Wednesday, March 12, 2025
spot_imgspot_img

Top 5 This Week

spot_img

Related Posts

হাওড়া স্টেশনের ‘বড় ঘড়ি’ শতবর্ষের পথে!‌ কোথায় ১৬ নম্বর প্ল্যাটফর্ম? ১৫ ও ১৭ নম্বর প্ল্যাটফর্মের মাঝে ১৬র দেখা নেই  

বয়স ৯৯। থুরথুরে বুড়ো নয়। দুটি হাত প্রসারিত করে আজও সাবলীলভাবে ব্যস্ত মানুষজনকে জানান দেয় সঠিক সময়। ১৯২৬ সাল। মাথার উপর ঝুলে থাকা মোটা পুরু নিকষ কালো কাঠের হেভিওয়েট ফ্রেমে ইয়া প্রকাণ্ড দুমুখো ঘড়ি। পরিচিতি ‘‌বড় ঘড়ি’‌। হাওড়া স্টেশনের ‘‌বড় ঘড়ি’‌। ২০২৫ এ একইভাবে ঝুলছে বড় ঘড়ি। বয়স ৯৯। ঠিক যেন লন্ডনের বিগ বেন। হাওড়া স্টেশনের শতাব্দিপ্রাচীন ঘড়ির আদল অবয়ব একই রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা থেকে শুরু করে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম, এমনকী ভারতের স্বাধীনতা অর্জন সবেরই সাক্ষী এই বড় ঘড়ি। সময় অতিবাহিত হয়েছে। এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। বদল হয়নি পরিচিত ঘড়ির। ১৮৫৪ সাল। হাওড়া থেকে হুগলির উদ্দেশে যাত্রা শুরু ট্রেনের। ৯১ মিনিটের যাত্রাপথ। রেলের খাতায় লেখা ইতিহাসের শুরু। হাওড়া স্টেশনের পথচলাও শুরু। বিশ্বের দ্বিতীয় প্রাচীনতম স্টেশন। ১৯০৫ সালের ১ ডিসেম্বর ছিল ৬টি প্ল্যাটফর্ম। আর আজ! দেশের মধ্যে সর্বাধিক ২৩টি প্ল‌্যাটফর্ম হাওড়া স্টেশনেই। দিনে এক-‌দেড় মিলিয়নের বেশি যাত্রীর যাতায়াত। ভারতের অন্যতম ব্যস্ত রেল স্টেশন হাওড়া। প্রতিদিন প্রায় ৪৫০ সাবার্বান এবং ১০৭টি দূরপাল্লার ট্রেন চলাচল।

পূর্ব রেল সূত্র বলছে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৮৫৪ সালের ১৫ আগস্ট থেকে এই লাইনে ট্রেন চলাচলের প্রারম্ভিকতা হুগলির উদ্দেশে। মাঝে ৩টি স্টেশন যথাক্রমে বালি, শ্রীরামপুর এবং চন্দননগর। স্টেশনটির ১ থেকে ১৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মের অবস্থান ওল্ড কমপ্লেক্সে আর ১৭ থেকে ২৩ নম্বর প্ল্যাটফর্ম নিউ কমপ্লেক্সে। হাওড়া স্টেশনে ১৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মই নেই। কারণ কী? ১৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মের জায়গাটিকে ‘জিরো মাইল’ বলাএ অভিহিত করা হয়। অর্থাৎ এই জায়গায় শুধু পণ্য পরিবহণে ব্যবহৃত হওয়ার ফলে এখানে কোনও লোকাল বা দূরপাল্লার ট্রেন ঢোকে না। শুধুমাত্র পণ্যদ্রব্য ওঠানামার কাজ সম্পন্ন হয়ে থাকে। কথিত ১৮৫৪ সালের ১৫ আগস্ট জিরো মাইল থেকেই প্রথম ট্রেন পাড়ি দিয়েছিল হুগলিতে। সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ ট্রেনটি হাওড়া থেকে হুগলি পৌঁছানোর পর আবার দুপুর একটার মধ্যে ফিরে আসার সময় নির্ধারিত ছিল। প্রথম দিনই তা সম্ভব হয়নি। কারণ প্রথম দিনেই ‘‌ট্রেন-‌লেট’‌?‌ ২ ঘণ্টা দেরিতে হুগলিতে ঢোকে প্রথম এই ঐতিহাসিক ট্রেন।

১৯০০ সালে বেঙ্গল-‌নাগপুর রেলওয়ে হাওড়া স্টেশন পর্যন্ত সম্প্রসারিত করার ফলে গুরুত্বপূর্ণ রেল টেশনে পৌঁছায়। ১৯০৫ সালে হাওড়ায় নতুন ছ’টা প্ল‌্যাটফর্ম নিয়ে প্ল্যাটফর্ম সংখ‌্যা সাত। ১৯৮৪ সালে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ১৫। ১৯৯২ সালে নতুন টার্মিনাল হাওড়া স্টেশনের। ২০০৯ সালে প্ল‌্যাটফর্মের সংখ‌্যা বেড়ে ২৩। হাওড়া স্টেশনের সঙ্গে জড়িয়ে ‘বড় ঘড়ি’র ইতিহাস। অনেক ইতিহাসের সাক্ষী বহন করছে প্রায় শতবর্ষের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা ‘বড় ঘড়ি’। স্টিম ইঞ্জিনের সময় অতিক্রম করে হাওড়া স্টেশনের নিচে পাতালপথে গঙ্গা পেরিয়ে কলকাতায় পা রাখা মেট্রো রেল। বহু ইতিহাসের সাক্ষী ‘বড় ঘড়ি’। লন্ডনের এডওয়ার্ড জন ডেন্টের সংস্থার তৈরি ঘড়ি। যুক্তরাষ্ট্রের জেন্টস কত্তৃক নির্মিত। দু’‌মুখো ঘড়ি হাওড়া স্টেশনে ১৯২৬ সাল থেকে ঝুলতে থাকা শুরু। ডায়ালের ব্যাস ৪৫ ইঞ্চি অর্থাৎ ৩ ফুট ৯ ইঞ্চি। দেড় ফুট অর্থাৎ ১৮ ইঞ্চি ঘন্টার কাঁটা। মিনিটের কাঁটা দু’‌ফুট অর্থাৎ ২৪ ইঞ্চি। প্রথমে তৈরী মেকানিক্যাল ঘড়ি আজও সময় দেয় নির্ভুল ভাবেই। ১৯৭৫ সালে ‘বড় ঘড়ি’ পরিণত ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল ঘড়িতে। বর্তমানে রিচার্জেবল ব্যাটারিচালিত স্বয়ংক্রিয় বড় ঘড়ি। লন্ডনে জন্ম হলেও হাওড়া স্টেশনে প্রতিস্থাপনের দায়িত্বে কলকাতার বিখ্যাত ঘড়ি ব্যবসায়ী দেবপ্রসাদ রায়ের সংস্থা রায় ব্রাদার্স কোম্পানি। হাওড়া স্টেশনের ল‌্যান্ডমার্ক। ইতিহাসের সাক্ষী ‘বড় ঘড়ি’র নিচে প্রতিদিন অপেক্ষারত বহু মানুষ। প্রিয়জনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকেন আর বলে ‘‌দাড়িঁয়ে আছি ঠিক ‘বড় ঘড়ি’র নিচেই’‌। মোবাইলের যুগেও তার জনপ্রিয়তা কমলেও ইতিহাসে আজও প্রাসঙ্গিকতা বহন করে। চলমান সমাজ-ইতিহাস ও জীবনের ঢেউয়ে এক ও অদ্বিতীয় মিটিং পয়েন্ট। আপামর জনসমুদ্রের দিকে কড়া নজর রাখে হাওড়া স্টেশনের জনপ্রিয় দুমুখো ‘বড় ঘড়ি’।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles