যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। পাঁচিলঘেরা ৬০ একরে শিক্ষাক্ষেত্র। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু করলেন কী? ক্যাম্পাসের অন্দরেই ঘটনার ঘনঘটা। শিক্ষামন্ত্রী গাড়িতে স্বয়ং বসে রয়েছেন। অথচ সেই গাড়ি চাপা দিয়ে চলে যাচ্ছে ছাত্রকে। নারকীয় ঘটনা বললে খুব কম বলা হবে। রাজ্যের এক প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী জেলের হাওয়া খাচ্ছেন। এবার আরও এক শিক্ষামন্ত্রীর আচরণ বেশ ক্ষোভের। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভে সমর্থন মানুষের। এমনকি সমর্থনে বাংলাদেশের কয়েকটি সংগঠন। দাবি ব্রাত্য বসুকে শিক্ষামন্ত্রী পদ থেকে সরাতে হবে। এইরকম বিকৃতমনস্ক শিক্ষামন্ত্রীকে না সরানো হলে ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাও করা হবে। হাই কোর্টে যাদবপুর কাণ্ডের শুনানিতে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। ইউনুসের দেশের ‘নৈরাজ্য’ পরিস্থিতির উদাহরণ টেনে রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনকে সতর্ক করলেন হাই কোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। কড়া ভাবে মনে করিয়ে দেন, রাজ্যের পরিস্থিতি যেন প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মতো যেন না হয়। কড়া হাতে রাশ ধরার পরামর্শ বিচারপতির।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অশান্তি পাকিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী বলে অভিযোগ। উপরন্তু বাড়ল শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর নিরাপত্তা। ছিল ওয়াই ক্যাটেগরির নিরাপত্তা। এবার জেড ক্যাটেগরির নিরাপত্তার ঘেরাটোপে ব্রাত্য বসু। ১ মার্চ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়েবকুপার বার্ষিক সাধারণ সভা ছিল। পালটা অভিযোগ, ওইদিন সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে অশান্তি তৈরির চেষ্টা শুরু করে বাম ছাত্ররা। ছাত্র সংসদ নির্বাচন-সহ একাধিক দাবি। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশেই ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে বিক্ষোভ স্লোগান বাম ছাত্রদের। পালটা বাধা টিএমসিপির। দু’পক্ষের হাতাহাতি, ধস্তাধস্তি। ওয়েবকুপার বার্ষিক সাধারণ সভাস্থলে তুমুল উত্তেজনার পরিস্থিতি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে তৃণমূলের শিক্ষাবন্ধু সমিতির অফিসে ভাঙচুর, আগুনও। ধরনায় শামিল পড়ুয়ারা। অরবিন্দ ভবনের সামনে ধরনা। উপাচার্য ভাস্কর গুপ্তকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার ডেডলাইন। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর বিরুদ্ধে ‘হিট অ্যান্ড রানে’র মামলা দায়েরের দাবি আন্দোলনকারীদের। ধারাবাহিক উত্তেজনায় শিক্ষামন্ত্রীর নিরাপত্তা বেড়ে গেল।
২০১১ সালে বাংলায় বাম সূর্যাস্ত। এক দশক পরে বাম উপস্থিতি মহাশূন্য! অনন্ত শূন্যে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। অলৌকিক লাল ‘গ্রহ’। সংসদ নির্বাচনের দাবিতে সরব বাম ছাত্র সংগঠনগুলি। উত্তপ্ত বিক্ষোভ। আহত শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর গাড়ি চাপা পড়ে আহত বিক্ষোভকারী এক ছাত্র ইন্দ্রানূজ। অন্তর্কলহে ক্ষান্ত দিয়ে কলরব শুরু। আন্দোলনের আঁচে পুড়ছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। পাঁচিলঘেরা ৬০ একরের জমিতে জোটবদ্ধ হয়েছে বাম ও অতি বাম। বাংলায় ছাত্র আন্দোলনের ‘অগ্নিযুগে’র বিপ্লবীদের অধিকাংশই ছিলেন ছাত্র। স্বাধীনতা পরবর্তী যুগে বাম-কংগ্রেসের সংগঠনের অন্যতম শক্তি ছিল কলেজে পাঠরত মেধাবী ছাত্ররাই। পরবর্তীকালে নকশাল আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকায় রাজনৈতিক পট পরিবর্তন। তৃণমূল ছাত্র পরিষদ কিংবা আরএসএসের ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ অর্থাৎ এবিভিপি। বাম ও অতি বামের ‘ভালোবাসা’ ও ‘ঘৃণা’ বলতে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। যাদবপুরের অস্বাভাবিক ‘সন্ধি’ সময়ের দাবি ও পরিস্থিতির চাহিদার উপর সমীকরণ। ছাত্র আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি? অনেকেরই ভয়, বাংলাদেশের মতো হিংসাত্বক ছাত্র আন্দোলন হবে না তো বাংলাতে?