ভাঙলেন সুনীল ছেত্রী। এশিয়ান কাপ কোয়ালিফায়ারে ভারতের হয়ে আবার খেলবেন ২৫ মার্চ। এশিয়ান কাপ কোয়ালিফায়ারে ভারতের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নামার আগে একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে টিম ইন্ডিয়া। ১৯ মার্চ শিলংয়েই মালদ্বীপের বিরুদ্ধে ভারতের প্রস্তুতি ম্যাচ। দু’টি ম্যাচই হবে শিলংয়ে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles