বিশ্বরেকর্ড ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মার। ২০২৩ সালের জুন থেকে ২০২৫ সালের মার্চ নজির ২১ মাসেই। ভারত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ইতিহাসে প্রথম অধিনায়ক হিসেবে সবকটি আইসিসি প্রতিযোগিতার ফাইনালে হিটম্যান। ২০১৭ সালে পাকিস্তানের কাছে হেরে গিয়েছিল। আর ২০২৫ সালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছাল। ২০২৩ বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল, ২০২৩ একদিনের ক্রিকেট বিশ্বকাপ ফাইনাল, ২০২৪ টি-টোয়েন্ট বিশ্বকাপের ফাইনাল এবং ২০২৫ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল। বিশ্বের কোনও অধিনায়কের এই কৃতিত্ব নেই। ২০২৩ সালের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হার রোহিতের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দল। আহমেদাবাদে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ ফাইনালে হেরেছিল রোহিত ব্রিগেড। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়াকে হারায় ভারত। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির নক-আউট পর্যায়ে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারতের রেকর্ড। ১৯৯৮ এ কোয়ার্টার ফাইনালে ভারত জেতে ৪৪ রানে। ২০০০ সালে অস্ট্রেলিয়াকে ২০ রানে পরাজিত করে ভারত। দুবাইয়ে চ্যাম্পিয়ান্স ট্রফির সেমিফাইনালে চার উইকেটে জিতে জয়ের হ্যাটট্রিক টিম ইন্ডিয়ার। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে নক-আউটে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়। শীর্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৯৯৮ সালে কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২৮২ রানের টার্গেটেও জেতে প্রোটিয়া বাহিনী। ২০০০ সালে ফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে নিউজিল্যান্ড, ২০১৭ তে সেমিফাইনালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারত এবং ২০২৫ সালে সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারত ২৬৫ রান তাড়া করে জেতে।

অন্য এক রেকর্ড। ভারতের রেকর্ড ভাঙল ভারতই! আইসিসি টুর্নামেন্টের নক-আউট পর্যায়ে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এত রান তাড়া করতে জিততে পারেনি। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার ২৬৫ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করে জেতে ভারত। আগের রেকর্ডটাও ছিল ভারতেরই। ২০১১ সালের একদিনের বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ২৬১ রান তাড়া করে জিতেছিল টিম ইন্ডিয়া। পঞ্চমবার আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ভারত। ২০০০ সাল, ২০০২ সাল, ২০১৩ সাল, ২০১৭ সাল এবং ২০২৫ সাল। ২০০০ সালে ফাইনালে হার নিউজিল্যান্ডের কাছে। ২০০২ সালে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যুগ্মভাবে চ্যাম্পিয়ন ভারত। ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়ন ভারত। প্রথম দল হিসেবে টানা তৃতীয়বার আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ভারত। ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ান বিরাট কোহলির দল। ২০১৭ সালে ফাইনালে উঠলেও পাকিস্তানের কাছে হার। ২০২৫ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে টিম ইন্ডিয়া। ফাইনাল ৯ মার্চ, ২০২৫। প্রথম দল হিসেবে টানা চারটি আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলার রেকর্ড গড়ল ভারত। ২০২৩ সাল থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে চারটি আইসিসি প্রতিযোগিতার ফাইনালে টিম ইন্ডিয়া। ২০২৩ সালে একদিনের বিশ্বকাপ ফাইনাল, ২০২৩ সালের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল, ২০২৪ সালে টি-টোয়েন্ট বিশ্বকাপের ফাইনাল এবং ২০২৫ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল। যুগ্মভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত এবং নিউজিল্যান্ডের তিন দলই টানা তিনটি ফাইনাল খেলেছিল। ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৮৩ টানা তিনটি ফাইনাল খেলেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২০০০ সাল থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে টানা তিনটি আইসিসি প্রতিযোগিতার ফাইনালে খেলে ভারত। ২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সালে নজির গড়ে নিউজিল্যান্ড।

আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে রোহিত শর্মা ২৮ রানের ইনিংসেই গড়লেন রেকর্ড। ওপেনিং পার্টনার শুভমন গিলের সঙ্গে বিশেষ নজিরও ভারতীয় অধিনায়কের। একদিনের ক্রিকেটে জুটিতে দ্রুততম ২,০০০ রান করার তালিকায় তিন নম্বরে রোহিত শর্মা ও শুভমন গিল। ৩৩টি ইনিংসে রেকর্ড গড়েছেন। যুগ্মভাবে শীর্ষে বাবর আজম ও ইমাম-উল-হক জুটি এবং হাশিম আমলা ও এবি ডি’লিয়ার্স জুটি ২৭টি ইনিংসে ২,০০০ রান করেছিলেন। চতুর্থ স্থানে থাকা গৌতম গম্ভীর ও বিরাট কোহলির জুটির ৩৪ ইনিংস।নজির বিরাট কোহলিরও। একদিনের ক্রিকেটে রান তাড়া করার সময় ১০০০ রানের গণ্ডি টপকানো ২৩৭ জন ক্রিকেটারের মধ্যে সর্বোচ্চ বিরাটের গড় ৬০ এর বেশি। একদিনের ক্রিকেটে রান তাড়া করার ক্ষেত্রে সর্বাধিক রানের তালিকায় দু’নম্বরে আছেন বিরাট। শীর্ষে শচীন তেন্ডুলকর ৮,৭২০ রান, গড় হল ৪২.৩৩। দুইয়ে বিরাট, ৮,০০০ রানের গণ্ডি পার করে গড় ৬৪.৫৪। তিনে রোহিত ৬,১১৫ রানে গড় ৪৯.৭১। চারে সনৎ জয়সূর্য ৫,৭৪২ রানে গড় ২৯.৪৪। পাঁচ জ্যাক কালিস ৫,৫৭৫ রানে গড় ৪৪.৯৫। ভারতের জয়ের অন্যতম কারিগর বিরাট কোহলি। ম্যাচের সেরাও তিনি। আইসিসি টুর্নামেন্টে এটি বিরাটের সপ্তম ম্যান অফ দ্য ম্যাচ পুরস্কার নিয়ে তালিকায় চতুর্থ। শচীন তেণ্ডুলকর আইসিসি ইভেন্টে ১০ বার ম্যাচের সেরা হয়েছেন। রোহিত এবং গ্লেন ম্যাক্সওয়েল হয়েছেন ৮ বার। শচীন তেণ্ডুলকরের পর বিশ্বের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসাবে রান তাড়া করতে নেমে ৮০০০ রান পূর্ণ করলেন কোহলি। ১৭০টি ম্যাচে এই সাফল্য অর্জন করলেন তিনি। রান তাড়া করতে নেমে শচীন ২৪২টি ম্যাচে করেছেন ৮৭২০ রান। এদিন নাথান এলিসের ক্যাচ নিয়ে ক্যাচ ধরারও রেকর্ড গড়েছেন বিরাট। ফিল্ডার হিসাবে সবচেয়ে বেশি ক্যাচের নিরিখে বিরাট এখন দ্বিতীয় (১৬১)। তিনি টপকালেন রিকি পন্টিংকে (১৬০)। এই তালিকায় শীর্ষে মহেলা জয়বর্ধনে (২১৮)।

রোহিত ছাড়া আরও দুই অধিনায়ক চার বার করে আইসিসি প্রতিযোগিতার ফাইনালে উঠেছেন। ধোনি ও পন্টিং। আইসিসির চারটি প্রতিযোগিতারই ফাইনালে উঠতে পারেননি। ভারতের অধিনায়ক হিসাবে ধোনি ২০০৭ ও ২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ২০১১ সালের এক দিনের বিশ্বকাপ ও ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল খেলেন। ২০০৭, ২০১১ ও ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়ন। হার ২০১৪ সালের ফাইনালে। রিকি পন্টিং অস্ট্রেলিয়াকে ২০০৩ ও ২০০৭ সালের এক দিনের বিশ্বকাপ এবং ২০০৬ ও ২০০৯ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে তুলেছিলেন। চার বারই তিনি চ্যাম্পিয়ন হন। ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলীর নেতৃত্বে ২০০০ ও ২০০২ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ও ২০০৩ সালের এক দিনের বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে ভারত। ২০০২ ছাড়া বাকি দু’টি ফাইনাল হেরেছিলেন। নিউ জ়িল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের দল তিন বার ফাইনালে ওঠে। ২০১৯ সালের এক দিনের বিশ্বকাপ, ২০২১ সালের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ও ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলে নিউজিল্যান্ড। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ছাড়া বাকি দু’টি ফাইনালে হার।
আইসিসির ৫০ ওভারের প্রতিযোগিতায় সর্বাধিক ছক্কা হাঁকানোর রেকর্ড রোহিতের। রেকর্ড ছিল ক্রিস গেইলের ৬৪টি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন। আইসিসির আয়োজিত ৫০ ওভারের টুর্নামেন্টে অর্থাৎ বিশ্বকাপ এবং আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে একটি ছক্কা হাঁকিয়ে গেইলকে টপকে রোহিতের ছক্কার সংখ্যা ৬৫টি। এছাড়া সর্বাধিক ছক্কার তালিকার শীর্ষে রোহিত। তারপরই থাকা গেইল অবসর নিয়েছেন। তিনে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ৪৯টি ছক্কা। ডেভিড মিলার ৪৫টি ছক্কা। ৪২টি ছক্কা ডেভিড ওয়ার্নারের। ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ছক্কা ৪২টি। ঐতিহাসিক জয়ের পরে ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত বলেন,‘ এই ম্যাচটি জিতে দারুন খুশি। দল ফাইনাল খেললে সবাই চায় নিজের দলের ছেলেরা যেন ফর্মে থাকে। এটাই আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলবে। ফাইনালে কার বিরুদ্ধে খেলতে হবে, তা নিয়ে মাথা ঘামাতে চাই না একদমই।
অসিদের হারিয়ে বিশ্বকাপের বদলা! বিরাট ব্যাটে অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ভারত, অস্ট্রেলিয়া ২৬৪ (স্মিথ ৭৩, কেরি ৬১, সামি ৩-৪৮)। ভারত ২৬৭-৬ (কোহলি ৮৪, শ্রেয়স আইয়ার ৪৫)ভারত ৪ উইকেটে জয়ী আইসিসি টুর্নামেন্টের নকআউটে অস্ট্রেলিয়া পরাস্ত। ২০২৩ বিশ্বকাপের ফাইনালের আতঙ্ক কাটিয়ে টিম ইন্ডিয়ার জয়। ২০২৩ বিশ্বকাপে হারের মধুর বদলা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে রোহিত ব্রিগেড জিতল ৪ উইকেটে। সৌজন্যে বিরাট কোহলি। টার্গেট ২৬৫। দুবাইয়ে স্লো টার্নারে টিম ইন্ডিয়ার ৩০ রানে প্রথম উইকেট। ৪৩ রানে অধিনায়ক রোহিত শর্মার বিদায়। চাপের মুখে আবারও বিরাট লড়াই। প্রথমে সঙ্গী শ্রেয়স আইয়ার। ৪৫ রানে শ্রেয়স আউট। অক্ষর আউট হওয়ার পর রাহুলকে নিয়ে জুটি বেঁধে ৯৮ বলে ৮৪ রানের ইনিংস খেলেন কোহলি। শেষটা ভালোভাবেই সারলেন কেএল রাহুল এবং হার্দিক পাণ্ডিয়া। হার্দিক স্পিনারদের বিরুদ্ধে তিনটি বড় ছক্কা মেরে কাজ সহজ করলেন। ২৪ বলে ২৮ রান করলেন। রাহুল শেষ পর্যন্ত খেললেন। ৩৪ বলে ৪২ রান করলেন। ছক্কা মেরে দলকে জেতালেন রাহুল। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে অস্ট্রেলিয়া ২৬৪। ম্যাচের তৃতীয় ওভারে তরুণ ওপেনার কুপারকে ফেরান সামি। সংহারক মূর্তি ধারণ করা ট্র্যাভিস হেডকে ফিরিয়ে দেন বরুণ চক্রবর্তী ৩৯ রানে। লাবুশেনকে ফেরান রবীন্দ্র জাদেজা। ইংলিশকেও ১১ রানে তুলে নেন জাড্ডু। ৭৩ রানে স্মিথ আউট। ম্যাক্সওয়েলকেও দ্রুত ফিরিয়ে দেন অক্ষর প্যাটেল। অ্যালেক্স কেরি ৫৭ বলে ৬১ রান করে রান আউট হন। অসিদের ইনিংস শেষ হয় ৪৯ ওভার ৩ বলে ২৬৪ রানে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির নক-আউট ম্যাচে লক্ষ্যে পৌঁছতে বিশেষ বেগ পেতে হল না টিম ইন্ডিয়াকে। ভারতের জয়ের কারিগর অবশ্যই বিরাট কোহলি। আবার টিমগেম। মহম্মদ সামি, শ্রেয়স আইয়ার, অক্ষর প্যাটেল, রবীন্দ্র জাদেজাদের অবদানও রয়েছে। ৪৭১ দিন। ১৯ নভেম্বর ২০২৩ থেকে ৪ মার্চ ২০২৫। ঠিক ৪৭১ দিন পর বদলা নিল ভারত। ১১ বল বাকি থাকতে ৪ উইকেটে জয়। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে বিদায় নিল এক দিনের ক্রিকেটের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দল অস্ট্রেলিয়া।