ওজন বৃদ্ধি। বেলা পর্যন্ত ঘুম। যছেচ্ছ ফাস্ট ফুড। আলস্য জীবন যাপন। বেড়েই চলেছে ভুঁড়িওয়ালার সংখ্যা। স্থূলতার হার ক্রমবর্ধমান। প্রয়োজন শরীর চর্চা। স্থূলতা বড় কঠিন রোগে পরিণত হতে চলেছে। শরীরচর্চা। যোগাসন বা জিম-প্রেম। একেবার শিশু ও বয়স্কদের জন্য হাঁটাহাটি, সাইকেল চালানো কিংবা সাঁতার। খেলাধুলোতেও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সচল রাখা যায়। বয়স এবং শারীরিক ক্ষমতা অনুযায়ী স্বাস্থ্য নিয়ে অতিরিক্ত সচেতন মানুষজন। মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ শরীরচর্চা। সপ্তাহে পাঁচ দিন শরীরচর্চায় থাকছে তিন দিন সাঁতার ও দু’দিন যোগাসন। দিন তিনেক জিমে গিয়ে ঘাম ঝরানো। বাকি দিন সাইকেল চালানো যেতে পারে। সারা দিন অক্লান্ত পরিশ্রমের পর সকালে ঘুম থেকে উঠে হাঁটতে অনীহা। যোগাসনে সব ভঙ্গি না করা যায়। ওয়াকিং যোগ অর্থাৎ হাঁটতে হাঁটতে যোগাসন চলতে পারে।
কাঁধে, পাঁজরে ব্যথায় পরিঘাসনে আরাম। যোগাসন এবং হাঁটার সমন্বয়ে তৈরি ওয়াকিং যোগ। কেবল হাঁটলে অথবা কেবল যোগাসনে বিশেষ লাভ নেই। যোগ প্রশিক্ষকদের মত, ম্যাটে বসে যোগাসন পাশাপাশি হালকা এক চক্কর হেঁটে, ওয়াকিং যোগে ফল দারুন। নিয়মিত ওয়াকিং যোগে উপকার প্রচুর। অনেকেই নিয়মিত সকাল-বিকেল পার্কে হাঁটলেও মন দিয়ে হাঁটেন না। শরীরের গঠনভঙ্গিও ভুলভাল। ওয়াকিং যোগে টান টান হয়ে দাঁড়িয়ে বা পিঠ, কাঁধ সোজা রেখে, পেটের পেশি টান টান করে খানিকটা হাঁটাচলায় উপকার। দেহের ভারসাম্য বজায় রাখার পাশাপশি ক্লান্তি, মানসিক চাপ, উদ্বেগ কিংবা অবসাদ থেকে মুক্তি। নেতিবাচক চিন্তাভাবনা দূর। শারীরিক এবং মানসিক ভাবে সক্রিয় থাকা সম্ভব হয়। ওয়াকিং যোগ সকলের পক্ষে উপযুক্ত নয়। কমবয়সিদের জন্য নিয়মিত শারীরিক কসরত জিমই যথেষ্ঠ। পার্কে দু-এক পাক হেঁটেবৃক্ষাসন কিংবা তাড়াসন। হাঁটতে হাঁটতে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া-ছাড়া, কাঁধ কিংবা হাতের ব্যায়ামও চলবে।
‘দ্য ল্যানসেট’ মেডিক্যাল জার্নাল সমীক্ষা বলছে, ২০৫০ সালের দেশের ৪৫ কোটি মানুষ স্থূলত্বের শিকার হতে চলেছেন। স্থূলত্ব বিশ্ব জুড়েই মহামারির আকার নেবে। ভারত, চিন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থাকবে তালিকার প্রথম। ভারতের মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ স্থূলত্বের সমস্যায় কাতর হতে পারেন। কমবয়সিদের মধ্যে ওবেসিটি বা স্থূলত্বের প্রবণতা, মাত্রাতিরিক্ত ওজন। বিশ্বের একটি অন্যতম বৃহৎ সমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অর্থাৎ হু-র হিসাবে বডি মাস ইনডেক্স অর্থাৎ বিএমআই ২৫-এর বেশি হলে অতিরিক্ত ওজন বলে চিহ্নিত হয়। বিএমআই ৩০-এর বেশি হলেই স্থূলতাসম্পন্ন সমস্যার শিকার। উন্নয়নশীল দেশগুলিতেও কমবয়সিদের মধ্যে স্থূলতা ক্রমবর্ধমান। ১৫-৩৫ বছরের মধ্যে স্থূলতার হার সর্বাধিক ভারতে। অনুমান, ২০৫০ সালের মধ্যে এ দেশে ১৫-৩৫ বয়সের ২১ কোটি পুরুষ ও ২৩ কোটি মহিলা ওজন বৃদ্ধি সংক্রান্ত শারীরিক সমস্যায় ভুগবেন। স্থূলতার রোগে আক্রান্ত বহু সম্প্রতি। সচেতন করছেন চিকিৎসকেরা ১৯৯০ সালে ভারতে স্থূলত্বে ভোগা মানুষের সংখ্যা ছিল প্রায় ৪০ লক্ষ। ২০২১ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে ১ কোটি ৬৮ লক্ষ। ২০৫০ সালে তা দ্বিগুণের বেশি হতে চলেছে। শৈশবকালীন স্থূলত্বের নিরিখে ভারতের স্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। ভারতে প্রায় ১৫ শতাংশ শিশু অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতার সমস্যায় ভুগছে।
কমবয়সিদের মধ্যে স্থূলতার সমস্যা ক্রমবর্ধমান বিষয়ে গবেষকদের মতামত, উচ্চ ক্যালোরির ফাস্ট ফুডের সহজলভ্যতা। ২০০৯ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে এ দেশে জাঙ্ক ফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার ও অতিরিক্ত চিনি দেওয়া পানীয়ের বিক্রি মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে। শিশু ও কমবয়সিদের মধ্যেই এই জাতীয় খাবার খাওয়ার প্রবণতা বেশি। কম বয়স থেকেই ‘মেটাবলিক সিনড্রোম’-এ আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, যা স্থূলতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। পাশাপাশি ট্যাব, ভিডিয়ো গেম এবং মোবাইল স্ক্রিনে চোখ এবং শারীরিক কসরতের অভাব। কম ঘুম, মানসিক চাপ, উদ্বেগও। শৈশবকালীন স্থূলতা শারীরিক ও মানসিক, উভয় স্বাস্থ্যকেই প্রভাবিত করে। ডায়াবিটিস, কার্ডিয়োভাস্কুলার সমস্যা, ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা-সহ বেশ কিছু গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। কম বয়সে অতিরিক্ত ওজন আর স্থূলতা পরবর্তী সময়ে গিয়ে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের কারণ রীতিমতো উদ্বেগের বিষয়। পরিস্থিতি বদল সম্ভব না হলে ২০৩০ সালের মধ্যেই এই ভয়ঙ্কর পরিণতি দেশের।
মন চাইলেই স্বাস্থ্যকর খাদ্য ভেবে খেয়ে নেন পোচ-অমলেট-সেদ্ধ? ডিম-প্রেমীরা জল-পোচ অথবা তেল, মাখন, ঘি দিয়ে পোচ খেতে পছন্দ করেন। অমলেটের স্বাদে আস্বাদন নিতেও পছন্দ। পুষ্টিবিদরা স্বাস্থ্যকর উপায়ে অমলেট রান্নার নানা পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিৎ! ইটালির বিজ্ঞানীদের ডিম রান্না পদ্ধতিও ভিন্ন।
ইটালির জৈবরসায়ন বিষয়ের গবেষক প্যালেগ্রিনো মুস্তো ও আর্নেস্তো দে মায়ো এবং সতীর্থেরা ডিম রান্নার কৌশল প্রকাশ করেন। দীর্ঘ দিন ধরেই গবেষণায় গাণিতিক মডেলে কম্পিউটারে বিশেষ অ্যালগরিদ্ম ডিমের সাদা অংশ ও কুসুম দুইয়ের মধ্যে থাকা পুষ্টিগুণ নিয়ে গবেষণা ‘কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামক বিজ্ঞান পত্রিকায় প্রকাশিত। ডিম ১০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় জলে ফুটিয়ে সেদ্ধ করলে ডিমের সাদা অংশ শক্ত হলে প্রোটিন নষ্ট হয়। কুসুমের ভিটামিন এ, ডি, ই ও কে উচ্চ তাপমাত্রায় ভেঙে যায়। কোলিন, সেলেনিয়ামের মতো খনিজ উপাদানগুলির পরিমাণেও তারতম্য ঘটে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘পিরিয়ডিক কুকিং’। দু’টি পাত্রে জল কম আঁচে গরম মোটামুটি ৮৭-১০০ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। অন্য পাত্রে জল ঘরের তাপমাত্রায়, ৩০ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। ডিম প্রথমে গরম জলে ২ মিনিট সিদ্ধ করে ঘরের তাপমাত্রায় রাখা ঠান্ডা জলে ডুবিয়ে মিনিট দুয়েক রেখে ফের গরম জলে ২ মিনিট রাখতে হবে। পর্যায়ক্রমে গরম ও ঠান্ডা জলে রেখে ডিম সেদ্ধ ১৬ বার করতে সময় লাগবে ৩২ মিনিটের মতো। এই পদ্ধতিতে ডিম রান্না করলে ডিমের সাদা অংশ ও কুসুম শক্ত হবে না। প্রোটিন, ভিটামিন, অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট ও খনিজ উপাদানগুলিও অবিকৃত থেকে সবটাই শরীরে ঢুকলে উপকার হবে।
ব্যস্ত জীবন। অফিসের কাজ সামলে সংসার। শরীরচর্চার সময় নেই। ঘুমই ঠিক করে হয় না! স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ারই সময় নেই। ব্যস্ত সময়েও যাতে ওজন বশে রাখতে ও শরীর ভাল রাখতে যুক্তিসম্মত উপায়ে ছোট ছোট লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা টেতেই পারে। মিষ্টি, ভাজাভুজি, মুখোরোচক খাবার পুরোপুরি বন্ধ। সপ্তাহে দিন তিনেক অবশ্যই ভাজাভুজি থেকে দূরে থাকতে হবে। ব্যায়াম, যোগ, ধ্যান, প্রাণায়াম করতে হবে। ব্যস্ত জীবনযাপনে ব্যায়াম যদি না করা যায়, দিনরাতের পরিশ্রম জলে যাবে শরীর সু্স্থ না থাকলে। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন আধ ঘণ্টার জন্য শরীরচর্চা মাস্ট। ছোটদের জন্য এই অভ্যাস ভাল। খাদ্যাভ্যাসে পুষ্টিকর খাবার। দুপুর ১টায় সাধারণ অথচ পুষ্টিকর খাবার। প্রোটিন থাকবে, দু’-তিন রকম সব্জি, গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম অর্থাৎ যে খাবার খেলে রক্তে চট করে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায় না। সন্ধ্যা ৬টার সময় পছন্দের যে কোনও খাবারে যেন প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেটের সামঞ্জস্য বজায় থাকে। অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রবণতাও মন থেকে উধাও হয়ে যাবে। শরীর ও স্বাস্থ্যো ভালো থাকবে। স্থূলাকার সমস্যা ধীরে ধারে বিলীন হয়ে যাবে।